নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শাহেদ জামাল (বারো)

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৮



শাহেদ জামাল আজ সারাদিন ঘর থেকে বের হয়নি।
সারা দিন শুয়ে বসে থেকেছে। সুকুমার রায়ের ছড়ার বই ‘আবোল তাবোল’ পড়েছে। ভাবী চা বানিয়ে দিয়েছেন। ঘরে সিগারেট খাওয়া নিষেধ তাই ছাদে গিয়ে চা, সিগারেট খেয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে শাহেদ জামালের বেশ অস্থির লাগতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার সময় প্রতিটা পুরুষ মানুষই নিজের অজান্তেই অস্থির বোধ করে। এদিকে সারাদিন ঘরে থেকে দম বন্ধ হবার অবস্থা হয়েছে। তাই শাহেদ জামাল ঠিক করেছে আজ রাত বারোটায় ঘর থেকে বের হবে। আগের মতোন সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। ভাবী আজ রান্না করেন নি। বড় ভাই বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছেন। আস্তো মুরগির মোরগ পোলাও। খাবার কিনতে বাইরে যেতে হয়নি। ফোন করে দিলেই ওরা বাসায় এসে দিয়ে যায়। শাহদ জামাল বেশ আরাম করে খেলো। রান্নাটা ভালো হয়েছে। খাওয়া শেষে এক মগ স্প্রাইট। স্প্রাইটে এক চুমুক দিতেই শাহদ জামালের নিজেকে সুখী মানুষ বলে মনে হলো।

রাত বারোটায় শাহেদ জামাল ঘর থেকে বের হলো।
রাতের বেলা এই শহরের চেহারাটা কেমন বদলে যায়। অতি পরিচিত জায়গাও কেমন অপরিচিত মনে হয়। শাহেদ হাঁটতে হাঁটতে বেইলী রোড এসে পড়লো। ফুটপাতে বেশ কিছু মানুষ শুয়ে আছে ছেঁড়া কাঁথা মুড়ে। রাতে তারা এখানে ঘুমায় কিন্তু দিনেরবেলা থাকে কই! শাহেদ জামালের ইচ্ছা একদিন ফুটপাতে দরিদ্র মানুষদের পাশে শুয়ে থাকবে। নিদ্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই আজ শাহেদ জামালের। তবে ভোরবেলা ফযরের নামাজের সময় যাবে নীলার বাসার সামনে। নীলা নামাজ পড়তে উঠবে তখন শাহেদ ফোন করে বলবে, নীলা একটু ব্যলকনির সামনে আসবে একবার। প্লীজ। নীলা ব্যলকনির সামনে এসে শাহেদকে দেখতে পেয়ে কি প্রচন্ড অবাকই না হবে! শাহেদ নিশ্চিত আনন্দে নীলার চোখে পানি চলে আসবে। আফসোস সেই পানি শাহেদ মুছে দিতে পারবে না। অবশ্য আনন্দ অশ্রু মুছে দেওয়ার দরকার হয় না। মুছে দিতে হয় কষ্টের অশ্রু।

শাহেদ এখন দাঁড়িয়ে আছে কাকরাইল মসজিদের সামনে।
এখানে দুইটা চায়ের দোকান খোলা। কয়েকজন হুজুরকে দেখা যাচ্ছে। শাহেদ এক কাপ চা নিলো। চায়ে মুখে দিয়ে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বাজে চা। কাপটাও বেজায় ময়লা। শাহেদ চা ফেলে দিয়ে একটা বেনসন সিগারেট ধরালো। দোকানিকে বলল, চা টা ইচ্ছা করলে আরেকটু ভালো করা যায় না চাচা মিয়া? চাচা মিয়া শাহেদ জামালের কথার কোনো জবাব দিলো না। উদাস মুখে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকালো। রাতের বেলা রমনা পার্ক খোলা থাকলে শাহেদ পার্কের ভেতরে যেত। শাহেদের ইচ্ছা একদিন সারারাত সে রমনা পার্কে থাকবে। গার্ডদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করতে হবে। শাহেদ সিগারেট টানতে টানতে মৎস ভবনের সামনে এলো। এখানে বেশ কিছু হিজড়া অদ্ভুত রকম ভাবে সেজে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজন হিজড়া শাহেদ জামালের কাছে এলো। শাহেদ বলল, কি চাই? একজন হিজড়া বলল, কি চাই বুঝো না? আজ রাতের জন্য আমাকে নিয়ে যাও। তোমাকে অনেক মজা দিবো। শাহেদ বলল, আমার মজা লাগবে। এই নাও একশ' টাকা রাখো।

