নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
শীতের শেষে সমস্ত গাছের পাতা ঝরে পড়ে। তখন পাতা ছাড়া গাছ একদম রুগ্ন মনে হয়। শুকনো পাতা দিয়ে মাটির পথ ঢেকে যায়। সেই পথ দিয়ে কোনো পথিক হেটে গেলে কড়কড় মড়মড় শব্দ হয়। বাতাসে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো পাতা গুলো উড়ে যায়। কেউ কেউ এই সমস্ত শুকনো পাতা গুলো ঝুড়ি ভরে বাড়ি নিয়ে যায়। রান্নার কাজে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। এদিকে সমস্ত গাছের পাতা ঝরে পড়ার কারনে গাছ গুলো দরিদ্র বলে মনে হয়। কিন্তু গাছ গুলো বেশি দিন দরিদ্র থাকে না। সমস্ত পাতা ঝরে যাওয়ার পরই আবার নতুন করে নতুন পাতা গজায়। কচি সবুজ পাতা দেখতে কি যে সুন্দর লাগে ওমর আলীর। তার ধারনা সবুজ রঙে চোখের আরাম হয়। তিনি চোখের আরামের জন্য লম্বা সময় ধরে কচি সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মানুষ দেখলে ভাববে লোকটি বুঝি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই যে ১৪ ও ১৫ই আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রদ্বয়ের জন্ম হলো। পাঞ্জাব বিভক্ত হল, বঙ্গদেশ বিভক্ত হইল, আসাম বিভক্ত হল। লক্ষ লোকের কাফেলা বাস্তভিটা ত্যাগ করে ভিনদেশ পানে যাত্রা করলো। যাত্রাপথে কেউ প্রাণ হারাল, কেউ স্বদেশেই পলকের মধ্যে বিদেশী হল ও অনেকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যায় ভূষিত হলো, কেউ মুহূর্তের মধ্যে কাঙ্গাল ভিক্ষুকেও পরিণত হলো, কেউ গৃহহারা ও বাস্তহারা হলো। সমৃদ্ধশালী অতীত যেন অট্টহাসি হাসতে লাগল। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া নিদারুন মর্মব্যথা হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়।
ওমর আলী এবং শশীভূষন স্বচক্ষে দেখেছেন এবং ব্যথায় জর্জরিত হয়েছেন, কিন্তু প্রতিকার করার ক্ষমতা ছিল না; বিষাক্ত পারিপার্শ্বিকতা অসহায় করে রেখেছিল- মনুষ্যত্ববোধ, বিবেক, শিক্ষাদীক্ষা বিফল ছিল। নারকীয় আচার বাহবা পেল, যেন পশুত্ব প্রদর্শনই ছিল বীরত্ব।
মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান।
ওমর আলী এবং শশীভূষণ রেডিও'তে স্পষ্ট শুনেছেন, ২৪ এপ্রিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- "বাংলা ভাগ হবেনা। বাংলা পাকিস্তানের সাথেও যাবেনা, ইন্ডিয়ার সাথেও যাবেনা। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা ও আসাম মিলে একটি পুর্নাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।" হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উপলব্ধি করেন যে যদি বাংলাকে পুনরায় ভাগ করা হয়, অধিকাংশ শিল্প কারখানা, শিল্প নগরী কলকাতা চলে যাবে পশ্চিম বাংলা তথা ভারতের দখলে। ফলশ্রুতিতে, পুর্ব বাংলা অর্থনীতিতে চরম ভাবে পিছিয়ে পরবে। তাই সমগ্র পূর্ব বাংলা, আসাম, পশ্চিম বঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত পূর্নিয়া জেলা সহ অধিকাংশ অঞ্চল হত এই অবিভক্ত বাংলার অন্তর্গত। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের এই বক্তব্য শুনে দুই বন্ধু খুব খুশি হয়েছিলেন। বেঙ্গল মুসলিম লীগের সভাপতি, মৌলানা আকরাম খাঁ, জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলার মুসলমানদের লাশের ওপর দিয়েই কেবল বাংলা বিভাগ করা সম্ভব।
দেশভাগের অনেক আগেই শশীভূষণ এবং ওমর আলী এই দুইজনের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। তখন তারা আসাম থাকতেন। আসামে প্রায় সারা বছর'ই বিভিন্ন উৎসব আর মেলা হতো। ১৯৫০ সালে ভূমি সংস্কারের অধীনে জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয় তখন তারা আসামের একটা স্কুলে একসাথে লেখা পড়া করতেন। দেশ ভাগ হলো আর দুইজন দু'দিকে ছিটকে পড়লো।
