নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ২৮

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৮



রিপন তার মার সাথে খুব চিল্লাচিল্লি করে।
সিরিয়াস চিল্লাচিল্লি। দুপুরে এবং রাতে খাওয়ার সময় রিপনের চিল্লাচিল্লির মাত্রা তিন গুন বেড়ে যায়। রিপন চিৎকার করে বলে কি রান্না করেছো? খাবার মুখে দেওয়া যায় না। একটু স্বাদ হয় নাই। এর চেয়ে কাজের বুয়ার হাতের রান্না ভালো হয়। রিপনের মা বুঝিয়ে বলেন, এখন একটু কষ্ট করে খেয়ে নে। রাতে ভালো করে রান্না করবো। আজ আমার শরীরটা ভালো নেই। রিপন খাবার লাথথি দিয়ে ফেলে দেয় মেঝেতে। চিৎকার করে বলে ফালতু রান্না। এই রান্না খাওয়া যায়। কুকুর বিড়ালের খাবার। প্রতি বেলা খাওয়ার সময় রিপন এরকম চিল্লা চিল্লি করে। খাবার লাথথি দিয়ে ফেলে দেয়। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। একই ঘটনা। অথচ সব ছেলে মেয়েই তার মায়ের হাতের রান্না ভীষন পছন্দ করে। আগ্রহ নিয়ে খায়। রিপনের মা নিরবে কাঁদেন।

রিপনের মা খুব চেষ্টা করেন রান্না ভালো করতে।
ছেলের মনের মতো রান্না করতে তিনি আপ্রান চেষ্টা চালান। তিনি খুব মন দিয়ে রান্না করেন। তারপরও খাবার মুখে তুলেই রোজ রিপন চিৎকার চেচামেচি করে। অথচ এই রান্না বাড়ির সব সদস্যই আরাম করে খায়। কেউ কোনো কথা বলে না। রিপনের মা ভেবে পান না কেন তার ছেলে খাবার মুখে দিয়েই বলেন, খাবার ভালো হয় নি। মুখেই তোলা যায় না। তিনি যথেষ্ট মন দিয়েই রান্না করেন। তার রান্নার বেশ নামডাকও আছে। তার অন্য ছেলেমেয়েরা তার রান্না রোজ খাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। শুধু রিপন খাওয়া নিয়ে খুব ঝামেলা করে। রিপন ডাক্তার দেখিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, রিপনের কোনো সমস্যা নেই। এটা তার মনের সমস্যা। হোটেলের খাবার তো রিপন বেশ আরাম করেই খায়। রোজ রোজ হোটেলের খাবার খাওয়া কি ভালো?

রিপনের মা অসহ্য হয়ে গেছেন।
তার সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এত মন দিয়ে রান্না করেন তিনি তবু ছেলে ঘ্যান ঘ্যান করে রোজ। হাতে টাকা থাকলে তিনি ছেলেকে টাকা দিয়ে বলেন, যা হোটেল থেকে খেয়ে আয়। রিপন হোটেলের রান্না ভালো লাগে। সে হোটেলে গিয়ে মজা করে খেয়ে আসে। অথচ তার নিজের মার হাতের রান্না ভালো লাগে না। রিপনের মার ভীষন দুঃখ। যাই হোক, এইভাবেই জীবন চলতে থাকলো। খাবার নিয়ে চিৎকার চেচামেচি। মায়ের হাতে টাকা থাকলে মা ছেলেকে টাকা দেন। ছেলে হোটেল থেকে খেয়ে আসে। তখন আর ছেলে চিৎকার চেচামেচি করে না। রিপন মনে মনে ভাবে আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করবো, যেই মেয়ের হাতের রান্না ভালো। একদিন এক মেয়ের হাতের রান্না রিপন খেলো। খেয়ে আরাম পেল। রিপন সেই মেয়েকে বিয়ে করলো।

অবশেষে রিপন বিয়ে করলো।
মা মনে মনে খুশি হলেন। যাক, এখন রিপন আরাম করে খেতে পারবে। রিপনের বউ রান্না করে। রিপন চুপ করে খায়। কোনো চিল্লাচিল্লি করে না। মা মনে মনে খুশি হোন। বউ এর রান্না মনে হয় ভালো তাই রিপন চিল্লাচিল্লি করে না। রিপন তার বউয়ের সাথে সুন্দর সংসার করছে। কোনো চিল্লাচিল্লি নাই। রিপনের মা বেশ খুশি। দেখতে দেখতে চার-পাঁচ বছর পার হয়ে গেল। খাওয়া নিয়ে রিপন আর কোনো ঝামেলা করে না। তার কোনো অভিযোগ নেই। অবশ্য রিপনের বউয়ের হাতের রান্নার বেশ সুনাম আছে। নানান রকম খাবার রান্না করতে পারে রিপনের বউ। চায়নীজ, ইন্ডিয়ান, থাই ও বাংলা খাবার ইত্যাদি। এই জন্য রিপনের বউয়েরও মনে মনে অনেক গর্ব। সত্যিই কি রিপনের বউয়ের রান্না রিপনের ভালো লাগে? রিপন তৃপ্তি করে খায়?

