নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মকবুল চাচা

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ২:৪৮



আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা।
মকবুলের বিয়ে। মকবুলের বয়স আঠারো। মকবুল আমাদের বাড়িতে থাকে। বলতে গেলে সারা জীবন আমাদের বাড়িতেই থেকেছে। তার বাবা মা মারা গেছে। মকবুল ছিলো আমার দাদার ডান হাত। আমার দাদা একদিন হঠাত করে অন্ধ হয়ে গেলেন। তখন মকবুল দাদার দেখাশোনা করতো। পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে দাদাকে নিয়ে সকাল বিকাল হাঁটতে বের হতো। প্রতি সপ্তাহে দুইবার দাদার দাড়ি কামিয়ে দিত। দাদাকে বাজার থেকে ঘুরিয়ে আনতো। দাদাকে খবরের কাগজ পড়ে শোনাতো। ফাঁকে ফাঁকে দাদীকে নানান কাজে সহযোগিতা করতো। আমার সব চাচা ফুফুরা মকবুলকে খুব পছন্দ করতো। আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো মকবুল মুহুর্তের মধ্যে যে কোনো গাছে উঠে যেতে পারতো। আমরা গ্রামে গেলেই ঝটপট ডাব গাছে উঠে যেত। নিজেই ডাব কেটে আমাদের খেতে দিত। আমি একটা ডাব পুরো শেষ করতে পাড়তাম না। তখন মকবুল আমাকে বলতো ডাবের পানি দিয়ে মূখ ধুয়ে নিতে। এতে নাকি অনেক উপকার।

মকবুল এর বিয়েতে আমি গেলাম।
আমি আর আমার বড় ফুপি। আমার অন্য চাচা ফুপুরা তখন ঢাকায় তাই তাদের যাওয়া হলো না। তখন আমি অনেক ছোট। কিন্তু আমার সব মনে আছে। প্রতিটা ঘটনা আমার মনে আছে। আমার মা মাঝে মাঝে অবাক হয় অতীতের সমস্ত ঘটনা আমি কিভাবে মনে রেখেছি জেনে। মা অতীতের গল্প করতে গেলে ভুলে যাওয়া অংশ গুলো আমাকে জিজ্ঞেস করে নেয়। আমি মাকে মনে করিয়ে দেই। যাই হোক, আমরা মোট সতের জন মিলে মকবুলকে বিয়ে করাতে নিয়ে যাচ্ছি। যেতে হবে নৌকায় করে। দুই ঘন্টা সময় লাগবে। মকবুল আগেই একটা নৌকা ভাড়া করে রেখেছে। মকবুল সারাক্ষণ মুখে রুমাল চেপে বসে আছে। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। মাথায় জামাই টুপি পড়েছে। তাকে খুব ভীতু দেখাচ্ছে। নৌকায় থাকা বরযাত্রীদের অনেকেই লুঙ্গি পড়া। আমার দাদা দশ কেজি মিষ্টি কিনে দিয়েছিলেন। কে যেন একটা মিষ্টির প্যাকেট খুলে সবাইকে দিচ্ছে। মাঝি নৌকা চালানো বন্ধ রেখে মিষ্টি খেতে এলেন।

এযুগে সবাই গাড়ি করে বরযাত্রায় যায়।
আমরা যাচ্ছি নৌকায় করে। আমাদের সাথে আছে একটা ব্রিফকেস। ব্রিফকেসের মধ্যে আছে বউ এর সাজুকাজুর জিনিসপত্র। আলতা, স্নো, পাইডার, নেইলপলিশ, লিপস্টিক, গামছা ইত্যাদি। সব কেনাকাটা করেছে মকবুল নিজে। প্রতিটা জিনিস সস্তা। মকবুল বিয়ে উপলক্ষ্যে আমার চাচা ফুপু কারো কাছ থেকে কিচ্ছু নেয় নি। আমার দাদা তাকে কিছু টাকা দিতে গেলে, মকবুল বলে- আমি কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিয়ে করবো না। আমি অন্য জিনিস। আমি নিজের পায়ে দাড়িয়েছি। আপনারা আমাকে থাকার জায়গা দিয়েছেন আমার কিচ্ছু লাগবে না। তবে বিয়ের পর খরচ বাড়বে তাই বাজারে একটা চায়ের দোকান দিবো। তখন আমাকে কিছু সহযোগিতা করবেন। মকবুল একদম সহজ সরল। গায়ে অনেক শক্তি। প্রচুর কাজ করতে পারে। খাওয়া নিয়ে তার কোনো বাড়াবাড়ি নাই। পানি ভাত পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে হাসি মুখে খেয়ে নেয়।

