নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ ইন্টারনেট।
জিওর্দানো ব্রুনো ১৫৪৮ সালে ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতমালার অদূরে 'নোলা' নামক ছোট্ট এক শহরে জন্মহণ করেন। তার জন্মের সময়টা এমন ছিল যে, মধ্যযুগের ধর্মীয় ও দার্শনিক প্রতিক্রিয়াশীলতাও শেষ হয়নি আবার যুক্তিভিত্তিক আধুনিক যুগেরও সূচনা ঘটেনি। সে হিসেবে তার জন্ম এক মহা সন্ধিক্ষণে। সে সময়ের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটেনি। এ কারণে দর্শনচ্যুত বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানচ্যুত দর্শনের অন্ধকার যুগ বিরাজ করছিল। এমন সময়েই বিপ্লবী মতবাদ নিয়ে উপস্থিত হন ব্রুনো। উল্লেখ্য ব্রুনোর জন্মস্থান ইতালিতেই ১৩৫০ সাল থেকে ইউরোপীয় পুনর্জাগরণ তথা রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল। ব্রুনোর জন্মের সময়ে আরও একটি বিষয় চোখে পড়ে। সে সময় রাজার সাথে গীর্জার বিরোধ খুব একটা জমে উঠেনি এবং পার্লামেন্টের সাথে রাজার বিরোধের সূচনাই হয়নি। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের উত্থান ঘটছিল এবং ক্যাথলিক চার্চ সমাজে নিজেদের প্রভাব রক্ষার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
ব্রুনোর বাবা 'জিওভানি ব্রুনো' সৈনিক ছিলেন।
অবশ্য ব্রুনোর আলোচনায় পরিবারের বিষয় খুব একটা আসে না। কারণ সারা জীবন তিনি ভবঘুরের মত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন। কখনও পরিবারকেন্দ্রিক জীবন যাপনের কোন চেষ্টা করেননি। আরেকটি বড় কারণ পালিয়ে বেড়ানো। সারা জীবনই তাকে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ইউরোপের দেশে দেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে ব্রুনো বিজ্ঞান, দর্শন এবং যুক্তিবাদ নিয়ে এমন সব চিন্তা করেছিলেন যা বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্যই বলা হয়, ব্রুনো অসময়ে জন্ম নিয়েছিলেন, তার জন্ম আরও অনেক পরে হওয়া উচিত ছিল।
বয়স ১৩ বছর হওয়ার পর ব্রুনো নেপ্লসের সেন্ট ডোমিনিকান স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী ১০ বছর এই বিখ্যাত স্কুলেই পড়াশোনা করেন। সেন্ট টমাস একুইনাস ডোমিনিকান গোত্রের মানুষ ছিলেন এবং এই স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। একুইনাসের প্রভাব অস্বীকার করতে পারেননি ব্রুনো এবং অচিরেই তিনি ডোমিনিকান ধর্মযাজক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণের পাশাপাশি 'জিওর্দানো' উপাধিটিও গ্রহণ করেন।
১৫৮১ সালে তিনি প্যারিসে আসেন।
এখানে তিনি ঈশ্বর ও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে ত্রিশটির মত বক্তৃতা দেন। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর বাগ্মীতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্য খ্যাতি লাভ করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর মেধা রাজা ৩য় হেনরির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। প্যারিসে থাকা কালীন ব্রুনো একের পর এক বই প্রকাশ করেন De umbris idearum (On The Shadows of Ideas, ১৫৮২), Ars Memoriae (The Art of Memory, ১৫৮২) ও Cantus Circaeus (Circe’s Song, ১৫৮২). এছাড়া তিনি তৎকালীন কিছু প্রচলিত দার্শনিক ধারণাকে হাস্য-রসাত্বকভাবে তুলে ধরেন তাঁর লেখা বই। Candelaio (The Torchbearer, ১৫৮২) তে।
১৫৮৩ সালে ব্রুনো ইংল্যান্ডে গমন করেন।
সেখানে তিনি কবি ফিলিপ সিডনির সাথে পরিচিত হন। ব্রুনো পরবর্তীতে তাঁর লেখা দুটি বই ফিলিপকে উৎসর্গ করেছিলেন। ব্রুনো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেন। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকের সাথে তাঁর মতের অমিল হতে শুরু করে। বিশেষ করে লিংকন কলেজের রেক্টর জন আন্ডারহিল ও অক্সফোর্ডের বিশপ (পরবর্তীতে আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারব্যারি) জর্জ এবটের সাথে ব্রুনোর দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এবট প্রায়ই ব্রুনোকে খোঁচা মারতেন কারণ ব্রুনো বিশ্বাস করতেন পৃথিবী 'গোল'। সেযুগে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী ‘সমতল’। এছাড়া তিনি এই অভিযোগ আনেন যে, ব্রুনোর লেখাগুলো আরেক ইতালীয় জ্যোতির্বিদ মারশিলো ফিচিনোর কাছ থেকে চুরি করে লেখা।
যাই হোক, এর মাঝেও ব্রুনো তাঁর লেখালেখি চালিয়ে যান। একে একে প্রকাশিত হয় মহাশূন্য নিয়ে তাঁর লেখা La Cena de le Ceneri (The Ash Wednesday Supper, ১৫৮৪), De la Causa, Principio et Uno (On Cause, Principle and Unity, ১৫৮৪), De l’Infinito Universo et Mondi (On the Infinite Universe and Worlds, ১৫৮৪) as well as Lo Spaccio de la Bestia Trionfante (The Expulsion of the Triumphant Beast, ১৫৮৪) and De gl’ Heroici Furori (On Heroic Frenzies, ১৫৮৫)। এর মাঝে প্রথম লেখাটি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিজের যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকা বৈপ্লবিক ধ্যান-ধারণার কারণে ব্রুনো ধীরে ধীরে তাঁর বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হারাতে শুরু করেন।
১৫৮৫ সালে তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে যান।
এবার পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে ছিল না। তাঁর লেখা বইগুলো নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ফ্রান্সে এসে তিনি গণিতবিদ ফিব্রিজো মরদেন্তের সাথে ভয়াবহ বাকবিতণ্ডাতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয় ছিল ফিব্রিজোর উদ্ভাবিত ‘ডিফ্রেন্সিয়াল কম্পাস’। ব্রুনো ফ্রান্স থেকে চলে গেলেন জার্মানী। তিনি মারবার্গ থেকে যান উইটেনবার্গ। সেখানে মহান দার্শনিক এরিস্টটলের উপর বক্তব্য দেন। এরিস্টটলের অনেক তত্ত্বের সাথে তিনি একমত ছিলেন না। যে কারণে তাঁকে সেখানে কেউ পছন্দ করে নি। জার্মানীতে থাকাকালীন ১৫৮৯ থেকে ৯০ সাল নাগাদ ল্যাটিন ভাষায় তাঁর লেখাগুলো প্রকাশিত হয় যার মাঝে ছিল De Magia (On Magic), Theses De Magia (Theses On Magic) and De Vinculis In Genere (A General Account of Bonding). All these were apparently transcribed or recorded by Besler (or Bisler) . এছাড়া প্রকাশিত হয় De Imaginum, Signorum, Et Idearum Compositione (On The Composition of Images, Signs and Ideas, ১৫৯১)।
১৫৯১ সালে তিনি ইতালি ফিরে আসেন।
আসার কিছুদিন পরই জিওভাননি মচেনিগো নামে এক ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম ও ঈশ্বরে বিরোধীতার অভিযোগ আনেন। ১৫৯২ সালের ২২ মে ব্রুনোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ভেনিশিয়ান ইনকুইজিশনের মুখোমুখি করা হয়। ইনকুইজিশন হলো রোমান ক্যাথলিক গির্জার একটি বিচার ব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচার করা হতো। ব্রুনো খুব দক্ষতার সাথে তাঁর বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন ও তাঁর বিরোধীতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। বেশ কয়েক মাস ধরে জেরা চলার পর ১৫৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে রোমে পাঠানো হয়। সাত বছর ধরে রোমে ব্রুনোর বিচারকাজ চলতে থাকে। এসময়ে তাঁকে নোনা টাওয়ারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সেই মহা ঐতিহাসিক বিচারকাজের গুরত্বপূর্ণ কিছু নথি হারিয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগই সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল এবং ১৯৪০ সালে বিচার কাজের সেসময়ের একটি সার-সংক্ষেপ পাওয়া যায়। এতে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত প্রধান অভিযোগগুলো ছিল-
(১) ক্যাথোলিক ধর্ম মত ও ধর্মীয় গুরুদের মতের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ।
(২) খ্রিস্টীয় ধর্মমত অনুসারে স্রষ্টার ত্রি-তত্ত্ববাদ, যীশুর মৃত্যু ও পরে আবার শিষ্যদের কাছে দেখা দেয়ার বিষয়গুলো বিশ্বাস না করা।
(৩) যীশু ও তাঁর মা মেরিকে যথাযথ সম্মান না করা।
(৪) এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়- এই ধারণা পোষণ করা।
রোমান ইনকুইজিশনের ইনকুইজিটর কার্ডিনাল বেলারমাইন ব্রুনোকে তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু ব্রুনো তা করতে অস্বীকৃতি জানান। ১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট ব্রুনোকে একজন ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় শুনে ব্রুনো বিচারকদের শাসিয়ে দিয়ে বলেন, 'আপনারা হয়তো আমার সাথে হেরে যাবার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। আমি এটি গ্রহণ করলাম।' ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রোমের কেন্দ্রীয় বাজার Campo de’ Fioriএ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সবার সামনে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়। তাঁর দেহভস্ম এরপর ছড়িয়ে দেয়া হয় টিবের নদীতে। ব্রুনো তাঁর মৃত্যুর পর প্রভূত সম্মান লাভ করেন। মহাশূন্য নিয়ে তাঁর মতবাদই ধীরে ধীরে সবার কাছে সঠিক বলে পরিগণিত হয়। তাঁকে ‘বিজ্ঞানের জন্য শহীদ’ বলে সম্মান জানানো হয়।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: এখন আর দেশে কেউ বেকুব নাই। সব চালাক। অতি চালাক।
২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:২১
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মহা বিশ্বের কেন্দ্র হলো মক্কা ।জোরছে বলুন ,আমিন
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: ছুম্মা আমিন।
আচ্ছা, আমিন বললে কি হয়?
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
ইউরোপেও বেকুব মানুষ ছিলো ১৬০০ সালে, বাংলাদেশে বেকুব মানুষ আছে ২০২১ সালে।