নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝা এবং মানুষের চিন্তার গতি প্রকৃতির সাথে পরিচিত হতে প্রয়াসী

বাঙলি

আমি প্রথমে মানুষ, পরে বাঙালি, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি- এই আমার পরিচয়। এ পরিচয় নিয়েই মরতে চাই.........

বাঙলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিতর্ক সৃষ্টিকারীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৯

দেশের সাধারণ মানুষ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দণ্ড দাবিতে সোচ্চার ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপিসহ দেশের বিশিষ্ট কিছু বুদ্ধিজীবী (পথভ্রষ্ট বামপন্থি বুদ্ধিজীবী) আকারে-ইঙ্গিতে, ইনিয়ে-বিনিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করছেন।



স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়- কেউ সরবে কেউ নীরবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর আর্তনাদ মোচনের একটাই পথ- অপরাধীদের দণ্ড কার্যকর করা। কিন্তু যারাই এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন বা বিতর্ক তুলছে বুঝতে হবে তারা এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। তারা যুদ্ধাপরাধী জামাত, রাজাকার, আল বদরের সুবিধাভোগী- তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।



জামাত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করবে- এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত (বিএনপিরও দু’জন নেতা এই অভিযোগে অভিযুক্ত) এবং কারান্তরীণ। কিন্তু বিএনপি প্রকারান্তরে কেন যে এই বিচারের বিরোধিতা করছে সেটা বোধগম্য নয়।



দলটি সবসময় (জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে) দাবি করে আসছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, তাহলে কেন দলটি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে?



একবার বলছে বিরোধী দলকে দমন করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ৪২ বছর পর সরকার এ বিচার শুরু করেছে। কখনও বলছে এই বিচার কার্যক্রম স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নয়। কখনও বলছে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে সকল যুদ্ধাপরাধী রয়েছে আগে তাদের বিচার করা হোক, কখনও ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ- ইত্যকার নানাবিধ কথা। দলটির পক্ষ থেকে একবারও নিশর্তভাবে বলা হয়নি- তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য দলটি বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ছড়াচ্ছে। অসত্য-অর্ধসত্য তথ্য প্রচার করছে।



তার কিছু নমুনা- শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, তাহলে এখন কেন তাদের বিচার করা হবে।



এটি একটি অর্ধসত্য প্রচারণা, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইন করেছিলেন (যে আইনে বর্তমানে বিচার কার্যক্রম চলছে) বিচারও শুরু করেছিলেন। অনেকেই সাজাও পেয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের দীর্ঘ তালিকাও করা হয়েছিল (মুজিবের মৃত্যু পরবর্তী সরকার সেগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করেছে)।তালিকা অনুযায়ী সাধারণ অপরাধীদের ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও যারা- গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনের মতো অপরাধ করেছিল তাদের ক্ষমা করা হয়নি। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে জামায়াতে ইসলামিকে বাংলাদেশে নিষদ্ধও করেছিলেন।



১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তান সরকার করবে- এমন চুক্তির (জেনেভা কনভেনশনের আওতায়) মাধ্যমে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দু-দুবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএনপি এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়টি অজানা থাকার কথা না। তাহলে কেন এ প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে?



সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীসহ কয়েক জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিএনপি-জামাত জোটের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং গত বুধবার (১৩ মার্চ, ২০১৩) তাদের বিচার আগে করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।



খুবই ন্যায্য কথা, তারা যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকলে অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী দলীয় কার্যালয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে দাবি জানালেই তো আর বিচার পাওয়া যাবে না- তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে। তিনি কিংবা তার দলের কোনো নেতা বা সমর্থককে দিয়েও তো চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বা করাতে পারেন। সরকারি মন্ত্রী বা উপনেতার বিরুদ্ধে আদালত মামলা গ্রহণ না করলে বরং তারই লাভ। তিনি জোর গলায় প্রমাণসহ বলতে পারবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ নয়। কিন্তু তিনি তা করছেন।



৩০ মে, ১৯৮১ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ৯১-৯৬ এবং ০১-০৬ দু-দুবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া কখনই যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে টু শব্দটি করেননি, যদিও তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। বরং ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি যখন গণআদালত করে গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল তখন তিনি ঘাদানিক-এর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করলেন এবং পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে তার নাগরিকত্ব বহাল করেন।



অথচ, জামাত-শিবিরের সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার করার কথা বলেছেন তিনি।



তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতেও তিনি একই ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। যে দাবি সংসদে করার কথা তা না করে তিনি রাজপথের জনসভায়, বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছেন। দাবি মানা না হলে তা আদায়ের জন্য অবশ্যই তিনি রাজপথে নামবেন কিন্তু অফিসিয়ালি দাবি তো উত্থাপন করতে হবে। কিন্তু তিনি ও তার দলের সংসদ সদস্যরা তা না করে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সংসদ বয়কট করে যাচ্ছেন।



যদিও সংসদীয় কমিটির মিটিংগুলোতে বিএনপির সংসদ সদস্যরা নিয়মিতই হাজির থাকছেন, সরকারি খরচে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন- কিন্তু সংসদে যাচ্ছেন না। সংসদে তাদের প্রস্তাব গৃহীত হবে না তাই সেখানে কোনো কথা বলা যাবে না- এমনটাই তাদের যুক্তি। কিন্তু গৃহীত হোক বা না হোক দেশ ও দশের স্বার্থে কথা বলার জন্যই তো ভোটাররা আপনাদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন।



দেশের তরুণ প্রজন্ম তথা সর্বস্তরের মানুষ যখন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে অহিংস আন্দোলনে নেমেছে, যুদ্ধাপরাধী জামাত-শিবিরের অতীত কর্মকাণ্ড যখন দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত হচ্ছে, উন্মোচিত হচ্ছে বিএনপির মুখোশ ও জামাতপ্রীতি তখন গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে খালেদা জিয়া নোংরা মন্তব্য করে দেশ ও জাতির সামনে আবারও নিজেকে বিতর্কিত করলেন।



তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার চান না বরং জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের ঘোলা পানিতে ক্ষমতার মাছ শিকার করতে চান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.