নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরোনো দিনের গল্প

১৪ ই মে, ২০২০ রাত ৩:১৮



আমার যখন ৬ বছর বয়স, তখন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।
এখনকার ছেলেমেয়েরা ৬ বছর বয়সে কি চালাক, চতুর হয়। আমি ছিলাম নির্বোধ শ্রেনীর। তখন তো মোবাইল ছিল না, ল্যাপটপ ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না। ডিশ লাইন ছিল না। যাই হোক, স্কুল থেকে ফেরার পর মা আমাকে গোসল করিয়ে দেয়। গোছল তো না, মারাত্মক অত্যাচার। নারকেলের সোবা দিয়ে ডলে ডলে আমাকে লাল বানিয়ে দিত। মাথায় এক গাদা তেল দিয়ে দিত। কপালের ডান পাশে আঙ্গুল দিয়ে এত্ত বড় একটা টিপ দিত। গোছলের পর আমি দুপুর পর্যন্ত খেলি। সেদিন গোসল করার পর খেলা করার জন্য পাশের বাসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হই। কিন্তু পাশের বাসায় না গিয়ে এক পাগল এর পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যেন চলে যাই। চারিদিকে শুধু গাড়ি বাস রিকশা আর দোকানপাট। অনেক খোঁজা-খুঁজি করেও আমাদের বাসা খুঁজে পেলাম না। এদিকে ক্ষুধায় পেট চু চু করছে।
হঠাৎ রাস্তার পাশের এক মাইকের দোকানের লোক আমাকে কোলে নিয়ে বলল- বাবু তোমার বাসা কই?
-জানি না।
ঠিকানা কি?
- জানি না।
তোমার বাবার নাম কি?
-মনে করতে পারছি না।
থাকো কোথায়?
-বাসায়। আমার খুব ক্ষুধা লাগছে।

লোকটি আমাকে রুটি কলা কিনে দিলো।
আমি লক্ষ্মীর ছেলের মতন সবটুকু রুটি কলা খেয়ে নিলুম। তারপর লোকটি আমাকে তার দোকানে পেছনে বস্তিতে একটা ভিক্ষুক বুড়ির কাছে রেখে এলো। আমার এখনও চোখে ভাসে- বস্তির সেই নোংরা পরিবেশ। ছোট ছোট বাঁচা গুলো কাঁদায় মাখামাখি করে খেলছিল।

সময় তখন মধ্যদুপুর।
আমি বাসা থেকে বের হয়েছিলাম সকাল এগারো টায়। মাইকের দোকানের লোক সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ যেটা করেছে- তা হলো, উনি মাইক দিয়ে নিজের খরচে আশেপাশে এলাকায় ঘোষনা করেছেন। একটি ফরসা ছেলে পাওয়া গিয়াছে। হাফ প্যান্ট, হাফ শার্ট পরা। পায়ে জুতো। কপালে ইয়া বড় টিপ। মাথার চুল ছোট ছোট করে কাটা।

এখন, সেই সময় বাসার পরিস্থিতি কি হয়েছিল সেই কথা একটু বলি-
আমার মা জানতেন আমি যেখানেই থাকি না কেন, একটু পরপর বাসায় ঘুরে এসে মাকে দেখে যেতাম। মা ১২ টার দিকে আমার প্রথম খোঁজ করেন। ১ টার দিকে আমাকে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। আবার জ্ঞান ফিরে, আবার আমাকে দেখতে না পেয়ে জ্ঞান হারায়। দুপুরবেলা আমাদের বাসার আশের পাশের এলাকায় মাইক দিয়ে জানানো হলো- রাজীব নামে একটি ছেলে হারানো গিয়াছে। গায়ের রং ফর্সা। মোটা করে। হাফ প্যান্ট আর হাফ শার্ট পরা। কোনো সহৃদয়বান পেয়ে থাকলে সন্ধান দিন। সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইক ঘুরল- খিলগা, ফকিরের পুল, মালিবাগ, শান্তিনগর, কমলাপুর ইত্যাদি এলাকায় মাইক দিয়ে সবাইকে জানানো হলো কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।

