নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
- একজন ভালো ফটোগ্রাফার হিসাব করেন ইঞ্জিনিয়ারের কলম দিয়ে, চিন্তা করেন দার্শনিকের মন দিয়ে এবং দেখেন একজন কবির চোখ দিয়ে।
- ভালো ক্যামেরা সেটিই, যার ওপর একজন ভালো ফটোগ্রাফার আস্থা রাখেন।
- প্রথমে শিখে নিন ফুল কাকে বলে। তারপর বুঝুন আপনার সামনে যা আছে সেটি কোন ফুল এবং তার পর ফটো তুলুন।
একটি ভালো দৃশ্যের জন্য ফটোগ্রাফাররা ছুটে যান বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন মনের মতো একটি দৃশ্যের; যা এক পলকেই অনেক মানুষকে আকর্ষণ করবে। দীর্ঘ ৬ বছর চেষ্টার পর মনের মতো একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান ম্যাকফেডেন । মাছরাঙার মাছ শিকারের একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান। ৭ লাখ ২০ হাজার বার ক্যামেরায় ক্লিক করে- মনের মতো একটি ছবি ধারণ করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬ বছর। লক্ষ্য ঠিক থাকলে সাফল্য অর্জন অসম্ভব নয়। পানি থেকে মাছ নেওয়ার সময় মাছরাঙার একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করতে সময় দিতে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ ঘণ্টা।
নেটে সার্চ দিয়ে এই ফটোগ্রাফারদের ছবি দেখুন খুব মন দিয়ে- নবুয়্যোশি আরাকি, রঘু রাই, স্টীভ, ডেবিট লাজার রবার্ট ফ্রাঙ্ক, ল্যারি ক্লার্ক এবং উইলিয়াম ক্লেইন আরো অনেকই আছে ।
প্রয়োজনে ISO বাড়িয়ে ছবি তুলুন। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি auto-ISO আপনি কাজে লাগাতে পারেন। Auto-ISO আপনার বিরাট বন্ধু হতে পারে। কিন্তু, বন্ধু থেকে কাজ বাগাতে হয় কিভাবে, জানেন তো। বন্ধুকে সময় দিন, বন্ধুকে জানুন। যে ছবি ক্যামেরাতেই দেখে বুঝতে পারছেন, বাজে (অস্পষ্ট, মূল-বিষয় কাটা পড়েছে, ঠিকমত এক্সপোজ হয়নি ইত্যাদি) হয়েছে, সেটা ক্যামেরাতেই মুছে ফেলেন। পিসিতে নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।
একজন ভাল শিক্ষক অথবা গাইড পওয়া এত সহজ নয়। ভরসা বই। বাংলায় এ বিষয়ে বেশি বই নেই। ইংরেজিতে অনেক আছে অবশ্য। কিন্তু পাচ্ছেন কোথায়? পেলেও, হাজার হাজার বই এর ভীড়ে আপনি জানছেন কিভাবে আপনি সত্যিই কিছু শিখতে পারবেন সেই বই থেকে? সব বইই ভাল নয়, ভাল বই খুজে নিতে হয়।
এইযে পৃথিবীকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখা – সেটা কি মানুষ জন্ম থেকে নিয়ে আসে? না, আসে না। এই ব্যপারটি অনেকখানি নির্ভর করে শৈশবে আপনি কি রকম পরিবেশে বড় হয়েছেন তার উপর। আমরা জানি যে অনেক সঙ্গীত শিল্পীর সন্তানরাও ভাল শিল্পী হন, অনেক ফটোগ্রাফারের সন্তানেরা ফটোগ্রাফীকে আঁকড়ে ধরেন।
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই শিল্পীসত্ত্বা ঘুমন্ত আছে – কে আছে যে গান শোনে না? সিনেমা/নাটক দেখে না? মূল বিষয়টি হলো আগ্রহের যায়গাটিতে লেগে থাকা। প্যাশনটা বেশি জরুরী।
প্রচুর বই পড়ুন – বিশেষ করে উপন্যাস। বইয়ের শব্দের গাঁথুনির অন্যতম উপাদান হলো ‘ডিটেইলস’। খেয়াল করলে দেখবেন একজন লেখক কোন ছো্ট বিষযের বর্ণনা দেয়ার সময়ও অনেক পারিপ্বার্শিক ডিটেইলস তুলে নিয়ে আসেন। যখন তিনি একটা সকালের বর্ণনা দেন তখন চায়ের কাপের ধোঁয়া, পাতায় প্রথম রোদের খেলা, দূর্বাঘাসের উপর শিশির বিন্দুর ঝকমকানি – এরকম সব ডিটেইলস এর বর্ণনা দেন। উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'শেষের কবিতা’ হতে কিছু লাইন তুলে দিলাম:
“আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা, ডান দিকে জঙ্গলে ঢাকা খাদ। এ রাস্তার শেষ লক্ষ্য অমিতর বাসা। সেখানে যাত্রী-সম্ভাবনা নেই, তাই সে আওয়াজ না করে অসতর্কভাবে গাড়ি হাঁকিয়ে চলেছে। ঠিক সেই সময়টা ভাবছিল, আধুনিক কালে দূরবর্তিনী প্রেয়সীর জন্যে মোটর-দূতটাই প্রশস্ত-- তার মধ্যে "ধূমজ্যোতিঃসলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ" বেশ ঠিক পরিমাণেই আছে-- আর, চালকের হাতে একখানি চিঠি দিলে কিছুই অস্পষ্ট থাকে না। ও ঠিক করে নিলে আগামী বৎসরে আষাঢ়ের প্রথম দিনেই মেঘদূতবর্ণিত রাস্তা দিয়েই মোটরে করে যাত্রা করবে, হয়তো বা অদৃষ্ট ওর পথ চেয়ে "দেহলীদত্তপুষ্পা" যে পথিকবধূকে এতকাল বসিয়ে রেখেছে সেই অবন্তিকা হোক বা মালবিকাই হোক, বা হিমালয়ের কোনো দেবদারুবনচারিণীই হোক, ওকে হয়তো কোনো-একটা অভাবনীয় উপলক্ষে দেখা দিতেও পারে। এমন সময়ে হঠাৎ একটা বাঁকের মুখে এসেই দেখলে আর-একটা গাড়ি উপরে উঠে আসছে। পাশ কাটাবার জায়গা নেই। ব্রেক কষতে কষতে গিয়ে পড়ল তার উপরে-- পরস্পর আঘাত লাগল, কিন্তু অপঘাত ঘটল না। অন্য গাড়িটা খানিকটা গড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে আটকে থেমে গেল।
একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। সদ্য-মৃত্যু-আশঙ্কার কালো পটখানা তার পিছনে, তারই উপরে সে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুৎরেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি-- চারি দিকের সমস্ত হতে স্বতন্ত্র। মন্দরপর্বতের নাড়া-খাওয়া ফেনিয়ে-ওঠা সমুদ্র থেকে এইমাত্র উঠে এলেন লক্ষ্মী, সমস্ত আন্দোলনের উপরে-- মহাসাগরের বুক তখনো ফুলে ফুলে কেঁপে উঠছে। দুর্লভ অবসরে অমিত তাকে দেখলে। ড্রয়িংরুমে এ মেয়ে অন্য পাঁচজনের মাঝখানে পরিপূর্ণ আত্মস্বরূপে দেখা দিত না। পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।
মেয়েটির পরনে সরু-পাড়-দেওয়া সাদা আলোয়ানের শাড়ি, সেই আলোয়ানেরই জ্যাকেট, পায়ে সাদা চামড়ার দিশি ছাঁদের জুতো। তনু দীর্ঘ দেহটি, বর্ণ চিকন শ্যাম, টানা চোখ ঘন পক্ষ্মচ্ছায়ায় নিবিড় স্নিগ্ধ, প্রশস্ত ললাট অবারিত করে পিছু হটিয়ে চুল আঁট করে বাঁধা, চিবুক ঘিরে সুকুমার মুখের ডৌলটি একটি অনতিপক্ক ফলের মতো রমণীয়। জ্যাকেটের হাত কব্জি পর্যন্ত, দু-হাতে দুটি সরু প্লেন বালা। ব্রোচের-বন্ধনহীন কাঁধের কাপড় মাথায় উঠেছে, কটকি কাজ-করা রুপোর কাঁটা দিয়ে খোঁপার সঙ্গে বদ্ধ।
অমিত গাড়িতে টুপিটা খুলে রেখে তার সামনে চুপ করে এসে দাঁড়াল। যেন একটা পাওনা শাস্তির অপেক্ষায়। তাই দেখে মেয়েটির বুঝি দয়া হল, একটু কৌতুকও বোধ করলে। অমিত মৃদুস্বরে বললে, "অপরাধ করেছি।"
মেয়েটি হেসে বললে, "অপরাধ নয়, ভুল। সেই ভুলের শুরু আমার থেকেই।"
পড়ে দেখুন – কি পরিমাণ ডিটেইলস তিনি তুলে ধরেছেন! বই পড়লে পৃথিবীকে এইভাবে দেখার ক্ষমতা আপনারও তৈরী হবে। আর ফটোগ্রাফীতে ছোটখাট ডিটেইলস যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মানুষের ছবি তোলার একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে মানুষের ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ বুঝতে শেখা – বিশেষ করে মুখের অভিব্যক্তি। ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি ভিন্নভিন্ন মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরে, সেই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০২
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: একেবারে খাঁটি কথা।
ধন্যবাদ............