![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিক নাম দেইখা ডর খাইয়েন না।আমি আসলে খুব সাধারন মানুষ।আর জানতে ভালোবাসি জানাতে ভালোবাসি তাই নিজে যা জানব অন্যকেও তা জানাবো।
"বেদের বহরে দেখ জিপসী জীবনটাহা " জেমসের এই গানের কথা কারো মনে আছে??? আসুন জেনে নেই জপসীদের কিছু কথা।
রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে একঝাঁক মেয়ে-পুরুষ।মেয়েদের পরনে উজ্জল স্কার্ট আর গোড়ালি অবধি ঘাঘরা,পায়ে মোটা রুপার মল,গায়ে ছোট চোলি,গলায়
পুঁতির মালা,কানে মস্ত রিং আর মুক্তার মতো ঝকঝকে সাদা দাঁত।।তারচেয়েও আকর্ষনীয় ওদের আশ্চর্য সুন্দর গড়ন আর স্বভাবিক রুপ।পুরুষদের
মজবুত গড়ন,পায়ে বুট,প্রত্যেকের মাথায় টুপি,হাতে বেহালা।ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দিব্যি খালি পায়ে হেটে বেড়াচ্ছে সাথে সাথে। তাঁবু, কুকুর/ঘোড়া
সহ নানারকম জীবজন্তু আর বাদ্যযন্ত্র এগুলি ওদের সবসময়ের সাথি।এই হলো ইওরোপের জিপসী। পুরুষদের মাথায় পাগড়ি আর মেয়েদের মাথায়
দীঘল কালো চুল সাথে আকর্ষনীয় ও তীক্ষ্ণ কালো চোখ এই হলো জিপসীদের সাধারন পরিচয়।
বলা হয়ে থাকে ইজিপশিয়ান শব্দ থেকেই জিপসী শব্দের উতপত্তি। জিপসী কারা ? এককথায় বলা যায়, ওরা এক ভবঘুরে সম্প্রদায়।দেশ থেকে দেশে
যাযাবরের মতোই ওরা ঘুরে বেড়ায়।।ওদের কোন দেশ নেই, একক কোন নামও নেই। জিপসীরা নিজেদের পরিচয় দেয় “রোম”(মানুষ )বা
“রোমানিচল” (মানুষের সন্তান)বলে। সারা ইউরোপে সাধারন ভাবে ওদের জিপসী বললেও দেশভেদে আলাদা আলাদা স্থানীয় নামেও ডাকা হয়।
একসময় জার্মানরা নিকটপ্রচ্য বলতে ইজিপ্ট শব্দ ব্যবহার করত, হয়তোবা সেকারনেই ওদের(জিপসীদের) অদ্ভুত বেশ-ভুষা দেখে জার্মানরা ওদের
নিকট প্রাচ্যের কোন দেশের লোক বোঝাতে ইজিপশিয়ান বা জিপসী নামে ডাকত যদিও ওরা কোন কালেই ইজিপ্টের লোক ছিল না।আর রোম
সাম্রাজ্য যেহেতু ছিল আদতে জার্মানদেরই সাম্রাজ্য তাই জিপসী নামটা পুরা সাম্রাজ্যে ও সাথে সাথে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপের নানাদেশে ওদের নানা নামে ডাকা হয়।একসময় ওদের বলা হত সারাসিন,আবার কখনো বলা হতো মুর বা টার্টান নামে(সম্ভবত ইউরোপে
মুসলিম শসনের সময়)।এক সময় রটে গিয়েছিল মুর শব্দ থেকেই রোম শব্দের উতপত্তি।ফ্রান্সে ওদের ডাকা হতো রাঁবোয়া(কালো
শয়তান),বুলগেরিয়ায় সিগানি,রুমানিয়ায় তিগানি,হাঙ্গেরিতে চিকানোগ,ইতালীতে জিনগারী,পর্তুগালে সিগানোস,ব্রিটেন-আমেরিকায় জিপসী। আর খোদ
জিপসীদের কাছে বাকী বিশ্বের সমস্ত মানুষ হলো গাজো বা গাউহো(চাষি বা মাটি কামড়ে পড়ে থাকা মানুষ) আর নিজেরা শুধুই রোম (মানুষ)।
ইউরোপে আসার আগে তাদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল তা নিয়ে পন্ডিতদের নানা মত আছে যদিও রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি।তবে ওরা যে
মিশরী নয় এব্যপারে সব গবেষকই একমত।কারন খোদ মিশরেও ওরা পরদেশী নামেই পরিচিত।ওদের আচার-আচরনও মিশরীয়দের থেকে ভিন্ন আর