দেশ ভাগের কয়েকদিন আগে শশীভূষনের সাথে ওমর আলীর ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ হলো। শিল্প সাহিত্যে তাদের দুইজনের জ্ঞান অনেক। দুইজন দুই ধর্মের। ওমর আলী বলেন, সারা পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারন হলো ধর্ম। ধর্ম না থাকলে পৃথিবীতে এত মারামারি কাটাকাটি হতো না। কিন্তু এই কথা মানতে রাজি হলেন না শশীভূষন। সেদিন তারা রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে ধর্ম নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক করলেন। তাদের আলোচনার চুম্বক অংশ নিচে দেয়া হলো-
ধর্ম নিয়ে শশীভূষনের বক্তব্য হলো- জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত, এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। কোনো ধর্ম সত্য না মিথ্যা তা প্রমান করার জন্য আমাদেরকে সেই ধর্মের গ্রন্থগুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে। যেহেতু সব ধর্মের মানুষই দাবী করে তাদের ধর্মগ্রন্থ তাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, কাজেই সেই ধর্মের গ্রন্থে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই এমন কিছু দিয়ে দেবেন যার দ্বারা মানুষ বুঝতে পারবে যে ঐ ধর্মটা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। ধর্মীয় কিচ্ছা কাহিনীতে বহু গোজামিল বা উদ্ভটত্ব থাকলেও মানুষ সেটা থেকেই জীবনের মূল্য খুজতে চেষ্টা করে। নাস্তিকতা শুধু যে একটি অযৌক্তিক ও অন্ধ-বিশ্বাস তা-ই নয়, সেই সাথে সবচেয়ে অমানবিক ও বিপদজনক বিশ্বাস। কারণ নাস্তিকরা হিটলার ও স্ট্যালিনের মতো গণহত্যাকারি ও তাদের ভিকটিমদের ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানের প্রধান রহস্যগুলোর সমাধান হয়ে যাওয়ার পরেও মানবজীবনের কিছু প্রশ্ন অজানাই থেকে যাবে। ধর্ম যদি মানব প্রগতির বাধা হতো, তাহলে আজ বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি হতো না। ধর্মীয় সংকীর্ণতা মানুষকে ছোট করে। ধর্মীয় রাজনীতি মানুষকে অসহিষ্ণু ও হিংস্র করে তোলে।
ধর্ম মানুষকে পুণ্যবান ও ধার্মিক করে। উদার ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয় ধর্ম। ধর্ম পালন মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করে। মানুষ ও মানবতার প্রকৃত শান্তি ও সার্বিক মুক্তি ধর্ম পালনের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। বিদায় হজ্বের ভাষণে হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলে গেছেন ‘হে মানবমন্ডলী! সাবধান, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে।’ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সমুদ্র হোক বা সংসার, যে ধর্মের নৌকা প্রস্তুত করে সে ঠিকই পার হয়ে যায়।
ধর্ম নিয়ে ওমর আলীর বক্তব্য- আমি কে, জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নগুলি সবার মনেই থাকবে। ঐতিহাসিক ভাবেই এই প্রশ্নের সন্ধানে লোকে গীতা, কোরান বা আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক দর্শনের মধ্যে এসবের উত্তর সন্ধান করবে। যেমন আমি করি। কিন্ত আমি হিন্দু বা আমি মুসলমান এই ধরনের কৃত্রিম পরিচয় কপ্পুরের মতন উবে যাবে।
ধর্ম মানুষের তৈরী সামাজিক ব্যবস্থা। আস্তিকতা হচ্ছে মনের বিকৃত অবস্থা। পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলোতে মানুষের যুক্তিবোধ (Rationality) ও বিবেকবোধ (Conscience) ছোটবেলা থেকেই নষ্ট করে দেয়া হয়। নাস্তিকতা মানুষের মনের স্বাভাবিক অবস্থা । আস্তিকতা হচ্ছে মনের বিকৃত অবস্থা। মানুষের অসহায়্ত্ব থেকেই ঈশ্বর ধারণার উৎপত্তি।আদি কালে আগুনকে মানুষ ভয় পেত কারণ তা নিয়ণ্ত্রণ করার সাধ্য মানুষের ছিলনা। সে কারণে তখন আগুনকে পূজা করতো।
