নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি হলো আমার জগত, আমার মানস ভ্রমণের অখন্ড মানচিত্র । কল্পনার চরিত্রগুলোকে আমি লেখার জগতে বাস্তবতার ন্যায় সদর্পে চারণ করাতে চাই। আমি তাদের হাসি কান্না সুখ দুঃখে তুলির আঁচড় ছুঁয়ে দিয়ে অপছন্দের আঁকগুলো ইরেজার দিয়ে ঘষে তুলে বসাতে চাই কল্পনার রঙ ।

শাফায়াত উল্লাহ রহমত

খুব জটিল,ভীষণ সহজ এবং আবেগী নিতান্তই সহজ-সরল খোলা মনের মানুষ...আমার অভিধানে কান্না বলে কিছু নেই, তবে কষ্ট পাই খুব সহজে... যে যা দেয় তা ফিরিয়ে দেই। সে যদি হয় ভালোবাসা, তবে ভালোবাসা, অবহেলা হলে অবহেলা, কষ্ট হলে কষ্ট... আমার এ নীতি থেকে আজ পর্যন্ত বিচ্যুত হইনি,হতে চাইও না...।

শাফায়াত উল্লাহ রহমত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী ও পুরুষ: এক অযৌক্তিক বিতর্ক।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১০

যে নারী পতিতাবৃত্তি করে তার কাস্টমার বা খদ্দের কিন্ত পুরুষই। আবার যে পুরুষকে অহর্নিশ গালি দিয়ে যাচ্ছি সেই পুরুষই কখনো বৃষ্টিতে ছাতা ধরছে কিংবা বিপদে ছায়া হচ্ছে নারীর। যে পুরুষ পরের স্ত্রী,বন্ধুর স্ত্রী, পাড়ার ভাবী, চাচাতো-ফুফাতো বোন, বান্ধবী কিংবা অন্যের গার্ল ফ্রেন্ডের প্রতি বেশী ভালবাসা দেখায় সেই ভালবাসটাও একজন নারীর প্রতিই। সেই ভালবাসায় আবার নারীর ইশারা বা সম্মতিকে ইগনোর করার মধ্যে কৃতিত্বও নাই। কেউ কেউ নিজের স্বামীর পকেট ভারী না হলে অন্য কারো স্বামীর প্রাচূর্য যেমন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে থাকে তেমনি যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচারে প্রাণ হারানোর ঘটনাও উদ্বেলিত করে।

একজন পুরুষ যেমন তার নিজের স্ত্রীর চেয়ে অন্যের স্ত্রী তথা ভাই, মামা,কাকা, দাদা বা বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি দরদ দেখায় বা তাদের জন্য যে সমব্যথী হয় মর্মে নারীর অভিযোগ, সেখানে ভাবতে হবে যাদের জন্য দরদ দেখায় তারাও কিন্তু নারী। আসলে এখানে দুটি ব্যাখা প্রযোজ্য । এক. পুরুষ স্বভাবগতভাবেই স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা বা কেয়ার প্রকাশ করতে পছন্দ করেনা, দুই. তার স্ত্রীর জন্যও অন্য কারো দরদ বা সমব্যাথা রয়েছে(কুট তর্কের খাতিরে বলা)। অন্যদিকে একজন নারীও কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর বাড়ীর মানুষদের থেকে নিজের ভাই, বাবা, চাচা বা খালুর জন্য বেশী দরদী থাকে সেটাও ভাবা দরকার। আসলে কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের সহজাত, পারিবারিক বন্ধন বা মায়া, কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে যেগুলো সামাজিক কারণে প্রতিপালন করতে হয়, কিছু দায়িত্ব আছে যেগুলো পালন করতে হয় প্রচার বা প্রকাশ ছাড়াই। আমরা পুরুষ- নারী সবাই সবাইকে দোষারোপ করতে থাকি। কেউ কম কেউ বেশী। মনে রাখা দরকার নারী যতটা চোখের পানি ফেলতে পারে পুরুষ তার অর্ধেকও পারেনা, তারমানে এই নয় যে পুরুষরা পাষাণ। আসলে প্রকাশটা দুরকম, কারো জ্বালা বুকের মধ্যে কারো চোখে, এটাও ঘটনাভেদে উভয়ের বিপরীত চিত্র দেখা যায়।

নারী বিদ্বেষ:

নারী খুব লোভী নারী ছলনাময়ী, নারী সংসারে অশান্তির জন্য দায়ী, স্ত্রী শুধু বাপের বাড়ীর টান টানে, ইত্যাদি নানা রকম অভিযোগ নারীর প্রতি। অভিযোগের ধরন একই এবং উহার সরলীকরণ সত্যি হাস্যকর। একই নারী স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নিজের জন্য কখনো যে ভাল খাবার রেখে দেয়নি কোনদিন, নিজের কষ্টকে আড়ালে রাখতেই যে নারী যুদ্ধ করে যাচ্ছে আজীবন সে হয়তো অভিনয়ই করছে, জীবনের সেরা অভিনয়।আর এ অভিনয়টা সব পুরুষের মায়েরাই করছে অনাদিকাল ধরে। যে বোনকে পৃথিবীর অন্যতম সেরা নারী বা নির্লোভ ও নির্মোহ মানুষ বলে দাবী করছি সেই বোনকেই তার স্বামী অপবাদ দিচ্ছে লোভী কিংবা ঝগড়াটে হিসেবে। এখানে দুজনই পুরুষ কিন্ত দুরকম কথা বলছে। তাহলে কোনটা সত্য। যে নারীর পেছনে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডজন খানেক পুরুষ তথা বন্ধু,কাজিন, প্রতিবেশী, শিক্ষক বা ক্লাসমেট পাগলের মত ঘুরঘুর করেছে সেই পুরুষদের মধ্যে কেউ নারীকে বলছে অভিনেত্রি বা ছলনাময়ী, কেউ বলছে আনারকলি বা ক্লিউপেট্রা। যে মেয়েটা রাতের আলো আধারীতে ফেস পাউডার,লাল লিপস্টিক আর পারফিউমের টানে বাধতে চায় কাউকে। সেই মেয়েটাকে দেখলেই নৈতিকতা ও সভ্যতার অবক্ষয়ের বুলি ছড়াতে থাকে কেউ, আবার কেউ সেই কড়া লিপস্টিকের টানেই ঘড় বাধে শুধু জীবনকে ভালবাসায় রঙিন করার আশায়। এখানেও দুজন পুরুষ একজন নারী তবে নারীর প্রতি আচরণ দুধরণের।

পুরুষ বিদ্বেষ:

পুরুষরা খুব খারাপ, অন্য নারীতে আসক্তি বেশী, বহির্গামী, বউয়ের প্রতি অমনোযোগ, ইত্যাদি। আচ্ছা কখনো কি ভেবে দেখেছেন কতজন পুরুষ খারাপ হিসেবে প্রমানিত? শতকরা প্রায় শতভাগ স্ত্রীর কমন অভিযোগ “তুমিই একমাত্র স্বামী যে বউকে একটুও ভালবাসেনা।” অথবা “শুধু তুমিই এমন আমার অমুক বান্ধবীর স্বামী কত ভাল” আসলে খবর নিয়ে দেখেন সেই বান্ধবীও নিয়মিত প্রাত:রাশ করার মত একই ডায়ালগ নিত্যই ছাড়তে থাকে। আর নারীরা খুব সহজেই বায়বীয় পদ্ধতিতে পুরুষের চরিত্র সেকেন্ডে মেপে ফেলতে পারে এবং সেটার কমন রেজাল্ট পুরুষের চরিত্র খারাপ। কখনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার স্বামী কিংবা অন্য একজন বদ পুরুষের জন্য আপনি আপনার বাবা কিংবা ভাইকেও ছাড়লেন না? আপনি কি জানেন আপনার বাবা আপনার জন্য মনের আড়ালে কত-শত ভালবাসার গোপন পাহাড় সাজিয়ে রেখেছে? আপনি যখন খুব ছোট তখন কি আপনি অনুভব করেছেন বিশ বছর পরে আপনার বিয়ে হবে সে চিন্তায় আপনার বাবার চোখে মাঝে মাঝে পানি আসতো। আপনার জন্য কত বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে আপনার ভাইটা। তারাওতো পুরুষ। আপনার বাবাও কিন্ত একসময় যুবক ছিল, হয়তো কোন মেয়ের পেছনে ফুল নিয়ে ঘুরেছে, রাস্তায় অপেক্ষা করেছে, তাকে দেখে দু-একটা গানের লাইন বলেছে, প্রাইভেট পড়ার সময় আড় চোখে তাকিয়েছে। সেখানে হয়ত কোমল মনের ভালবাসাই ছিল। আবার বাবার কোন বন্ধু যে বদ কিংবা খারাপ ছিলনা সেটাও বলছিনা। তবে সে সংখ্যা সেদিনও কম ছিল এখনও কম। এখন যে ছেলেটা আপনার জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে ফুল নিয়ে তার মনের খবর কি আপনি জানেন। যদি খারাপ উদ্দেশ্যে না হয় তাহলে কেন তাকে খারাপ ছেলে বলে গালি দেবেন? নাকি আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করছে অন্যের চরিত্র । বিয়ের পরের ভালবাসাও সবসময় অপরাধ নয়, সেটা যদি শুধু সত্যিকারের ভালবাসা হয়, খারাপ উদ্দেশ্যে প্রেম সেটা বিয়ের আগে বা পরে কোন মৌলিক পার্থক্য করেনা। পাশ্চাত্যে আবেগকে গুরুত্ব দেয়া হয় সামাজিকতার উর্দ্ধে, আমরা সামাজিক কারণে হয়তো সেটাকে সমর্থন করিনা। কিন্তু দু-একজনের মনের আবেগ যে নেই পাশ্চাত্যকে ধারণ করার সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়না।