মিশর থেকে দুনিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ার মতো পায়ে হাঁটা সহজ পথ সেই প্রাচীনকালে কমই ছিল অথচ ওরা বরাবরই পায়ে হাঁটা
মানুষ।সমুদ্রকে ওরা খুব এড়িয়ে চলে।এমনকি ওদের উপকথায়ও জল/পানির কোন বর্ননা নেই। নদীতেও ওদের ভীতি আছে।নদীকে ওরা বলে
পুকুর।সংস্কার অনুযায়ী নদীর এক ঘাটে নিজে গোসল করে তো অন্য ঘাট থেকে খাবার পানি নেয়,ঘোড়া/গাধাকে পানি খাওয়ায় আবার অন্য ঘাটে-
অনেকটা ছোট ছোট আলাদা আলাদা পুকুরের মতোই নদীকে ব্যবহার করে।
গবেষকদের অনুমান খ্রিস্টীয় দশম শতক থেকে পঞ্চদশ শতক সময়টা ওদের কেটেছে নিকট প্রাচ্যের দেশ পারস্য,ইরাক আর গ্রীসে।ইরাকে ওদের নাম
লুরি,পারস্যে কাকরি ও জাঙ্গি,তুরস্কে সিনঘানিজ আর গ্রীসে সিগানোস,কাটসিভেইল।তবে এখন অনেকের ধারনা এদের আদি নিবাস ছিল এই
ভারতবর্ষেই।কারন ওদের ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষার মিল প্রচুর।অধুনা এই মতবাদই বেশী জনপ্রিয়।জিপসীদের রোমানি ভাষা নিয়ে গবেষনা করা
পন্ডিত পাসপাতি মনে করেন, জিপসীরা নিজেদের যে পরিচয় দেয় রোম বলে ওটা দিয়ে আসলে বোঝাতে চায় ওরা রামের দেশের লোক মানে
ভারতীয়।
ইউরোপের আদিইতিহাস ঘাটলে দেখাযায় বোহেমিয়া, ক্রিট, সার্বিয়া, রোম ,প্যারিস, স্পেন ,রাশিয়া, পোল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ডেনমার্ক, হল্যান্ড
এককথায় সবদেশেই ওদের আনাগোনা ছিল মোটমুটি ১২৬০ সাল থেকেই।এমনকি ইউরোপীয় আদি অভিবাসীদের সাথে ওরা পারি জমায় নবআবিস্কৃত
মহাদেশ আমেরিকায়।
জিপসীরা নিজেদের পরিচয় দেয় বাইবেলের লোক বলে।আবার একসময় ওরা নিজেদের ইহুদী বলেও নাকি পরিচয় দিত।সেই সূত্রে অনেকে বলেন, ওদের
আদি বাসস্থান হয়তোবা ছিল আসিরিয়া,নুবিয়া,আবিসিনিয়া বা কালডিয়ায়। সত্যহলো, ওরা জীবন/জীবিকার প্রয়োজনে নানা দেশে নানা কাহিনীই
বর্ননা করে যদিও সবই অসত্য।
সেই ১৪২৭ সালে এমনি একদল অদ্ভুত দর্শন লোক হাজির হয় প্যারিস নগরের দ্বারে।ওরা দেখা করতে চায় ফরাসিরাজ অস্টম চার্লসের সাথে।দলপতি
নিজেকে “লিটল ইজিপ্টের” ডিউক “লর্ড প্যানুয়েল” পরিচয় দিয়ে রাজাকে দেখান পোপের সিলমোহর মারা কাগজ যাতে লেখা ছিল সাতবছরে
ইউরোপের সমস্ত তীর্থগুলি পায়ে হেটে ভ্রমন করতে পারলে ওদের পাপের প্রায়শ্চিত্য হবে।কি ছিল সেই পাপ ?মাতা মেরীকে হেরদ যখন প্যালেস্টাইন
থেকে বের করে দেয় তখন তিনি আশ্রয় চান এই মানুষগুলির পূর্বপুরুষদের কাছে।কিন্তু তারা সেদিন সহায়তা করেনি মেরীকে।ফলে ইশ্বরের কোপে
ওরা আজ গৃহহারা,পথে পথে ঘুরছে।এভাবে ঘুরতে ঘুরতে জার্মানী আর বোহেমিয়া হয়ে গিয়ে দাঁড়ান পোপের দরবারে।অতপর পোপের অনুমতিপত্র
লাভ।অগত্যা রাজা অস্টম চার্লস তাদের আশ্রয় দেন প্যারিসে।
একই কাহিনীর নানারুপ তারা শোনায় ইউরোপের নানান দেশে।কোথাও তারা যিশুকে হত্যাকারী সৈন্যদের সহায়তাকারী আবার কোথাওবা ওরা
নোয়ার সময়ের মহাপ্লাবনের পর টিকে থাকা মানুষ,যাদের অন্যায় ভাবে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অথবা ইহুদীদের পিছু নেওয়া ও ভাগ্যগুনে
