নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনের শেষে

০৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৯



দিন যায়, রাত আসে। গাছে গাছে নানান ফুল-ফল ধরে। আকাশে কালো মেঘ করে বৃষ্টি নামে। আবার বৃষ্টির অভাবে মাটি শুকিয়ে চারপাশ হয়ে যায় চৌচির। বাসা-বাড়িতে গৃহিনীরা তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন- টিভি সিরিয়াল দেখার জন্য। এক নম্বর খেলোয়াড় পিছাতে পিছাতে শীর্ষ তালিকার বাইরে চলে যায়। দিনের বেলা অফিস গুলোতে ব্যস্ততা, পথ থেকে রাজপথে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জনতার কোলাহল। মধ্যরাতের পর সব শুনসান নিরবতা। তখন একাএকা রাস্তায় হাঁটতেও ভয় করে।
কেউ কেউ প্রিয় মানুষের কথা ভেবে না ঘুমিয়ে পার করে দেয় সারারাত। আবার অনেক দূর থেকেও কেউ কেউ প্রিয় মানূষের কথা ভেবে চোখের জল ফেলে। প্রতিটা দিন সব মানুষকেই কোনো না কোনো সময় অভিনয়ে অংশ নিতে হয় -আমি ভালো আছি, এই দেখো না হাসছি! এই সব মানব মানবির গতিবিধি সব লক্ষ্য রাখছেন একজন দূরে বসে। তিনি দূর থেকে সব দেখেন, চিকুন কালির কলম দিয়ে মনে হয় কিছু লিখেন। কখনো কখনও মিটি মিটি হাসেন। এইভাবেই চলছে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা।

আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা আছে- কাজী নজরুল ইসলামের-
'বন্ধু গো আর বলিতে পারি না,
বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি,
তাই যাহা আসে কি মুখে।
বড় কথা বড় ভাব আসে না'ক মাথায়,
বন্ধু বড় দুঃখে !
অমর কাব্য তোমরা লিখিও,
বন্ধু যাহারা আছ সুখে!'

অবশেষে অনেক নাটকীয়তার শেষে আমি বিয়েই করে ফেললাম। এখন আমি খুব বুঝতে পারছি- বিয়ে মানেই যন্ত্রনা, শুধু যন্ত্রনা না শত যন্ত্রনা। বিয়ে করাটা বিরাট বোকামি হয়েছে। দিনের মধ্যে এক শ' বার সুরভি ফোন করে। তুমি কই, তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। সেই কখন অফিস ছুটি হয়েছে। এত আড্ডা কিসের? আমি লক্ষ্মী ছেলের মত বাসায় আসি। সুরভি এলোমেলোভাবে নানান গল্প বলে যায়, আমার তা শুনতে হয়। আমি বিয়ের পর যা পেয়েছি তা হলো- চা। রাত দুইটায় সুরভিকে চা বানাতে বললেও সে বিরক্ত হয় না হাসি মুখে চা বানিয়ে দেয়। আমি না ঘুমানো পর্যন্ত সুরভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আপনারা আবার ভেবে বসবেন না ঘটনা এমন ঘটে। এই রকম আমি ভাবি। কিন্তু ঘটে এর উল্টোটা। শুধু আমার না সব সংসারের একই অবস্থা।

হাসি আর আনন্দে কেটে যাচ্ছে সংসার জীবন। এখন আমাদের তিনটা বাচ্চা। বড় মেয়ের নাম টাপুর, মেজ মেয়ের নাম টুপুর। আর ছোট ছেলেটার নাম- গেদু। টাপুর টুপুর নামটা - নীলা নামের একজন মায়াবতী রেখে দিয়েছেন। হয়তো রবীন্দ্রনাথের "বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর নদে এলো বান" থেকেই নেওয়া হয়েছে টাপুর-টুপুর। আরা গেদু নামটা আমিই রেখেছি। টাপুর-টুপুর হওয়ার পর আমি অনেক টাকা বেতনের চাকরী নিয়ে সাইপ্রাস গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে রাতে কিছুতেই ঘুম আসতো না। বলতে গেলে প্রায় সারারাত জেগেই কাটাতাম। বারবার টাপুর-টুপুর আর তাদের মায়ের কথা মনে পড়ত। টাকা পয়সা দিয়ে আমি কি করবো? যদি আমি আমার পরিবারের সাথে থাকতে না পারি! এবং আমি জানি- সুখে থাকার চেয়ে স্বস্তিতে থাকা অনেক ভালো। পনের দিন পরেই চলে আসি নিজের দেশ আর বউ, বাচ্চার কাছে ।

আমার পরিবার ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুন্দর একটি পরিবার। কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। প্রতি শুক্রবার আমি সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কম্পিউটারে গেমস খেলি, মুভি দেখি। গল্প করি। গত শুক্রবারের কথা- আমি বাচ্চাদের সাথে গেমস খেলছি, তখন সুরভি এসে বলল- বাজারে যাও। ফ্রিজে কিছু নেই। আমি রেগে গিয়ে বললাম- গতকাল কেন বলোনি? জানো না, সপ্তাহে একটি দিন আমি বাচ্চাদের সাথে সারাদিন থাকি। সুরভি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল- বাজার আনার পর রান্না বসাবো। বাচ্চারা খাবে তুমি খাবে। আমি বাজারে গেলাম। সারা সপ্তাহের বাজার একসাথে করলাম। বাসায় ফেরার পর সুরভি আমার হাতে এক কাপ চা দিয়ে বলল- গোছল করে জুম্মার নামাজ টা পড়ে এসো। তারপর সবাই একসাথে মিলে খেতে বসব। ইচ্ছা না করলেও আমি লক্ষ্মী ছেলের মতো চা শেষ করলাম, তারপর গোছল করে নামাজ পড়তে মসজিদে গেলাম।

