নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মৃত্যু চিন্তা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৪



রাত ১১ টা। আমরা দু'জন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বরাবরের মতো মুহূর্তের মধ্যে সুরভি ঘুমিয়ে পড়ল। আমি এপাশ-ওপাশ করছি। আমার চোখে ঘুম নেই। অনেক চেষ্টা করলাম- কিছুতেই ঘুম আনতে পারলাম না। লাইট অন করলাম, ঘড়ির দিকে তাকাইয়ে দেখলাম- রাত দুই টায়। সুরভি বাম পাশ ফিরে বাম হাত বাম গালের উপর রেখে আরাম করে ঘুমাচ্চছে। দেখে মায়া লাগল। অথচ বিয়ের আগে সুরভি কথা দিয়েছিল- আমি ঘুমাবো তারপর সে ঘুমাবে। 'কেউ কথা রাখে না।' আচ্ছা, এক জীবনে মানুষ কর কথা দেয়, আর কত কথা রাখে না? ব্যালকনিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে পরপর দু'টা সিগারেট শেষ করলাম। ঠিক তখন আমার মাথায় মৃত্যু চিন্তা ভর করলো।

আমি জীবনে যা কিছু চেয়েছি, তা পাইনি। পেলেও সময় মতো পাইনি। যেমন, আমার যখন ১৪ বছর বয়স তখন একটা সাইকেল খুব চেয়েছি- কিন্তু আমার বাবা কিনে দেয়নি। কিন্তু যখন সাইকেল চালানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না, তখন হাতের কাছে দু'টা সাইকেল পেয়েছি। এই রকম অযুত-নিযুত লক্ষ লক্ষ স্বপ্ন জীবনে যথা সময়ে পূরণ হয়নি। তাই ঠিক করেছি, জীবনে যে ইচ্ছে বা স্বপ্ন গুলো পূরণ হয়নি তার একটা লিস্ট করবো। ইদানিং মনে হচ্ছে- আমি বেশি দিন বাঁচবো না। পুরাণ-মতে, কোনও ব্যক্তির দেহে যদি হলদেটে ভাব দেখা যায় এবং তাতে রক্তবর্ণের আভা থাকে, তবে বুঝতে হবে তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে। কুরআনে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু – এই দুটি-কে বহু বার আলোচনা করা হয়েছে।

আমি জানি, মাতৃগর্ভের সেই একটি মাত্র কোষ ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে দিনে দিনে গঠন করে মানবদেহ, পরিণত করে একটি বাচ্চা শিশুর শরীরকে পুর্নবয়স্ক মানুষে। আল্লাহ প্রকৃতিতেই যেমন আমাদের জীবন রক্ষার উপাদানগুলো রেখে দিয়েছেন, তেমনি এই প্রকৃতির মধ্যেই মৃত্যুর অমোঘ নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের কচকচানিতে আমি যাব না। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মরতে চাননি। তিনি বলেছেন- 'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।' মৃত্যু চিন্তা খুব অদ্ভুত একটা চিন্তা। যখনি মৃত্যুর চিন্তা মাথায় আসে প্রবল এক ঘোরের মধ্যে চলে যাই আমি। জগতটাকে খুব বেশি রহস্যময় মনে হয় তখন।

জীবন এত ছোট কেনে? " -লেখকের এই ভাবনাটি বারবার গভীরভাবে ভাবিযেছে। হয়রান করেছে। জীবনের সব স্বপ্ন পূরন করতে গেলে লম্বা সময় বেঁচে থাকা দরকার। হুট করে মরে গেলে সব স্বপ্ন'ই আধুরি থেকে যাবে। এটাই মানব জীবনের সব চেয়ে বড় সমস্যা। মৃত্যু ভয়ে হাসন রাজা পর্যন্ত নিজের ঘর বাড়িটা সুন্দর করে তৈরি করতে চাননি। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- 'বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবো – মূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে।' হাসন রাজার মৃত্যু নিয়ে খুব সুন্দর একটা গান আছে- 'একদিন তোর হইবো রে মরণ।।যখন আসিয়া যমের দূত হাতে দিবে দড়ি ~ হায়রে~ হাতে দিবে দড়ি।টানিয়া টানিয়া লইয়া ,যাবে যমের পুরি রে হাসন রাজা।'

অফিসে আমার কলিগকে আমার মৃত্যু চিন্তা নিয়ে বলতেই, তিনি আমাকে বাইরে চা খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে বললেন, খেয়াল করে দেখবেন, একজন তরুণ কীভাবে রাস্তা পার হয়! আর একজন সংসারী মানুষ কীভাবে সেই একই রাস্তা পেরিয়ে যায়। সংসারি মানুষটি হয় দায়িত্বশীল। মৃত্যুর ভয় আছে তার। জীবন তার কাছে অনেক দামী। তাই সে সাবধানী। আর তরূণ যুবকের মাঝে এসব ভাবনা নেই। পিছুটান নেই। সে হয় অসাবধানী। মৃত্যুর ভাবনা এমনই। তা জীবনকে আরও অর্থবহ করে। মানুষকে আরও কর্মঠ করে।

