নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...............

শ্রাবণধারা

" আমাদের মতো প্রতিভাহীন লোক ঘরে বসিয়া নানারূপ কল্পনা করে, অবশেষে কার্যক্ষেত্রে নামিয়া ঘাড়ে লাঙল বহিয়া পশ্চাৎ হইতে ল্যাজমলা খাইয়া নতশিরে সহিষ্ণুভাবে প্রাত্যহিক মাটি-ভাঙার কাজ করিয়া সন্ধ্যাবেলায় এক-পেট জাবনা খাইতে পাইলেই সন্তুষ্ট থাকে......."

শ্রাবণধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাদ্রাসা শিক্ষা, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো, বহু বছর ধরে জমে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফল। বিপর্যয়ের মূলে আছে পাকিস্তান আমলে তৈরি হওয়া মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। এই শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বের সাথে অসংগতিপূর্ণ এবং বর্তমান সময়ের সমাজ-রাজনীতি ও বিশ্বনাগরিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। বর্তমান বাস্তবতায়, এটি একটি মগজধোলাই বা মতদীক্ষাদান প্রকল্প। এই শিক্ষা স্বল্পমেয়াদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক অধিকার দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা আরোহনের রক্তাক্ত সিঁড়ি এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইসলামবিরোধী চক্রান্তকে বৈধতা দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শিক্ষাব্যবস্থা রাজনৈতিকভাবে দখলকৃত, আদর্শিকভাবে অস্ত্রায়িত এবং সহিংসতা উৎপাদনের কারখানায় রূপ নিয়েছে।

উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার রূপান্তর শুরু হয় ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান, দুই নতুন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের পরে। ভারতে জওহরলাল নেহেরু সেক্যুলার, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রহণ করেন। সেখানে শিক্ষা ছিল আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির উপায়। বিজ্ঞান, যুক্তিবোধ ও সাংবিধানিক মূল্যবোধ শেখানোর প্রক্রিয়া। অন্যদিকে পাকিস্তান শুরু থেকেই একটি সামরিক শাসনব্যবস্থার অধীনে ধর্মকে জাতীয়তা ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে স্থাপন করে। সেখানে শিক্ষা কোনো যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক তৈরির মাধ্যম হয়নি, বরং ধর্মীয় শিক্ষাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী মাদ্রাসা শিক্ষাকে ব্যবহার করেছে আজ্ঞাবহ, অনুগত এবং প্রয়োজনে সহিংস ইসলামপন্থী তৈরির জন্য। জ্ঞান উৎপাদনের জায়গা থেকে এটি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কৌশলে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও, পাকিস্তানি আমলের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা বের হতে পারেনি।

মাদ্রাসা শিক্ষার রূপান্তরের পেছনে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রভাব ছিল ভয়ংকর। মাহমুদ মামদানি তাঁর "গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম" গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ১৯৭০-৮০ দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধের সময়ে তৈরি করা জিহাদি ইসলাম ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে গড়া রাজনৈতিক প্রকল্প। মামদানির ভাষায়, এখানে ইসলামকে শাসন ও সহিংসতার প্রযুক্তি হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়। আফগান জিহাদ ছিল সেই পুনর্গঠনের পরীক্ষাগার। স্নায়ুযুদ্ধের স্বার্থে ইসলামকে সংকীর্ণ ও সহিংস ব্যাখ্যায় উপস্থাপন করে আফগান শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে মাদ্রাসাগুলো পরিণত হয় শত্রু চিহ্নিত করা এবং সহিংসতাকে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরার প্রতিষ্ঠান হিসেবে। মামদানির বিশ্লেষণে, এই ধরনের শিক্ষা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক; যার উদ্দেশ্য নিয়ন্ত্রিত জনশক্তি উৎপাদন। মামদানির ভাষায়, এটি ধর্মের সমস্যা নয়, এটি রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা সহিংসতা।

এখন এই পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে বাংলাদেশে কাজ করে সেটা দেখা যাক। শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার নামে এখানে তৈরি করা হল এমন এক প্রজন্ম, যেখানে শিশুরা খুব অল্প বয়সেই শেখে পৃথিবী গুরুত্বপূর্ণ নয়, মৃত্যুপরবর্তী জীবন বা আখেরাত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম রক্ষার নামে মৃত্যুও বরণীয়। আইন বলে যেগুলো আমাদের মান্য করতে শেখানো হয়, সেগুলো মানুষের তৈরি করা ভুয়া আইন, আল্লাহর আইন হল আসল আইন। শিশুদের স্বাভাবিক কৌতূহল থেকে যে চিন্তাশীলতা, সহানুভূতি ও দেশের নাগরিক হওয়ার কথা, সেগুলো ধ্বংস করে আল্লাহর আইন রক্ষায়, আল্লাহর জমিনে নামিয়ে দেওয়া হয়।

এই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হল, যারা কোনো কিছু যাচাই না করেই, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ শুনে হিংস্র হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় মানুষ সহিংসতাকে আর অপরাধ মনে করে না, বরং এটিকে ধর্মের কাজ বা দায়িত্ব বলে ভাবতে শেখে। সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক মাদরাসা শিক্ষক শিশুদের শেখাচ্ছেন, আল্লাহ বা রাসুল সম্পর্কে কটুক্তি করলে তাকে হত্যা করা বৈধ।

হরকাতুল জিহাদ, জামাতুল মুজাহিদিন, কিংবা আনসারুল্লাহ, এই সংগঠনগুলো এমন এক শিক্ষা ও চিন্তার পরিবেশ থেকে এসেছে, যেখানে ভিন্ন দর্শন বা মতকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এদের দমন করার জন্য সহিংসতাকে উচিত কাজ বলে মনে করা হয়। জামাত সরাসরি অস্ত্রধারী সংগঠন না হলেও, তাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তাধারা, উগ্রপন্থী ভাবধারাকে গ্রহণযোগ্য মত হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠার রাস্তা তৈরি করেছে। মানুষের তৈরি আইন অস্বীকার করা, সার্বভৌমত্ব আল্লাহর অধিকার বলা বা বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে ইসলামবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা - এই ধারণাগুলোর সবগুলোর সাথেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর আদর্শের মিল আছে।

বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই একে ব্যবহার করেছে, কেউই এর মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়নি। কখনো ভোটের সমীকরণে, কখনো ধর্মানুভূতি রক্ষার অজুহাতে, কখনো স্থিতিশীলতার নামে ইসলামপন্থী বয়ানকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার না করে, এর পাঠ্যক্রম ও রাজনৈতিক ব্যবহারের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না নিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও ধর্মের নামে সহিংসতা কমবে না।

তবে, এই পরিবর্তন কোনো ঘৃনা দিয়ে করা যাবে না। কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা বহু মানুষের জীবনের অংশ। বহু দরিদ্র পরিবারকে এই মাদ্রাসাগুলো আশ্রয় দিয়েছে, শিক্ষা দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে। এটি আমাদের সামাজ ইতিহাসেরই অংশ, যা আমাদের পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে নিজের ঘর সংস্কার করার মতো দায়িত্ব ও সংবেদনশীলতা নিয়ে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৫

কামাল১৮ বলেছেন: প্রকৃত ইসলাম তাই বলে,আল্লাহ ও তার রাসুলের নিন্দা করলে তাকে হত্যা করতে হবে।ইসলাম মানুষকে মানুষ করে না তাকে ধার্মিক করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.