প্রেসক্লাবের সামনে বেশ কিছু রিকশা জটলা পাকিয়ে আছে।
এখানে অনেক গুলো চায়ের দোকান খোলা। এক মোটা মহিলা আটা রুটি বানাচ্ছে। সব রিকশাচালকেরা একসাথে রিকশা দাঁড় করিয়ে রেখে আটা রুটি খাচ্ছে আখের গুড় দিয়ে। রুটি গুলোর সাইজ অনেক বড়। রাস্তা পার হতেই দেখা গেলো অনেক গুলো নিশী কন্যা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাজসজ্জা বেশ অদ্ভুত। দেখলেই বুঝা যায় সস্তা পাউডার আর লিপস্টিক দিয়েছে। শাহেদের ইচ্ছা এরকম একটা মেয়ের সাথে সারারাত কাটাবে। না সেক্স করার জন্য না। শুধু মেয়েটার গল্প শুনবে। কেন সে এ পেশায় এসেছে? ইতিহাসটা কি? শাহেদ ফুটপাতে এসে দাঁড়ালো। মেয়েগুলো শাহদকে আগ্রহ নিয়ে দেখছে। একজন মেয়ে সাহস করে এগিয়ে এলো। অল্প বয়সী। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। মেয়েটাকে বেশ মায়াবতি লাগছে। মেয়েটা বলল, কাম করবেন? শাহেদ বলল, কত টাকা? মেয়েটা বলল, জায়গা যদি আমার হয় তাহলে পাঁচ'শ টাকা। আর যদি আপনি সারারাতের জন্য নিয়ে যান তাহলে এক হাজার টাকা। মেয়েটার কথা শুনে শাহেদ এর মনে হলো- এ লাইনে মেয়েটা নতুন এসেছে। ঠিকভাবে দামদর করতে পারছে না। ঠোঁট কাপছে। শাহেদ মেয়েটাকে বলল, এই নাও পাঁচ শ' টাকা। বাসায় চলে যাও। বৃষ্টি নামতে পারে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে আরাম করে ঘুমাও। মেয়েটা টাকা হাতে নিয়ে অবাক চোখে শাহেদকে দেখছে!

জিপিও'র সামনে আসতেই শাহেদকে পুলিশ ধরলো।
পুলিশ বলল, ঘটনা কি? এত রাতে বাইরে কেন? শাহেদ জামাল পুলিশের দিকে ভালো করে তাকালে। পুলিশটি বেশ ক্লান্ত। বিছানা বালিশ পেলে হয়তো পুলিশটি এখন আরাম করে ঘুমাতো। শাহেদ বলল, রাতের শহর দেখতে বের হয়েছি। আমি কোনো চোর ডাকাত নই। পুলিশ বলল, রাতের বেলা ডিউটি করতে করতে আমার ঘেন্না ঘরে গেছে। পুলিশের চাকরিতে শান্তি নাইরে ভাই। পুলিশ বলল, যান, যান বাসায় যান। রাতেরবেলা ভালো মানুষ রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় না। রাতে ঘুরে বেড়ায় দুষ্টলোকেরা। পুলিশ বলল, গাড়িতে উঠুন আমি নামিয়ে দিচ্ছে আপনাকে। কোথায় যাবেন? শাহেদ জামাল গাড়িতে উঠলো। সময় তখন রাত তিনটা। রাইসা বাজার গাড়ি থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। পুলিশ বলল, আসুন কিছু খেয়ে নিই। শাহেদ জামাল দেড় প্লেট গরম গরম তেহারি খেয়ে নিল। খাবারটা বেশ স্বাদ হয়েছে। খাবার খেয়ে শাহেদ জামাল পুলিশের কাছ থেকে বিদায় নিলো। একটা পান খেতে ইচ্ছা করছে। বেশী করে জর্দা দিয়ে। হাকীম পুরী জর্দা। খয়ার ছাড়া। নীলা মাঝে মাঝে রাস্তায় বের হলেই বলে, শাহেদ জামাল সাহেব একটা পান কিনে দাও তো। বেশী করে জর্দা দিয়ে। খয়ার ছাড়া।

শাহেদ যাবে এখন নীলার বাসায়।
হেঁটে হেঁটে যেতে সময় লাগবে কমপক্ষে আশি মিনিট। আকাশের অবস্থা ভালো না। বেশ বাতাস দিচ্ছে। যে কোনো সময় ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামবে। শাহেদ পথে নামলো। নীলাকে আজ সে অনেক চমকে দিবে। মতিঝিলের কাছে আসতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। ফযরের আযানের আগেই শাহেদ নীলার বাসার কাছে যেতে চায়। প্রচুর বৃষ্টি, প্রচুর বাতাস। শাহেদ ভিজতে ভিজতে হাঁটছে। বাতাসের জন্য হাঁটতে তার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। বেশ শীত শীত করছে। ফযরের আযান কখন দেয়? সাড়ে চারটায়? না পাঁচ টায়? তাহলে তো হাতে বেশী সময় নেই। শাহেদ দ্রুত পা ফেলছে। পুলিশ তাকে তেহারি খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে দেরী করে ফেলল। কেউ ভালোবেসে কিছু বললে শাহেদ মানা করতে পারে না। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আজ মনে হয় ঢাকা শহর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। শাহেদ জামাল ভাবছে কিছু লাল গোলাপ ফুল কি নিয়ে যাবে নীলার জন্য। এত রাতে ফুল পাওয়া কোনো সমস্যা না। শাহবাগ গেলে ফুল পাওয়া যাবে। শাহবাগে সারারাত ফুলের দোকান গুলো খোলা থাকে। শাহেদ নীলার কথা ভাবতে ভাবতে শাহবাগের দিকে যাচ্ছে। একটা চাকরি পেলেই সে নীলাকে বিয়ে করে ফেলবে।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: শাহেদ জামাল তো শুনেছিলাম মারা গেছে ।
কবর থেকে আবার কবে ফেরত আসলো!