রাত ১১ টা। মা যায় যায় অবস্থা।
সবাই ধরেই নিলো রাজীবকে আর পাওয়া যাবে না। এই ব্যাপারটা সবাই মাকে বুঝাতে চেষ্টা করলো। প্রতিবেশীরা মাকে বলল, আল্লাহর মাল আল্লহ নিয়ে গেছে। আর কান্নাকাটি করো না। তখন আমার বাবা নিখোঁজ। মার সাথে রাগ করে কোথায় যেন চলে গিয়েছিল। আর নানা নানী'ও কিছুদিন আগে মারা যান। আমার বাবা থাকলে আমাকে ঠিকই খুঁজে বের করতে পারত। বাবার কাছে কোনো সমস্যাই কোনো সমস্যা নয়।

আমি রয়ে গেলাম বস্তিতে। ইয়া বড় বড় মশা আমাকে আদর যত্ন করতে লাগল। অবশ্য সারারাত আমাকে মশার কাছ থেকে আদর যত্ন নিতে হয়নি। রাত ১ টায় আমি বাসায় ফিরি। মা কোলে করে আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় ফেরার পর মা আমাকে দুধ আর দুবলা দিয়ে গোছল করায়। সারা মহল্লার মানূষকে মিষ্টি খাওয়ায়। তখন মার কাছে দুধ মিষ্টি কেনার টাকা ছিল না। টাকার জন্য মাকে তার গলার সোনার চেনটা বিক্রি করতে হয়েছিল।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৪৬

আহমেদ চঞ্চল বলেছেন: মুগ্ধতা রেখে গেলাম। গল্পের বুনন টা বেশ পোক্ত।।

১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ চঞ্চল।

২| ১৪ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৪৬

আহমেদ চঞ্চল বলেছেন: মুগ্ধতা রেখে গেলাম। গল্পের বুনন টা বেশ পোক্ত।।

৩| ১৪ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার গল্পে অতীত উকি দেয়। তবে আপনি ছোটকালে চালাক ছিলেন বর্তমান বলে।

১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আমি চালাক কোনো কালেই ছিলাম না।

৪| ১৪ ই মে, ২০২০ ভোর ৬:৩৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
লেখাটা আগেও একবার পাঠ করেছিলাম।
সেই মায়ের সাথে আড়াই মাস ধরে কথা বলছেন না।

১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।
এখনও বন্ধ আছে।

৫| ১৪ ই মে, ২০২০ ভোর ৬:৫১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: নষ্টালজিয়া

৬| ১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ৮:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমাদের অঞ্চলে ছোট শিশুদের কোমরে পিতলের তৈরি ঘন্টি বেঁধে দেওয়া হতো কালো সুতো দিয়ে। হাঁটাহাঁটি করলে শব্দ করতে থাকতো। তখন শব্দ পাওয়া যেতো না তখনই মা ডাকাডাকি করে খোঁজ নিতেন। খুবই বিজ্ঞানসম্মত একটি ব্যবস্থা ছিল।

৭| ১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ৮:৫২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: এখনকার ছেলেমেয়েরা ৬ বছর বয়সে কি চালাক, চতুর হয়। আমি ছিলাম নির্বোধ শ্রেনীর। বর্তমানের কি অবস্থা? আপনার আত্ম-উপলব্ধি কি বলে......আপনি এখন চালাক-চতুর??? :-B

৮| ১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: গল্প না কি সত্যি?

১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: সত্যি।

৯| ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:১০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
প্রতিটি মন্তব্যেরই উত্তর দেওয়া দরকার।
আপনার প্রথম পোস্টে আমি একটি মন্তব্য করেছিলাম। আজও উত্তর দেন নাই।

১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:২১

রাজীব নুর বলেছেন: দিবো ভাই দিবো।
অবশ্যই দিবো।
এবং জনসংখ্যা যে কত বড় সম্পদ একটি দেশের তা নিয়েও আমি পোষ্ট দিব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.