![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। গর্ব করে বলার মত এটাই আমার একমাত্র পরিচয়।
ছোট বেলা থেকেই, বিদেশ যাওয়ার একটা আগ্রহ ছিল আমর। সে আগ্রহ আরও বেড়ে গেল ২০০৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর যখন বাবা বিদেশ যাওয়ার কথা বললেন। আমি আর না করিনি।
তখন চোখে অনেক রঙিন স্বপ্নছিল,..... ইউরোপ বা আমেরিকার কোন দেশে যাব, শুনেছি সেখানে নাকি পড়াশুনার পর আবার কাজও করা যায়, বাড়তি আয় করে দেশে পাঠানো সম্ভব। অনেকে শুনেছি এই উপায়ে ভালই রোজগার করেছে। তাই বাবা বলার পড় আমার আগ্রহের সাথে অতি মাত্রাটা যোগ হলো। লন্ডন যাওয়ার উদ্দেশ্যে আই,ই,এল,টি,এস টা করে ফেল্লাম। কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছু চাইছিল তাই ব্যাংকের টাকা যোগার হলো না আমার আর লন্ডন যাওয়াও হলোনা।
ভর্তি হয়ে গেলাম একটা মোটা মোটি গোছের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু আমার বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা আবার বছর খানেকের মধ্যে চেপে বসল। বাবাকে বললাম, বাবর এবার খুব একটা ইচ্ছা না থকলেও বিশেষ নিষেধ করলেন না, তাই আমিতও বিভিন্ন এজেন্সির কাছে খোজ খবর নেয়া শুরু করলাম। অবশেষে একটা এজেন্সির সাথে কথা বার্তা বলে যাওয়ার ব্যবস্থা হলো ‘সাইপ্রাস’ এ, এজেন্সি থেকে বলল যে এখানে ভিসা পা্ওয়া সহজ, আর এটাতো ইউরোপ ইউনিয়ন ভুক্ত, তাছারা খুব শিঘ্রই সাইপ্রাস থেকে আর প্রায় ৩০টির ও বেশি দেশে ভিসা ছাড়াই ঢোকার অনুমুতি দেয়া হবে। মানে সব মিলিয়ে বিশাল এক অবস্থা। আরও বললেন যে, তাদের পাঠোনো ছাত্রদের সফলতার কথা, বছন খানেকের মধ্যেই কেউ দেশে অনেক টাকা পয়সা পাঠিয়েছে, কেউ জায়গা জমিও কিনে ফেলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর মধ্যে একদিন পথ চলতে এক ভদ্র লোকের সাথে পরিচয়, মিরপুর টেকনিকেল থেকে শেওড়াপাড়া আসবো, কিন্তু কোনো রিক্সা পাচ্ছিলাম না, পাশে এক ভদ্র লোক সুট পড়ে দাড়িয়েছিল, সেও শেওড়াপাড়া আসার জন্য রিক্সা খুজছিলেন, তথন তিনি আমাকে বললেন যে “ভাই আমরা দু’জনই তো একই জায়গায় যাবো, যেহেতু রিক্সা মিলছে না, তো আপনি যদি রিক্সা পান তাহলে আমাকে একটু লিফ্ট দিয়েন আর যদি আমি পাই তাহলে আপনাকে লিফ্ট দিব।” প্রস্তাবটা স্থান বিবেচনায় মন্দ মনে হয়নিই, তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর আমি রিক্সা পাই আর কথামত ঐ লোকটিকে লিফ্ট দেই। রিক্সায় উঠে, নাম কি? কোথায় থাকেন? কি করেন? এই ধরনের প্রশ্ন উত্তর দিতে দিতে জানতে পারলাম লোকটির নাম তারিক। আমি আমার সাইপ্রাস যাওয়ার ইচ্ছা তার কাছে ব্যক্ত করলাম। লোকটি খুব আগ্রহ দেখাল এবং বলল “ভলো তো সেখান আমার এক বন্ধু আছে, শুনেছি ও ভালই আছে আর আমার সাথে প্রায়ই কথা হয়। আপনি যে যাবেন আপনার কি কোন পরিচিত কেউ থাকেন সাইপ্রাসে?” আমি উত্তর দিলাম- না। লোকটি বলল আপনি আমার ফোন নং রাখেন আর আমার বন্ধুটির ফোন নম্বরও রাখেন যদি প্রয়োজন হয় ও আপনাকে সাহায্য করতে পারবে ওর নাম বনি।
ইউরোপের সব রঙিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমি তখন শুন্যে ভসছিলাম। যাইহোক আমার দেখা খানিকটা স্বপ্ন বাবাকেও দেখালাম, আর টাকা পয়সার ব্যবস্থা করতে বললাম। এজেন্সির কথা মত প্রায় ৩ লক্ষ টাকার বেশি ব্যাংকে ডিপোজিপ করলাম, অনেক ঝুক্কি ঝোমেলা শেষে ইন্টারভিউ দিয়ে সাইপ্রাসের সেই বহু প্রত্যাশিত ভিসা পাওয়া গেল। দিন খন ঠিক করে চলে গেলাম স্বপ্নের ইউরোপ-এ।
