নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৭৮

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

সততা, জ্ঞান ও আনন্দময়তা–এই তিনের সমাবেশ ঘটান রবীন্দ্রনাথ। আর এ আনন্দময়তার বিকাশ ঘটান তিনি সৃষ্টিশীলতায়।রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন, অনুকরণ দ্বারা কোনো মহান সৃষ্টি হয় না। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে আমাদের শিল্প সাহিত্যকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ছোটো হয়ে আসে।পশ্চিমা ভাবধারা থেকে বেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের লোকজ্ঞান ও ইতিহাস ঐতিহ্যের সমন্বয়ে সাহিত্য রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ যেখানে কলকাতার রাস্তায় সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রামের বিষাক্ত স্পর্শ অনুভব করেননি, জীবনানন্দ সেখানে ট্রামের মধ্যে সাপের বিষাক্ত স্পর্শ ধারণ করেছেন, আর বিষ্ণু দে সে রাস্তায় পেয়েছেন মানুষরূপী সারি সারি পিপড়ে সার।রবীন্দ্রনাথসারা জীবনে কোনো স্থির সিধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। জৈনদের অনেকান্তবাদে যেমন সূর্য নেই এবং আছে, আছে এবং নেই রয়েছে, তেমনি রবীন্দ্রনাথও নিয়ত দোলাচালের মধ্যে থেকে পরিবর্তিত হয়েছেন, নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ।



রবীন্দ্রনাথের চীনে মরণের ব্যবসায় প্রবন্ধটি ভারতী পত্রিকায় ১২৮৮ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধের শুরুতেই কবি বললেন : একটি সমগ্র জাতিকে অর্থের লোভে বলপূর্বক বিষপান করান হইল; এমনতর নিদারুণ ঠগী-বৃত্তি কখনো শুনা যায় নাই। চীন কাঁদিয়া কহিল, আমি অহিফেন খাইব না। ইংরাজ বণিক কহিল সে কি হয়? চীনের হাত দুটি বাঁধিয়া তাহার মুখের মধ্যে কামান দিয়া অহিফেন ঠাসিয়া দেওয়া হইল, দিয়া কহিল যে অহিফেন খাইলে তাহার দাম দাও। বহুদিন হইল ইংরাজেরা চীনে এইরূপ অপূর্ব বাণিজ্য চালাইতেছেন।…অর্থ সঞ্চয়ের এইরূপ উপায়কে ডাকাইতি না বলিয়া যদি বাণিজ্য বলা যায় তবে সে নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে।…স্মরণ রাখা দরকার– রবীন্দ্রনাথ যখন এ প্রবন্ধ লিখছেন, জাতীয় কংগ্রেসের তখনো জন্ম হয়নি।



ভারতবর্ষে ভারতীয়ের মধ্যে আধুনিক ভাষাতত্বের সূচনাটাই হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের হাতে। বাংলা ১৩০০ সনে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ স্থাপিত হলে পরের বছর থেকে নিয়মিত বেরোতে থাকে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা । বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক উন্নতি এর উদ্দেশ্য ছিল বটে, কিন্তু ভাষার ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংস্কৃত এবং ইংরেজি শাসিত প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণের অনুশাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করা। রমেশচন্দ্র দত্ত এর প্রথম সভাপতি ছিলেন। নবীন চন্দ্র সেন এবং রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রথম সহ-সভাপতি ।সুকুমার সেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছেন, “ ভাষাবিজ্ঞানের সূত্র ধরিয়াই রবীন্দ্রনাথ আধুনিক বাঙ্গালাভাষার উচ্চারণরীতির এবং ব্যাকরণের কোনো জটিল সমস্যার বিশ্লেষণ ও সমাধান করিয়াছিলেন। …এই প্রবন্ধগুলির কথা মনে রাখিলে রবীন্দ্রনাথকে বাঙ্গালী ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রথম বলিতেই হয়।”



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধসাহিত্য বিশাল। আয়তন অনুযায়ী তা পাঠকের তেমন মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।১৬ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯ কবি গদ্য-পদ্যের মধ্যে তাঁর টানের কথা বললেন ইন্ধিরা দেবী চৌধুরানীকে লিখিত এক পত্রে : 'একটি কবিতা লিখে ফেললে যেমন আনন্দ হয়, হাজার গদ্য লিখলেও তেমন হয় না কেন, তাই ভাবছি। কবিতায় মনের ভাব বেশ একটি সম্পূর্ণতা লাভ করে, বেশ যেন হাতে করে তুলে নেবার মতো। আর গদ্য যেন এক বস্তা আলগা জিনিস- একটি জায়গায় ধরলে সমস্তটি অমনি স্বচ্ছন্দে উঠে আসে না- একেবারে একটা বোঝাবিশেষ।'১৩০১ সালে 'প্রাঞ্জলতা' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলেন : 'আমাদের বাংলা ভাষায়, কি খবরের কাগজে, কি উচ্চ শ্রেণীর সাহিত্যে সরলতা এবং অপ্রমত্ততার অভাব দেখা যায়- সকলেই অধিক করিয়া, চীৎকার করিয়া এবং ভঙ্গিমা করিয়া বলিতে ভালোবাসে, বিনা আড়ম্বরে সত্য কথাটি পরিষ্কার করিয়া বলিতে কাহারও প্রবৃত্তি হয় না। কারণ এখানে আমাদের মধ্যে একটা আদিম বর্বরতা আছে; সত্য প্রাঞ্জল বেশে আসিলে তাহার গভীরতা এবং অসামান্যতা আমরা দেখিতে পাই না, ভাবের সৌন্দর্য কৃত্রিম ভূষণে এবং সর্বপ্রকার আতিশয্যে ভারাক্রান্ত হইয়া না আসিলে আমাদের নিকট তাহার মর্যাদা নষ্ট হয়।'