রিপনের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
একদিন রিপন ব্যাপক চিৎকার চেচামেচি শুরু করলো তার বউয়ের সাথে। গত পাঁচ বছর ধরে আমি তোমার রান্না খাচ্ছি। বিশ্বাস করো একবেলাও আমি আরাম করে খেতে পারি নাই। তোমার হাতের রান্না জঘন্য। আমি কত শখ করে বড় বড় মাছ কিনি। টাটকা মাছ কিনি। দেশি গরুর মাংস কিনি। টাটকা শাকসবজি সব নিজের হাতে বেছে বেছে কিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো একটা বেলাও আমি আরাম করে খেতে পারি না। তোমার রান্না মোটেও ভালো না। কিন্তু আমি ভদ্রলোকের ছেলে বলে আমি চুপ করে থাকি। চিল্লাচিল্লি করলে মানুষ খারাপ বলবে। তাই কোনো রকমে দুই একনলা ভাত মুখে দেই। তোমাকেও কিছু বুঝতে দেই না। তোমাকে বললে তুমি মন খারাপ করবে। সারাদিন কত কষ্ট করে তুমি রান্না করো। রান্না খারাপ হলে তো মুখের উপর বলা যায় না। তোমার চেয়ে আমার মায়ের রান্না অনেক ভালো। খুব ভালো।

রাত একটা।
বউ এর সাথে রিপন অতীত দিনের গল্প করছে। রান্না নিয়ে যে মার সাথে চিল্লাচিলই করতো রিপন সেসব পুরোনো দিনের গল্প। রিপনের খুব কান্না পাচ্ছে। সে তার বউকে বলল, অনেকের হাতের রান্না খেয়েছি জীবনে। গত পাঁচ বছর ধরে তোমার রান্না খাচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার মায়ের হাতের রান্নাই সেরা। তোমাদের রান্না খেয়েই আজ আমি বুঝতে পেরেছি আমার মায়ের হাতের রান্নাই সেরা। অথচ রান্না নিয়ে মায়ের সাথে আমি কি চিল্লাচিল্লি না করেছি। আজ আমি লজ্জিত। অনুতপ্ত। আমি আমার মায়ের রান্না ভীষন মিস করি। সেই রাত একটায় রিপন কান্না করতে করতে মায়ের ঘরে গেল। মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বলল, মা আমাকে মাফ করে দাও। তোমার রান্না নিয়ে কত আজেবাজে কথা বলেছি। অনেকের হাতের রান্না খেয়ে আজ আমি বুঝতে পেরেছি- মা তুমিই সেরা। তোমার হাতের রান্নার তুলনা হয় না। জানো মা, আমি দুই হাত ভরতি করে বাজার করি। অথচ বহু দিন ধরে আমি পেট ভরে ভাত খেতে পারি না। শেষ করে পেট ভরে খেয়েছি মনে পড়ে না।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৬

অতি মানব বলেছেন: মায়ের হাতেরর রান্নার পর যার হাত ভাল হয় সে হচ্ছে বউ।তবে অনেকের ব্যাতিক্রম ও হতে পারে।খুশির করার জন্য বলতে হয় তোমার হাতেই সেরা।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। জ্বী।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আহা ঘুরেফিরে সেই মায়ের রান্না,বিশ্ব সেরা। যেখানে শত অভাব অভিযোগ জানালেও নির্বিকার মনে মা আরো আশ্বাস দেন পরে আরো ভালো রান্না করবেন। কিন্তু বউয়ের কাছে তো সব গরমিল.... তখন আমরা পুরুষেরা আর মেরুদন্ডী প্রাণী থাকি না। ‌ গল্পে চরম বাস্তব ধরা পড়েছে।

শুভকামনা প্রিয় ছোট ভাইকে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: দাদা বাস্তব কাহিনি।
নিজের চোখে দেখা।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: বেচারা!

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১২

রাজীব নুর বলেছেন: বেচারা কে রিপন? না আমি?

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

নিভৃতা বলেছেন: আসলেই। মা তো মা'ই। মায়ের যেমন কোন তুলনা হয় না, মায়ের রান্নারও কোন তুলনা হয় না। ভীষণ সুন্দরভাবে বাস্তবকে তুলে ধরেছেন। ভালো লাগাা রেখে গেলাম।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫

বাকপ্রবাস বলেছেন: বউ বলেছে মরতে আমায় জীবন রাখা চলবেনা
রেললাইনে বডি দেব মাথা দেবনা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: মজার গান।

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



এই পোষ্টে সব কিছু অগোছালো মনে হলো, একই কথা বারবার লেখা হয়েছে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: কথা ঠিক বলেছেন। এক কথা বারবার বলা আমার মূদ্রাদোষ হয়ে গিয়েছে।

৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: খুকুর ফেরা
=========
সেলিনা আশরাফ
==========

মায়ের হাতের রান্না খেতে আসবি জানি তুই
মা রেঁধেছেন মজা করে মুড়ি ঘণ্ট রুই।
লাউ কলমির সমন্বয়ে কচু শাকের ভাজি,
পাত পেতে বসে খাবি-সন্ধ্যাবেলায় আজি।
এটা সেটা কত কি যে মা রেঁধেছেন আজ,
খোকন যে তার আসবে ফিরে ফেলে সকল কাজ।
লাশের বহর হঠাৎ দেখে বেহুশ হল মা তোর
রক্ত রাঙ্গা ভোরে এখন খুরতে হল গোর।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

৮| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: দারুণ প্রকাশ ।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।

৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মায়ের চেয়ে যে বেশী ভালেঅবাসা দেখায় সে ডাইনী

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লিংকে ঢুকলাম। ভালো লাগলো ভিডিও টি।

১০| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: হায়রে হায়! আমিতো গল্প পড়েই মন্তব্য করলাম এর মানে গল্পের নায়ক।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: যা খুশি ভাবুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.