![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশাল সাগরের মতই আমার নিঃসঙ্গতার গভীরতা......নিঃসঙ্গতাতেই খুঁজে পাই আনন্দ......
- ভাই, একটু কষ্ট হবে উঠতে।
- আরে নাহ, আমার অভ্যাস আছে, অসুবিধা নাই।
- আপনেও কি এত উঁচায় উঠানামা করেন নাকি সিঁড়ি দিয়া?
- না, কিন্তু ছোটবেলার খেলাধুলার রেশ এখনও শরীর থেকে যায়নাই, বুঝো তো!
দুই মানুষ চওড়া সিঁড়ি বেয়ে আমি আর সিয়াম উঠছি, গন্তব্য ছয়তলা উপরে সিয়াম আর মালিহাদের বাসা। দুই ভাই বোন ঢাকায় একইসাথে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে, এক মাস আগে মাত্র। মিরপুরের কাছাকাছি ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া করেছে আরো আগেই, কোনভাবে।
মালিহার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। আমার প্রেমিকার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর আমি বেশ ভালোভাবেই ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ি। সকালে ঘুম ভাঙ্গলে ভার্সিটির ক্লাসে যেতাম, নইলে সারাদিনই ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকা হত। বাস্তব জগতের মানুষগুলো থেকে নীল-সাদা অবাস্তব জগতটাই ভাল্লাগতো আমার। মালিহার সাথে পরিচয়টাও ঐভাবেই। কিভাবে বা কে কাকে আগে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম, তা মনে করতে পারি না; কিন্তু বেশ ভালোভাবেই মনে করতে পারি যে দু’জনে রাতের পর রাত জেগে কতকিছু নিয়ে কথা বলতাম, সেগুলোর কথা। রাতের পর রাত পার হয়ে যায়, ফেসবুক থেকে সম্পর্কটা চলে আসে ফোনালাপের মাঝে।
আমাদের প্রথম দেখা হয় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। তার এইচ,এস,সির পর সে ভর্তি কোচিং এর জন্য ঢাকা আসে, আমাকেও বলে সময় সুযোগমত দেখা করার। দেখা হওয়ার পর বোঝা গেলো যে, চ্যাটে মালিহা যতটাই সপ্রতিভ আর ছটফটে, বাস্তবে সে ততটাই লাজুক। সারাক্ষণ চুপচাপ সে আমাকে চোরা চোখে দেখে গেলো, আর আমি আমার স্বভাবমত বকবক করে গেলাম। বেশ তাড়াতাড়িই কাটলো বিকালটা। বিদায় নেবার আগে সে হুট করে আমার হাত আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, আমি অবাক হয়ে মাথা নিচু করে থাকা তার দিকে চেয়ে থাকলাম। মন চাচ্ছিলো তার হাতটুকু আমিও শক্ত করে ধরে থাকি, পারলাম না। আমাকে ওভাবেই অবাক করে রেখে সে চলে গেলো। আমার সম্বিৎ ফিরে আসে ফোনের মেসেজ টোনে, তার নম্বর থেকে আসা, “যদি বলি ভালোবাসি, পারবে কি আমার হাতটি ধরে হাঁটতে?”
সেদিন রাতটি নির্ঘুম কেটে গেলো আমার। মালিহার সাথে সম্পর্কটা যতই গভীর হোক না কেন, আমার মনে আমার প্রথম প্রেমিকার স্মৃতি তখনও অম্লান। এতদিন মালিহার সাথে কথা বলে যাও ওকে ভুলে থাকতে পারতাম, কিন্তু সেই রাতটিতে আমার আবার ভয় হচ্ছিলো, যদি আমি আবার কোন সম্পর্কে জড়াই, তাহলে কি আমি নতুনজনের মাঝে প্রথমজনকে খুঁজে বেড়াবো না তো? আবিষ্কার করলাম, বিকালে মালিহার হাত ধরতে না পারার কারণ এটাই, কারণ আমি আমার প্রথমজনকে এখনও ভুলতে পারিনি। আর ঐ ভালোবাসার কবরের উপর অন্য কারো ভালোবাসার ফুলগাছটি লাগানো তো বোকামিই, না?
