নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও

১০ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৯



নিজের ভুল, নিজের দোষ যে নিজে ধরতে পারে, বুঝতে পারে
এবং সর্বোপরি নিজেকে শুধরাতে পারে - সে অবশ্যই মহৎ মানুষ। ভালো মানুষ। যারা হাজার দোষ ও অন্যায় করেও নিজের দোষ এবং ভুল গুলোতে দেখতে পায় না- তাঁরা কানা। তাঁরা অবিবেচক। তাঁরা অমানুষ। নিজের সামান্য সমস্যাও বড় করে দেখে অথচ অন্যের সমস্যা, দুঃখ, কষ্ট তাঁরা এড়িয়ে যায়। এরা কাপুরুষ। এরা শয়তান। মিথ্যা বলে, হা হুতাশ করে, গলাবাজি করে নিজের ভুল এবং অন্যায় আড়াল করা যায় না। মানুষ ভুল করে, অন্যায় করে- এটা স্বাভাবিক। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু যে নিজের ভুল আর অন্যায় গুলো স্বীকার না করে বরং বাহাদূরী করে সে নির্লজ। যার মধ্যে মনুষত্ব্য আছে, সে ভুল ও অন্যায় করলে তা স্বীকার করে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই নিয়ম।

মাসুদ তার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করেছে।
তার স্বাক্ষী আমি। আমার চক্ষের সামনে মাসুদের স্ত্রী কান্না করেছে। সেই কান্না দেখে আমার ভীষন খারাপ লেগেছে। একদম বুকের গভীর থেকে উঠে আসা কান্না। সেই কান্নায় কোনো ভনিতা ছিলো না। কোনো ভান ছিলো না। অথচ মাসুদ স্ত্রীর কান্না দেখে তাকে শ্বান্তনা দেয় নি। তার কাছে ক্ষমা চায়নি। উলটা চিৎকার চেচামেচি করেছে। স্ত্রীকে গালমন্দ করেছে। স্ত্রীর ছোট ভাই আর মাকেও আজেবাজে কথা বলেছে। ভাগ্যিস মাসুদেরর স্ত্রী লেখাপড়া জানে। তা না হলে আজ মাসুদের স্ত্রী কিভাবে এক সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতো? স্ত্রী সমাজের ভয়ে মাসুদকে তালাক দিতে পারছে না। আর মাসুদ টাকার অভাবে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারছে না। তালাক দিলেই তো কাবিনের টাকা দিতে হবে। স্ত্রী জানে মাসুদ পথের ফকির। তাই সে কাবিনের টাকা চাহে না।

মাসুদের সাথে আমি দেখা করলাম।
তাকে বুঝালাম দোষ তার। অন্যায় তার। সে আমার উপর ক্ষেপে উঠলো। সে আমাকে মারবে। ছাত্রলীগ করে এমন কয়েকজনকে ফোন দিলো। আজ সে আমার লাশ ফেলে দিবে। ইত্যাদি অনেক কথা। আমি চুপ করে বসে আছি। ছাত্রলীগ এঁর পোলাপানের জন্য অপেক্ষা করছি। আধা ঘন্টা হয়ে গেলো তাঁরা আসে না। আমি মাসুদ কে বললাম, ওদের ফোন দাও। দেখো আসতে আর কতক্ষন লাগবে? এখন কোথায় আছে- জিজ্ঞেস করো? মাসুদ আমাকে বলল, অনেক উজাইছো তুমি। আইজ তুমি শেষ। আমি উঠে মাসুদকে একটা কঠিন থাপ্পড় মারলাম। সে তিন হাত দূরে ছিটকে পড়লো। বললাম, যাও তোমার স্ত্রীর কাছে। তার পায়ে ধরে মাফ চাও। এবং বলবে তার সাথে বাকি জীবনে আর অন্যায় করবে না। সে যদি মাফ করে ভালো। মাফ না করলে তুমি সারা জীবন অন্যায়ের বোঝা নিয়ে ঘুরবে।

এই ঘটনার তিন মাস পর আমার মাসুদের সাথে দেখা।
দেখলাম, মাসুদ ভালো হয়ে গেছে। মুখে সুন্নতী দাঁড়ি। সাদা পাঞ্জাবী পরা। কথায় কথায় আলহামদুলিল্লাহ, মাশাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর বলছে। সবচেয়ে বড় কথা সে নিয়মিত নামাজ পড়ে। আমি জানি, খুব শ্রীঘই তার কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসে যাবে। মাসুদ আমাকে সালাম দিলো। বললো- ভাইসাহেব আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে। আপনি আমাকে দশ মিনিট সময় দিন। আছরের নামাজের সময় হয়েছে। নামাজটা আদায় করে আসি। আমি বললাম, অবশ্যই। মাসুদ নামাজ পড়তে চলে গেলো। আমি এই ফাঁকে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট খেয়ে নিই। জানি সিগারেট খাওয়া ভালো নয়। কিন্তু কিছুতেই ছাড়তে পারছি না। গত পঁচিশ বছর ধরে সিগারেট খাচ্ছি। খেয়েই চলেছি। এখন তো একটা সিগারেটের দাম পনের টাকা। ভাবা যায়!

মাসুদ নামাজ পড়ে এলো।
বলল, ভাইসাহেব আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম ক্ষমা চাইতে। সে আমার সাথে দেখাই করেনি। আমি আসলেই আমার স্ত্রীর সাথে অন্যায় করেছি। আমি বেকার। স্ত্রীর টাকা দিয়ে জীবনযাপন করেছি। এমন কি স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে অসুস্থ বাবা মায়ের জন্য ওষুধ কিনেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি। এমনকি ব্যবসার কথা বলে স্ত্রীর কাছ থেকে জোর করে টাকা নিয়েছি। ব্যবসায় লস খেয়েছি। অথচ স্ত্রীর জন্য কোনোদিন কিছু করতে পারিনি। করবো কিভাবে? আমার নেই চাকরী, আমার নেই টাকা। যাই হোক, আপনি আমাকে থাপ্পড় মারার পর আমি অনেক ভেবেছি। আসলে দোষ আমার। অন্যায় আমার। সেসব আমি স্বীকার করি। কখনও যদি আমার স্ত্রীর সাথে আপনার দেখা হয়, তাকে বলবেন, আমি তার কাছে সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাই। এবং আমি প্ররতিবার নামাজ পড়ে তার জন্য আমৃত্যু দোয়া করবো। আমার স্ত্রী সুমনা মেয়েটা ভালো। খুব ভালো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.