নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস \'আগস্ট আবছায়া\' রিভিউ

০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৫৫



প্রথম কথা হলো-
এই বই পড়ে শেষ করার পর আমার মনে হয়েছে- লেখক বিশ্বসাহিত্য সব পড়ে ফেলেছেন। তিনি বিশ্বসাহিত্যের একজন মাস্টার। এই জন্য অবশ্যই তাকে বিনা দ্বিধায় বাহবা দেওয়া যেতে পারে। সাথে সাথে এটাও বুঝেছি বাংলাসাহিত্যও লেখক পুরোপুরি শেষ করতে পারেন নি। অবশ্য লেখক তাই বইয়ে বেশ কয়েকবার 'পথের পাঁচালী'র কথা গভীর ভাবে স্মরন করেছেন। উপন্যাসে যে বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি সেটা হলো লেখক অসংখ্যবার বিদেশি লেখকদের কথা, তাদের বইয়ের কথা উল্লেখ্য করেছেন।
প্রথামা প্রকাশনীর বই। ৭০০ টাকা দিয়ে বইটা বইমেলা২০১৯ এ কিনেছি। (যদিও এক বছর পর বইটা পড়েছি) ৩২৮ পৃষ্ঠার বই। বইটা অযথা টেনে লম্বা না করলে ১৮০ বা ২২০ পাতায় লেখা সম্ভব ছিলো। তখন বইয়ের দামও অনেক কমে যেত। তাহলে আমার মতো দরিদ্র পাঠকদের সুবিধা হতো। সত্যিকার পড়ুয়ারা ধনী হয় না। অন্যদিকে ধনী লোকেরা বই খুব কম পড়েন।
যেহেতু বইটা মন দিয়ে আমি পড়েছি তাই পাঠের প্রতিক্রিয়া আমি আমার মতো করে জানাতেই পারি, লিখতেই পারি। পাঠক হিসেবে এই অধিকার আমার অবশ্যই আছে।

উপন্যাসের কাহিনী এই রকমঃ উপন্যাসের শুরুতেই অধ্যাপক সাহেব মুম্বাইয়ের রাস্তায় ক্যাবে করে যাচ্ছেন। ক্যাবের ড্রাইভাত আইয়ার। এই ড্রাইভার আইয়ারের কথা বেশ কয়েকবার এসেছে পুরো উপন্যাসে। আইয়ার জীবন যুদ্ধে একজন পরাজিত মানুষ। লেখক আইয়ারের প্রতি যথেষ্ঠ আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দেখিয়েছেন। আইয়ার তামিলনাড়ুর লোক। কিন্তু কাজ করে মুম্বাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক এই উপন্যাসের নায়ক। তিনিই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। তার মুখেই পুরো উপন্যাসটা শুনে যেতে হয়েছে। অধ্যাপক একজন আলাভোলা মানুষ। সহজ সরল ভালো মানুষ। কিন্তু প্রচুর পড়ুয়া মানুষ। অলরেডি তিনি কাফকা অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ দূর্দান্ত হয়েছে। বেশ নাম করেছেন। দ্বিতীয় খন্ড তাকে অনুবাদ করতে বলা হয়েছে। এজন্য তাকে অগ্রীম টাকাও দেওয়া হয়েছে। পুরো উপন্যাসে অধ্যাপক সাহেব বেখেয়ালি মানুষ ছিলেন। অধ্যাপকের মাথার উপর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা জেকে বসেছে। বারবার তার ১৫ আগস্টের কথা মনে পরে যায়।

উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে লেখা।
অধ্যাপকের দুইজন প্রেমিকা আছেন- মেহেরনাজ এবং সুরভী ছেত্রী। অবশ্য মেয়ে দুজনকে প্রেমিকা বলা ঠিক হবে না। অন্যরকম একটা সম্পর্ক। সেটা প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের চেয়ে বড়। সুরভি এবং মেহেরনাজ দুজনের'ই প্রচুর লেখাপড়া, দুজনই দারুন সুন্দরী। সুরভি অধ্যাপকের নেপালি বান্ধবী। ইমেলে যোগাযোগ হয় নিয়মিত। অধ্যাপকের বাসার চাবি মেহেনাজের কাছে একটা থাকে। 'আগস্ট আবছায়া' উপন্যাসে ৯৯ পাতায় একটা লাইন আছে। লাইনটা এই রকম- ''সুন্দরী, মেদহীন শরীরের কামনাময়ী মেহেরনাজ সম্পূর্ন নগ্ন হয়ে বসে আছে আমার পাশে।'' উপন্যাসে এই দুই নারী চরিত্র মুগ্ধ করার মতো।

