নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলো আজ কিছু বেলুন আকাশে উড়াই

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৯


বেলুনের ছবিটা আমার'ই তোলা।


সকালে ঘুম থেকে উঠে, তাড়াহুড়া করে গোসল করে অফিসের উদ্দশ্যে বের হয়ে যাই। কোনোদিন নাস্তা খাই, কোনোদিন খাই না। আজ নাস্তা খাওয়া হয়নি, ঘরে আটা ছিল না। কোনোদিন আটা থাকে তো ডিম বা আলু থাকে না।
রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি- কখন বাস আসবে। এদিকে অফিসের সময় চলে যাচ্ছে। হঠাৎ দুই একটা বাস আসলেও যাত্রী বোঝাই থাকে। দুই একজন নামলে উঠে দশ জন। অনেকেই ধাক্কা-ধাক্কি এবং লাফা-লাফি করে উঠে যায়। কিন্তু আমি পারি না, অসহায় এর মত দাঁড়িয়ে থাকি। রাগে-দুঃখে চোখ ভিজে আসে। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। রিকশায় যাবো সে উপায় নেই, অনেক টাকা ভাড়া। আমার জন্য রিকশায় চড়া মানে বিলাসিতা করা।

কখনো-সখনো বাসে উঠে সিট পাওয়া ঈদের আনন্দের চেয়ে কম নয়, যেখানে বাসে পা রাখার মত জায়গা পাওয়াই বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। বাসের যাত্রীদের ধাক্কা-ধাক্কিতে আমার আয়রন করা জামা নষ্ট হয়ে যায়, জুতো মানুষের পায়ের পাড়ায়-পাড়ায় নোংরা হয়ে যায়। প্রতিদিন বিধ্বস্ত এবং ঘামে ভিজে আমাকে অফিসে যেতে হয় এবং বাসায় ফিরতে হয়। অফিস শুরু হওয়ার দেড় ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হই। তারপরও প্রতিদিন অফিসে সঠিক সময়ে পৌছাতে পারি না। কোনোদিন যদি বাসে উঠার সুযোগ পাই-ও, কিন্তু বেশি দূর যেতে পারি না, রাস্তায় লম্বা জ্যাম। নেমে দ্রুত হাঁটা দেই। নোংরা ফুটপাত, ভাঙ্গা রাস্তা আর সামান্য বৃষ্টি হলে প্যাক কাদা তো আছেই।

অফিসে গিয়েও শান্তি নেই। সারা দিনের জন্য অনেক গুলো কাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। আবার সেই বাসে-বাসে এক অফিস থেকে অন্য অফিস। সেই জ্যাম, গরম। ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে সারাটা দিন ঘুরে বেড়াই। দুপুরে ক্ষুধা পেলে কোনো হোটেলে ঢুকে ভাত মাছ খেতে পারি না। অনেক খরচের ব্যাপার। পকেটে থাকে অল্প কিছু টাকা। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে- চা বিস্কুট অথবা রুটি কলা খেয়ে নিই হাসি মুখে। ক্ষুধার জ্বালায় মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বড় কোনো হোটেলে ঢুকে প্রিয় সব খাবার গুলো অর্ডার করে আরাম করে বসে চিবিয়ে চিবিয়ে খাই। একদিন তো ক্ষুধায় পাগল হয়ে এক হোটেলে বসে পড়লাম কিন্তু খাবারের দাম শুনে মাথা নিচু করে বের হয়ে যাই।

সন্ধ্যায়, কখনও কখনও বা রাতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি। ঘামে শার্ট গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে। কপাল বেয়ে টপ টপ করে ঘাম ঝড়তে থাকে। আমার স্ত্রী ঘামের বাজে গন্ধের তোয়াক্কা না করে আমাকে জড়িয়ে ধরে, কপালে চুমু খায়। তাড়াতাড়ি লেবুর সরবত বানিয়ে দেয়। আমি সরবত খেয়ে বিশ্রাম নিই। তখন আমার স্ত্রী সারা দিনের জমিয়ে রাখা কথা গুলো এক আকাশ আগ্রহ নিয়ে বলে যায়। সারাদিন এত পরিশ্রম করেও আমি বেচারিকে আর্থিক স্বাছন্দ দিতে পারি না। অল্প কিছু টাকা বেতন পাই। মাসের বাজার করার পর হাতে আর তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। বউ ভাবে একদিন আমার অনেক-অনেক টাকা হবে, আর সেদিন সে সারা ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে শপিং করবে। নিজের মনের মতোন করে ঘর সাজাবে।

