নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
১৮৮৯ সাল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ফিল্মের জন্য ক্যামেরা আবিষ্কার করলেন। পৃথিবী জুড়ে হৈ হৈ শুরু হয়ে গেলো। একই বছরে অস্ট্রিয়ায় জন্ম নিলো পৃথিবীর নির্মম ঘাতক হিটলার। সে বছরই আরেক শিশু জন্ম নেয়, যে কিনা পৃথিবীর মানুষকে হাসাতে হাসাতে লুটোপুটি খাইয়ে ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। সেই মানুষটির নাম ‘চার্লি চ্যাপলিন’।
কী এমন আছে চ্যাপলিনের সিনেমা গুলোর মধ্যে!
কেন সিনেমা গুলো মানুষকে এতো মোহগ্রস্ত করে তুলে? সে সময়কার দুঃখী মানুষ গুলো যেনো আশ্রয় খুঁজা শুরু করলো চ্যাপলিনের কাছে। চ্যাপলিন নির্বাক ছবি করতেন। যার ছবিতে কিছু শোনা যায় না। থাকে শুধু কিছু তামাশা। সেই তামাশার অতল গভীরে লুকিয়ে থাকে মানুষের জীবনের হাহাকার, রূঢ় বাস্তবতার বিরুদ্ধে মানুষের অবিরাম যুদ্ধ।
চার্লি জীবনে অনেক ছবি করেছেন এবং দেশ-বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জীবনে কৃতিত্বের জন্য রানী এলিজাবেথ কতৃক তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে চার্লির আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় (My Autobiography)।
বইটি সর্বকালের বেস্ট সেলার হিসেবে বিক্রি হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার তৈরি 'মূর্তি' রয়েছে। যেই চার্লির জীবনে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ অভাব সৃষ্টি করেছিল, সেই চার্লিও নিজের জীবনে বিচ্ছেদের কবলে পড়েছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী মিল্ড্রেড হ্যারিসের সাথে বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র ৬ বছরের। তারপরে দ্বীতীয় স্ত্রী লিটা গ্রের সাথেও সম্পর্ক ছিল মাত্র ৩ বছরের। তবে তিনি নিজের সন্তানদের কখনো কষ্টের ভাগীদার হতে দেননি।
চ্যাপলিন বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে রোজ দলে দলে ভেড়া নিয়ে যায় কসাইখানায়। একদিন কেমন করে একটা ভেড়া দলছুট হয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। এই না দেখে হৈ চৈ। লোকজন দাঁড়িয়ে গেছে মজা দেখতে। ভেড়ার মালিকেরা চেষ্টা করছে ভেড়াটাকে ধরতে। কিন্তু কিছুতেই ভেড়া ধরা দেবে না। ছুটোছুটি। এই সব কান্ডকারখানা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল। অবশেষে ভেড়া ধরা পড়লো। পড়তেই হবে। ভেড়া তো ভেড়াই। মানুষের চালাকি কি তার বোঝার ক্ষমতা আছে! বোকা ভেড়াটাকে কাঁধে নিয়ে একজন কসাইখানার দিকে চলল। ভেড়ার পরিণতি ভেবে হঠাৎ আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাই-তো! একটু আগে যে ভেড়ার ছুটোছুটি দেখে আমি হাসছিলাম, তার পরিণতি এখনই মৃত্যু। আর থাকতে পারলাম না। ছুটে ভেতরে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লাম। মাকে বললাম, মাগো, ওমা ওরা ভেড়াটাকে মেরে ফেলবে'।
নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অত্যন্ত প্রভাবশালী চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা ও প্রযোজনা এমনকি সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে লোকের বাড়ির বাসন মাজার কাজে লেগে পড়েন চার্লি। এক কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠ চেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় চার্লি যখন ২৫ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করলেন। 'মেকিং এ লিভিং' ও 'কট ইন দ্য রেইন' নামে দুটি ছবি তিনি সেই একই বছরে করেছিলেন। তবে এর আরো অনেক পরে ১৯২১ সালে ৩২ বছর বয়সে 'দ্য কিড' ছবিতে অভিনয় তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়। অবশ্য দ্য কিড ছবির গল্পটিও চার্লিরই লেখা ছিল।