প্রমথ চৌধুরীকে এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন : 'শাস্ত্রে আছে মৃত্যুতেই ভবযন্ত্রণার অবসান নেই, আবার জন্ম আছে। আমাদের যে লেখা ছাপাখানার প্রসূতিঘরে একবার জন্মেছে তাদের অন্ত্যেষ্টি সৎকার করলেও তারা আবার দেখা দেবে। অতএব সেই অনিবার্য জন্ম-প্রবাহের আবর্তন অনুসরণ করে প্রকাশকেরা যদি বর্জনীয়কে আসন দেন সেটাকে দুষ্কর্ম বলা চলবে না।' প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'ঘুষাঘুষি' প্রবন্ধে বলেন : 'ছবিতে যেমন চৌকা জিনিসের চারিটা পাশই একসঙ্গে দেখানো যায় না, তেমনি প্রবন্ধেও একসঙ্গে একটি বিষয়ের একটি, বড়োজোর দুইটি দিক দেখানো চলে।'



‘রবীন্দ্রনাথের গান যে আন্দোলনে প্রথমবারের মতো বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করে তা হচ্ছে স্বদেশি আন্দোলন। এর পর থেকে বাঙালির প্রতিটি আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ছিল অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও তার ব্যতিক্রম নয়।’ ‘আজি বাংলাদেশের হূদয় হতে’, ‘এখন আর দেরি নয়’ ও ‘বাঁধ ভেঙে দাও’, ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’, ‘যে তোরে পাগল বলে’, ‘আমরা মিলেছি আজ’, ‘নাই ভয় নাই ভয়’ প্রভৃতি গান ।রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকে নিঃসঙ্গতার সঙ্গে লড়ে বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আমি খুব নিঃসঙ্গ ছিলাম—আমার শৈশবের মূল চিত্র এটাই—খুবই নিঃসঙ্গ ছিলাম। বাবার দেখা পেতাম কালেভদ্রে। অনেক দূরের মানুষ ছিলেন তিনি। মা মারা যাওয়ার পর বাড়ির গৃহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে চলে যাই।’



'রবীন্দ্রনাথ মানুষের ভেতরে ঈশ্বরের এ্যাকোমোডেশন দেখিয়েছেন!' ঈশ্বরের ভেতরে মানুষের এ্যাকোমোডেশন নয় কিন্তু! ধরুন, এই ছোট্ট ঘরে আপনি এক হাজার লোকের থাকার ব্যবস্থা করতে চান। পারবেন? না, পারবেন না। কেন পারবেন না? 'এ্যাকোমোডেশন' হবে না! এত ছোট্ট ঘরে এত লোকের 'এ্যাকোমোডেশন' সম্ভব নয়! অর্থাৎ ক্ষুদ্র কোনোকিছুর ভেতরে বৃহৎ কোনোকিছুর 'এ্যাকোমোডেশন' হয় না! অথচ রবীন্দ্রনাথ সেটিই করেছেন! 'ক্ষুদ্র ও সসীম' মানুষের ভেতরে 'বৃহৎ ও অসীম' ঈশ্বরের 'এ্যাকোমোডেশন' দেখিয়েছেন! রবীন্দ্রনাথ এমন এক শিল্পী যিনি একটা গান কিংবা কবিতার ভেতরে হাজারটা অর্থ ধরে রেখেছেন ।প্রেম বা প্রার্থনা, স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ বা আশ্রয় সবই মেলে তাঁর কাছে। আর তিনি তো সেই অসামান্য শিল্পী যিনি প্রেম ও প্রার্থনাকে অবলীলায় একাকার করে ফেলেছেন। দুটো বিষয়কে তো তিনি আলাদা করে দেখেন-ই নি, বরং সমার্থক করে তুলেছেন। যা কিছু প্রেম তা-ই প্রার্থনার যোগ্য, যা কিছু প্রার্থনা তা-ই প্রেমের যোগ্য।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

আলমগীর_কবির বলেছেন: আপনি এত সুন্দর লিখেছেন যে, আপনার মত লিখতে পারলে আমি খুব খুশি হতাম, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত কাউকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একজন মানুষ যিনি 100 বছর পূর্বে 100 বছর পরে জন্মানো মানুষটির মনের কথা বলে গেছেন। যিনি জাতীয়তাবাদের কারণে উদ্ভূত সংঘাত বিষয়েও সমালোচনা করে গেছেন। আমি আপনার পোস্টটি পর্যবেক্ষণের তালিকায় রাখলাম।
ধন্যবাদ।

Click This Link

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৮

নীল যে আকাশ বলেছেন: খুব ভালো লাগল। রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে এই রকম তথ্যধর্মী লেখার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৩

সিদ্ধার্থ. বলেছেন: ++

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

সুশান্ত কর বলেছেন: ছিমছাম ভালো লেখা।

৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৬

ডাইস বলেছেন: :|

৬| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৬

অতুল মিত্র বলেছেন:
আপনার রবিন্দ্র নিয়ে যত পোষ্ট আছে তা একটু লিঙ্ক হিসেবে দিয়ে দেবেন প্লীজ ?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: গুগলে সার্চ দিলেই তো সব পেয়ে যাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.