নৌকা থামলো। কিছু দূর হেঁটে গেলেই ক'নের বাড়ি।
নৌকা থেকে নামতে গিয়ে মকবুল পা পিছলে পড়ে গেল। কাদায় মাখামাখি অবস্থা। কেউ নৌকা থেকে নামতে গিয়ে পড়লো না। আমিও না। কিন্তু মকবুল পড়ে গেল। পড়ে গিয়েও মকবুল মুখ থেকে রুমাল নামায় নি। যাই হোক, মেয়ের বাবা দরিদ্র হলেও একটা বিশাল বিয়ের গেট করেছেন। গেটের কাছে আসতেই আমাদের সবাইকে ডাব খাওয়ানো হলো। নানান রকম পিঠা দিলো। ব্রিফকেস পাঠিয়ে দেওয়া হলো ভিতর বাড়িতে। মেয়েকে পাড়া প্রতিবেশীরা সাজাতে শুরু করলো। যোহর নামাজ শেষে আমাদের দুপুরের খাবার দিয়ে দেওয়া হলো। খাবারের আয়োজন অতি সামান্য। শুধু পোলাউ আর গরুর মাংস। রোস্ট বা মাছ ভাজা নেই, বোরহানি নেই। ফিরনি-পায়েশ নেই। কাবাব নেই। টিকিয়া নেই। কোক, ফানটাও নেই। অবশ্য খাবারের শেষে টক দই আর পান সুপারির ব্যবস্থা ছিলো। আমি জামাই এর পাশে বসে খেলাম। পোলাউ মাংস অতি স্বাদ হয়েছে। ইচ্ছে মতো খেলাম।

বিকেলের আগেই বিয়ের সমস্ত ঝামেলা শেষ।
এবং সন্ধ্যার আগে আমরা নতুন বউ নিয়ে আমাদের বাড়ি চলে এলাম। এবং ঘরে ঢুকার সাথে সাথে শুরু হলো ঝড়। তুমুল ঝড়। গ্রামের ঝড় যারা না দেখেছে তারা বুঝবে ঝড় কত ভয়ঙ্কর হতে পারে। পোষ্ট বড় হয়ে যাচ্ছে। লেখা এখানেই শেষ করবো। লিখতে শুরু করলে শুধু লিখতেই ইচ্ছা করে। থামতে ইচ্ছা করে না। যাই হোক, মকবুলের বর্তমানের অবস্থা বলি। আমার আব্বা মকবুলকে একটা চায়ের দোকান করে দেয় জিপিও'তে। চা, রুটি কলা, সিগারেট আর বিস্কুট পাওয়া যায়। সে এখনও খুব সুন্দর দোকানদারি করছে। তার তিন সন্তান। ঢাকার শান্তিবাগ ভাড়া থাকে। তার স্ত্রীর নাম জরিনা। আমার দাদী জরিনাকে একটা সোনার চেইন উপহার দেন। জরিনা এবং মকবুল তাদের ঘর সংসার নিয়ে ভালো আছে। অবশ্য দুই হাজার সালে মকবুল সৌদি গিয়েছিলো। কিন্তু ভিসায় সমস্যা থাকার কারনে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। আমি মাঝে মাঝে মকবুলের চায়ের দোকানে যাই। সে আমাকে খুব যত্ন করে চা খাওয়ায়।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৩:৩৭

অদৃশ্য আত্মা বলেছেন: আরো একটু বড় করলে ভালো লাগত

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: অকে। এর পর থেকে বড় করবো।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ ভোর ৫:১৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: গ্রাম বাংলার অনুষ্ঠানের সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন।

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ ভোর ৫:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


অতি সাধারণ মানুষের সহজ জীবন।

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রামের জীবন এখনও ঢাকার মতো অনেক জটিল হয়নি।

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৮:৪৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: আমি একদিন মকবুলের দোকানে চা খাবো, কবে যাব ? আপনি তার দোকানটা আমাকে চিনিয়ে দেবেন? নেক্সট শুক্র বা শনি বার ?

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: পল্টন মোড়ে। যেখানে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। (জিপিও) পেছন সাইডে।

৫| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:১৭

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: আমি তো ওখানে প্রায়-ই চা খাই -দোকানের লোকেশনটা যদি বলতেন - চেহারা সুরত সহ!

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: মকবুল চিকন করে। দেখতে এখন বুড়ো বুড়ো লাগে। পল্টন মোড় থেকে জিরোপয়েন্ট যেতে।

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

সাইন বোর্ড বলেছেন: চায়ের ব্যবসা মন্দ না, কোণা কাঞ্চিতে দোকান দিলেও কাস্টমার পাওয়া যায় ।

মকবুলের দিন নিশ্চয় ভালই কাটছে ।

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: খেয়ে পড়ে তো বেচে আছে। তাছাটা তার তিন মেয়ে।

৭| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২৮

ইসিয়াক বলেছেন: এতো চা পান করেন কেন?

০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: দীর্ঘদিনের অভ্যাস।

৮| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ একটি পোস্ট।

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।

৯| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


ছোট বেলায় পদার্থ বিজ্ঞানে পড়েছিলাম, বর্ণ আলোর ধর্ম, পদার্থের ধর্ম নয়।
তাহলে দেয়াল বা আসবাবপত্র রং করার জন্য আমরা বাজার থেকে পেইন্ট কিনে আনি কেন?

০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: শূন্যস্থানে আলোর বেগ ... সাদা আলো সাতটি রঙের মিশ্রণ, প্রিজম এর দ্বারা আলোকে বিভিন্ন রঙে (৭টি রঙ) আলাদা করা যায়।
বস্তুর বর্ণ পদার্থের কোন ধর্ম নয়, এটি আলোকের একটি ধর্ম । নীল কাচের মধ্য দিয়ে হলুদ ফুল – কালো দেখায় ...
পদার্থ কিছু নির্দিষ্ট বর্ণের বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি বিকিরণ করে। অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতই ষাঁড়-রা লাল বর্ণ দেখতে পায় না। তাদের সামনে যে কোনও বর্ণের কাপড় নাড়লেই তার শিং বাগিয়ে গুঁতো দিতে আসবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.