প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চাইতেন। তিন এক আকাশ হাহাকার নিয়ে বলেছেন একটা কচ্ছপ বাঁচে ২০০ বছর আর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত বাঁচে মাত্র ৬০ বছর। অল্প কিছুদিন আমাদের আয়ু।কিন্তু আমাদের কত আয়োজন! লেখা-পড়া, ডিগ্রী, চাকরি-বাকরি, বিয়ে ঘর সংসার- সন্তানাদি। আমি অনেক লোককে দেখেছি, একটু বেশি দিন বাঁচার জন্য তাদের কত চেষ্টা। সিগারেট, মদ ছুঁয়েও দেখেন না। ডাক্তারের সব কথা মেনে চলেন। খুব ভোরে হাঁটতে বের হোন। নানাবিদ চেষ্টা করেও লাভ নেই। অবশেষে তাদের মরতে হয়'ই।

আমার যখন ২১ বছর বয়স, তখন একবার আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। ঘটনাটা বলি- বড় একটা জাহাজে করে আমরা ১০০ জন সুন্দরবন যাচ্ছিলাম ৫ দিনের জন্য। আমাদের জাহাজ যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। এক সময় আমাদের জাহাজ বঙ্গোপসাগরে পৌছালো। সবাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গেল। আমি আমার স্বভাব মতো কোনো দলের সাথেই মিশতে পারলাম না। একা একাই রইলাম। কেউ দল বেঁধে গল্প করছে, কেউ বই পড়ছে, কেউ গান গাইছে। আমি একা একা জাহাজের এপাশ-ওপাশ আর উপর নিচ করতে থাকলাম। আশে পাশে দেখার কিছু নেই। চার পাশে পানি আর পানি। কোনো পাড় দেখা যায় না। বাবুর্চি রান্না নিয়ে ব্যস্ত। খাবারের সময় সবাই মিলে নিচে গিয়ে একসাথে খাওয়া। যাই হোক, রাত দুইটা- আমার চোখে ঘুম নেই। আমার কেবিন থেকে বের হয়ে জাহাজের ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেল। চার পাশ এত সুন্দর---এত সুন্দর। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। ফক-ফকা জোছনা। জোছনা পানিতে পড়ে চারপাশ ঝিকমিক করছে। চারপাশের পরিবেশ কিয এ মায়াবি!!! ঠিক তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। খুব তীব্র ভাবেই মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এই মধ্যে রাতের এই সুন্দর পরিবেশ আমাকে ডাকছে- সুন্দরের কাছে আমাকে যেতে হবে। এর নাম যদি মৃত্যু হয়- তাও ভালো। মৃত্যু এত সুন্দর !!! এক আকাশ জোছনায় আমি ঝাঁপ দিব- ঠিক তখন আমার আব্বা এসে আমার হাতটা ধরে ফেলল।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্ব সময়ে আর্নেস্তো চে গুয়েভারাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি তার অমরত্বের কথা ভাবছেন? চে জবাব দেন ‘আমি ভাবছি, বিপ্লবের অমরত্বের কথা’। তারপর তাকে প্রায় ১০টি গুলি করা হয় এবং তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এটা ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবরের ঘটনা।
সন্দেহ নেই, বিপ্লবের ব্যাপারে অবিচল পুরুষ ছিলেন আর্নেস্তো চে গুয়েভারা। কিন্তু তার যে বিপ্লব, যে আদর্শ, যে চেতনা—একে লালন করার সামর্থ্য এবং অধিকার সমকালীন পৃথিবীবাসীর নেই।

(আমার মৃত্যু চিন্তা নিয়ে মুল লেখাটা আগামী পরবে লিখব।)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
জন্মিলে মরিতে হয়, অমর কে কোথা কবে?

মৃত্যুর চিন্তা রেখে ঘুম দেন। শান্তি!

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
লেখা ভাল হইছে। আপনার মতই!

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
লেখা ভাল হইছে। আপনার মতই! লাইক!

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রতিটি মানুষ সম্ভব হলে, আরেকটি মহুর্ত বেশী বেঁচে থাকতে চায়, সে ওপারের বিশাল সুখের অসীম জীবনে যেতে চাহে না, কেহ চাহে না।

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩

আরাফআহনাফ বলেছেন: কী মিল-
আপনার সুন্দরবনের এই অনুভূতিটাই আমার হয়েছিল - জোৎস্না এক রাতে - সেন্টমার্টিন দ্বীপে।
সামনে রূপালি সমুদ্দর, সুনসান সব, শনশন হাওয়া, পরিস্কার আকাশ - -- -অনেক অনেক দূরে কালো পাহাড় মতো ! নাহ, আর পারছিলাম না - অসহ্য, অসহনীয় ঐ সৌন্দর্য্য। ভরা জোৎস্নার রূপ সবাই সইতে পারে না - মনে হয়।

ভালো থাকুন সবসময়, নিরাপদে থাকুন - শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.