নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝা এবং মানুষের চিন্তার গতি প্রকৃতির সাথে পরিচিত হতে প্রয়াসী

বাঙলি

আমি প্রথমে মানুষ, পরে বাঙালি, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি- এই আমার পরিচয়। এ পরিচয় নিয়েই মরতে চাই.........

বাঙলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জেগেছ তোমরা, এগিয়ে যাও

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

স্পেনের বার্সেলোনা থেকে আমাদের এক প্রবাসী ভাই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান গণআন্দোলনের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে শুভকামনা জানিয়েছেন। আমি তার লেখাটি প্রকাশ করছি-







বন্দি পাখি যেমন খাঁচার ভিতর ছটফট করে ঠিক তেমনি গত কয়েকদিন ধরে আমিও ছটফট করে সময় পার করছি। আফসোস করছি জীবনের একটা চরম সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার জন্য। যদি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে যে মাটিতে আমি জন্মেছি, যে মাটি আমাকে লালন-পালন করে বড় করেছে, শৈশব থেকে যে মাটি গায়ে মেখে স্বর্গ সুখ অনুভব করেছি সেই মাটির কিছুটা ঋণ শোধ করতে না পারলেও, হয়তো বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ভাইবোনদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল জনসমুদ্রের অংশীদার হিসাবে অন্তত আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারতাম।

দেশ ছেড়েছি বছরখানেক আগে, কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই অনলাইনে বসে আমার প্রিয় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি খবরের কাগজ পড়ার চেষ্টা করি। আনন্দে আত্মহারা হই যখনই একটা ভালো কোনো খবর চোখে পড়ে। সবচাইতে ভালো খবরটা পরেছিলাম এই তো মাত্র কদিন আগে যে দিন বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির খবর ছাপা হলো। ভেবেছিলাম বাংলার আকাশে শুভ মেঘ জমেছে। এই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরবে আর ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেবে সেই সব আবর্জনা যে আবর্জনা আমার জন্মদাত্রী জননী বাংলাকে চির দুর্গন্ধময় করে রাখতে চায়।

কিন্তু হায়! সেই শুভ মেঘ কি আজ কালবৈশেখীর আকার ধারণ করছে? এই সংশয় আমার মনের গভীরে ক্যান্সার রোগের মতো ঠাঁই করে নিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত রাজাকার কাদের মোল্লার মামলায় জাতির অপ্রত্যাশিত এক রায় হয়েছে। যে ক্যান্সার নিরাময় প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমি আমার সেই রোগের কবিরাজ ও দাওয়াই খুঁজে পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি একাত্তরে যেমন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ বিফলে যায়নি ঠিক এই সময়েও শাহবাগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যেসব শিশু কিশোর তরুণ-তরুণী যুবক-যুবতী ছাত্র শিক্ষক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী আইনজীবী শ্রমজীবী তথা আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন, তাদের এই যুদ্ধ বিফলে যাবে না। আমার কবিরাজ তারাই। আর যে দিন তাদের দাবি বাস্তবায়ন হবে বাংলার আকাশে কলঙ্কমুক্ত হাস্যময় সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে দাবড়িয়ে বেড়াবে সেই সফলতাই হবে আমার অন্তরে ঠাঁই নেয়া কষ্ট নামক ক্যান্সারের দাওয়াই।

প্রযুক্তির কল্যাণে কোনো কোনো টিভি চ্যানেলের খবর সরাসরি দেখতে পাই। গত রাতেও দেখছিলাম। দেখলাম লাখো প্রতিবাদী কণ্ঠে বিভিন্ন স্লোগানে শাহবাগ এলাকা কাঁপিয়ে তুলছে। সাথে সাথে মনে পড়ে গেল সেই ছোটবেলার কথা। যখন টিভিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো ছবি দেখতাম। মুক্তিযোদ্ধারা হাতে অস্ত্র নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বন জঙ্গল নদী খালবিল পারি দিচ্ছে। তারপর শত্রুদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ। কেউ আহত, কেউ নিহত, আর যুদ্ধ শেষে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা অস্ত্র উচিয়ে স্লোগানসহ বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে ফিরে আসছেন। আমি সেই একাত্তরের যোদ্ধাদের সাথে আজকের যোদ্ধাদের তুলনা করছি না, কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সাথে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের তথা জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, যে দেশ আপনারা মুক্ত করেছেন সেই দেশের কিছু ঘৃণ্য জঘন্যতম যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর দাবিতে মায়ের হাতের খানা ত্যাগ করে দিন রাত যে রাস্তায় পড়ে আছে সেই রাস্তা কি আপনাদের রণাঙ্গনের সামিল না? সময়ের পরিবর্তনে হয়তো প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশমাতৃকার জন্য আরাম-আয়েশ পরিত্যাগে কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি, আজকের যোদ্ধারাই তার প্রমাণ। আমি মিনতি করি তাদের যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। আজ ঘরে বসে না থেকে আর একটি যুদ্ধ দেখুন। দেখুন কীভাবে যোদ্ধারা যুদ্ধ করছে। আমার মতো যারা আজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তারা আজ শাহবাগের আন্দোলনে শরিক হতে না পারার কত কষ্ট তা হারে হারে টের পাচ্ছেন। আমার একাত্তরের বহু পড়ে জন্ম তাই আফসোস করি কেন একাত্তরের আগে জন্ম নিলাম না। তাহলে আমার পুণ্যভূমির জন্য জীবনটা উৎসর্গ করতে পারতাম। আর আজ বহুদূর থেকে সেই সব ধন্য বাঙালিদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে মোবারকবাদ জানাই যারা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন ওই রাজাকার আল-বদরদের বিরুদ্ধে। দেশের বাইরে অবস্থান করা লাখো প্রবাসী বাঙালিদের পক্ষ থেকে তোমাদের বলতে চাই, এগিয়ে যাও বন্ধুরা। তোমাদের বাসনা পবিত্র। তোমাদের সাহস অবিচল। তোমরা এক মহৎ সিদ্ধান্তে একতাবদ্ধ। তাই জয় তোমাদের হবেই। প্রতিবাদী কণ্ঠ নিয়ে রাজপথে আজ আমার যে ভায়েরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছ তাদের জন্য দোয়া করছি। দোয়া করছি সেই বিজয় লক্ষী বোনদের জন্য যারা মাইক্রোফোনে দিনের পর দিন সবাইকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। পত্রিকায় দেখলাম ওদের কাউকে কাউকে অগ্নিকন্না উপাধি দেয়া হয়েছে। আমি বক্তিগতভাবে কত খুশি হয়েছি তা হয়তো বুঝতে পারব না। কিন্ত শুধু তারাই নন, যে বোনেরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই আন্দোলনের শরিক হয়েছেন তারা সবাই এক একটি জলন্ত আগুন। সুতরাং এই দাবি করারও অবকাশ নাই যে আমার প্রতিটা বোনই অগ্নিকন্না। আমরা অপেক্ষায় জেগে আছি তোমাদের কাছ থেকে সেই খবরের, যে খবরের জন্য তোমরা লড়ছ। বাংলার প্রতিটা মা তোমাদের জন্য দোয়া করছে, মায়ের দোয়া বিফলে যায় না, তোমরা অবশ্যই সফল হবে, আমরা দূর থেকে হাততালি দেব। আনন্দে উদ্বেলিত হবো, মাথা উঁচু করে বলব আর কোনো রাজাকার আমার দেশে নাই।

আমরা আগাছামুক্ত বাংলায় বাস করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.