নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
“মানুষ কি চায় — উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ভোঁতা— এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো— রস ঢুকিতে পায় না।”
-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, (আরণ্যক)।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্ম ১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ সালে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত এবং কবিরাজ। মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ ছিলেন সবচেয়ে বড়। তিনি একজন জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। তার বেশ কিছু গল্প ও উপন্যাস থেকে সিনেমা হয়েছে। সিনেমা গুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পিতার কাছে বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয়।
ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার পিতা মারা যান। ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতা'র রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ) থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায়ও ডিস্টিংশনসহ পাশ করেন।
১৯১৯ সালে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান যক্ষায়। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০ তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাকনাম বাবলু) জন্মগ্রহণ করেন। যদিও বিয়ে করার তার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। আত্মীয় স্বজনের চাপে পড়ে বিয়ে করতে বাধ্য হোন।
শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন বিভূতিভূষণ।
এই কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন স্ট্রোকে। তিনি তার বাড়িটির নাম স্ত্রীর নামে 'গৌরীকুঞ্জ' রেখেছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় 'উপেক্ষিতা' নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তার লেখা 'চাঁদের পাহাড়' একটি অনবদ্য এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী, যার পটভূমি আফ্রিকা। চাঁদের পাহাড় অদ্ভুত একটা উপন্যাস। একবার পড়তে শুরু করলে সমস্ত চিন্তা ভাবনা হারিয়ে যায়। প্রতিটা বাঙ্গালীই এই বইটা পড়েছেন আশা করি। যারা পড়েন নি অবশ্যই পড়বেন।
মানুষ যে প্রকৃতিরই সন্তান এ সত্য তাঁর বিভিন্ন রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে বারবার। প্রকৃতির লতাপাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে স্বস্বভাবে তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতি আর মানুষকে ভালবাসতেন লেখক। প্রচুর সাহিত্য পড়তেন। পড়তেন জ্যোতির্বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান আর উদ্ভিদবিদ্যা। শেষ জীবনে পরলোকতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন বিভূতিভূষণ। পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন সারাক্ষণ। তাই সারা বাড়িতে বইপত্র ছড়ানো থাকত। আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন না। প্রতিটা লেখকেরই হয়তো কিছুটা দুর্বলতা থাকে। বিভূতিভূষনেরও ছিলো। তার লেখাতে গ্রামের নিখুঁত বর্ণনা থাকতো। বৃষ্টি থাকতো, দারিদ্রতা থাকতো, কাশফুল থাকতো, পাওয়া না পাওয়া থাকতো, থাকতো মানুষের মনের গোপন ইচ্ছা গুলো। তাঁর সাহিত্যের একটা বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে অবহেলিত, নির্যাতিত মানুষের জীবনভাষ্য; তিনি চেয়েছিলেন যেসব জীবন অখ্যাতির আড়ালে আত্মগোপন করে আছে, তাদের সুখ-দুঃখকে সাহিত্যে রূপায়ণ করতে।
১৯৩৩ সালের ৫ এপ্রিল বিভূতিভূষণ প্রথম রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ‘পথের পাঁচালী' রচনা সম্পর্কে কবির থেকে অভিনন্দন লাভ করেন। বিভূতিভূষনের আয়ু ছিল মাত্র ৫৬ বছর। লেখালেখি করেছেন ২৮ বছর। তাঁর রচনাসম্ভারের মধ্যে রয়েছে ১৫টি উপন্যাস, সাতখানা কিশোর উপন্যাস, দুইশ’র বেশি ছোটগল্প। পনেরোটি উপন্যাসের মধ্যে একটি ছিল অসমাপ্ত। শিশু-কিশোর উপন্যাসের মধ্যে তিনটি হলো বয়স্কপাঠ্য উপন্যাসের কিশোর সংস্করণ। এসবের বাইরে অন্যান্য বিষয়েও তিনি লিখে গেছেন। সেগুলোর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। তার মধ্যে রয়েছে ভ্রমণকাহিনী, ডায়েরি, প্রবন্ধ, অনুবাদ। ব্যাকরণ বইও তিনি লিখেছেন। বিভূতিভূষণের ‘মেঘ মল্লার’, ‘মৌরীফুল’, ‘জন্ম ও মৃত্যু’ এবং ‘নবাগত’ গ্রন্থের গল্পগুলো আমার বিশেষ প্রিয়। তার সমকালে আর দুজন দাপুটে ঔপন্যাসিক ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক নজরেঃ