বাল্যকাল কেটেছে তার অত্যন্ত দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে।
ফুটপাথে রাত কাটানো এমনকি পচা খাবার কুড়িয়েও খেতে হয়েছে চার্লিকে। বাল্যকালেই বুঝে গেছেন এই পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর ও নির্মম। বাল্যকাল থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু করেছেন বলেই চার্লি চ্যাপলিন হয়ে উঠেছেন। তিনি একবার জীবন সম্পর্কে বলেছিলেন, 'জীবন মানেই দ্বন্দ্বের সমন্বয়'। এটা শিখতে আমাকে বই পড়তে হয়নি।
শিশু শিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ড-এর ভিক্টোরিয়ান নাট্যমঞ্চ ও মিউজিক হলে সূচীত চ্যাপলিনের ৬৫ বছরের কর্মজীবনের যবনিকাপাত ৮৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুতে। চার্লি চ্যাপলিনের কোনো বৈধ জন্ম প্রমানপত্র পাওয়া যায়নি, তাই তার জন্ম নিয়ে সর্বদাই কুয়াশা রয়েছে। সংবাদ মাধ্যম নানা সময়ে নানারকম তথ্য দিয়েছে তার জন্মস্থান সম্পর্কে। এমনকি তার চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম দিকে চ্যাপলিন নিজেও একবার বলেছেন যে তিনি ফ্রান্সের ফঁতেউব্ল শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
চার্লির জন্মের পর বাবা-মার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চার্লি মার সঙ্গেই থেকে যান এবং বলা যায় তাঁর হাতেই চার্লির হাতেখড়ি হয় অভিনয়ের। অত্যধিক দারিদ্রই চ্যাপলিনকে শিশু বয়সেই অভিনয়ের দিকে ঠেলে দেয়। তার মা-বাবা দুজনেই মঞ্চের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তাই এই পেশাতে আসাটাই তাঁর কাছে সহজ ছিল। তার মা শেষ জীবনে হয়ে গেলেন উন্মাদ।
অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনও প্রেমে পড়েছিলেন।
একবার নয়, একাধিকবার। চার্লি চ্যাপলিন সর্বপ্রথম প্রেমে পড়েছিলেন হেটি নামের এক অপূর্ব সুন্দরীর। মেয়েটির বাড়ি ছিল লন্ডনেই। ১৯০৮ সালে, ১৯ বছর বয়সী চার্লি দক্ষিণ লন্ডনের এক থিয়েটারে অভিনয় করছিলেন। একই হলে অভিনয় করতে আসত হেটি। প্রথম দর্শনেই যেকোনো যুবকের মন কেড়ে নেওয়ার মতো রূপ তার। মন কাড়ল চার্লি চ্যাপলিনের।
প্রথম দিনের ঘটনা। একসময় মেয়েটির নাচ শেষ হয়ে যায়। মঞ্চের পর্দা নেমে আসে। কিন্তু চার্লির কোনো পরিবর্তন নেই। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। অবাক চোখে তখনো তিনি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন নিশ্চলভাবে। হঠাৎ একজনের ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। অত্যন্ত ব্যাকুল অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবেন। আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। বুকটা দুরু দুরু করছে। কি করবেন? প্রথম কি কথা বলবেন, তিনি মেয়েটাকে। সাত-পাঁচ ভেবে শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটিকে বললেন, খুব সুন্দর নেচেছো তুমি। কি নাম তোমার? সে উত্তর দিল: হেটি। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল চার্লি চ্যাপলিনের।
অনেক কথা হলো উভয়ের মধ্যে। কথা থেকে প্রণয়। প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই দু'জন প্রেমে পড়ে গেলেন। হেটি আর চ্যাপলিন। দেখতে দেখতেই তাদের অন্তরঙ্গতা এত ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল যে, কেউ কাউকে একদিন না দেখে থাকতে পারেন না। এক মুহূর্ত দূরে থাকতে ভীষণ কষ্ট হয়। অভিনয়ের কাজে চ্যাপলিনকে দূরে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে তার একটুও ভালো লাগে না। অভিনয়ের ফাঁকে সামান্য অবসর পেলেই তিনি ছুটে যেতেন প্রিয়তমা হেটির কাছে। এমনিভাবে দুটি বছর কাটার পর হঠাৎ একদিন চার্লি চ্যাপলিনকে চলে যেতে হয় আমেরিকায় অভিনয়ের কারণে। প্রিয়তম চার্লিকে বিদায় জানাতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসাল হেটি। নিজেও কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল চার্লি চ্যাপলিন। ওখানে গিয়ে নিয়মিত খবর রাখতেন তিনি হেটির। অবশেষে একদিন দেশে ফিরে এলেন চার্লি । কিন্তু তার সে আশা আর পূর্ণ হলো না। শুনলেন হেটির বিয়ে হয়ে গেছে। তাও আবার হেটির নিজের ইচ্ছাতে।
