নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব জটিল,ভীষণ সহজ এবং আবেগী নিতান্তই সহজ-সরল খোলা মনের মানুষ...আমার অভিধানে কান্না বলে কিছু নেই, তবে কষ্ট পাই খুব সহজে... যে যা দেয় তা ফিরিয়ে দেই। সে যদি হয় ভালোবাসা, তবে ভালোবাসা, অবহেলা হলে অবহেলা, কষ্ট হলে কষ্ট... আমার এ নীতি থেকে আজ পর্যন্ত বিচ্যুত হইনি,হতে চাইও না...।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আজ এই বাড়ি তো কাল সে বাড়ি। কাল রাতে যেখানে ছিলাম আজও সেখানেই রাত্রি যাপন করব বলে স্থির করেছি। বন্ধুর বাড়ী সে থাকে বিদেশে বউ নিয়ে, বাড়ীতে খালাম্মা খালু ছাড়া কেউ থাকে না, দক্ষিনে মুখ করা এই বাড়ীটি আমার থাকার জন্য চমৎকার কিন্তু এত থেকেছি যে ইচ্ছে করলেই আমার অবস্থান প্রশাসন জেনে যাবে খুব সহজে। তাই এখন মাঝে মাঝে থাকি। কাল রাতে দেখেছিলাম আমার বন্ধুর বিশাল জানালা ওয়ালা রুমটি দীর্ঘ দিন অব্যবহারিত থাকার কারনে বিছানা চাঁদরটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে আর তাই আজ জীবনে এই প্রথম আমি বিছানার চাদর কিনলাম। সাদা কাপড়ের জমিনের উপর কালো আর গোলাপী নকশা আঁকা।এক অসাধারণ! সৌন্দর্য যেন লুকিয়ে রয়েছে আমার কেনা এই চাদরটির ভেতর।
কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও নাকি ধান ভাঙ্গে আর তাই পূর্ণিমা রাতে প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা দমিয়ে রাখা কি আমার পক্ষে সম্ভব...? আর আমি তা পারছিওনা।।
রাতের নীল আকাশ, আকাশে ধবধবে চাঁদ, চাঁদের শরীর থেকে মোমের মতো গলে পড়ছে জোছনার আলো, বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশিরবিন্দু। দিনে ভ্যাপসা গরম রাতে কুয়াশা, প্রকৃতির এমন বৈপরিত্য সত্যিই অবাক করার মতো। আমার ঘরের পাশে একটি নিম গাছ, সে গাছের ডালে পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে, প্রকৃতিতে বইছে মৃদুমন্দ কোমল বাতাস। ঘাসফড়িংয়ের মত লাফালাফি করছে জোছনা। খরখোশ যে রকম সবুজ ঘাসের উপর গড়াগড়ি করে জোছনাও এসে আমার বিছানার চাদরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই যে রাতের শিশির, পাখির ডানা ঝাপটানো, ঘাসফড়িং, খরখোশ এবং জোছনার আলো এগুলোর মধ্যে কি এমন যোগ সাযুজ্য রয়েছে তা আমি জানিনা। তবে আমি একথা বলতে পারি, এই পূর্ণিমা রাতে আমার জানালাটি আমি খোলাই রেখেছি। আমি খুলে রেখেছি আমার প্রিয় জোছনার জন্য, জোছনার প্রবেশের পথ সুগম হওয়ার জন্য, জানালার গ্রিলের উপর এসে পড়ছে আমার প্রিয় সেই জোছনার আলো। আমার বিছানায় এসে পড়ছে সে জোছনার ছায়া। আমার ঘরে আষাঢ়ের বন্যার মতো ঢুকছে জোছনা। জোছনায় টলমল করছে আমর পুরো ঘর। জোছনার ঢেউ খেলছে সেগুন গাছের নকশা করা খাটে কারুকার্যময় বিছানার চাদরের উপর। আমি বিছানায় শুয়ে দু’পা জানালার গ্রিলের উপর তুলে দিয়ে তাকিয়ে আছি চাদের দিকে, আমার পলক যেন নড়ছেনা। যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। খুশিতে আমার মন নেচে উঠছে বারবার। আমি পুলকিত! শিহরিত! রোমাঞ্চিত! জোছনায় মাখামাখি হচ্ছে আমার শরীর। চাঁদের আলোতে গোসল করছি আমি, এ আমার পরম সৌভাগ্য! আমি অনিমেষ চোখ মেলে কেবল তাকিয়ে আছি গভীর রাতের ঝিকিমিকি জোছনার আলো আমাকে পাগলপারা করেছে। এক সময় নিদ্রা দেবতা বাঁশি বাজিয়ে জানান দিল ঘুমের সময়ের, আমিও তার আহবানে সাড়া দিয়ে স্বপ্ন দেবীর হাত ধরে চলে গেলাম তার রাজ্যে।
আমি সদ্য কেনা বিছানার চাদরের উপর শুয়ে আছি, জোছনার আলো এসে পড়ছে আমার ঘরের ভেতর, আমার শরীরের উপর, আমার হাতের উপর। গাছের ডালে নাম না জানা কোনো এক পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে, জোনাক জ্বলছে আবার বৃষ্টিও পড়ছে। এমন সময় এক অপরূপা দীর্ঘ কেশবতী মানবী চুল এলিয়ে বসলো আমার খাটের উপর। বিশ/ একুশ হবে মেয়েটির বয়স। খুব পরিচিত মনে হল কিন্তু কে এবং এর ঠিক কতদিন বা ক্ষন আগে তাকে আমি দেখেছি মনে পড়ছে না। আমার কাছে মেয়েটির মুখ মায়াবী লাগছিল। দাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকঝক করছে, তার চোখজোড়া দিয়ে যেন জ্যোতির আলো বের হচ্ছে। মেয়েটি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও কেবল তাকিয়েই আছি। দু’জনের চার চোখের দীর্ঘ মিলনের পর মনে হল মেয়েটি কি যেন বলতে চাইছে আমাকে। আমি মেয়েটিকে আমার দিকে টেনে আনতে চাইলাম। সে বলল, অপেক্ষায় থাকো। পরে আসবো। একথা বলে মেয়েটি বের হয়ে গেল। আমি তাকে ধরার চেষ্টা করতেই মনে হল বিশাল উঁচু কোন পাহাড় হতে নিচে পড়ে যাচ্ছি এমন সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, আমার কাছে সবকিছু কেমন ঝাপসা মনে হতে লাগল, কেবল মেয়েটির মায়াবী মুখটি আমি ভুলতে পারলাম না। আমার চোখের মণিতে খোদাই হয়ে আছে মেয়েটির মায়াবী চেহারা, মেয়েটির জন্য আমাকে কতদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে কে জানে!
©somewhere in net ltd.