যাহোক, আসলে পুরুষ ও নারী দুটি পক্ষ নয় বরং একে অপরের পরিপুরক। কেউ বড় বা কেউ ছোট সে বিতর্কে না যাওয়াটাই শ্রেয়। কিছু কাজ আছে যেগুলো নারীরা চাইলেও পারবে না আর কিছু আছে পুরুষরা চাইলেও পারবেনা।নারী পুরষের সম্প্রীতির জন্য শুধু প্রয়োজন পারস্পরিক স্বীকৃতি, শ্রদ্ধাবোধ ও একের অনে্যর প্রতি বিশ্বাস,ভালবাসা ও অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। নারীর যখন জোসনা দেখতে ভাল লাগে সবসময় পুরুষের ভাল নাও লাগতে পারে। আবার পুরুষের যখন নারীর কাজল চোখে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে নারীর তখন রান্নার ব্যস্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু অযথাই দোষারোপের সংস্কৃতি একের অপরের শান্তি ও শ্রদ্ধা বিনষ্ট করে। সৃষ্টি করে ঘৃণার দেয়াল, ভালবাসার আলো আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। শিশির কাব্যে ভেজা সুন্দর সকাল হটাত করেই কালো মেঘে ঢেকে যায়। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া, শিলা বৃষ্টি, প্রচণ্ড ঝড়….. তারপর সব শান্ত হয়ে যায়, গাছের ডাল এবং ফুল দুটো দুদিকে পড়ে থাকে নিস্তেজ হয়ে। একে অন্যের আশ্রয় খোজে কিন্তু সে সময় আর থাকেনা। সেই বৃষ্টি ভেজা মাটিতেই নতুন করে জন্ম নেয় আরো দুটি ভ্রুণ, বেড়ে উঠে একই ভাবে, একই চেতনায় বা উপলব্ধিতে, শুধু পরিবর্তন হয়না দৃষ্টিভঙ্গির। আবার শুরু হবে যুদ্ধ, একই অস্ত্র, একই ময়দান, একই দাবী, একই স্লোগান…নারী নাকি পুরুষ, কে বড় কে ছোট কার বেশী সম্মান। আমি বলি, এবার থামো, দুজনেই মানুষ, এসো গাই সমবেতসুরে, মানুষের জয়গান।

জয় হোক মানবতার

09-03-2020

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২১

রাজীব নুর বলেছেন: নারী পুরুষে ভেদাভেদ করা ঠিক না।
এই যুগে এসে নারী বা পুরুষে বিদ্বেষ থাকা ঠিক না।

২| ১০ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪২

কানিজ রিনা বলেছেন: সকল কথার এক কথা ৯০% পুরুষ একনারীতে
খুশি না। পতিতার পতি পুরুষরাই অর্থাৎ বেশ্যার
কোনও জেন্ডার নাই। অথচ পতিতার পতিরা
সকাল হলে প্যান্ট সার্ট পড়ে ভদ্র রুপ ধারন
করে। আর পতিতাদের গায়ে লেবেল থাকে
সে পতিতা। পতিদের গায়ে লেবেল থাকেনা।
এখানেই নারীর সাথে পুরুষের বড় বৈশম্য।

একটা নারী যতই জজ ব্যারিস্টার হোক স্বামী
থাকতে যদি অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায়
সে আর স্বামীর ঘরে জায়গা পায়না। সে নীচু
সমাজ হোক উঁচু সমাজ হোক।

কোনও পুরুষের অতি আদরের বোন বা কন্যা
শশুর বাড়ি নির্যাতিত হলে তখন গায়ে বাধে।
ভেবে দেখেনা আমার স্ত্রী কিংবা মা নির্যাতিত
হয়েছিল কিনা।
পুরুষরা যখন পরোনারী কাতর হয় অথচ
নিজের মেয়ে স্ত্রী বোনের দিকে কারো কু
নজর পরলো কিনা সে দিকে দারুন সচেতন।

৩| ১০ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৫৪

নতুন বলেছেন: আসলে নারীরা পুরুষদের থেকে শক্তিশালী।

প্রকৃতিতে নারী জাতির কদর করে পুরুষরা, মানুষেরা পেশী শক্তি দিয়ে নারীদের নিয়ন্ত্রনে রাখে ।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০১

নীল আকাশ বলেছেন: হুুম, দুই পক্ষ থেকেই বিশ্লেষন করেছেন। লেখা ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.