১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে চার্লি প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডের কার্সিয়ারে। ওই দেশের ডিঙ্গিতে চার্লির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এরপর ঘটে একটা দুর্ঘটনা। পরের বছর চার্লির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায়। ১৬ দিন পরে তা উদ্ধার করে আবার সমাহিত করা হয়।
তাঁর মৃত্যুর এতদিন পরেও চার্লি এখনো গোটা বিশ্বে সমানে জনপ্রিয়। সবাই তাঁকে কৌতুক সম্রাট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন। চ্যাপলিনকে নিয়ে চমৎকার একটা গান গেয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। আমি বাংলার গান গাই খ্যাত প্রতুল। কী অসাধারণ গানটা! যুক্তরাজ্যের জাতীয় আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত নথিতে জানানো হয়, চার্লি চ্যাপলিনের আসল নাম হলো ইসরায়েল থর্নস্টেইন। চ্যাপলিন তাঁর ছদ্মনাম (তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা চ্যাপলিনের ছদ্মনাম নিয়ে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি)।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, এমআইফাইভের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এমন হতে পারে যে চ্যাপলিনের জন্ম রাশিয়ায়। তিনি একবার রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন। আবার এমনোও হতে পারে যে চ্যাপলিন ইহুদি বংশোদ্ভূত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি বই লিখলেন, সিনেমা করলেন, বক্তৃতাও দিলেন। সেই সময় তার সখ্যতা বাড়লো কমিউনিষ্টদের সাথে। তখন তিনি করেছিলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘মানুষকে ভালোবাসার জন্য যদি আমাকে কমিউনিষ্ট বলা হয়, তো আমি কমিউনিষ্ট’।
চার্লি তার মায়ের পরিবর্তে স্টেজে গান গাইতে শুরু করেন, 'Jack Jones well and known to every body'। তার গানে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে স্টেজে কয়েন ছুঁড়তে থাকে। চাপলিন হঠাৎ অঙ্গভঙ্গিসহ বলে ওঠেন, ‘আমি এখন গান গাইব না; আগে পয়সা গুলো কুড়িয়ে নিই, তারপর আবার গাইবো।’ এটি ছিল দর্শকের হাসির জন্য চার্লির প্রথম কৌতুকাভিনয়। সমালোচকের দৃষ্টিতে ১৯২৫ সালে নির্মিত ‘দ্যা গোল্ড রাশ’ চ্যাপলিনের সবচেয়ে সফল কমিডি চলচ্চিত্র। এই ছবিতে ক্ষুধার্ত চ্যাপলিন নিজের জুতো সেদ্ধ করে খাবার দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন।
চ্যাপলিনের অনেকগুলো মুভির মধ্যে যেগুলো সেরা-
১। Modern Times (1936)
২। City Lights (1931)
৩। The Great Dictator (1940)
৪। The Gold Rush (1925)
৫। The Kid (1921)
৬। Limelight (1952)
৭। The Immigrant (1917)
৮। The Circus (1928)
৯। Monsieur Verdoux (1947)
১০। A Dog’s Life (1918)
১৬ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি তাঁর মুভি গুলো দেখেছেন
চার্লির মুভি দেখতে দেখতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে।
২| ১৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩৫
কল্পদ্রুম বলেছেন: অসাধারণ পারফর্মার। ব্যক্তিজীবনে না কি মারাত্মক বদরাগী ছিলেন।
১৭ ই মে, ২০২১ রাত ২:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ভুল কথা।
খুব হাসিখুসি মানুষ ছিলেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৪১
চাঁদগাজী বলেছেন:
দরিদ্র মানুষদের জীবনের চিত্র এঁকে গেছেন সারা জীবন।