গল্পের নায়ক অধ্যাপক সম্ভবত গরীব।
যদিও তার একটা গাড়ি আছে। একবার অধ্যাপক সাহেব অসুস্থ হয়ে তার বাসার কাছে এপেলো হাসপাতালে ভর্তি হলেন। হাসপাতালের বিল কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন অধ্যাপক। পরে অধ্যাপক সাহেবের বড় ভাই খুলনা থেকে দেড় লাখ টাকা পাঠান কুরিয়ারে। অধ্যাপক সাহেবের এসপেসো কফি ছাড়া অন্য কিছু তার ভালো লাগে না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে অধ্যাপক সাহেব খেয়াল করলেন, আগস্ট মাসটা অন্য সব মাসের মত না। এই মাসে বহু খারাপ কিছু ঘটেছে। খারাপ ঘটনা গুলো লেখক একের পর এক সাজিয়েছেন। পৃথিবীর বহু বিখ্যাত মানুষ এই আগস্টে মাসে খুন হয়েছেন।

উপন্যাসের নায়ক অধ্যাপক সাহেবের শান্তি নাই।
সীমাহীন তার অস্থিরতা। সীমাহীণ তার যন্ত্রনা। তার যন্ত্রনা বুঝার ক্ষমতা কারো নেই। মেহেনাজ ছাড়া। অধ্যাপক সাহেব বারবার ১৫ আগস্টের কথা ভাবেন। ১৫ আগস্ট তাকে তাকে দুমড়ে মুচড়ে কষ্ট দেয়। কোনো কিছুতেই তিনি শান্তি পান না। বারবার তার সামনে ভেসে আসে ১৫ আগস্ট। নির্মম হত্যাকান্ড। মানুষের ক্ষুদ্র জীবনের ভেতর যে হিংসা, ক্ষোভ, ষড়যন্ত্র, জটিলতা, কুটিলতা, পাওয়া- না পাওয়া তা তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তিনি মানতে পারেননি। প্রতিবছর আগস্ট মাস এলেই তিনি দিশাহারা হয়ে যান। তাই অধ্যাপক ১৪ আগস্ট রাত থেকে ১৫ আগস্টের সমস্ত ঘটনার অনুসন্ধানে লেগে যান।

পুরো উপন্যাসে যে বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে তা হলো- লেখক ১৫ আগস্টের ঘটনা যেভাবে বর্ণনা করেছেন ১৪ আগস্ট রাতে থেকে পরের দিন বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গীপাড়া নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাতে মনে হয়েছে লেখক ঘটনার সময় ৩২ নম্বরে উপস্থিত ছিলেন। পড়তে পড়তে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। দূর্দান্ত। কোথাও কোথাও চোখ ভিজে উঠেছে। হুমায়ূন আহমেদ তার 'দেয়াল' উপন্যাসেও ১৫ আগস্টের ঘটনা বলেছেন। সেটাও আমার ভালো লেগেছে।
টুকরো টুকরো ভাবে উপন্যাসে নানান রকম বিষয় এসেছে। দুই একটা উদাহরন দেওয়া যেতে পারে- একসময় বেদেনিরা দাঁতের পোকা ফেলতো। ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার কথা এসেছে। দু'টা দৈনিক পত্রিকার কথা এসেছে। ধর্ম নিয়ে অনেক কথা আছে। ধর্ম নিয়ে লেখক ১৪১ পৃষ্ঠায় বলেছেন, ''মানুষ যা, ধর্ম কি মানুষকে তার চাইতে বেশি ভালো করে? আর ধর্ম না থাকলে মানুষ কি সে যা তার চাইতে আরও খারাপ হয়ে যায়?'' কালিদাসের 'মেঘদূত' এর কথা আছে। বাকশাল নিয়ে বেশ আলোচনা করা আছে।

উপন্যাসের লেখক- মাসরুর আরেফিন।
তার জন্ম ১৯৬৯ সালে। বরিশাল ক্যাডেট কলেজে পড়েছেন। ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া ইউনির্ভাসিটি, মেলবোর্ন। মাসরুন আরেফিনকে আমি চিনি না। কোনো দিন দেখি নি। হয়তো তার সাথে কোনো দিন আমার দেখাও হবে না। দেখা হলে বলতাম- স্যার আমি আপনার বইটা খুব মন দিয়ে পড়েছি। ভালো লেগেছে। আপনি আরো লিখুন। এই লেখকের অন্য কোনো বই আমি আগে পড়িনি। লেখক সিটি ব্যাংকের এমডি। পত্রিকাতে তাকে অসংখ্যবার দেখেছি।
যাই হোক, সব মিলিয়ে উপন্যাসটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। উপন্যাসটা লিখতে গিয়ে লেখক দীর্ঘ চার বছর কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কারন এরকম বই লেখা খুব সাহসের কাজ। এই বইতে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাস তো ভুল লেখা যায় না। শেষ কথা হলো- লেখক ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। জয় বাংলা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১১