তিন-চারদিন পর মালিহা নিজেই আমার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফেসবুকের ইনবক্সে “Maliha Rahman” নামটিও নীল থেকে কালো হয়ে যায় সেইদিনই। আমি আগ থেকেই প্রস্তুত ছিলাম, অতটা কষ্ট পাইনি মনে হয় সেজন্যই। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভুলার আগে আর কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াবো না। দিনগুলো আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছিলো, আমিও মোটামুটি পুরনো সবকিছু ভুলে আস্তে আস্তে পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়া শুরু করলাম। মাঝে মাঝে ফোনবুক ঘাঁটতে গিয়ে মালিহার নম্বর এসে পড়তো সামনে, মনের মাঝেই কোথায় যেন একটা চাপা কষ্টের অনুভূতি টের পেতাম তখন।
গতকাল ক্লাস থেকে বের হয়ে মালিহার নম্বর থেকে পাঁচটা মিসকল দেখে আমি যতখানি অবাক হয়েছিলাম, ততখানি অবাক হওয়া বোধহয় আর কারো পক্ষে সম্ভব না। ক্লাস থেকে বের হয়েই তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলাম, এবং যার ফলশ্রুতিতেই এই রাতের প্রথম প্রহরে মিরপুরের একটি অচেনা এলাকায় মালিহার ভাইয়ের সাথে আমার আসা।
দরজা খুলে দিলো মালিহা, আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। চেহারায় অনিয়মের ছাপ স্পষ্ট, চোখের নিচে কালো দাগ, গায়ের রঙটাও মনে হলো একটু ময়লা হয়ে গেছে। আমাকে দেখে হালকা একটা হাসি ফুটে উঠলো তার কালচে-লাল ঠোঁটে।
- তুমি একটুও বদলাওনি, ঠিক আগের মতই আছো!
- আর তুমি একদমই বদলে গেছো......কিভাবে?
- আগে আসো, গল্প করার জন্য সারারাতই তো পড়ে আছে, না?
ভেতরে ঢুকলাম, রুমে মেঝের মাঝে তোষক রাখা, সেখানেই রাতের খাবার সাজানো। বেশী আসবাব নেই রুমটিতে, এক কোনায় ল্যাপটপ-ফোন-ট্যাবের চার্জারের তার একসাথে জট পাকিয়ে আছে। ওয়াল হ্যাঙ্গারের মাঝে আর তোষকের এক পাশে মালিহা-সিয়ামের কাপড়-চোপড় এলোমেলোভাবে রাখা।
খেতে বসে মালিহার পরিবর্তনে আসলেই অবাক হলাম আমি। যেই মালিহাকে আমি ধানমন্ডি লেকের পাড়ে দেখেছিলাম সারাক্ষণ মাথা নিচু করে থাকতে, সেই মালিহা এখন কোথা থেকে যেন রাজ্যের কথা বলে যাচ্ছে, এবং সেই কথা বলা খাওয়ার পরও শেষ হল না। আরো অবাক হলাম মালিহা যখন আমাকে সিগারেট অফার করলো। হতভম্বের মত বারান্দায় বসে আমি ওদের দুইজনের সিগারেট টানা দেখলাম। মালিহার চোখের মাঝে তখন শান্তির ঝিলিক, মিটিমিটি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে ও; আমাকে অবাক হতে দেখে যেন খুব আনন্দ পাচ্ছে।
চাঁদের আলোয় তখন পুরো দুনিয়া উদ্ভাসিত। সিয়াম ভিতরে চলে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। বারান্দায় বসে আমার আর মালিহার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। যতই ভালোমানুষি দেখাই না কেন, ভিতরে ভিতরে ঠিকই কিন্তু আমার মাঝের ঘুমন্ত পশুটা জেগে উঠছে। আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে, নিজের অজান্তেই তার দিকে এগিয়ে গেলাম। সে বাধা দেওয়ার আগেই তার কম্পমান ঠোঁট স্পর্শ করলো আমার ক্ষুধার্ত ঠোঁট, দেখতে দেখতে শরীরের সব রক্ত জমা হলো তার মুখে। পাগলের মত চুমুর এক ফাঁকে তার মুখ থেকে শুনলাম, “না জাফর, না”; কিন্তু আমি তখন বাঁধনহারা। একটা সময় আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সে, চোখের কোনায় হালকা অশ্রুজল তার। আমাকে আবারো অবাক করে দিয়ে একগাদা কথা বলে গেলো সে।
