নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারা তিন জন বৃষ্টিতে ভিজছে

০৩ রা মে, ২০১৭ দুপুর ২:১২



প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।
অনেকক্ষন ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।
সময় দুপুর দুইটা। রোদের খুব তাপ। চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। আমার গায়ে একটা অফ হোয়াইট শার্ট। কালো প্যান্ট। পায়ে কালো সু। হাতে একটা চামড়ার বেল্টের ঘড়ি। পকেটে মানিব্যাগ নেই। মোবাইলও নেই। তবে শার্টের বুক পকেটে অল্প কিছু টাকা আছে। আমি কে? আমার বাসায় কই? আমার নাম কি? কিছুই মনে করতে পারছি না। খুব ব্যাড়া-ছ্যাড়ার মধ্যে পড়ে গেলাম।

কাউকে কি জিজ্ঞেস করবো- ভাই আমি কে? অথবা আমার বাসাটা কোথায়? গলির ভেতরে পাশাপাশি দুইটা চায়ের দোকান। দুইটা দোকানেই খুব ভীড়। আমি চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম- চায়ের দোকানের কেউই আমাকে চিনলো না। অর্থ্যাৎ আমার বাসা এই এলাকায় না। বাসা এই এলাকায় হলে চায়ের দোকানদার খাতির করতো। চায়ের দোকানে বসে চা দিয়ে রুটি খাচ্ছি। চায়ের দোকানের সামনেই একটা হোটেল। হোটেলের নাম দি নিউ আল মদীনা হোটেল। সাইনবোর্ডে একটা মোটা গরু-ছাগল আর মূরগীর ছবি আঁকা। তাদের সামনে প্লেটে নানান ধরনের খাবার সাজানো। গরু-ছাগল আর মূরগী অবাক চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। যেহেতু আমি হোটেলের নাম পড়তে পেরেছি তার মানে আমি লেখা পড়া জানি। আমি বুদ্ধি দিয়ে আমার নিজের অবস্থানটা বের করতে চেষ্টা করছি।

হাঁটতে হাঁটতে সংসদ ভবনের সামনে চলে এলাম। একটা সিলভার রঙের গাড়ির ভেতর থেকে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা সুন্দর। বড় বড় চোখ। সেই চোখে আবার কাজল দেয়া। এই মেয়েটা কি আমার বউ নাকি? বউকে পেলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সে আমাকে ধরে বাসায় নিয়ে যাবে। আদর করে পাশে বসিয়ে খাওয়াবে। চিকিৎসা করাবে। বড় বড় চোখওয়ালা মেয়েটা চোখ আর বড় করে বলল- এই সমস্যা কি? এইভাবে রাস্তার মধ্যে অসভ্য লোকদের মতোন তাকিয়ে আছেন কেন? আমি বললাম, স্যরি। আমার ভুল হয়েছে। আসলে হঠাত করে আমি সব ভুলে গেছি। আমার কিছুই মনে পড়ছে। মেয়েটা এবার তার বড় চোখ ছোট করে বলল- মেয়েদের সাথে লাইন মারার ফন্দি ফিকির তো ভালোই জানেন। যা ভাগ ফাজিল। বদের বদ।

মেয়েটার এমন ব্যবহারে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা কি পারত না আমার হাত ধরে তার গাড়িতে বসাতে। আমার সমস্যাটার সমাধানে সহযোগিতা করতে। দিন-দিন মানুষের মন থেকে মায়া মমতা ভালোবাসা উঠেই যাচ্ছে। সংসদ ভবনের সামনে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি হতে পারে না- এখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর গাড়িটা আমার। স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছি দেখে নিজের গাড়ি চিনতে পারছি না। ড্রাইভার হয়তো গাড়ি রেখে আশে পাশে কোথাও বিড়ি ফুকতে গিয়েছে।

টিভি চ্যানেলে কি একটা বিজ্ঞাপন দিব? আমি হারিয়ে গেছি এবং নিজেকে চিনতে পারছি না। অতীতের কোনো কথাই আমার মনে নেই। আমার পরিবারের লোকজন যেন আমাকে এসে বাসায় নিয়ে যায়। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে কত টাকা লাগে কে জানে! সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চুপচাপ মন খারাপ করে সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আকাশের অবস্থা ভালো না। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। রাস্তার গাড়ি গুলোর যেন খুব তাড়া। শো শো করে রকেটের মতো ছুটছে।