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি সম্ভবত এগারো নম্বর পর্বটি পড়েন নি।

পাঠকদের অনুরোধে ''আমাদের শাহেদ জামাল'' আবার লিখতে হলো।
আমার লেখার ইচ্ছা ছিলো।

যদি বলেন তো তাহলে শাহেদ জামালকে নিয়ে আর লিখব না। নো নেভার।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৮

আমি সাজিদ বলেছেন: বিয়ের আগের রাজিব সাহেব কি এই শাহেদ জামাল?

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: না না। আমি শাহেদ জামালের বন্ধু। শাহেদের অনুরোধেই তার কথা গুলো লিখি। ব্যস।

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:

ইন্সপেক্টর খোকন সাহেব। পরম করুণাময় আল্লাহপাক ইন্সপেক্টর খোকন সাহেবকে জান্নাত দান করুন।
খোকন সাহেব কিভাবে যেনো ক্ষুধার্থ মানুষ চিনতে পারতেন। তিনি তাঁর জীবনেকালে রাতের পথ চলা অসংখ্য পথিকদের পোলাও ভাত, বিরিয়ানী, কাচ্চি, তেহারী, ডাল ভাত খাইয়েছেন।

আমাদের শাহেদ জামালকে সম্ভবত খোকন সাহেব অথবা উনার কোনো শিষ্য পুলিশ অফিসার আপ্যায়ন করেছেন। এই বড় মনের পুলিশ অফিসারদের জন্য রইলো অনেক অনেক ভালোবাসা।


২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: কথায় আছে না- মানিকে মানিক চিনে।

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: এই চালের বিরানী আমি খাই না।

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




শাহেদ জামাল সিরিজ আমারও বেশ পছন্দ। শাহেদ জামাল সিরিজ চলবে।
আমাদের শাহেদ জামাল (বারো) আমাকে আমার খুব কাছের একজন মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছে। বিচিত্র কারণে ইন্সপেক্টর খোকন সাহেবকে আমি খুবই ভালোবাসতাম। ঢাকা শহরে ফজরের আজান হয় সাধারণত ০৪:১৫ থেকে ০৪:২০ এর মধ্য।

***পোস্টটি প্রিয়তে রইলো।

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি বলেছেন। আর কোনো কথা নাই। ''আমাদের শাহেদ জামাল'' চলবে।

৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বন্ধ করবেন না । পড়ে ভালোই লাগে । তবে আরো মানবিক ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেন । ঠাকুর ভাইকে যায় যায় দিনের একজন বলে স্মরণ রাখবো আজীবন

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৬| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৫৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




আপনি যেই চালের বিয়িানী খাবেন সেই চালের বিরিয়ানী রান্না হবে। ঢাকার জনপ্রিয় বাবুর্চি মোহাম্মাদপুর জেনেভা ক্যাম্পের চুন্নু ভাইকে আনবো দম বিরিয়ানী রান্নার জন্য। চুন্নু ভাইকে শেরাটন (বর্তমান ইন্টারকন) এ ডেকেছিলো চুন্নু ভাই বলেছেন তার নাকি বড় ভবনে দমবন্ধ লাগে।

চুন্নু ভাই পাঁচওয়াক্ত নামাজি মানুষ এবং খুবই ভালো মানুষ তার একটাই সমস্যা মুখ খারাপ। জঘণ্য গালাগালির উস্তাদ এই চুন্নু বিহারির জীবনের একটা অংশ গালাগালি। গালাগালি না করলে তার ভালো লাগে না।

নেওয়াজ আলি ভাই, আপনাকেও মনে থাকবে আজীবন।

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: গালাগালি আমি খুব অপছন্দ করি।

৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:১৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: রাতের ঢাকা দেখা হয়ে গেল শাহেদ জামালের সাথে ঘুরে।

লেখাটা পড়ে বার বার একটু হুমায়ূন আহমেদের কথা মনে পড়েছে।

বেশ চমৎকার হচ্ছে লেখা।

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান। ভালো থাকুন।

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:৫১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আনেক অভিজ্ঞতাই আছে।সফল জীবন

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি একজন ব্যর্থ মানুষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.