নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান হচ্ছে। মনে হয়, পশ্চিমা শাসকরা বহুদূরে বাংলাদেশে আমাদের দরিদ্র ও অনিশ্চিত জীবনধারাকে নিয়ে জাদুকরের সম্মোহনের খেলায় মেতেছেন।

পশ্চিমা সমাজের সাম্প্রতিক রাজনীতি এখন অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। এই ঘৃণা সৃষ্টির পেছনের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো শ্রেণিসংগ্রাম থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়া। সম্পদের কেন্দ্রিকরণ এবং তার সূত্রে ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ যখন পাশ্চাত্যে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম করেছে, তখন অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পুঁজিবাদী শোষণের ফলে মানুষের শ্রেণিচেতনা তৈরি হওয়ার কথা ছিল; যেটা কার্ল মার্ক্স বিপ্লবের দিকে ধাবিত হওয়ার অনিবার্য পথ হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ইতিহাস সেই পথে পুরোপুরি এগোয়নি। কারণ, মানুষ প্রায়শই তার অর্থনৈতিক শ্রেণি-পরিচয়ের চেয়ে ধর্ম, জাতি বা বর্ণপরিচয়ের ভিত্তিতে সংগঠিত ও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। এই বাস্তবতা কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাবান গোষ্ঠী শ্রেণিবৈষম্যের প্রশ্ন আড়াল করতে অভিবাসী পরিচয়কে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

যদিও ঘৃণার লক্ষ্য অভিবাসী, কিন্তু ঘৃণার কেন্দ্রবিন্দু একটি নির্দিষ্ট ধর্ম সম্প্রদায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্রিটিশ দক্ষিণপন্থী নেতা টমি রবিনসন এ বছর সেপ্টেম্বরে লন্ডনে যে বিশাল অভিবাসন-বিরোধী মিছিলের নেতৃত্ব দেন, সেখানে তিনি মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এই কট্টর ডানপন্থীকে আবার ইলন মাস্কের মতো প্রবল ধনীরাও সমর্থন দিয়েছেন। একই প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতিতেও স্পষ্ট। আমেরিকায় "মুসলিম ব্যান"-এর ঘোষণা, কিংবা "মুসলিমরা আমাদের ঘৃণা করে" এবং "মুসলিম শরণার্থীরা ট্রোজান হর্সের মতো এসে আমেরিকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলবে" - এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করে মুসলমানদের সমষ্টিগত নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ট্রাম্পের ভাষা ও প্রচারণা সংবাদ শিরোনাম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুনরুৎপাদিত হয়ে মুসলিম পরিচয়কে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে একাকার করে ফেলে।

এই ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতির বুদ্ধিবৃত্তিক বয়ানটিও কম শক্তিশালী ও কম বিপজ্জনক নয়। "মুসলমানেরা জুডিও-খ্রিস্টান সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়" - এই বয়ান মানুষের ঘৃণার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সমাজে সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষা ও গম্ভীর বাগ্মিতায় সাংবাদিক ও লেখক মেলানি ফিলিপস যখন বলেন, "ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি ইসলামি যুদ্ধ এবং পশ্চিমা সমাজের জন্য ট্রোজান ঘোড়া; পশ্চিমা সভ্যতা ইসলামের হাতে নিজের ধ্বংসের এজেন্ডা কিনে নিয়েছে; এটি এক মৃত্যুযুদ্ধ, যাকে পশ্চিমা সমাজ মোকাবিলা করতে পারছে না;" - তখন জুডিও-খ্রিস্টান মূল্যবোধের নামে ইসলামকে পশ্চিমা সভ্যতার শত্রু হিসেবে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে গণহত্যা, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার প্রশ্নগুলো ধর্মীয় শত্রুতা দিয়ে আড়াল করা হয়।

