নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭৪ সাল

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬

১৯৭৪ সালের, সকালবেলা। ফুটপাথ থেকে লাশ কুড়িয়ে নিচ্ছে আঞ্জুমান ই মফিদুল ইসলামের লোকেরা।১৯৭৪ সালের অক্টোবরে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দুর্ভিক্ষের জন্য প্রকাশ্যে সরকারের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষের দায়দায়িত্ব স্বীকার করে সর্বদলীয় ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।



১৩ই অক্টোবর ঢাকার সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায় যে, প্রতিদিন গড়ে ৮৪টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন হচ্ছে। ২৭শে অক্টোবর খবর আসে জামালপুরে প্রতিদিন অনাহারে শতাধিক লোক মারা যাচ্ছে। সরকার এই মৃত্যুকে পুষ্টিহীনতা বলে অভিহিত করে। অনাহারে মানুষ মরছে সরকার সেটা অস্বীকার করে। ২৫শে অক্টোবর ঢাকার সংবাদপত্রে বের হয় ট্রাক বোঝাই ধানচাল ভারতে পাচাঁর হচ্ছে।



১৯৭৪ সালে ২রা অক্টোবর প্রকাশিত লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় জেকুইস লেসলীর কলাম অনুসারেঃ “একজন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে,আর অসহায় দুষ্টিতে তার মরণ-যন্ত্রণাকাতর চর্মসার শিশুটির দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হতে চায় না, তাই কথাটি বোঝাবার জন্য জোর দিয়ে মাথা নেড়ে একজন ইউরোপীয়ান বললেন, সকালে তিনি অফিসে যাচ্ছিলেন,এমন সময় এক ভিখারি এসে হাজির। কোলে তার মৃত শিশু। বহু বিদেশী পর্যবেক্ষক মনে করেন বর্তমান দুর্ভিক্ষের জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী। “দুর্ভিক্ষ বন্যার ফল ততটা নয়,যতটা মজুতদারী চোরাচালানের ফল”-বললেন স্থানীয় একজন অর্থনীতিবিদ।



আবুল মনসুর আহমদের লেখা আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর, ৪৯৮ নং পৃষ্ঠায় উনি লিখেছেন, “সীমান্তের ১০ মাইল এলাকা ট্রেডের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হলো। এর ফলে ভারতের সাথে চোরাচালানের মুক্ত এলাকা গড়ে উঠে। পাচার হয়ে যায় দেশের সম্পদ।” ২৩শে সেপ্টেম্বর সারাদেশে ৪৩০০ লঙ্গরখানা খোলার কথা ঘোষণা করা হয়। সে সমস্ত লঙ্গরখানার ইতিহাস আর এক করুণ কেলেঙ্কারীর ইতিহাস।



১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডির নাম ‘বাসন্তী’। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এক জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। আর সেই বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন ইত্তেফাকেরই নিজস্ব আলোক চিত্রি আফতাব আহমেদ। অনেকে ছবিটির নাম দিয়েছেন জাল-বসনা বাসন্তী। ছবিটিতে দেখানো হয় বাসন্তী ও দুর্গাতি নামের দুই যুবতী মেয়েকে। অভাবের জন্য যারা সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারছিল না। ছবিতে বাসন্তীর পরনে ছিল একটি মাছ ধরার জাল। এই ছবি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধু সরকারকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দেশের আনাচে কানাচে দুর্ভিক্ষের আগমনী বার্তা পৌঁছে দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে রেখেছিল বিশাল ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনকেও ত্বরান্বিত করে ছবিটি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এই ছবির মধ্যেও যোগসূত্র রয়েছে এমন দাবী অনেকেরই। কিন্তু সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। বাসন্তীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা ও নোংরা রাজনীতির খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে আসল রূপ। পরিষ্কার হয়ে যায় ছবিটি ছিল সাজানো। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয় পরবর্তীতে।



১৯৭২ সালের যে কোন খবরের কাগজ খুললে দেখা যাবে প্রায় সব খবরই হচ্ছে খুন, রাহাজানি এবং ছিনতাই সংক্রান্ত।রিলিফ নিয়ে লুটপাটের কাহিনী পাওয়া যাবে ১৯৭৪ সালের আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসের সংবাদপত্রসমূহে। অবাধ লুটপাট চলে বাশঁ, টিন, খাদ্যসামগ্রী, রিলিফের ঔষধপত্র এবং কম্বল নিয়ে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ছাপা হয় ক্ষুধাতুর মানুষের ছবি। অন্ন নেই, বস্ত্র নেই, মাথা গোজাঁর ঠাই নেই। কোটি কোটি লোক হয় ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুহারা। ৩রা আগষ্ট ইত্তেফাকে ছাপা হয় এসব ছবি। দৈনিক বাংলায় খবর বের হয়, বমি খাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশ রেডক্রস সর্ম্পকে প্রকাশিত হয় চুরি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অসংখ্য অভিযোগ।



মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ কেড়ে নেয় লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। হাজার হাজার চাষী যারা একদা কষে ধরতো লাঙ্গল, মাঠ ভরে তুলত সবুজ শস্যের সমারোহে, তারা ভিক্ষার জন্য শহরের মানুষের কাছে হাত পাতে। ফিরে যায় ভিক্ষা না পেয়ে। তারপর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে পড়ে থাকে। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম প্রতিদিন ঢাকা শহর থেকেই তিরিশ থেকে চল্লিশটি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করছিল। সে কাহিনী ও ছবি আছে সেই সময়কার দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর পাতায় পাতায়।



১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪ জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এর কিছু অংশঃ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সময়ের দিক থেকে মাত্র তিন বছর। এ কথা সত্য যে, তিন বছর আপনাদের কিছু দিতে পারব না, এ কথা আমি আপনাদের বলেছিলাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেয়ার খাতা একেবারে শূন্য পড়ে থাকেনি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য কোটি কোটি মণ খাদ্যশস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করা ছাড়াও ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, শ্রমিক ভাইদের নিুতম মজুরি বৃদ্ধি, বেতন কমিশনের সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন, পাটের নিুতম মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা দিয়ে বর্ধিত হারে বেতন প্রদান- এই জাতীয় কয়েকটি ব্যবস্থা, যা সরকার কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও কার্যকর করেছে। একই সাথে আমাদের দেশের বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে শুধু পুনঃপ্রতিষ্ঠাই করা হয়নি, মিরপুর, নয়ারহাট, তরাঘাট প্রভৃতি স্থানে নতুন নতুন সেতু নির্মাণ করে দেশে উন্নততর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই এটাও জানেন, যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জরিপকাজের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে, খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। দেশবাসীও শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির কিছুটা ফল লাভ করতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের উপযোগী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী, বিডিআর, রক্ষী বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে গঠন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশ পুনর্বাসন পর্যায় শেষ করে প্রবেশ করেছে পুনর্গঠনের নতুন দিগন্তে।



আমাদের নতুন প্রতিরোধ সংগ্রামে সর্বশেষ ও সর্বপ্রধান শত্রু চোরাকারবারি (স্মাগলার), কালোবাজারি, মুনাফাবাজ ও ঘুষখোরের দল। মানুষ যখন অনাহারে মারা যায়, তখনো এসব নরপশুর দল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখের গ্রাস অন্যত্র পাচার করে দিয়ে থাকে। বিদেশ থেকে ধার-কর্জ, এমনকি ভিক্ষা করে আনা পণ্য ও বাংলার সম্পদ মজুদের মাধ্যমে তারা মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে। তাদের কোনো জাত নেই, নেই কোনো দেশ। এসব নরপশুকে উৎখাতে আমি আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা চাই। সরকার ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কিছুসংখ্যক চোরাচালানিকে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে।



একটি কথা আমি প্রায়ই বলে থাকি। আজো বলছি, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। শোষিত, নির্যাতিত ও লুণ্ঠিত বাংলাদেশের সমাজদেহে সমস্যার অন্ত নেই।

এ সমস্যার জটগুলোকে খুলে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি না সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি আপনার কর্তব্য দেশের ও দেশের জনগণের প্রতি কতটা পালন করেছেন, সেটাই বড় কথা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১

মেহেদী হাসান '' বলেছেন: ৪২ বছরেরও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি।
স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছিনা আমারা।
আপসোস!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৪

ফুরব বলেছেন: পাকিস্থানি কুকুরগুলোর [শাসক] থেকে দেশী কুকুরগুলো অনেক বেশী ক্ষুধার্থ ও হিংস্র।।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.