নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎসর্গ

০২ রা মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:০৭



জমির উদ্দিন মানুষটা বড় অদ্ভুত।
রাস্তায় বের হলেই মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখেন। যে কোনো কিছু দেখতে তার বড় ভালো লাগে। এই যে এক লোক ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। জমির উদ্দিন দেখে। দুনিয়াটা তো দেখার জন্যই। লোকজন আগ্রহ নিয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে। কেউ বলছে মরিচ বেশী হবে। আবার কেউ বলছে মরিচ কম। একদম কম। আমি ঝাল খেতে পারি না। কেউ কেউ একবার ঝালমুড়ি খেয়ে আবার নিচ্ছে। জমির উদ্দিন সব কিছু নিখুঁত ভাবে দেখে। ঝাল মূড়িওলা কচ কচ করে পেয়াজ কাটছে, মরিচ কাটছে। যারা ঝাল পছন্দ করে তাদের জন্য বোম্বাই মরিচের ব্যবস্থাও আছে। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে জমির উদ্দিন মানুষের মুড়ি খাওয়া দেখলো। তার পকেটে টাকা আছে। কিন্তু তার এসব খেতে ইচ্ছা করে না। ৬৫ বছর তার। টানা ৩৫ বছর চাকরী করেছেন। এযুগের ছেলে মেয়েরা পিজা বার্গার স্যান্ডউইচ কত কি হাবিজাবি খাচ্ছে। তিনি এসব খেতে পারেন না। একটু গরম ভাতের সাথে লাল শাক বাজি হলেই তিনি খুশি।

মাছ কাটা দেখতে জমির উদ্দিনের বড় ভালো লাগে।
বিশাল এক বটি। খুব ধারালো। বড় বড় মাছ মুহুর্তের মধ্যে কেটে ফেলে। জমির উদ্দিন চারটা রুইমাছ ও তিনটা পাঙ্গাশ মাছ কাটা দেখলো। যার মাছ সে বলে দিচ্ছে- মাছ কতটা বড় পিছ করতে হবে, কত পিছ করতে হবে। মাছ কাটতে গিয়ে লোকটা রুই মাছের মাথাটা দুই টুকরা করে ফেললো। হায় হায় তুমি এটা কি করলে? বড় মাছ কিনেছি আজ বাসায় আমার মেয়ে জামাই আসবে। জামাইকে মাছের মাথা দিবো। তুমি কোন আক্কেলে মাছের মাথা টা কেটে ফেললে? আরেহ কাটার আগে একবার আমাকে জিজ্ঞেস করবে তো! মাছ কাটা বন্ধ রেখে লোকটা বলল, এত তেজ দেখান ক্যান? সবাই মাছের মাথা দুই টুকরো করেই নেয়। আর মাছের মাথা দুই টুকরা করা তো ভালো। ভিতরে লবন, মশলা ভালো করে ঢুকে। এই কথা শুনে লোকটা রেগে উঠলো। বলল, অন্যায় করিস আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলিস? জমির সাহেব চুপ করে দেখেন। দেখতে তার ভালো লাগে। তার স্ত্রী রুই মাছ খুব ভালো রাধতেন।

রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে একলোক ফল বিক্রি করছে।
বেশির ভাগ লোকই ফলের দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে। বিক্রেতা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। জমির উদ্দিন ফল বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলো- লোকজন দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে কেন? কেউ কিনছে না কেন? বিক্রেতা বলল, চাচা মিয়াঁ এরা ফল কিনতে আসে নাই। যারা কেনার তাঁরা এত দামাদামি করে না। পট করে নিয়ে নেয়। রাত এগারোটার মধ্যে সব ফল বিক্রি হয়ে যাবে আমার। এই জায়গায় আমি ১৯ বছর ধরে ফল বিক্রি করি। ক্রেতা দেখলেই বুঝি কে কিনবে কে কিনবে না। জমির উদ্দিন বললেন, তোমার বাড়ি কোথায়? ফল বিক্রেতা বলল, আমার বাড়ি কুমিল্লা, হোমনা। জমির উদ্দিন এক কেজি আপেল কিনবে কিনা বুঝতে পারছেন না। বাসায় তিনি একা থাকেন। অবশ্য ছোট ছেলে রবিন তার সাথে থাকতো, কিন্তু রবিন লেখাপড়া করতে এখন জার্মানী আছে। তার অন্য দুই ছেলে বিয়ের পর আলাদা থাকে। স্ত্রী ছাড়া তার তিন ছেলের সাথেই নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ছেলেরা দুই একদিন পর-পরই ফোন করে। বাবার খোজ খবর নেয়। তার স্ত্রী মারা গেছেন চারা বছর হলো। একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর বেঁচে থাকা খুব জরুরী।

একা থাকাটা ভীষন কষ্টের।
জমির উদ্দিন তার কর্ম জীবনে দক্ষ ও পরিশ্রমী ছিলেন। সৎ ছিলেন। এজন্য অফিসের লোকজন তাকে পছন্দ করতো। তার চাকরী জীবনে জমির উদ্দিন কোনোদিন দেরী করে অফিসে যান নি। আবার অফিস ছুটির আগে অফিস থেকে বের হননি। ছুটিছাটাও খুব একটা নেন নি। মাত্র তিনবার ছুড়ি নিয়েছেন। প্রথম বার স্ত্রীকে নিয়ে ইন্ডিয়া গেলেন তাজমহল দেখতে। দ্বিতীয়বার কক্সবাজার গেলেন এবং তৃতীয় বার নেপাল গেলেন পুরো পরিবার নিয়ে। তাও বেশি দিনের ছুটি নয়। চার পাঁচ দিন ছুটি নিয়েছেন। বছর শেষে দেখা যেতো তার অনেকদিনের ছুটি রয়ে গেছে। ছুটি কাটানো হয়নি। অফিস এবং সংসার ছাড়া তার জীবনে আর কিছু ছিলো না। এখন তিনি একা। যদিও তার দুই ছেলে বলে, তাদের কাছে গিয়ে থাকতে। তিনি যান না। রাতে তার ঘুম আসে না। তখন ইচ্ছা করে কারো সাথে গল্প করতে। অথচ আশে পাশে কেউ নেই। বাসায় তিনি নিজের রান্না নিজেই করে খান। এত কিছুটা সময় ব্যস্ত থাকা যায়। ব্যস্ত থাকাটা খুব জরুরী।

নিজেকে ব্যস্ত রাখা ভীষন জরুরী।
জমির উদ্দিন পত্রপত্রিকা নিয়মিত পড়েন। প্রচুর বই পড়েন। চোখও সমস্যা করে আজকাল পড়েও আরাম পাচ্ছেন না। বয়স হলে মানুষ খুব অসহায় হয়ে পড়ে। তখন সার্বক্ষনিক একজন পাশে থাকার জন্য দরকার হয়। জমির উদ্দিন ঠিক করেছেন একটা বই লিখবেন। না কোনো গল্প, উপন্যা বা কবিতার বই নয়। তিনি তার জীবনী লিখবেন। তার নিজের সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি অনেক দেখেছেন। শেখ মুজিবকে দেখেছেন, জিয়াকে দেখেছেন, এরশাদ কে দেখেছেন। খালেদা হাসিনা তো সেদিনকার কথা। জীবনী লিখতে গেলে অবধারিতভাবে চারপাশের অনেক কিছুই আসবে। তিনি আজ রাত থেকেই লেখা শুরু করবেন। গত এক সপ্তাহ তিনি কিভাবে লিখবেন সেটা মনে মনে গুছিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন কিছু কিছু করে লিখলে দেড় বছরের মধ্যে লেখা শেষ হয়ে যাবে বলে তার ধারনা। বইটা তিনি তার স্ত্রীকে উতসর্গ করবেন। উতসর্গ পত্রে তিনি লিখবেন- তোমাকে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর তোমাকে একা একা থাকতে হবে না। আমি আসছি। তোমার কাছে আসছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.