মুসলিম সংস্কৃতির ভেতরে যে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা আছে, বাংলাদেশের মুসলমান আর পাকিস্তানের মুসলমান যে এক জীবনধারা ও এক সংস্কৃতির নয়, যেমন নয় ইন্দোনেশিয়ার মুসলমান আর আরবের মুসলমানরা - সে বাস্তবতা উপেক্ষিত থেকে যায়। গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই বৈচিত্র্য ও ভিন্নতার শক্তিকে সহায়তার বদলে পশ্চিমা বিশ্ব সচেতনভাবে মুসলমান সমাজকে একরৈখিক করে উপস্থাপন করতে চায়। মুসলিম মানেই নারীবিদ্বেষী, বহুবিবাহে আসক্ত, জিহাদি, অমানবিক ও শরিয়া আইনের পৃষ্ঠপোষক - এই বিতর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলোকেই ইসলামের সারকথা হিসেবে দাঁড় করানো হয়। এরপর যখন প্রয়োজন হবে তখন সুযোগ বুঝে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বাছাই করা উদাহরণ হাজির করে বলা হবে, এটাই ইসলামি বিশ্ব, এবং এটাকেই আমরা ধ্বংস করতে চাই।

কিন্তু পশ্চিমা সমাজে এমন বহু মানুষ আছেন, যারা ক্ষমতাশীলদের বর্ণবাদী, শরণার্থী-বিরোধী, অভিবাসী-বিদ্বেষী ও ইসলামবিদ্বেষী বয়ানের বিরুদ্ধে যুক্তিবুদ্ধির লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। সেই যুক্তিবুদ্ধির ধারেই সমতা, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো আরও স্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কুচক্রী শক্তির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে, আমরা কি সেই যুক্তিবুদ্ধির দলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করবো, নাকি ধর্মান্ধতার খাঁচায় আটকে থাকা জামাতি রাজাকারদের বিভেদ, ঘৃণা, নারীবিদ্বেষ এবং মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী রাজনীতির স্রোতে ভেসে যাবো?

ব্যক্তি-মানবের সীমা ছাড়িয়ে মনুষ্যত্বের দিকে যে আহ্বান, আমরা কি তারই পথে চলবো, নাকি ধর্মান্ধতা ও মোহগ্রস্ততায় ডুবে নিজেদের কবর নিজেরাই রচনা করবো?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম আপনার লেখা পড়ে ।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ। লেখাটা একটু বেশি ভারী এবং তীব্র হয়ে গেছে বলে আমার ধারণা। যেমন, দ্বিতীয় প্যারায় সম্পদের বৈষম্য, কেন্দ্রিকরণ এবং ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণের বিষয়গুলো খুব বড় আলোচনার দাবি করে, অথচ আমি সেগুলো খুব সংক্ষেপে সেরে ফেলেছি।

এই লেখার অধিকাংশ চিন্তা আমার নিজেরই। এ ধরনের লেখা বোঝার এবং তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার মতো পাঠক ব্লগে বেশি নেই। তারপরও আপনি পড়েছেন এবং আপনার ফিডব্যাক দিয়েছেন দেখে আনন্দিত।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩২

কামাল১৮ বলেছেন: কোরানের ছত্রে ছত্রে ইহুদী বিদ্বেষ।নবী তার জীবনের বেশির ভাগ সময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কাটিয়েছেন।এবং সফল হয়েছেন।এবং আল্লাহ তার পক্ষে ছিলো।আল্লাহ বলেছেন ইহুদিদের কোন রাষ্ট্র হবে না।আল্লাহর বানী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: লেখাটা না পড়েই একটা মন্তব্য করে দিলেন! অশিক্ষিত বর্বর নেড়ি কুকুর হওয়াটা মানুষের অপমান।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫৩

মাথা পাগলা বলেছেন: সমাজে সব ধরনের মানুষ আছে। একদিকে কিছু পরিবারে ছেলে-মেয়ে কথা বলা, গান, নাচ, গিটার, পার্টি সবকিছুই স্বাভাবিক। অন্যদিকে কিছু পরিবারে ধর্ম-কর্মের বাইরে "হারাম" কোন কিছু করাতেই নিরুৎসাহিত। তখন "অন্যদিকের" অনেকের ভেতরেই ইচ্ছা কাজ করে, আবার তুলনাও আসে, "আমরা না পারলে ওরা কেন করবে?" এরপর তারা সেটা ধর্ম বা সংস্কৃতির অজুহাতে বলে, "মুসলমানদের দেশে এসব বেলাপ্পনা চলবে না"। ধর্মকে অজুহাত বানিয়ে যারা (সবাইকে বলি নাই) অন্যের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের মধ্যে রাগ, বিদ্বেষ, আর হিংসার প্রবণতা দেখা যায়। তারা যুক্তির বদলে "আমাদের মতোই চলতেই হবে" ফতোয়া দেয়। বিদেশে গেলেও চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন হয় না। আর এই ধরনের চিন্তাভাবনা মানবসভ্যতার অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইসলামবিদ্বেষ শুধু শুধু শুরু হয় নাই। আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই সমস্যা ইউজ করা সবচেয়ে ইজি, কারণ সাধারণ মানুষ এতে সহজেই রিলেট করতে পারে। ধরেন রোহিংগারা আপনার এলাকায় এসে বিজনেজ করছে, কিন্তু নতুন এসে জোরপূর্বক তাদের কালচার এসটাবলিস্ট করার চেষ্টা শুরু করছে।

লেখক বলেছেন: এ ধরনের লেখা বোঝার এবং তা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার মতো পাঠক ব্লগে বেশি নেই।

হবে হয়তো। আমিও হয়তো না বুঝে কমেন্ট করেছি, কে জানে! তবে এই জিনিসটারে বলে এলিটিজম চর্চা, অন্যদের ছোট করা। এই কাজটা করা যাবে না। সোনাগাজির প্রভাবটা আপনার মধ্যেও আসলো নাকি?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: ধন্যবাদ, মাথা পাগলা, আমার ভুলটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ ধরনের লেখার পাঠক ব্লগে বেশি নেই - কথাটা এভাবে বললে শোভন হতো, কিন্তু স্বীকার করি আমার প্রতিমন্তব্যটি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে গেছে। তবে চাঁদগাজীর সঙ্গে তুলনাটা একটু বেশি হয়ে গেল না? :) :)

আমার মোটামুটি পছন্দের (খুব বেশি নয়) একজন জ্ঞানী এলিটের উদাহরণ দিই - তিনি নীরদ সি. চৌধুরী। তাঁর লেখা আমি পছন্দ করি। আবার অনেকটা নিম্নমানের ভেকধারী এলিটের উদাহরণ হিসেবে ফরহাদ মজহারের নাম বলা যায়। আপনাকে বলে রাখি, তথাকথিত জ্ঞানী অভিজাতদের সম্পর্কে আমি খুবই সচেতন।

ধর্মজীবীদের নিয়ে আপনার আলোচনাটা ভালো লেগেছে। এদের সমাজমনস্তত্ত্ব নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি। দারিদ্র্যের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে ব্যবসায়ী-আমলাদের চুরির টাকায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় অপশিক্ষা ও আফিম আমাদের সমাজের বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:০৭

মাথা পাগলা বলেছেন: অনুন্নত দেশে অনেক কিছুতেই পশ্চিমাদের স্বার্থ জড়িত থাকে, আমরা প্রথমে বুঝি না কিন্তু পরে আঁচ করতে পারি। ধরেন তাদের দেশে মানুষ লাগবে, প্রথমে অনুন্নত দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রমোশন করবে। তারপর ছেকে ছেকে এলিটদের তাদের দেশে জায়গা দিবে। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা হয়ে গেলে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রমোশন করবে, দরকারে ফ্রিতে কনডম বিলাবে। অনুন্নত দেশে ধর্মীয় গোঁড়ামী সমস্যাগুলোতে কোন না কোনভাবে তাদের হাত আছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে মানুষজন খুব একটা কথা বলে না। হয়তো বা ঐভাবে চিন্তা করতে পারে না।

৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৪৪

কামাল১৮ বলেছেন: শ্রেনী সংগ্রাম পৃথিবীর কোথায় হচ্ছে যে দৃষ্টি সরিয়ে দিবে।এখন যা হচ্ছে এটা হলো কুকুরে কুকুরে কামড়া কামড়ি।মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলন হয় না বললেই চলে।

৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:২০

নিমো বলেছেন: কানাডার প্রথম জনজাতিরা কেমন আছে ভাইজান?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.