নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
রাত বেশি নয়, নয় টা সাড়ে নয় টা হবে হয়তো।
আমরা পাঁচজন বন্ধু মিলে সুন্দরবনের দুবলার চড়ে গর্জন গাছের নিচে বসে গল্প করছিলাম। অন্ধকার রাত। চারিদকে খুব ঠান্ডা বাতাস। নানান রকম গাছের পাতার সর সর শব্দ। চা খাচ্ছি, সিগারেট খাচ্ছি, এলোমেলো বিভিন্ন কথাবার্তা বলছি। মামছ্রাঙ্গা লঞ্চে করে আজ সন্ধ্যায় আমরা সুন্দরবনে এসে পৌছেছি।
হঠাৎ সুমন বলল, এক মাইল দূরে একটা ভূতের বাড়ি আছে।
অনেক আগের পুরোনো ভাঙ্গা বাড়ি। সুন্দরবনের আশে-পাশে যারা থাকেন, তারা বলেন বাড়িটা ভূতের। অনেকে বন থেকে মধু ও কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে যারা কৌতুহলে এ বাড়ির কাছাকাছি গিয়েছে তারা আর ফিরে আসতে পারেনি। এই যুগে কেউ ভূতের কথা বললেই আমার খুব রাগ হয়। মুহূর্তের মধ্যেই আমি ঠিক করে ফেললাম ভূতের বাড়িতে যাবো। মানুষের থাকার জায়গা নাই আর ভূতের বাড়ি!ফাজলামো! আমরা সবাই মিলে দুই ঘন্টা হেঁটে সেই ভূতের বাড়ি খুঁজে বের করি। তখনও রাত বারোটা বাজেনি।
দোতালা ভাঙ্গা বাড়ি। কোনো দরজা জানালা নেই।
যেন পুরো বাড়িটা গাছ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। শ্যাওলা পড়া, ইটের ফাঁকে ফাঁকে বড় বড় গাছ হয়েছে। সবাই নিচে থাকবে, আমি একা উপরে যাবো। কারণ আমার সখ এবং সাহস বেশি। যদি ভূত আমাকে মেরে ফেলে তাহলে আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। ওদের নানান রকম শর্ত মেনে নিলাম। অনেকক্ষন বাড়ির চারপাশ দিয়ে ঘুরেও, বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার কোনো দরজা খুঁজে পেলাম না। চারিদিকে প্রায় সাত ফুটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং দেয়ালের উপর তারকাটা ও ভাঙ্গা কাঁচ বসানো।
ওদের সবাইকে নিচে রেখে আমি উপরে উঠলাম।
বন্ধুরা সাহায্য না করলে সাত ফুটের দেওয়ালে একা ওঠা সম্ভব হতো না। ভাঙ্গা কাঁচে হাত কেটে গেল অনেকখানি। অনেক ঝামেলা করে দোতালায় উঠলাম জানালা দিয়ে। বন্ধুরা সবাই আমার অপেক্ষায় আছে। দোলায় তীব্র অন্ধকার, কিছুই দেখা যায় না। আমি খুব ধীরে ধীরে এক রুম থেকে অন্য রুমে যাচ্ছি। ছাদে ওঠার সিঁড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ খুব ভয় পেলাম। অনেক ভয় পেলাম। যদিও কোনো ভূত বা অন্য কিছু দেখিনি। শুধু মনে হলো, যেন আমি অনন্তকাল ধরে এই ঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছি। অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলাম, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। যেদিক দিয়ে দোতালায় উঠেছিলাম সেই পথ খুঁজে পাচ্ছি না। সব ভাঙ্গা দরজা-জানালা গুলো যেনো কোনো কারণে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এই ভূতের বাড়ি থেকে আমি আর বের হতে পারবো না। কে যেনো আমার নাম ধরে একবার ডাকলো। তারপর এক আকাশ নিরবতা। কোনো সাড়া শব্দ নেই।
আমি ভীতু মানুষ নই।
তবে ভূত প্রেত বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। খুব সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়ে গেল। প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি সিগারেট আছে কিন্তু ম্যাচবাক্স নেই। খুব রাগ হলো। কার উপর রাগ হলো কে জানে! কি করি কিছুই বুঝতে পারছি না। খুব অস্থির অস্থির লাগছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম কারা যেন ফিস ফিস করে কথা বলছে, মেরে ফেলো, মেরে ফেলো। আমি চোখ বন্ধ করে বললাম- ঈশ্বর সাহায্য করো, সাহায্য করো। অথচ আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ নই। চিরিকাল উলটা পথে চচলা মানুষ। কিন্তু এই সুন্দরবনে মধ্যরাতে আমি ঈশ্বরের নাম নিচ্ছি। বিষয়টা হাস্যকর। মনে হলো কে যেন আমার কাছে আসছে। তীব্র ভয় আমাকে আচ্ছন্ন করলো। আমি জ্ঞান হারালাম।
২| ০১ লা মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: স্রষ্টা কি বিপদ মুক্ত করেন?
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৪৪
Subdeb ghosh বলেছেন: মানুষ যখন কোনো দুর্যোগের মধ্যে পড়ে তখন সে তার দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে।
তাই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে তখন স্রষ্টার শরণাপন্ন হয়।