নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়।এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম সিদ্ধান্তগুলি সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর কাব্যেও।১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন। কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাঁকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পংক্তির কবিতায় তিনি এই ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন।মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।
১৯১৬সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা এলেন। তখন তিনি নোবেল বিজয়ী। আমেরিকার পচিঁশটি শহরে তিনি বক্তৃতা করেন, যার বেশীর ভাগই বিশ্ব বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। তাঁর প্রকাশক Macmillan এর সহযোগী একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান তাঁর এই বক্তৃতা সফরের ব্যবস্থা করেছিল। একেকটি বক্তৃতার জন্য তিনি ৭০০ থেকে ১০০০ ডলার করে পেতেন। যে অর্থ তিনি নিচ্ছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। অথচ রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যে থাকতো পাশ্চাত্যের বস্তুবাদের বিরুপ সমালোচনা।নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা তাঁর ওপর একুশটি লেখা ছেপেছিল, তার মধ্যে দুটি সাক্ষাত্কার। আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর একটি সুন্দর ছবি ছাপা হয়েছিল ।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের দিকটি সবচেয়ে ভালভাবে তুলে ধরেন শান্তিনিকেতনের ছাত্র প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক প্রমথনাথ বিশী। তার মতে, রবীন্দ্রনাথ যদি বাংলাদেশের শিলাইদহ, সাজাদপুর বা পতিসরের জমিদারিত্ব না পেয়ে ভারতের কোন অনুর্বর জায়গার জমিদারিত্ব (বাংলা ছাড়া ভারতবর্ষের আরও কিছু জায়গায় ঠাকুর পরিবারের বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল) পেতেন, তাহলে তিনি হয়ত বাংলা ভাষার বড় কবি হতেন, কিন্তু বিশ্বকবি হতেন না। প্রমথনাথ বিশীর মতে, বাংলাদেশের পদ্মা নদী রূপে-গুনে-চরিত্রে বিশ্বের একটি অনন্যসাধারণ নদী, যে কিনা অপেক্ষা করছিল বিশ্বের একজন অনন্যসাধারণ কবির সাথে মিলিত হবার জন্য। তার মতে, রবীন্দ্রনাথের অক্ষয় কীর্তি ‘ছিন্নপত্রের’ নায়িকা পদ্মা আর নায়ক স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ!
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি জয় গোস্বামী এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ হলেন দিনের বেলার তারার মত বাস্তব। দিনের সূর্যের প্রভাবে তার চেয়েও বড় নক্ষত্রদের আমরা দেখতে পাইনা সত্যি, কিন্তু তাই বলে সেইসব নক্ষত্ররা অবাস্তব হয়ে যায় না আমাদের কাছে। একইভাবে বলা যেতে পারে, আজকের বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে আমরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি না সত্যি, কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে বিরাজ করছেন দিনের বেলার নক্ষত্রদের মতই। তার অস্তিত্ব এক অবশ্যম্ভাবী সত্য আমাদের জাতীয় জীবনে। রবীন্দ্রনাথ ১৯১২ সালের ২৮শে অক্টোবর নিউইয়র্ক পৌঁছুলেন সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ এবং পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। সেবারে আমেরিকা থাকলেন ছ’মাস।
১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ইংরেজি সহ নানা ভাষায় তাঁর লেখা অনুবাদের হিড়িক পড়ে যায়৷ ইংল্যান্ডে ম্যাকমিলান প্রকাশনীর হাত ধরে বের হতে থাকে রবীন্দ্র সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ৷ সেই অনুবাদকে সামনে রেখে প্রকাশিত হয় জার্মানির কু্র্ট ভল্ফ্ ফ্যারলাগ থেকে রবীন্দ্র রচনার জার্মান ভাষান্তর৷ যশস্বী ফরাসি লেখক খোদ অঁদ্রে জিদ গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেন৷ বহুকাল পরে আটের দশকের মাঝামাঝি মূল বাংলা থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ইংরেজি ভাষান্তরের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দেন উইলিয়ম রাদিচে৷ দীর্ঘদিন ধরে বিলেত প্রবাসী কবি ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক কেতকী কুশারী ডাইসনও মূল বাংলা থেকে রবীন্দ্রনাথের রচনার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন৷শুধু কবিতা নয়, রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পও অনুবাদ করেছেন রাদিচে৷
রবীন্দ্রনাথ যখন চীনে গেলেন (১৯২৪) তখন সেখানেও কিছু কাণ্ড ঘটেছিল। এ পর্বে চীনের রাজনীতি সুস্থিত ছিল না। সাংহাইতে সম্বর্ধনায় রবীন্দ্রনাথ যে ভাষণ দিলেন তাতে বললেন চীন ও এশিয়ার প্রতিবেশী জাতিগুলোর সঙ্গে ভারতের মৈত্রীর পথ উন্মোচন করার জন্য তিনি চীনের যুবমনকে আহ্বান করছেন। চীনা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একাংশ ভাবতে চাইল, রবীন্দ্রনাথের এই সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কি? রবীন্দ্রনাথ পরের দিনের বক্তৃতায় তার উত্তর দিলেন। কোনো রাজনৈতিক সুবিধা সংগ্রহের জন্য তিনি আসেন নি, এসেছেন স্বার্থশূন্য প্রেম ও মৈত্রীর জন্য।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- “আমার লেখা যারা পড়েছেন, তাঁরা জানেন, বাউল পদাবলীর প্রতি আমার অনুরাগ আমি অনেক লেখায় প্রকাশ করেছি | শিলাইদহে যখন ছিলাম, বাউল দলের সঙ্গে আমার সর্বদাই দেখা সাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনা হত | আমার অনেক গানেই আমি বাউলের সুর গ্রহণ করেছি | এবং অনেক গানে অন্য রাগরাগিণীর সঙ্গে আমার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বাউল সুরের মিল ঘটেছে | এর থেকে বোঝা যাবে, বাউলের সুর ও বাণী কোন্ এক সময়ে আমার মনের মধ্যে সহজ হয়ে মিশে গেছে |…”
" 'কত বড়ো আমি' কহে নকল হীরাটি। তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি॥ " - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
©somewhere in net ltd.