বেঁচে যাওয়া ফারাও রাজের সৈন্যদলের অভিশপ্ত প্রজন্মে।আবার কোথাও ওরা আদমের অভিশপ্ত সন্তান কাবিলের বংশধর।গল্প যাই হোক হাতে আছে
পোপের অনুমতি।ব্যাস,এভাবে পুরা ইউরোপেই ওদের দলগুলি মেটামুটি থিতু হয়।সবরকমের কাজই পারত কর্মঠ পুরুষেরা।কেউ হলো রাজার
সৈন্যদলের ভাড়াটে সৈনিক বা দ্বার রক্ষক,কেউবা সাধারন মিস্ত্রী। আর মেয়েরা করত গান-বাজনা,নর্তকীর কাজ,হাত দেখা,পাথর বিক্রি।
জিপসী মেয়ের কথিত ভবিষ্যত গননায় বিশ্বাস করে মহিলারা পুরুষদের সন্দেহ করতে লাগল।ঘর ভাঙ্গল অনেক অভিজাত বংশীয় রমনীর।সমাজে
একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃস্টি হতে তাই সময় বেশী লাগল না।এর সাথে কম পয়সায় কাজ করতো বলে সমাজে একটা শত্রুশ্রেনী ঠিকই সৃস্টি
হয়েছিল।সাথে ছিল শিশু চুরি,প্রতারনার মতো শতো অভিযোগ।
এমনি সময়ে যখন ইওরোপ জুড়ে প্লেগরোগ দেখা দিল,সবাই দুষতে লাগল ইহুদীদের।গুজব রটল ইহুদীরা ইচ্ছা করে কুয়ার পানিতে বিষ মিশিয়েছে।সাথে
সাথে শুরু হলো ইহুদী নিধন।আর যেহেতু জিপসীরা একসময়ে ইহুদী বলে পরিচয় দিত তাই ওরাও বাঁচতে পারলনা।পালিয়ে গেল ওরা জার্মানীর
পাহাড়ের গুহায়।এভাবে চলল প্রায় পঞ্চাশ বছর।
যখন বেরিয়ে এল ওরা লোকালয়ে,তখন সব রাজাই ওদের শাসনের বেড়াজালে আনতে চাইলেন। বোহেমিয়া থেকে ওদের বের করে দেয়ার আদেশ
এলো, ফরাসিরাজ চতুর্থ হেনরীও জিপসী পুরুষদের দেশ থেকে বের করে দিতে বললেন তবে জিপসী রমনীদের থাকার অনুমতি দিলেন।যদিও হুকুমে
কাজ হয়েছিল বলে মনে হয় না। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুইয়ের সময় একই ভাবে চলল জিপসী পুরুষ নিধন আর জিপসী নারীদের ডাইনী আখ্যায়িত করে
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা আগুনেপুড়িয়ে মারার উতসব।ইতালী,ইংল্যান্ড,স্কটল্যান্ড সবদেশের মাটিই লাল হতে লাগল জিপসীদের রক্তে।ইউরোপ জুড়ে অদ্ভুত সব
আইন হতে লাগল জিপসীদের বিরুদ্ধে।যেনবা জিপসী শাসনের নামে নির্যাতন ও নিধন রাজাদের পবিত্র রাজকার্যের অন্তর্ভূক্ত।কোথাও কান
কাটা,কোথাও ফাঁসি,কোথাও মাথামুড়িয়ে দেয়া,কোথাও শিশু-বাচ্চাদের কয়েদ,কোথাও দেশ ছাড় না হয় জাহাজের খোলে ওঠো,কোথাওবা নিজেদের
চিরাচরিত পোষাক পরা আর নিজ ভাষায় কথা বলা নিষেধ,কোথাও জিপসীদের সাথে গরু/গাধা রাখা নিষেধ,আরও কত বিচিত্র সেই আইন।একসময়
খ্রিস্টধর্মে দিক্ষিত করার চেস্টাও করা হয়েছে।কিন্তু দেখা গেছে দিক্ষা নিয়েও ওদের প্রাচীন দেব-দেবীর পুজা ওরা ঠিকই করছে।
রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দা গ্রেট জিপসীদের বেশ ভালোবাসতেন।আরও সহজ করে বললে জিপসী তরুন বিহারীর প্রেমে পড়েছিলেন তিনি।ইউরোপের
কোন কোন রাজার কাছেও জিপসী নারীদের বেশ কদর ছিল।অস্টম হেনরী জিপসীদের নাচ দেখতেন, চতুর্দশ লুই বিলাসি জীবনের সন্ধ্যায় প্রাসাদে
ডেকে নিতেন জিপসী নর্তকীদের।রাজার দেখাদেখি অভিজাতরাও পুষতে লাগল জিপসী উপপত্নি।।একদিকে জিপসী নিধন আরেক দিকে ওদের দিয়ে
মনোরঞ্জন, একে কি বলবো আমরা?