অফিস থেকে ফেরার সময়- রাস্তার পাশে মাছের বাজারে একবার ডু মারি। ইচ্ছে করে সব গুলো বড়-বড় মাছ গুলো কিনে নিই। পকেট ফাঁকা থাকায় আর মাছ কেনা হয় না আমার। মনে মনে ভেবে রাখি- সামনের মাসে বেতন পেয়ে সবার আগে পাঁচ রকমের পাঁচ কেজি মাছ কিনব। মাসের পর মাস চলে যায়, সেই মাছ গুলো আর কেনা হয় না। মাছ কেনার টাকা গুলো দিতে হয়- ডাক্তার আর ঔষধের পেছনে। অফিসের কাজে সারাদিন এত পরিশ্রম করি- তারপরও অফিস আমার কাজ দেখে না। বেতন বাড়ায় না, সুযোগ সুবিধা বাড়ায় না। বরং সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকি- কখন চাকরি চলে যায়। তখন তো না খেয়ে মরতে হবে। আমার তো ধনী কোনো আত্মীয় স্বজন নেই- যে, বিপদে পড়লেই ছুটে যাবো তার কাছে।

দিনের বেলা আমি যখন কোনো বাসে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকি, তখন আমার বউ ফোন দিয়ে বলে- রাতে কি রান্না করবো? ঘরে তো কিছু নেই। আসার সময় ডিম আর আলু নিয়ে এসো। তখন আমি একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলি- আচ্ছা। কখনও কখনও মাসের বিশ তারিখে ঘরের বাজার শেষ হয়ে যায়। বেতন পাওয়ার আগের ক'টা দিন কিভাবে চলবো- রাতে ভাবতে ভাবতে আমি এপাশ-ওপাশ করি। আমার ঘুম আসে না। এক আকাশ চিন্তা আর অস্থিরতা নিয়ে আমি ছট-ফট করি। পাশে আমার স্ত্রী তখন গভীর ঘুমে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হয় আমার। তখন ভাবি যত কষ্ট'ই হোক এই বৈশাখে অবশ্যই তাকে খুব সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দেব। ছোট ছোট সব স্বপ্ন আমার- তাও সত্যি হয় না। বিশেষ-বিশেষ দিন গুলো আমি বউ নিয়ে বেড়াতে যেতে পারি না। পকেট ফাঁকা। ছুটির দিনে বউ বলে, অনেকদিন আমরা রিকশায় করে কোথাও যাই না, চলো, আজ অনেকক্ষন আমরা রিকশায় করে ঘুরে বেড়াবো।

আমার স্ত্রীর বাচ্চার খুব শখ। আমি নিজেও বাচ্চা খুব ভালোবাসি। কিন্তু খরচের ভয়ে বাচ্চা নিতে পারছি না। এদিকে হু হু করে সময় চলে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠে। আমি চুপ করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াই। আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশ্বরকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করি। সারা জীবন সৎ থেকেছি, সজ্ঞানে কারো কোনো ক্ষতি করিনি। কোনো দিনও কারি-কারি টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ির ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু নূন্যতম চাহিদা গুলোও কি মিটবে না এই জীবনে? এক আধদিন ইচ্ছা হয়- চলন্ত ট্রেন অথবা ব্রিজের উপর থেকে নদীতে লাফ দেই। এই যন্তনা আর সহ্য হয় না। তিলে তিলে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।

আমার তো হতে পারতো, একটা আনন্দময় জীবন! সকালে নিজের গাড়িতে করে অফিস যাবো। অফিসে গিয়েই এসি ছেড়ে দেব, গা এলিয়ে নরম চেয়ারে বসব। বেল টিপে কফি দিতে বলব। কফি খাবো আর আরাম করে পত্রিকা পড়ব। ফাঁকে ফাঁকে কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের ডেকে ধমক-ধামক দেব। না, না রফিক সাহেব এভাবে কাজ করলে হবে না। আরও বেশি মন দিতে হবে। সোলায়মান সাহেব এক পাতা টাইপ করতে নব্বই ঘন্টা লাগে? তাও বিশ টা বানান ভুল!! না, না এভাবে করলে হবে না। কাজে মন দিন। এক ফাঁকে বউকে ফোন দিয়ে বলব- হুম, ড্রয়ারে টাকা আছে যা যা কিনতে চাও কিনে ফেল। ইত্যাদি ইত্যাদি। অফিস ছুটি হওয়ার কিছুক্ষন আগে মিটিং ডাকবো, চা খাবো আর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কিভাবে বাড়বে তা নিয়ে আলোচনা করবো। সেই মিটিং শেষ করবো রাত ৯ টায়।