আমি নামাজ পড়ে বাসায় এসে দেখি- গেদু কাঁদছে। টাপুর-টুপুরও মন খারাপ করে বসে আছে। আমি গেদুকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে রে বাপ? গেদু বলল- মা মেরেছে। তখন টাপুর-টুপুর বলল বাবা- মা আমাদেরও বকেছে, আইসক্রীম চেয়েছিলাম বলে। হঠাৎ করে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। ফ্রিজে দুই বাটি আইসক্রীম আছে। বাচ্চারা আইসক্রীম খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। সামান্য আইসক্রীমের জন্য বাচ্চাদের মারতে হবে? সুরভি'র রান্না শেষ। সে এখন, টেবিলে খাবার দিচ্ছে। আমি সুরভি'র কাছে গিয়ে সহজ স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাইলাম- বাচ্চাদের মেরেছো কেন? সুরভি ভ্রু কুঁচকে বলল- এত বিরক্ত করে না! আমি রেগে গিয়ে চিকৎকার করে বললাম- তোমাকে হাজার দিন মানা করেছি না, বাচ্চাদের বকবে না, মারবে না। ওদের যা খুশি ওরা তাই করবে। তোমার রাগ হয়েছে তুমি চারটা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলতে। আমার এত রাগ লাগছিল যে- আমি চারটা গ্লাস আর দুইটা মগ ভেঙ্গে ফেললাম। মগ দুইটা সুরভি'রর খুব প্রিয় ছিল।

এই হলো ঘটনার শুরু।
দুপুরে আমরা সবাই না খেয়ে চুপচাপ বসে আছি। আমি একেবারেই ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। গেদু কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে মেজেতে। টাপুর-টুপুর মন খারাপ করে সোফায় বসে আছে। ঠিক এই রকম পরিস্থিতে সুরভি ব্যাগ গুছিয়ে এসে বলল- আমি চললাম। টেবিলে খাবার দেওয়া আছে, ক্ষুধা পেলে বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে নিও। আমার খুব রাগ লাগল। আমি রেগে গিয়ে বললাম- যাও তুমি। লাগবে না তোমাকে। আমি বাচ্চাদের সুন্দর ভাবেই পালতে পারব। সুরভি'র চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। আমি তা দেখেও দেখলাম না। সুরভি চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। বাচ্চারা কিছু বুঝতে না পেরে এক আকাশ অবাক চোখে একবার আমার দিকে আর একবার তাদের মা'র দিকে তাকিয়ে রইল।

সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও আমি বাচ্চাদের খাওয়াতে পারিনি। বাচ্চাদের না খাইয়ে আমার পক্ষেও খাওয়া সম্ভব না। বাচ্চাগুলো সারাদিন কত খেলাধূলা করে, কিন্তু আজ সবাই চুপ করে আছে। আমার বুকের মধ্যে কেমন চাপচাপ কষ্ট ঢোল পিটাচ্ছে। রাত ৯ টায় গেদু কাঁদতে কাঁদতে বলল- বাবা, মা'র কাছে যাবো। তার কান্না থামছেই না। টাপুর টুপুরও বলল- মা এলে তারপর খাবো। আমি টুপুরকে বললাম ফোন করো তোমার মাকে। টাপুর বলল- বাবা মা'কে অনেক বারই ফোন করেছি, মোবাইল বন্ধ। আমি মনে মনে ভাবলাম, বাটি আর মগ ভাঙ্গাটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে। একজন মা তার বাচ্চাদের শাসন করতেই পারে।

রাত ১১ টা। মাথা একেবারেই কাজ করছে না। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে।
আমার জন্য না, বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে- রাত সাড়ে বারটায় গিয়ে পোঁছালাম সুরভি'র মামা বাড়ি। এই বাড়িতে আমার কখনও আসতে ইচ্ছে করে না। অনেক ঝামেলার পর সুরভি'র সন্ধান পেলাম। যাই হোক, নিচ থেকে সুরভিকে খবর পাঠানো হলো। সুরভি পাঁচ তলার বারান্দা থেকে দেখল- বাচ্চারা উপরে দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর দু'হাত তুলে মাকে নিচে নামতে বলছে। সুরভি দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে এসে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরল। আমি তখন পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম।

সেই রাতেই বাসায় ফিরে, সুরভি বাচ্চাদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তারপর আমাকে নিয়ে খেতে বসে। সুরভি বলল- এই আস্তে আস্তে খাও। খাওয়া শেষ করে আমি ব্যলকনিতে গিয়ে বসি, সুরভি দু'মগ চা বানিয়ে নিয়ে এসে আমার পাশে এসে বসে। বাচ্চারা বিছানায় ঘুমায়। আমি আর সুরভি ফ্লোরে বিছানা পেতে ঘুমাই। কিন্তু সকালে হলে দেখা যায় তিন বাচ্চা'ই বাবা-মা'র পাশে এসে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পের শেষ এভাবে হলে ভালো লাগে; ব্লগে কষ্টের কবিতা পড়ে পড়ে এমন অবস্হা হয়েছে যে, মনে হয়, বাংগালীদের ভালোবাসা টিকে থাকে না।

০৮ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ওস্তাদ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছি। একটু দোয়া করে দেন।

২| ০৮ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: পাঠককে আকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা আছে আপনার। সুন্দর। শুভ কামনা।

০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১১ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:৩১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: রাজিব ভাই এবার মনে করেছিলাম আপনি না আবার রাগ করে কোথা নিখোঁজ হয়ে যান। কিন্তু গল্পের ইন্ডিং টা বেশ হয়েছে ভাই। অার যাই হোক প্রেমতো আছে। প্রেম যেন স্রষ্টা প্রদত্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.