১। বিভূতিভূষণের বাবা মহানন্দ বন্দ্যাপাধ্যায় ছিলেন ভবঘুরে টাইপের মানুষ।
২। বিভূতিভূষণের স্কুলের নাম বনগ্রাম উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়।
৩। ইছামতী নদীতে স্নান করতে নেমে ডুবে মারা গিয়েছেন বিভূতিভূষণের বোন জাহ্নবী দেবী।
৪। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিভূতিভূষণ চিরকালই খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন।
৫। বিভূতিভূষণের প্রিয় ফল ছিল আম আর কাঁঠাল। ভালবাসতেন চাঁপা, বকুল, শেফালি ফুল।
৬। নির্জন এলাকায় একাএকা বেড়াতেন বিভূতিভূষণ। এঁদেল বেড়ের জঙ্গল, সুবর্ণরেখা নদী, পাণ্ডবশীলা, কাছিমদহ রাত-মোহনা ছিল তাঁর প্রিয় ভ্রমণের জায়গা।
৭। শেষ দশ বছর, ব্যারাকপুরে থাকাকালীন লিখেছেন ‘অশনি সংকেত’ বা ‘ইছামতী’র মতো কালজয়ী উপন্যাস।
৮। প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর দীর্ঘ ২২ বছর পরে আবার বিয়ে করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৯। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখতেন।
১০। বিভূতিভূষনের একমাত্র পুত্র তারাদাস বন্দ্যাপাধ্যায় ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
১১। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি- “সংসার যে কি ভয়ানক জায়গা, দুঃখে-কষ্টে না পড়লে বোঝা যায় না।”
১২। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যসাধনার কাল আটাশ বছর।
১৩। বইখানা দাঁড়িয়ে আছে আপন সত্যের জোরে" - 'পথের পাঁচালী' সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: লেখকরা নিষ্ঠুর হোন।
২| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২০
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গরিব দুঃখি সাধারন মানুষের অসাধারন লেখক।প্রায় সকল চরিত্রই তার নিজের দেখা।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: একজন ভালো লেখক।
৩| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:১৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: কালজয়ী লেখক । শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৫৫
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
আমি বিতর্কে যেতে চাচ্ছি না, শুধু এটুকু বলছি লেখকরা তাদের ব্যর্থতা থেকে গল্প উপন্যাসের প্রিয় চরিত্রদের হত্যা করেন। কিছু কিছু বিষয় আছে বুঝতে সময়ের প্রয়োজন হয়। আমি বলবো আপনার বোঝার এখনো সময় হয়নি।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: মাথার চুল সাদা হয়ে যাচ্ছে, এখনও বুঝার সময় হয় নি? আর কবে হবে?
৫| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৫:১০
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: ইয়েস।
৬| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৫:১৭
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: গ্রামীণ পটভূমিতে প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন এই কালজয়ী লেখক। সমাজকে বোঝার গভীরতায় অনেক ক্ষেত্রে তিনি গোর্কিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।
৭| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: কে ভালো? আমি? না লেখক? না পোষ্ট? না আপনি?
৮| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৪৬
সোনালী ঈগল২৭৪ বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট , বিভূতিভূষণের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।
২২ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৬
মাস্টারদা বলেছেন: বিভূতি লেখা পছন্দের। আরো তথ্য আশা করেছিলাম। বাংলাপিডিয়ার অনুভূতি পেলাম।
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাপিডিয়া থেকে তথ্য নিয়েছি।
১০| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮
কল্পদ্রুম বলেছেন: আমার অন্যতম পছন্দের লেখক।ওনার ছোটগল্পগুলো বেশি ভালো লাগে।
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: দারুন লিখেন উনি।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪২
চাঁদগাজী বলেছেন:
সমাজকে বুঝতেন।
অশনি সংকেতে দুর্গা মৃত্যুটা উনার ভুল ভাবনা ছিলো।