- দেখ জাফর, তুমিই প্রথম ছেলে যার সাথে আমি আমার জীবনে এতটা মন খুলে কথা বলতে পেরেছি। হয়তোবা তোমাকে আমি তখনো সামনাসামনি দেখিনি, কিন্তু মনে মনে তোমার প্রতি ভালোবাসা কিছুতেই কমাতে পারিনি। সেজন্যই প্রথম দিন আমি তোমার সামনে কোন কথা বলতে পারিনি, শুধু তোমার কথা বলার ধরণ দেখে গেছি; আর সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম, আমি চাইলেও তোমাকে আমার মন থেকে সরাতে পারবো না। আমি চাচ্ছিলাম জিনিসগুলো যাতে ঐদিকে না যায়, কিন্তু আমার কোন উপায় ছিলো না, যেখানে আমি জানি তোমার প্রেমিকাকে তুমি তখনও ভুলতে পারো নি।
- না মানে, আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না যে তোমার মাঝে আমি কি ওকেই খুঁজে বেড়াবো কি না, তাই.........
- একজনের মাঝে অন্যজনকে খুঁজে বেড়ানো মানে কি, জাফর? মানুষ যখন একজনকে ভুলতে পারে না, তখনই তো অন্য কারো মাঝে তাকে খুঁজে বেড়ায়, না?
- তাও ভুল না, কিন্তু......
- এটাই ঠিক, কিন্তু আমি ছিলাম ভুল। তাই তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে আমি শুরু করলাম তোমাকে ভুলার চেষ্টা। কি করিনি আমি, বল! সিগারেট এখন আমার প্রতিদিনকার অভ্যাস, এই ফ্ল্যাটে আমার বয়ফ্রেন্ড হিসাবে কত ছেলে যে এসেছে তা আমি নিজেও জানি না। এতকিছুর পরে তো আমি আর তোমাকে আশা করতে পারি না......
আমি কাছে টেনে নিলাম মালিহাকে, মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। ওর কান্নার শব্দ আস্তে আস্তে কমে আসছে, এক হাতে আমার কাঁধ আঁকড়ে ধরে আছে ও। ওর দেহ ভারী হয়ে আমার বুকের উপর হেলে পড়ার সময় মনে হল, ওকে আমি ভালোবাসি, হোক না সেটা এক রাতের ভালোবাসা। এই এক রাতের ভালোবাসা যদি কাউকে সামান্য খুশি করতে পারে, তবে ক্ষতি কোথায়?
ভাবতে ভাবতে কোলে তুলে নিলাম ওকে, বিছানায় ওকে শুইয়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লাম। নিজে চোখ বন্ধ করে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছি, মাথা থেকে জোর করে সরিয়ে দিচ্ছি আমার প্রথম প্রেমিকার সব স্মৃতি। আজ রাতের জন্য আমার ভালোবাসা শুধুই মালিহার জন্য!
পুনশ্চঃ মালিহার সাথে সেটাই ছিলো আমার শেষ দেখা। মাঝখান দিয়ে উড়ো খবর পেয়েছিলাম, ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ায় আঙ্কেল তাকে জোর করে এক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। এতদিনে হয়তো সেও তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে, পেয়েছে হয়তো তার জীবনের নতুন কোন সঙ্গীকে।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
নিঃসঙ্গ নাবিক বলেছেন: ভালোবাসার মানুষেরা কখনই বদলায় না
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫২
বাংলার ফেসবুক বলেছেন: - তুমি একটুও বদলাওনি, ঠিক আগের মতই আছো