নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৩৫

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:২৭



লাল মিয়া চেয়ারম্যান ভাবে-
গরীবের কি আছে? গরীবের কিচ্ছু নেই। গরীবের আছে শুধু ক্ষুধা। পেট ভরতি ক্ষুধা। সারাদিন শুধু তাদের ক্ষুধার চিন্তা। কিভাবে তিনবেলা পেট পুরে খাবে সেই চিন্তা। ক্ষুধা থাকে না ধনী লোকদের। তাদের টেবিল ভর্তি থাকে নানান পদের খাবারে। অথচ ধনী ব্যা্ক্তিদের ক্ষুধা লাগে না। মুখে তাদের একদম রুচি নেই। কিন্তু গরীব মানুষের রুচির অভাব নেই। সামান্য মরিচের ভর্তা দিয়ে দুই প্লেট ভাত উড়িয়ে দেয় লাল মিয়া। যদি কোনোদিন সামান্য পুটি মাছ বা কাচকি মাছ হয় তাহলে তো কথাই নেই। আর গরীব মানুষদের বছরে একবার কপালে মাংস জোটে। কোরবানীর ঈদের সময়। পাড়া প্রতিবেশীরা দেয়। গরীবেরা ইচ্ছা মতোন মাংস খেয়ে নেয় তখন। যে বুড়োর দাতে জোর নেই, সে বিরাট এক হাড় মুখে দিয়ে নাড়াচাড়া করে। খাবারের মজা নেওয়ার জন্য গরীব থাকা দরকার। কারন ধনীরা খাবারের মজা পায় না। দুনিয়াতে মানুষের চিন্তার শেষ নেই। অথচ লাল মিয়ার চিন্তা একটাই- ক্ষুধা লাগলে খাবার পাবো তো। ঠিক খাওয়ার সময় হলেই লাল মিয়া গ্রামের ধনী লোকদের দুয়ারে গিয়ে দাড়ায়। বয়স্ক লোক এবং মুরুব্বী ভেবে কেউ তাকে ফেরায় না। বলা যায় বেশ আদর যত্ন করেই উঠানে খেতে দেয়।

লাল মিয়া অতি দরিদ্র লোক।
সে মোটেও কোনো প্রতিষ্ঠান বা গ্রামের চেয়ারম্যান নয়। তবু তাকে গ্রামের লোকজন চেয়ারম্যান বলে ডাকে। লাল মিয়ার বয়স প্রায় পচাত্তর। দুইটা ছেলে। দুই ছেলেই অতি বদ। অতি অপদার্থ। কাজকাম কিছুই করে না। অথচ বিয়ে করে বসে আছে। বরং নেশাপানি করে বেড়ায়। সুযোগ পেলে চুরীও করে। লাল মিয়া চেয়ারম্যানের বউ ভানু। ভানু বেগম। বয়সে ভাড়ে নুয়ে পড়েছেন ভানু। সংসারে বড় অভাব তাদের। সংসারে শুধু নাই নাই। দুই ছেলের দুই বউ সারাদিন ঝগড়া করে। ঝগড়ার সময় কুৎসিত গালাগাল দেয়। ভানু বেগম ও লাল মিয়া চুপ করে থাকে। কিছু না শোনার ভান করে। লাল মিয়া সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে। ঘরের অশান্তি তার ভালো লাগে না এই বয়সে। সারাটা জীবন তার দুঃখে দুঃখে কাটলো। শেষ বয়সে এসে এখন তিনবেলা খাবার জুটে না। অথচ ভালো ভালো খাবার খেতে তার খুব মন চায়। কেউ খাবারের কথা বললে, কখনও লাল মিয়া মানা করে না। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে খায়। সেদিন ঘোষ বাড়িতে গিয়েছিলো দুপুরবেলা। ঘোষ বাড়ির ছোট বউ মিতালী বেশ আদর যত্ন করে খাইয়েছিলো। ফুলকপি আর দেশী আলু দিয়ে কৈ মাছ। ঘন ডাল। বেশ আনন্দ নিয়ে খেয়েছিলো লাল মিয়া। মিতালী এত ভালো যে খাওয়া শেষে একবাটি তরকারী জোর করে দিয়েও দিলো।