আমার স্ত্রী খাঁচায় বন্দী পাখি দেখলেই আমাকে বলে, তোমার যখন অনেক টাকা হবে, তখন আমরা সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে সব খাঁচার বন্দী পাখি কিনে ফেলব তারপর আকাশে উড়িয়ে দেব। পকেটে অল্প টাকা থাকলেই আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে কফি শপে। দুইজন কোল্ড কফি খেতে খেতে আমাদের সংসার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করি। সেই সব আলোচনা কখন বাস্তব রুপ নেয় না। তবে আমি ঠিক করেছি সামনের মাসে বেতন পেয়েই আমি একশোটি গ্যাস বেলুন কিনব সাহস করে। যত দামই হোক। আমি বলব- চলো আজ কিছু বেলুন আকাশে উড়াই। আমার স্ত্রী ছোট বাচ্চাদের মতোন সব গুলো বেলুন আকাশে উড়িয়ে দেবে। তার দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছা পূরন হবে। সে অনেক আনন্দ পাবে। তার আনন্দময় মুখ আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।

মাসের শেষে যখন মার কাছে হাত পাতি- মা আমাকে বলেন, তুমি সারাদিন কাজ করো- তারপরও তোমার এত অভাব কেন? তার উপর সংসারে নাই বাচ্চা-কাচ্চা। আসলেই, অভাব কেন পিছু ছাড়ছে না, আমি বুঝি না। শুধু মনে হয়- আর কিছু দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না। আমি অপেক্ষায় থাকি, আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০৪

বিজন রয় বলেছেন: কোন কাজ নাই তাই বেলুন।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
ভাল লিখসেন ||

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১৭

রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: ভাল ছিল :)

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গল্প নাকি বাস্তব?

৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৪০

শরনার্থী বলেছেন: আপডেটঃ
জার্মান প্রবাসে- 1305
অগ্নি সারথির ব্লগ- 217
ইস্টিশন ব্লগ- 147
প্রবীর বিধানের ব্লগ- 57
ইতুর ব্লগ- 23

অসম ব্যবধান শুরু হয়েছে মোটামুটি। প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগের সাথে লড়াই করে যাওয়াটা বেশ দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। আবারো আপনাদের ভোট দেবার অনুরোধ করছি। প্লিজ আপনারা ভোট দিন।

ভোট দিতে যা করতে হবেঃ
প্রথমে https://thebobs.com/bengali/ এই ঠিকানায় যেতে হবে। এরপর আপনার ফেসবুক আইডি দিয়ে লগইন করুন। লগইন হয়ে গেলে বাছাই করুন অংশে ক্লিক করুন। ক্লিক করে ইউজার অ্যাওয়ার্ড বাংলা সিলেক্ট করুন। এরপর মনোনীতদের একজনকে বেছে নিন অংশে ক্লিক করে, অগ্নি সারথির ব্লগ সিলেক্ট করুন। এরপর ভোট দিন বাটনে ক্লিক করে কনফার্মেশন পেয়ে গেলেই আপনি সফল ভাবে আমাকে ভোট প্রদান করে ফেলেছেন। এভাবে ২৪ ঘন্টা পরপর মে ২, ২০১৬ পর্যন্ত ভোট দেয়া যাবে।

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫

মির্জা বাড়ির বউড়া বলেছেন: আসেন দেখেন ব্লগের সবচেয়ে পুরান নাটকের পুন:প্রচার। শরণার্থী নিকে ব্যাপক ল্যাদানির পরও মনমত সাড়া না পাওয়ায় অগ্নিসারথি গতকালকে নিজেই খুলেন বেলের শরবত নামে এক ইচিং ব্লগিং ক্যারেক্টার, তারপর সারাব্লগ ভাসিয়ে দেন নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে কমেন্ট করে যেন মানুষের সহানুভূতি আদায় করে ভোট পাওয়া যায়। নিজের গোমর নিজেই গভীর রাতে ভুলে ফাঁস করে ফেলেন পোস্ট দিয়ে যে তিনি ববস.কমে জিতে চাকরি ছেড়ে রেসিডেন্ট ব্লগার হতে চান এই ব্লগের। মারহাবা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.