ইউরোপের মাটিতে পা দিতেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল, এয়ার পোর্ট এর ভেতরে বসে রইলাম প্রায় ৪ থেকে ৬ ঘন্টা। বের হয়ে ট্যাক্সি করে ‘নিকোসিয়া’ এলাম, কারন নিকোসিয়াতেই আমার কলেজ ছিল। বেলা তখন স্থানিয় সময় রাত ৮/৯টা হবে (ঠিক মনে নেই)। আমর সাথে আরও একজন ছিল, যার সাথে আমার পরিচয় হয় সেই এজেন্সি থেকে, পথে ভাল বন্ধুত্বও হলো। দুই জনের এক জনও জানি না এখন এত রাতে এই নতুন দেশ, নতুন শহরে কোথায় যাব? লিদরা স্কয়ার নামে এক যায়গায় টেক্সি আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেছে।এ খানেই কিছুক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম। টেনশনে মাথ ভোঁ ভোঁ করছে...... তখন মন, আর চোখ কোন এক বাঙালিকে খুজছে, ভাবছিলাম যে বাঙালি পেলে হয়তো কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ এয়ার পোর্ট থেকে কেনা এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেট ছিল আমার পকেটে, সেখান থেকে একটা বেড় করলাম, কিন্তু গ্যাস লাইট বা ফায়ার বক্স কিছুই ছিলনা, এমন সময় এক বাঙালিকে দেখলাম সে খুব সাভাবিক ভঙিতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, এসে জিজ্গাসা করল “কি নতুন এসেন, নাকি?” আমি উত্তর দিলাম হ্যাঁ আমরা এই কিছুক্ষন আগে এসেছি। লোকটা একটা ফায়ার বক্স আমার দিকে এগিয়ে দিলেন আর আমি আমার সিগারেটটা ধরালাম।
তার পর সেই লোকটা তার কথা শুরু করল-- “কেন যে এত টাকা খরচ করে বিদেশে আসেন বুঝিনা। আ্পনারা কত খরচ করেছেন?” আমি উত্তর দিলাম- সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার কাছিকাছি। কথাটা শুনে লোকটা একটু তাছ্ছিল্লের হাসি হাসলেন। তার পর আমি জানতে চাইলাম যে “আপনি এখানে কত বছর যাবৎ আছেন?” লোকটি আমার প্রশ্নের সোজা কোনো উত্তর না দিয়ে বললেন, “ আমরা এখানে পুরো পরিবার সহ কয়েক পুরুষ যাবৎ আছি।” শুনে আমার মনে হলো তার কাছে সাহায্য চাওয়া যায়, অন্তত আজেকে রাত টুকু কাটানোর জায়গা দরকার। আমি বললাম ভাই আমরাতো নতুন এসেছি আমাদের তো থাকার যায়গা নেই, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না যে এখন কি করব?” লোকটি উত্তর দিল “তোমাদের কোন আত্মিয় স্বজন নেই এখানে ?!” আমি বললাম- না। লোকটি বলল- “তাহলে কেন এসেছো?”
লোকটির চেহারা দেখে মনে হলো সে আমাদের এই বেহাল দশা দেখে খুব মজা পাচ্ছে, তাছাড়া সে আমাদের কে নান কথা বলে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন নাকি আগত পরিস্তিতি সম্পর্কে আগাম বলে তৈরি থাকতে সংকেত দিচ্ছিলেন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।তবে এটা বুঝতে পারছিলাম যে তার কাছ থেকে কোন ধরনের সাহায্য আশা করা যাবে না।
যাইহোক পর মুহুর্তেই আমার মাথায় আসলো তারিক সাহেবের বন্ধু বনি’র কথা। তখন নতুন পরিচিত সেই বহু পুরুষ যাবৎ বসবাসরত লোকটির কাছ থেকে তার মোবাইল থেকে একটা কল করার অনুমুতি চাইলাম। এবং উনি বললেন ঠিক আছে নম্বর বলেন। আমি আমর মোবাইলের ফোন বুক থেকে বনি’র নং টি বললাম এবং সেই লোক ফোন করলেন। মনে মনে ভাবছিলাম এখন একটা গতি হতে পারে। কিন্তু দুঃর্ঘটনা ঘটল তখন যখন দেখলাম বনি’র নং বন্ধ। মাথায় তখন আর কোন কিছু আসছে না, নিজেকে তখন খুব বেশি অসহায় মনে হচ্ছিল। যার মোবাইল থেকে কল করেছিলাম, তিনি বললেন “কোন সমস্যা নেই, এখানে রাতে রাস্তায়ও থাকতে পার অথবা কাছাকাছি একটা মসজিদ আছে সেখানে অথবা একটা পার্কে যেয়ে শুয়ে থাকতে পারো।”
প্রায় ২০ মিনিট পর বনি’র নং এ আবার চেষ্টা করলাম এবং লাইন পাওয়া গেল, বনিকে সব বিস্তারিত খুলে বল্লাম এবং সে বলল সে আমাদের কে নিতে আসছে। তার কথা শুনে কিছুটা শস্তি বোধ করলাম। যাই হোক আজ রাতটাতো আর পার্কে কাটাতে হবে না।
(...চলবে)
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬
মোঃ রাইসুল খান বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্টকরে আমার লিখাটা পাড়ার জন্য। ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই এই অত্যন্ত বিলম্বিত উত্তরের জন্য। অনেক বছর পড় আজ লগ ইন করলাম, করতেই আপনার মন্তব্য দেখে ভাল লাগলো, যেন আমার ইচ্ছের ধুলো পড়ে যাওয়া যায়গায় একটা বাতাস এলো আর ধুলো গুলো সরে গিয়ে লিখার ইচ্ছেটা আবার বেড়িয়ে এলো... ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:৩২
আমি রাইন বলেছেন: চলবে বলার পর থেমে গেলো যে???? আর কোন লিখা ও তো নেই আপনার। নিজের মত করে নিজের জন্যই না হয় লিখুন।