রসুলপুর বাজার বেশ জমজমাট।
আগে এত লোকজন ছিলো না গ্রামে। এত দোকানপাটও ছিলো না। এখন বেশ জমজমাট হয়েছে। সপ্তাহে একদিন এখানে হাট বসে। দূরদূরান্ত থেকে বেপারিরা আসে। লাল মিয়া সকালবেলা এসে রতনের চায়ের দোকানে এসে বসে। চা আর রুটি যে খাবে তার সেই টাকাও নেই। অথচ কোনো না কোনো ভাবে তার চা আর রুটির ব্যবস্থা হয়ে যায়। চায়ের দোকানে গ্রামের বহু লোক চা খেতে আসে। ছোট গ্রাম। সবাই সবার পরিচিত। কেউ না কেউ তাকে দেখে বলে আরে লাল কাকা যে! লাল মিয়া একটা হাসি দেয়। বড় সরল হাসি তার। তখন একজন বলে এই রতন লাল কাকাকে চা দে। চায়ের সাথে একটা বনরুটিও দে। চা আর বনরুটি দিয়ে লাল মিয়া আরাম করে খায়। খেতে তার খুব ভালো লাগে। সকালের নাস্তাটা হয়ে যায়। বাড়ি থাকলে নাস্তা জুটতো না। হয়তো পাতলা খুদের চালের খিচুড়ি জুটতো। সেই খিচুড়িতে নেই পেয়াজ, আনাজ বা তেল। স্বাদ বিহীণ খাবার। গলা দিয়ে নামতে চায় না। লাল মিয়া চা আর রুটি খেয়ে একটা বিড়ি ধরায়। বিড়িতে টান দিতেই নিজেকে রাজা বাদশার মতোন লাগে। আজ দপুরে তার রুই মাছের মুড়িঘণ্ট খেতে ইচ্ছা করছে। তার বউ ভানু রুই মাছের মুড়িঘণ্টটা রাধে।

লাল মিয়া চেয়ারম্যান প্রাইমারী স্কুলের মাঠে বসে আছে।
আজ স্কুল বন্ধ। সকাল এগারোটা বাজে। তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কিচ্ছু করার নেই। প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার মোবারক আলী তার বন্ধু ছিলো। বিয়ে থা করেনি। একলা থাকতো। একা রান্না করে খেত। খুব দরাজ দিল মানুষ ছিলো। লাল মিয়ার সাথে দেখা হলেই বলতো- আজ সবজি খিচুড়ি রান্না করবো লাল মিয়া। তুমি সময় মতো চলে এসো কিন্তু। গত বর্ষায় মোবারক আলী হুট করে মারা গেল। লাল মিয়ার খাবারের একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেল। লাল মিয়া আকাশের দিকে তাকায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সে পারে শুধু দুটা জিনিস। ভাবতে আর খেতে। নানান কথা লাল মিয়া ভাবে। ভাবতে তার বড় ভালো লাগে। খেতে পছন্দ করলেও ভালো খাবারটা তার জোটেই না। অথচ এই বয়সেও তার দাত বেশ মজবুত আছে। দাতের সেটিং বেশ সুন্দর। গত মাসে তালুকদার বাড়িতে লাল মিয়া শ্রাদ্ধ খেতে গিয়েছিলো। বিরাট আয়োজন করেছিলো তালুকদারেরা। লাল মিয়া রুই মাছই খেয়েছিলো পাঁচ পিছ। ইয়া বড় সাইজ মাছ গুলোর। এক বাটি গরুর মাংস উড়িয়ে দিয়েছিলো তুফানের মতোন। বাটিতে হাড় ছিলো দুটা। হাড় গুলো চিবিয়ে সবটুকু রস মজা করে ধীরে ধীরে খেয়েছিলো। তার মতো করে আজকালকার ছেলে ছোকরাও এমন করে খেতে পারে না। খাওয়া শেষে একহাতা দই দিয়েছিলো পাতে। লাল মিয়া সব্টুকু দই খেয়ে তৃপ্তির একটা ঢেকুর তুলেছিলো। এরকম তৃপ্তির ঢেকুর যদি প্রতিবেলা তোলা যেত। তাহলে জীবনটা বেশ আনন্দময় হতো!

লাল মিয়াকে বেশ কটূ কথা বলে তার বউ ভানু।
বলে তোমার খাওয়ার এত লোভ কেন হ্যা? বয়স তো কম হলো না। এক পা তো কবরে। খাওয়ার জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে সারাক্ষন ঘুরে বেড়াও। লজ্জা করে না তোমার? ছিঃ। লাল মিয়া বউ এর কথা শুনে রাগ করে না। ভানুকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো। যৌবন কালে কত না সুন্দর ছিলো ভানু। কি মিষ্টি মুখ ছিলো। লাল মিয়া যখন ভানুকে বিয়ে করে নিয়ে আসে তখন গ্রামের সমস্ত মানুষ অবাক ভানুকে দেখে। সবাই বলাবলি করছিলো- দেবী প্রতিমার মতোন মেয়েটা কই পেলে লাল মিয়া? তখন তার গর্বে বুক দুই ইঞ্চি ফুলে গিয়েছিলো। বাসর রাতে লাল মিয়া ভানুকে বলেছিলো- আমি তোমাকে রাজরানী করে রাখব। অনেক ভালোবাসবো। অভাবে অভাবে ভালোবাসা নাই হয়ে গেল। এখন একটু পান এনে দিতে পারে না ভানুকে। ভানু পান খেতে ভীষন ভালোবাসে। তাকে একবেলা খাবার না দিলে সমস্যা নাই। কিন্তু তার পান লাগবেই। ভানুর অনেক গুলো দাত নেই। তাই হামানদিস্তায় সেচে তারপর পান মুখে দেয়। রাতে লাল মিয়া স্ত্রী পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে আসে। স্ত্রীকে আহবান জানায়। মুহুর্তের মধ্যে ভানু বেগম প্রচন্ড রেগে উঠে। বলে ছিঃ বুড়ো বয়সে শখ কত! লজ্জা করে না তোমার? লাল মিয়া রাগ করে পাশ ফিরে শোয়।

(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩৮

মীর আবুল আল হাসিব বলেছেন:

ভালো লাগলো লাল মিয়ার গল্প।

ছিঃ বুড়ো বয়সে শখ কত! লজ্জা করেনা তোমর? =p~ =p~ =p~ =p~

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

২| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:



দু:খী বাংলার সনাতন চরিত্র।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: এর পরিবর্তন কবে হবে?

৩| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:০৭

এইচ তালুকদার বলেছেন: গ্রাম বাংলার গল্প গুল হাজার বছর ধরে একই রকম আছে।গল্পে আমার পরিবারকে স্মরন করেছেন মনে হচ্ছে :-B :-B :-B

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা---

৪| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:২৩

সোহানাজোহা বলেছেন: গল্প - খুব ভালো লেগেছে। বর্তমান ব্লগে এমন গল্প হাতে গুনা চারজন মাত্র লিখতে পারেন।



রাজীব নুর
ঠাকুরমাহমুদ
চাঁদগাজী
মুন্ময়ী শবনম

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: গুনী মানুষদের মাঝে আমার মতো তুচ্ছ লোকের নাম মানায় না।

৫| ০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০৮

সোহানাজোহা বলেছেন: আপনি নিজেও গুণী মানুষ। আপনারা সবাই অত্যন্ত সম্মানী লেখক। এবং সম্মান আপনাদের প্রাপ্য। ব্লগে যে পরিমান লেখা আপনার উপহার দিয়েছেন ব্লগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আমি রিতিমতো আশ্চর্য হই।

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ব্লগ কর্তৃপক্ষ একদিন হয়তো তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিবেন।

৬| ০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রাজীব খান অনেক দিন পরে একটা দারুন গল্প
পড়ে মুগ্ধ হলাম। আপনার লেখার হাত ভালো এত
দিনে বুঝলাম। আগে আপনাকে অনেক খোঁচা দিয়েছি
আর তার সুফল পেলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: দোয়া আর ভালোবাসা চাই আপনার কাছে মুরুব্বী।

৭| ০৬ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৩৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: দেখেন গরিব কত উপকারী।গরিব না থাকলে এত সুন্দর গল্প লিখতে পারতেন না।

০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: গরিবি আমার পছন্দ না।
গরীবদের আমি পছন্দ করি না।
যদিও আমি নিজেই গরীব।

৮| ০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমার যখন সামর্থ হবে তখন এই জাতীয় লাল মিয়াদেরকে পেট পুরে খাওয়াবো। মানুষ খাওয়ার জন্য কষ্ট করবে এটা কোন কথা না।

০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: লাল মিয়াদের সাথে সাথে আমাকেও খাওয়াইয়েন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.