নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মির্জা গালিব

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫২

” শারাব পিনে দে মসজিদ মে বৈঠকর
য়েহ্ বোহ জাগা বাতা জাহা-পে খুদা নেহী হেয়।।”
(মসজিদের এই জমিনে আমাকে শারাব পান করতে দাও
এমন কোনো জায়গার কথা বলো তবে, যেখানে খোদা মজুদ নেই।।)

গালিব ৫০ বছর দিল্লীতে বসবাস করছিলেন। দিল্লী-আগ্রায় মোগলদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের বসবাসের জন্যে একটি বাড়ি কিনেননি। সারা জীবন থেকেছেন ভাড়া করা বাড়িতে। আবার সারা জীবনই শুধু বই পড়েছেন, মজার ব্যাপার হলো জীবনে তিনি একটি বইও কিনেননি। দিল্লীর পুস্তকের দোকান থেকে ভাড়ায় বই এনে পড়ার কাজটি সেরেছেন।

ভারত উপমহাদেশের চিরায়ত উর্দু এবং ফার্সি কবি মির্জা গালিব। ভারত বা পাকিস্তানে নয় সাড়া বিশ্বেই গালিবের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার খ্যাতি আসে তার মৃত্যুর পর। তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও, পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দিবে। লে খালেখিটা ছিল তাঁর কাছে নেশার মতো। এখন বেঁচে থাকলে গালিবের বয়স হতো ২১৭ বছর।

গালিব ১৭৯৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। গালিবের পিতা আবদুল্লাহ বেগ খানের মৃত্যুর সময় তার বয়স মাত্র চার বছর। তিনি যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিত্‍সাশাস্ত্র ও অধিবিদ্যা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা করেন। নয় বছর বয়সেই গালিব ফার্সিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন৷ পুরো জীবন ধরে তিনি ফার্সিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু তিনি যে শৈশবেই উর্দুতে কবিতা লিখতেন।

মনে প’ড়ে যায় কতো অতৃপ্ত বাসনার ক্ষতচিহ্ন বুকে রয়েছে;
হে ঈশ্বর , আমার কাছ থেকে পাপের হিসাব চেয়ো না ।।

গালিবের পূর্ব পুরুষ মধ্য এশিয়ার মানুষ। আইবক বংশের উত্তরাধিকারি গালিব। তেরো বছর বয়সে গালিব মুঘল দরবারের এক আমীরের মেয়ে উমরাও বেগম কে বিয়ে করেন, এবং আগ্রা থেকে দিল্লিতে এসে বসবাস শুরু করেন।তাঁদের সাতটি সন্তান জন্ম নিলেও একজনও বাঁচেনি। গালিব শুধু তাঁর কাব্যের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না।’ বিখ্যাত ছিলেন বেপরোয়া জীবনযাপন, মদ, নারী আর জুয়ার প্রতি তীব্র আসক্তির জন্য। জুয়াখেলার জন্য একবার তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। গালিব একবার বলেছিলেন, কখনও শরাবের স্বাদ নেয়নি, জুয়া খেলেননি, জেল খাটেননি কিংবা প্রেয়সীর চটির আঘাত জোটেনি যার, সে কীভাবে কবি হয়।

গালিবের লেখার প্রধান উপজীব্য ছিলো, প্রেম, রোমান্স এবং দুঃখবেদনা। এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি, অভাব, অভিযোগ, না-পাওয়া, প্রেম এসবই তাঁর শেরজুড়ে। আশ্চর্য খেয়ালী এই শিল্পী কখনো অর্থের জন্য কাজ করেন নি। তাঁর জীবিকা নির্বাহ হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ধার কর্য করে নতুবা কোনো বন্ধুর দানে। নয় বছর বয়সেই গালিব ফারসিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন।

