নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ গুগল।
রাত দুই টা। ভয়াবহ এক শীতের রাত।
আখাউড়া রেল স্টেশন। আমি যাবো ঢাকা। সকালে আমার এক জরুরী কাজ আছে। এখন ঢাকা যাওয়ার যে ট্রেন পাবো সেটাতেই উঠে পড়বো। সাধারনত রাতের বেলা 'মোহনগর গোধুলি' এবং 'উপকুল এক্সপ্রেস' পাওয়া যায়। মোহন নগর ট্রেন রাত বারটায় আসার কথা ছিলো। এখন বাজে রাত দুইটা অথচ ট্রেনের কোনো খবর নাই। স্টেশন মাস্টারের ঘর তালা দেওয়া। ষ্টেশনে কিছু চায়ের দোকান সারারাত খোলা থাকে। তাদের জিজ্ঞেস করলাম। তারাও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারলো না। একজন শুধু বলল, বাংলাদেশের ট্রেনের সময়ের উপর কোনো আস্থা রাখবেন না। পারলে বাসে চড়বেন। ট্রেনে নয়। বাস সময় মতো ছাড়ে। ট্রেন নয়।
আমি রীতিমতো শীতে কাঁপছি।
চারিদিকে গাঢ় কুয়াশা। কিছুই দেখা যায় না। যদিও আশে পাশে বেশ কয়েকটা সরকারি লাইট মিটমিট করে জ্বলছে। আমি একটা ভারী কোট পড়েছি। গলায় উলের মাফলার প্যাচিয়েছি। তবু শীত তীরের মতো এসে গায়ে লাগছে। ঠান্ডায় মুখ দিয়ে সিগারেটের মতো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি সাধারনত স্টেশনের ওয়েটিং রুমে যাই না। খুবই নোংরা অবস্থা থাকে। বাথরুমের অবস্থা তো জঘন্য। কিন্তু শীত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে ওয়েটিং রুমে গেলাম। ছাগল, হাঁস মূরগীসহ পুরো ঘর জুড়ে নানান শ্রেনীর মানুষ শুয়ে আছে। পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষ এই শীতের মধ্যে শুয়ে আছে। কেউ কেউ ছালা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
একটা চায়ের দোকানে বসে আছি।
চায়ের দোকানদার কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। ডাকলে হয়তো চা বানিয়ে দিবেন। স্টেশনের চা আমার মুখে দিতে ইচ্ছা করে না। খুব বাজে হয়। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। এমন সময় একটা মেয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। দেখতে স্বস্তিকা মুখার্জির মতোণ। অফ হোয়াইট শাড়ি পড়া। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল। দুই হাত ভরতি কাঁচের চুড়ি। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। শাড়ির আঁচল অনেকখানি লম্বা। খুব সুন্দর মেয়ে। মেয়েটাকে দেখে আমি মুগ্ধ! ভীষন মিষ্টি চেহারা। আমার পাশে বসে আছে অথচ তার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। বাতাসে মেয়েটার চুল মুখের উপর এসে পড়ছে। আমি চারিদিকে বেলি ফুলের সুবাস পেলাম! বেলি আমার প্রিয় ফুল।
মেয়েটা বলল, আপনি কি চা খেতে চান?
আমি মাথা উঁচু-নিচু করলাম। মেয়েটার কন্ঠ খুব মিষ্টি। মেয়েটা তার ব্যাগ থেকে ফ্লাক্স বের করলো। দুটা ওয়ানটাইম কাপ বের করে আমাকে চা দিলো। আমি চায়ে চুমুক দিলাম। দারুন চা হয়েছে। চিনি পারফেক্ট। বেশির ভাগ মানুষ চায়ে চিনি দিতে গিয়ে হয়- বেশি দেয় না হয় কম দেয়। এই মেয়ের চা'তে চিনি একদম ঠিক আছে। মেয়েটা বলল, চা কেমন হয়েছে? আমি বললাম, জীবনানন্দের কবিতার মতোন সুন্দর হয়েছে। মেয়েটা বলল কোন কবিতা? আমি আবৃত্তি করলাম- এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;/ সারারাত দখিনা বাতাসে/ আকাশের চাঁদের আলোয়/ এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি—/ কাহারে সে ডাকে!
মেয়েটা বলল, আপনার কবিতা আবৃত্তি সুন্দর হয়েছে।
আমি বললাম, এই কবিতা জীবন বাবু ১৯৩২ সালে লিখেছিলেন। কবিতাটির মূল সুর আদৌ যে ক্যাম্প বা হরিণ শিকার নয় সেই বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি কবিতার মধ্যভাগে। মেয়েটা বলল, 'ঘাই হরিনী' বিষয়টা কি একটু বুঝিয়ে বলুন তো। আমি বললাম, ঘাই হরিণী বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে জ্যান্ত হরিণ, যাকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জীবনের এক অসফল অধ্যায়ের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে প্রেমিকা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে অবজ্ঞা ভরে। কী অসাধারণ ভাবে জীবনানন্দ মানুষের অস্তিত্বের সংকট আর কঠিন নিরাশ্রয়তার ভাবনা তুলে ধরেছেন এই কবিতায়! কবিতার শেষে আমাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হয়।
মেয়েটা বলল, আপনি কি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র নাকি?
আমি মনে মনে ভাবছি আজ ট্রেন না আসুক। এই মেয়েটার সান্নিধ্য আমার ভালো লাগছে। একটু পরপর মেয়েটার কাছ থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রান এসে লাগছে। মেয়েটার মধ্যে কোনো জড়টা নেই। কি সহজ সরল সুন্দর ভাবে বসে আছে আমার পাশে। গল্প করছে। সারা জীবন এরকম সিনেমায় দেখেছি। গল্প উপন্যাসে পড়েছি। মেয়েটা বলল, কি ভাবছেন? আমি বললাম, আরেক কাপ কি চা কি পেতে পারি? মেয়েটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল, অবশ্যই। এমন সময় চায়ের দোকান বলল, আপনি একাএকা কার সাথে কথা বলছেন? আমি বললাম, মানে? পাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই। কেউ কোথাও নেই। অথচ আমার সামনে ওয়ানটাইম কাপে এক কাপ চা। চা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকার বাইরের প্রতিটা ষ্টেশনে কিছু না কিছু রহস্য আছে। গভীর রাতে টের পাওয়া যায়।
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:৩১
চাঁদগাজী বলেছেন:
টংদোকানে চায়ে রং দেোয়া ভেজাল পাতা ব্যবহার করে, ওগুলো খাবেন না।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: চায়ে ভেজাল, খাবারে ভেজাল। মানুষে ভেজাল। যাবো কই আমি?
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৪
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: আহা! মনোমুগ্ধকর আবেশটুকুর রেশ নাহয় নাইবা ফুরোলো!
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি একজন ভালো মানুষ। ভালো মানুষ অতি সস্তা লেখাতে ভালো মন্তব্য করে।
কিছু আছে বদ। ভালো লেখাতেও নোংরা আচরন করে। বাজে মন্তব্য করে। ছাগলের মতো হাসে। ওদের জন্য ঘৃণা।
৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৩:২৮
জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: সাহিত্যের কঠিন রস বা তথ্যের গাম্ভীর্য না থাকলেই যে লেখা সস্তা হয়ে গেল, আমার কাছে কিন্তু তা মনে হয় না রাজীব নুর ভাই। ভাবাবেগের লেখা, যা পাঠককে মথিত করে, অনুরণিত করে, মুগ্ধ করে, এর সাহিত্যমূল্য যে যেভাবেই বিচার করুক না কেন, আমার কাছে তা-ই মূল্যবান।
আপনার লেখায় আবেগ থাকে, ভালবাসার পরশ থাকে। আমার ভাল লাগে।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মতো বোধ যদি সবার হতো। তাহলে সামু হতো ক্যাচাল মুক্ত। শান্তিময় একটা জায়গা।
৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৩
বিটপি বলেছেন: আপনার লেখায় তথ্যগত ভুল আছে। মহানগর গোধুলি বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম স্টেশন ত্যাগ করে আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে আখাউড়া পৌঁছায়। তার এক ঘন্টা আগে উপকুল এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ছ'টায় আখাউড়া আসে। রাত দুটায় ঢাকা যাবার একমাত্র ট্রেন হচ্ছে তূর্ণা যেটা আনুমানিক তিনটার দিকে আখাউড়া পৌঁছায়।
স্বস্তিকার আঙ্গুল কি 'বিশেষ' কিছু ইঙ্গিত করে? ডার্টি মাইন্ড ওয়ান্টস টু নোও!
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ ভুল করেছি। ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ। আসলে অনেকদিন আগের ঘটনা তো। তাই ভুল করেছি। সঠিক মনে নেই।
স্বস্তিকা প্রতিবাদী নারী। অনেকটা আমাদের তসলিমা নাসরিনের মতোণ।
৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: বাহ পথ চলতে চলতে দিনের প্রথম চমৎকার একটা গল্প পড়ে ভালো লেগেছে!!! +
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া জনাব।
৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫১
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: সত্যই আপনার গল্প মাঝে এক অদ্ভুত কিছু থাকে আমি গল্প ভাবতে পারি না যার ফলে গল্প লেখার ইচ্ছা হয় না রাজীব দা ভাল থাকবেন------------
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি চেস্টা করলে ভালো গল্প লিখতে পারবেন।
৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৬
সোবুজ বলেছেন: আখাউড়া স্টেশনে এমনটা হওয়াই সাভাবিক।একসময় দলবেধে ছেলেরা যেত ফেন্সি খেতে আরেক দল মেয়ে যেত শাড়ি কাপড় আনতে।আমি যেতাম কাস্টমের মাল কিনতে।চেয়ারম্যান আমার পরিচিত ছিল।
গল্প সুন্দর হয়েছে।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
৯| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: জীবনানন্দ দাসের ওই কবিতা এবং ঘাই হরিণীর বিষয়টা পড়েছিলাম মৃন্ময়ী বইতে ---
" জীবনানন্দ দাশ নিশ্চয়ই চৈত্র মাসের দুপুরে গরমে ঘামতে ঘামতে লিখেন নি—
এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি
সারারাত দখিনা বাতাসে।
আকাশের চাঁদের আলােয় এক ঘাই হরিণীর ডাক শুনি,
কাহারে সে ডাকে! আমার ধারণা এই লাইনগুলাে তিনি লিখেছেন মধ্যরাত পার করে। তখন চারদিকে সুনসান নীরবতা। বরিশালে তার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ের বাশ পাতা বাতাসে কাঁপছে। এবং তিনি কল্পনায় বনের ভেতর ঘাই হরিণীর ডাক স্পষ্ট
শুনতে পাচ্ছেন।
আচ্ছা, ঘাই হরিণী ব্যাপারটা কী ? চিত্রা হরিণ, শাম্বা হরিণ আছে। ঘাই হরিণ কোথেকে এসেছে। ঘাই কি নাম, নাকি বিশেষণ ? "
তখন কিছু বুঝতে পারিনি পরে জেনেছি।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: জীবনানন্দ এক জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ''ক্যাম্পে'' কবিতাটি লিখেছিলেন।
ঘাই মানে জ্যান্ত হরিন। যৌবনে ভরপুর। এই হরিন ব্যকুল হয়ে তার প্রিয়তমাকে ডাকছে।
১০| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: লেখায় +। আপনি উপন্যাস লেখেন না কেনো?
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: এরকম লেখা আমার হাতে খুব আসে। তোর তোর করে লেখা এগিয়ে যায়। টানা তিন দিন লিখলে একটা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারবো। কিন্তু এই লেখা গুলো উন্নত নয়। ভাষার গভীরতা নেই। গল্পের গভীরতা নেই। এমন কি চতিত্র গুলো বড্ড দুর্বল। তাই উপন্যাস লিখি না।
১১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:০০
কাছের-মানুষ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে, শেষের টুইস্টটা ভাল ছিল। এরকম ভৌতিক মেয়ের সাক্ষাত পাওয়া খারাপ না।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েটা মনে হয় আমার অবচেতঁন মনের কারসাজি। অনেক রাত । একা আছি। ট্রেন আসতেছে না। একা একা বিরক্ত লাগছিলো। তাই আমার মন একটা মেয়ে বানিয়ে নিলো। তার সাথে কথা হলো। সময় চলে গেল।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:০২
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
বেলী ফুলের সুবাসটা আমিও পেয়েছি। অন্য এক স্টেশনে। ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ ফেলে মেয়েটা কোথায় যেন উবে গিয়েছিলো।