প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ক্ষুধা এমন একটা ব্যাপার- সে কিছু বুঝতে চায় না। সে সব সময় এসে উপস্থিত হয়। এই যে আমি এমন ব্যাড়া-ছ্যাড়া অবস্থায় আছি- এখন ক্ষুধা না লাগলেও তো চলতো। আমার উপর একটু দয়া করতো। যাই হোক, হাটতে হাঁটতে আমি খুব ভালো একটা জায়গায় চলে এলাম। রাস্তার পাশে মজার মজার খাবার বিক্রি করছে। ছেলে-মেয়েরা জোড়ায় জোড়ায় বসে খাচ্ছে। সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে জানলাম এ জায়গায় নাম জেনিভা ক্যাম্প। শার্টের পকেটে এখনও কিছু টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে লুচি আর কাবাব খেলাম। খেতে মন্দ নয়।

রাস্তার পাশে একটা দোকানে লেখা 'এখানে খাটি গরুর দুধের চা পাওয়া যায়।' পর-পর খাটি গরুর দুধের দুই কাপ চা খেলাম। যদিও লেখা খাটি গরুর দুধ। আসলে দুই কেজি মিল্কভিটার সাথে পাঁচ কেজি পানি মিশায়। প্রতারনা ছাড়া এই দেশে কোনো ব্যবসা নেই। সে যাই হোক, এখন আমি আমার বাসায় যাব কি করে? আচ্ছা, এমন কি হতে পারে আমি একজন এলিয়েন। অন্য কোনো গ্রহ থেকে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে এসে বলল- স্যার ফুল নিবেন। ফুলের চেয়ে মেয়েটির মুখ বেশি সুন্দর লাগছে আমার কাছে। আমার শার্টের পকেটের সব গুলো টাকা মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম। মেয়েটা তার সব গুলো ফুলের মালা আমাকে দিয়ে দিল। ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আদর করে দেই। হঠাত বৃষ্টি শুরু হলো। ঝুম বৃষ্টি। এমন কি হতে পারে না- ফুল বিক্রি করা মেয়েটি আমার মেয়ে। আমি তার বাবা। তার মা গিয়েছে মানুষের বাসায় থালা বাসন মাজতে। স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছি বলে নিজের মেয়েকে চিনতে পারছি না। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলাকে ডাক্তারি ভাষায় কি বলে? ডিমেনশিয়ার?

রাত ১১ টা। মন খারাপ করে পান্থপথ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টিভেজা রাতের রাজপথ দেখতে ভালো লাগছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ে গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে বাবা বাবা বলে জড়িয়ে ধরল। একটু পর বাচ্চার মা ছাতা হাতে গাড়ি থেকে নামল। তার চোখ লাল ও ভেজা। মনে হয় অনেক কেঁদেছে। জোরে একটা বাতাস বয়ে গেল। বাচ্চা মেয়েটির মা'র হাত থেকে ছাতাটা উড়ে গেল। তারা তিনজনই বৃষ্টিতে ভিজছে। কি মনে করে আমি পকেট থেকে বেলী ফুলের মালা গুলো বের করলাম। আর চারদিক বেলী ফুলের সুবাসে ভরে গেল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৭ দুপুর ২:২৮

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার হলো রাজীব ভাই।

০৩ রা মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: সুজন ভাই অনেক ধন্যবাদ। দোয়া করবেন।

২| ০৩ রা মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: হিমু ভক্ত ছিলেন মনে হয়?

০৩ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু হিমু না মিসির আলী তারপর শুভ্র সবার'ই ভক্ত।

৩| ০৩ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:

"রাস্তার পাশে একটা দোকানে লেখা 'এখানে খাটি গরুর দুধের চা পাওয়া যায়।' পর-পর খাটি গরুর দুধের দুই কাপ চা খেলাম। যদিও লেখা খাটি গরুর দুধ। আসলে দুই কেজি মিল্কভিটার সাথে পাঁচ কেজি পানি মিশায়। "

-খাঁটি দুধের চা'র দাম কি বেশী?

৪| ০৩ রা মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আধুনিক মানুষের এলকোহল ও ভেজাল খাবারের ফলে, আল-সাইমার রোগ হচ্ছে, এরা সব ভুলে যেতেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.