এদিকে হাতে টাকা থাকুক না থাকুক, ন্যূনতম খরচের মধ্যে আছে বিদেশি মদ। সে আমলে ফ্রান্স থেকে আমদানি করা ‘ওল্ড টম’ নামের মদ ছাড়া অন্য কিছুতে ঠোঁট ছোঁয়াতেন না। এমনি করে এক ইংরেজ বেনিয়ার কাছে দেনা জমলো সেই আমলেই চল্লিশ হাজার টাকা। বেনিয়া দিলো মামলা ঠুঁকে। গালিবকে আদালতে প্রশ্ন করা হলো, শোধ করতে পারবেন না জেনেও এতো টাকা ধার নিলেন, তাও মদ কিনতে? গালিব উত্তরে বললেন- কর্য কে পিতে থে ম্যায় পর সামাঝতে থে কে হাঁ, রং লায়েগি হামারি ফাকামস্তি ইক দিন। ( কর্জ করে মদ খেয়েছি তবে যাচ্ছে ঠিকই বোঝা, খালি পেটের এই মজা এক দিন জগতের মাঝে রঙ ছড়াবে)।

“বাংলা সাহিত্যে রবীন্দনাথের যে গুরুত্ব, উর্দু সাহিত্যে মির্জা গালিবের গুরুত্ব তারচেয়ে অধিক বললে অত্যুক্তি হবেনা।” আম নিয়ে আরেকটি কৌতুক। মির্জা গালিবের প্রিয় বন্ধু হাকিম রজিউদ্দিন খাঁ। তিনি আম পছন্দ করতেন না। একদিন দুই বন্ধু দিল্লীর পথে হাটছিলেন। এসময় দুটি গাধা রাস্তা পার হচ্ছিল। গলিতে পড়েছিল আমের খোসা। গাধা দুটি তা না খেয়ে শুধু শুকে ছেড়ে দিল। হাকিম বন্ধুকে ঘায়েল করার সুযোগ পেয়ে বললেন “ দেখেছেন মির্জা সাহেব,আম কি রকম ফল যা গাধারাও খেতে চায় না।” মির্জার তাৎক্ষণিক তীর্যক উত্তর “ঠিকই বলেছেন হাকিম সাহেব, শুধু গাধারাই আম পছন্দ করে না।”

তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'দিওয়ানে গালিব'। 'দাস্তাম্বু' তার সিপাহি বিপ্লবের রোজনামচানির্ভর একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। ঢাকায় এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গালিবের লেখার অভ্যেস ছিল অদ্ভুত। গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন এবং তা প্রায়ই সন্ধ্যায়৷ মদ হাতে, একা বসে একটি সুতা নিয়ে খেলতেন, কবিতার একটি লাইন লিখার পর সুতায় একটি গিঁট দিতেন। যখন শুতে যেতেন, তখন সুতায় অনেকগুলো গিঁট থাকতো। সকালে তিনি গিঁটগুলো খুলতেন৷ লাইনগুলো তিনি মুখস্থও বলতে পারতেন। গালিবের পক্ষেই বলা সম্ভব- ‘প্রতি বসন্তের শুরুতে একজন নতুন রমণী নাও কারণ- গত বছরের হিসাব অর্থহীন বিষয়।’

সাহিত্যাকাশে মির্জা গালিব পূর্ণ চাঁদের মতো- তাঁর কলংক আছে কিন্তু তাঁর জোছনার সৌন্দর্য, তাঁর দ্যুতির কাছে রাতশেষে সবাইকে হার মানতে হয়। ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি গালিব ইন্তেকাল করেন এবং তাকে দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কখনও শরাবের স্বাদ নেয়নি, জুয়া খেলেননি, জেল খাটেননি কিংবা প্রেয়সীর চটির আঘাত জোটেনি যার, সে কীভাবে কবি হয়।। ছুয়ে গেল কথাটি।।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩১

প্রামানিক বলেছেন: পোষ্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:১৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: সুন্দর লেখা। পড়ে বেশ ভাল লেগেছে। মির্জা গালিব সাহিত্য আকাশে একজন ধ্রুবতারা।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৮

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালো পোস্ট। গালিবের কবিতার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এর গভীর অর্থ। যেগুলো আজও সত্য। কিছু মানুষ অসম্ভব প্রতিভা নিয়ে জন্মান। তাদের অনেকে গালিবের মত উল্টাপাল্টা হন। আসলে এটা উল্টাপাল্টা চলা না, মনমতো চলা

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৯

আমি ধূসর বলেছেন: একবারে পুরোটা পড়তাম চমত্কার লিখেছেন।

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০২

মোহামমদ ইকবাল হোসেন বলেছেন: জানলাম আপনার লেখা্য় মির্জা গালিব সাহেব সম্পর্কে, ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.