আখেনাটেন বলেছেন: ভালো লাগল নতুন এই লেখকের কথা জেনে।

কিন্তু বইয়ের মূল বক্তব্য কি সেটা তো বুঝলাম না।


আপনি লিখেছেন: সত্যিকার পড়ুয়ারা ধনী হয় না। অন্যদিকে ধনী লোকেরা বই খুব কম পড়েন। --- ভুল কথা। ধনী, সুপার ধনী সকলেই প্রচুর বই পড়েন। বিল গেটস, জুকারবার্গ, বাফেট সহ সকলেই প্রতিবছর পঠিত বইয়ের কথা বলেন। ব্যবসা করতে গেলেও জানতে হয়, আর জানতে হলে পড়তে হয়। বাংলাদেশের মতো সকলেই অসৎভাবে, লুটপাট করে অর্থ উপার্জন করেন না। তাদের মাথা খাটাতে হয়।


০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: বইয়ের মূল বক্তব্য ১৫ আগস্ট। আরেকবার পড়ে দেখুন লিখেছি তো!

(সত্যিকার পড়ুয়ারা ধনী হয় না। অন্যদিকে ধনী লোকেরা বই খুব কম পড়েন। ) আমি বাঙ্গালীদের কথা বলেছি।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৩:১১

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: মাসরুর আরেফিন থেকে আমি শত হাত দূরে।উনি উনার এমপ্লয়িদের প্রত্যেককে তার সেই বিখ্যাত বই কিনতে বাধ্য করেছিলেন।তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদেশী থ্রিলার বই থেকে প্লট মারার অভিযোগ আছে।২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেখক আনিসুল হক আমাকে প্রথমা প্রকাশিত যেকোন একটি বই উপহার হিসেবে নিতে বলেছিলেন।টাকলুর বই সযত্নে এড়িয়ে গেছি।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: এমপ্লয়িদের বই কিনতে বাধ্য করেছেন। কথাটা হাস্যকর। আমি চাকরি করলে- আমি বই বের করলে, আমার সহকর্মীদের বই কিনতে বলব না? আর বলতে হবে কেন সহকর্মীদের তো এমনিতেই বই কেনা উচিত।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:২৬

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: উনি সহকর্মিদের বই কিনতে বলেছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠে নাই।প্রশ্ন উঠেছে, নিন্দার জড় উঠেছে উনি তার অধিনস্তদের বই কিনতে বাধ্য করেছেন,সেই জন্য।আরেফিনের কাজকর্মই হাস্যকর।আর যতই সহকর্মি হোক আর যেই হোক বই ভালো না হলে মানুষ বই কিনবে কেন?পরিচিত লোকজনদের বই কিনে গতবার ধরা খেয়ে এবার বই মেলায় যায় নি বা গোপনে বইমেলায় গিয়েছে এমন কথা ইদানিং প্রায়ই শুনি।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: তাও সত্য।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৮

জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: আরেফিন তার বইতে হাসান আজিজুল হকের যে ভূমিকা যুক্ত করেছেন,সেটাও ভুয়া।হক সাহেব বলেছেন তিনি ওটা লেখেন নাই।লেখক মানেই প্রতিভা বা সম্মান না,উল্টা কিছুও হতে পারে।

০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: হুম, তখন পত্রপত্রিকায় অনেক লেখা হয়েছে এ বিষয়ে।

১৪ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, জাহিদুল ইসলাম ভাই, লেখকের সাথে আমার কথা হয়েছে- আমি লেখকের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরলাম-

সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা যে আমি আমার ব্যাংকের লোকদেরকে আমার "আগস্ট আবছায়া" কিনতে বাধ্য করেছি। সামান্য অনুরোধও কাউকে করিনি। কেন করবো? আমি এত নিচু লোক না।

তারা অনেক এবার "আলথুসার" বের হলে বই কিনতে গিয়েছিল। সেটা নিয়ে আমি প্রকাশ্যে ফেসবুকে লিখেছি এবং পরে অফিসেও বলে দিয়েছি সাহিত্যরসিক না হলে কেউ যেন এমডিকে তেল মারতে মেলায় আমার বই কিনতে না যায়।

হাসান আজিজুল হক কাণ্ড যারা ঘটিয়েছিল তারাই এসব ডাহা মিথ্যা ছড়ায়। ঘিন্না লাগে আমার।

আপনার রিভিউয়ের জন্য অজস্র ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.