কেন এমন হলো বলা মুস্কিল।কারন জিপসীরা কখনোই রাজ্য দখলের চেস্টা করেনি,রাজনৈতিক অভিলাষও ওদের ছিল না।আদতে ওদের স্বভাবই ছিল
না কোথাও থিতু হওয়া। রাজ্য দিয়ে করবেটা কি?ওদের দলপতিই ওদের সব।সামাজিক অনাচার শুধুমাত্র জিপসীরাই করতো এটাইবা কতটুকু
যুক্তিযুক্ত?বরং ইওরোপের ইতিহাস পড়লে দেখা যায়,জিপসীরা নানা বিদ্রোহে স্থানীয়দের সহায়তা করেছে,গরীর ও অত্যাচারিতদের পাশে
দাড়িয়েছে।ফরাসী ভবঘুরেদের সমর্থন যেমন দিত জিপসীরা তেমনি পূর্ব ইউরোপের নানা স্থানে স্থানীয় কৃষকদের সাথে থেকে যুদ্ধও করেছে।তাই
চারপাশের সমাজের প্রতি ওরা একদম নিরাসক্ত ছিল এমনটাকি বলা যায়?আসলে মনে রাখতে হবে সময়টা ছিল ইওরোপের মধ্যযুগ।
আবার তারা যে একদম একা ছিল তাও কিন্তু নয়।সমাজের চোখে বিপজ্জনক গরীব,ভিখারী,ভবঘুরে আর লুটেরা দলের সহমর্মিতা ছিল জিপসীদের
প্রতি।এত অত্যাচারের পরও তাই নিশ্চিহ্ন হলো না জিপসীরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও হিটলারের কোপানলে পড়ে জিপসীরা।তবে ইহুদীদের মতো এতো সহজেই ওরা ধরা দেবার পাত্র ছিল না। ইউরোপ জুড়ে
যখন মানুষ ছুটছে জান বাচানোর জন্য তখনও জিপসীরা তাদের সহায়তা করেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে ওদের বেশীদিন
লাগেনি।তারপর নানা ভাবে ওরা মিত্র বাহিনীকে সহায়তা করেছে।আর এভাবেই এখনো ইওরোপ জুড়ে কিছু ঘৃনা কিছু সহানুভূতি নিয়ে টিকে আছে
জিপসীরা।
সূত্র ঃ সহায়তায় কাজী মাহমুদ রুমন (পাঠশালা ফ্যান পেজ)
সংকলন:“জিপসীর পায়ে পায়ে” নামক গ্রন্থ থেকে,লেখক-শ্রীপান্থ।
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬
রাঘব বোয়াল বলেছেন: কষ্ট করে পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
তুষার কাব্য বলেছেন: আসলেই অনেক কিছু জানলাম । শুভেচ্ছা জানবেন ।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৭
রাঘব বোয়াল বলেছেন: কষ্ট করে পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৫৩
ইয়ার শরীফ বলেছেন: অনেক কিছু জানা হল ।
মাসুদ রানার একটা বই পরেছিলাম জিপসি নামে।
আপনার লেখা পড়ে সেই বইতার কথা মনে পরল।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন