নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা

২৪ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৩৫

ছবিঃ আমার তোলা।

মা। মা। মা।
আপনার মা যদি আপনাকে জুতো দিয়ে সকাল সন্ধ্যা দুইবেলা প্রতিদিন নিয়ম করে মারে, আপনি চুপ থাকবেন। আপনি আপনার মায়ের সাথে সব সময় ভালো ব্যবহার করবেন। সব সময়। করেই যাবেন। যতবার অপমান করবে, অবহেলা করবে- ততবার আরো বেশি মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। করেই যাবেন। এক মুহুর্তের জন্যও মায়ের সাথে তেজ দেখাবেন না। মায়ের খারাপ আচরন, খারাপ ভাবে নিবেন না। দোয়া হিসেবে নেবেন। সারা দুনিয়া একদিকে এবং মাকে আরেক দিকে রাখবেন। আপনার চামড়া দিয়ে মাকে জুতো বানিয়ে দিলো মায়ের ঋন শোধ হবে না। মা যদি অন্যয্য কথাও বলেন, আপনি চুপ করে থাকবেন। মনে রাখবেন আপনি তার পেটে হয়েছেন। দশ মাস আপনাকে পেটে রেখেছেন। সীমাহীন কষ্ট করেছেনে আপনার জন্য।

ছোটবেলা আমার মা আমাকে খুব মারতো।
আব্বার সাথে কথাকাটি হলেও আমাকে মারতো। একবার তো মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো। একবার সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছিলাম বলে আমাকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি। রাত বারোটা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আরেকবার মা আমাকে জুতো দিয়ে মেরেছিলো সকলের সামনে। আরেকবার ডাল গুটনি দিয়ে মেরেছিলো। কত বার যে মাইর খেয়েছি তার হিসাব নাই। একবার তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- মায়ের অত্যাচার আর সহ্য করবো না। বাসা থেকে পালাবো। পালিয়ে কমলাপুর গেলাম। রাত বারোটায় সেখান থেকে খুঁজে বের করলো। এবং বাসায় এনে জুতো দিয়ে মারলো। আব্বাও আমাকে মার হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।

এবার আমার মায়ের আমার প্রতি ভালোবাসার কথা বলি।
আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসার উদাহরন অসংখ্য আছে। আমি দুটা ঘটনা বলছি। তখন আমার বয়স এক বছর। আমাদের পাশের এলাকায় আগুন লাগলো। মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগুনের ধোয়া দেখলো। আমি উঠানে খেলছিলাম। মা বাসায় এসে আমাকে নিয়ে এক দৌড় দিলো। বাসা থেকে তিন মাইল দূরে চলে গেলো। যাই হোক, সকালের ঘটনা। মা আমাকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলো। তখন আমার নানা নানী বললেন, ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গেলি। আর আমরা তোর বাবা মা বুড়ো বুড়ি আমাদের কথা একবারও ভাবলি না! তখন মা বলল, আমার কাছে আমার সন্তান আগে। ছোটবেলা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতাম। এখন এত বড় হয়েছি, এখন মার কাছ থেকে টাকা নিই।

দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো-
তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। আমি হারিয়ে গেলাম। ছোটবেলা আমি খুব বোকা ছিলাম। এখনকার পাঁচ বছরের ছেলেমেয়ে অনেক চালাক। অবশ্য আমি যখন ছোট তখন ইন্টারনেট ছিলো না। কম্পিউটার ছিলো। ডিশ লাইন ছিলো। টিভিতে অনেক গুলো চ্যানেল ছিলো না। ফেসবুক, ইউটিউব ছিলো না। যাই হোক, সকাল দশ টায় আমি হারিয়ে যাই। সন্ধ্যা ছয়টা বাজে আমাকে নানান জায়গায় খুঁজে এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেও আমাকে পাওয়া যায় নি। মা অজ্ঞান হয়ে গেলো। আবার জ্ঞান ফিরলো। আবার অজ্ঞান হলো। এভাবে৪/৫ বার মা জ্ঞান হারালো। আমাকে রাত ১২ টায় পাওয়ার পর- দুধ দিয়ে গোছল করালো। পুরো এলাকার মানুষকে মিষ্টি খাওয়ালো। যে লোক আমার সন্ধান দিয়েছিলো। তাকে কিছু টাকা দিলো। তখন আমার বাবা ঢাকায় ছিলেন না। মার হাতে টাকা ছিলো না। মা তার গলার চেন বিক্রি করে দিলো। আমার মায়ের এত এত গল্প আছে, যা টিভি সিরির‍্যাল আলিফ লায়লার মতো, বললে কোনো দিন শেষ হবে না।

আপনি ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করবেন।
রাতে ঘুমানোর আগে মায়ের পা টিপে দিবেন। মায়ের যে কোনো সমস্যায় আপনি সবার আগে দৌড়ে যাবেন। মা যে খাবার পছন্দ করে সেটা মায়ের জন্য কিনে নিয়ে যাবেন। মাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে মার্কেট থেকে শাড়ি কিনে দিবেন। এবং মা কেন আপনাকে অপমান করে, অবহেলা করে সেই কারন গুলো খুঁজে বের করবেন। মা আপনাকে যতই মারুক, কাটুক আর জুতা পিটা করুক- আপনি তবু মায়ের পাশে পাশে থাকবেন। মা যা পছন্দ করে তাই করবেন। মাকে আপনি নিজ থেকেই বলবেন, মা আমি কুলাঙ্গার আমাকে মারো। জুতা পিটা করো। তখন দেখবেন মা আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরবেন। আমরা চার ভাই, মার অনেক বয়স হয়েছে। এখনও আমাদের মা আমাদের চার ভাইকে দৌড়ের উপর রাখে। কথা দিয়ে মাঝে মাঝে আঘাত করে। তখন মায়ের উপর খুব রাগ হয়। মনে মনে ভাবি দূর মায়ের সাথে আর কথা বলব না। মায়ের ঘরেও যাবো না। কিন্তু রাগ করে তিন ঘন্টাও থাকতে পারি না।

মায়ের দোষ খুঁজতে যাবেন না।
মায়ের ভুল ধরতে যাবেন না। হ্যা, মা-ও একজন মানুষ। তারও দোষ ত্রুটি থাকতে পারে। সন্তান হিসেবে শুধু মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। মায়ের গালাগালি, অপমান অবহেলা আর্শীবাদ মনে করবেন। যার মা নাই সে বুঝে তার বুকে কেমন লাগে। মা যে কত বড় শক্তি। কত বড় সম্বল। কত বড় আশ্রয় সেটা আপনি এখনও জানেন না। বুঝেন না। আপনার বয়স অল্প বলে। আসলে অনেক ছেলেই বিয়ে করার আগ পর্যন্ত বাবা মা কি জিনিস সেটা বুঝতে পারে না। যখন আপনি বিয়ে করবেন, আপনার সন্তান হবে। সন্তান বড় হবে। তখন আপনি সঠিক ভাবে বুঝতে পারবেন বাবা মা কি জিনিস। মায়ের কি কি স্বপ্ন আছে তা পূরন করুণ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.