মানুষ যখনই জীবনের অর্থ খুজতে গীতা, বাইবেল অথবা কোরানের মধ্যে ঢুকবে তখনই সে দিক ভ্রান্ত হয়ে পড়বে, পড়তে বাধ্য আর তখনই তার ধর্ম পরিচয় আবার চাগাল দিয়ে উঠবে।
মুক্তির জন্য মানুষকে নিজেরই চেষ্টা করতে হবে। কোনো দৈব সাহায্য সে পাবে না। প্রার্থনা একটা অন্তঃসার শূন্য ব্যাপার। উপাসনা নিরর্থক। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন’ এই তত্ত্বটির মধ্যে রয়েছে ধর্মের সবচেয়ে বড় ফাঁকি।
সেদিন দুই বন্ধু দীর্ঘক্ষন আলোচনা করেও কোনো সমাধানে আসতে পারেনি। এই সমস্যা কোনোদিন সমাধান হবার নয়। যুগ যুগ ধরে নানান তর্ক বিতর্ক চলবেই। নাস্তিক-আস্তিক সবাই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আসলে, সব ধর্মই কি মূলত এক নয়? যারা ধর্ম নিয়ে ঝগড়া ফ্যাসাদ করেন তারা কেন শুধু মানব ধর্ম পালন করেন না? মানবতা কি আপেক্ষিক? ধর্ম এমনেই এক অদ্ভুদ জিনিস, যে হাজার মাইল দুরের ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতির মানুষ একীভূত করলেও পাশের বাসার একই ভাষাভাষি, সংস্কৃতির মানুষকে এক করতে পারে না। সেই ধর্মই যখন মানবতার বানী শোনায়, তখন অবাকই হতে হয়। পৃথিবীতে প্রবর্তিত সব ধর্মের একটি অভিন্ন ও অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানবকল্যাণ। মানুষ ও মানবতার অকল্যাণ কোনো ধর্মেরই লক্ষ্য বা মূলনীতি হতে পারে না। দুঃখের কথা হচ্ছে নারীকে সব ধর্মেই অবমাননা করা হয়েছে। তবুও নারী পুরুশের চেয়ে অনেক বেশি ধর্মপরায়ণ।
মূলত পৃথিবীতে বুদ্ধ ধর্ম হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে জ্ঞানীদের জন্য । যাদের পূর্ণ জ্ঞান আছে তারাই বুঝতে পারবে বুদ্ধের অমৃত বাণী। পৃথিবী কিংবা পৃথিবীর বাইরে এমন কোন ব্যক্তি কিংবা মহাপুরুষ নাই যে বুদ্ধের বাণী গুলাকে মিথ্যা প্রমাণ করবে। সকল ধর্মেই কিন্তু মানবতার কথা বলে। যদি সব ধর্ম একসাথে বিবেচনা করেন তাহলে একটি মাত্র ধর্মের উদয় হবে এবং সেটিই হল মানব ধর্ম। মানব কুলে জন্মেছি বলেই আমরা মানব। ইতিহাস বলে এই পৃথিবীতে একমাত্র বুদ্ধ ধর্মেই বুদ্ধ তাঁর মৈত্রী প্রেমে সবাইকে আবদ্ধ করে জয় করেছিলেন রাজ সিংহাসন ত্যাগ করে তাও আবার বিনা যুদ্ধে। বুদ্ধ নিজে আঘাত সহ্য করেছেন কিন্তু কখনো অপরকে আঘাত করেন নাই। বুদ্ধের কাছে মৈত্রী প্রেম ছিল সবার জন্য এক সমান। সে প্রাণী হোক কিংবা মানুষ। তাইতো বুদ্ধ বলেছেন, “জগতে শত্রুতার দ্বারা কখনও শত্রুতার উপশম হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়” শান্তি শুধু মাত্র তো আর মুখে বললে হবে না, শান্তি আসতে হবে মনের ভিতর হতে। ধর্ম পালন হৃদয়ের ব্যাপার, বিশ্বাস ও ভক্তির বিষয়; এতে যেন জোর-জবরদস্তি না থাকে। ভালো কাজ সবসময় কর। বারবার কর। মনকে সবসময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো। সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ।
পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ কিবা খ্রিষ্টান। সব ধর্মেই বলা হয়েছে নারী শ্রেষ্ঠ, নারী অতুলনীয়, চির মহান। মুসলিম ধর্ম মহান করেছে নারীকে, স্বর্গ পায়ের তলে দিয়ে। হিন্দু ধর্ম মর্যাদা দিয়েছে, স্বরস্বতী, লক্ষীকে দেবী সাজিয়ে। বৌদ্ধ ধর্মের শাশ্বত প্রেমের বাণীর কেন্দ্রবিন্দুতে বসে আছে নারী। খ্রিষ্টান ধর্মেও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণায়, পরিচয় পেয়েছে যিশুর মাতা মেরী। সকল ধর্মেই দিয়েছে নারীর সম্মান, যদিও আমরা দেই ধর্মের দোহাই।
২১ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ওস্তাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
১৯৪৭ সালে, মানুষ দরিদ্র ছিল, অশিক্ষিত ছিল; বৃটিশ বুঝতে পারেনি ভারতে এত বড় দাংগা হবে; তাদের উচিত ছিলো, বৃটিশ বাহিনী এনে, তারপর ২ দেশকে স্বাধীনতা দেয়া। নেহেরু, গান্ধী ও জিন্নাহ কোন কিছুই কন্ট্রোল করতে পারেনি।