নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ আমার তোলা।
ঈদের দিন সকালবেলা।
পাশের বাসার স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছে। কঠিন ঝগড়া। আমাদের বাসার বসার ঘরের জানালা দিয়ে তাদের ব্যলকনি দিয়ে ঘর পর্যন্ত দেখা যায়। সুমন ভাই, আর রুনা ভাবী ঝগড়া করছেন। তাদের সাথে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক। তাঁরা ভালো কিছু রান্না করলে আমাদের দেয়। আমরাও এটা সেটা দেই। মাঝে মাঝে তাদের সাথে অনেক গল্প হয়। কেউ কারো বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। জানালা আর ব্যলকনি থেকেই সব আলাপ হয়। সুমন ভাই, রুনা ভাবী অনেক বছর ধরেই এই বাসাতে আছেন। দু'জনেই শিক্ষিত। তাদের এক ছেলে আছে। চার বছর বয়স। ভালো একটি পরিবার। খুব হাসিখুশি। রুনা ভাবীর সাথে সুরভির খুব ভাব। প্রায়ই তাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয়। মাঝে মাঝে একসাথে শপিং এ যায়।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে, তাঁরা ঈদের দিক সকালে ঝগড়া করছে!
খুবই বাজে ভাষা ব্যবহার করছে রুনা ভাবী। আমি জানালা দিয়ে বললাম, আজ ঝগড়া করছেন কেন? আজ ইদের দিন। রুনা ভাবী বললেন, এই লোক আমার জীবনটা নষ্ট করে দিছে। বদলোক। একে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে। তখন সুমন ভাই বলল, দরজা খোলা আছে, চলে যাও। আরেকটা বিয়ে করো। তারপর ভালো থেকে দেখাও। অবশ্য এখন ভালো স্বামী পাবে না। বয়স্ক স্বামী পাবে। ট্রাক ড্রাইভার টাইপ। পান খায়। পানের রস ঠোঁট বেয়ে পরে। এরকম কাউকে অবশ্যই পাবে। তাছাড়া তোমার বয়সও তো কম হয় নাই। রুনা ভাবী বললেন, ছোট লোকের মতো কথা বলবে না। আমি দেখতে ভালোই ছিলাম। তোমার সংসারে এসে আজ আমার চেহারার এই অবস্থা হয়েছে। আমি বললাম, ভাই, ভাবী আল্লাহর দোহাই লাগে ঝগড়া থামান। আজ ঈদের দিন। ঈদের দিনে ঝগড়া করতে হয় না। আজ আনন্দের দিন। রুনা ভাবী বললেন, যে দিন থেকে এই ব্যাটাকে বিয়ে করেছি সেদিন থেকে আমার আনন্দ শেষ।
না তাদের ঝগড়া থামছেন না।
আরো বাড়ছে। রুনা ভাবীর গলাই বেশি শোনা যাচ্ছে। ভাবী সুমন ভাইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, তুমি খারাপ। তোমার মা খারাপ। আমি এই পৃথিবীতে তোমাদের দুজন কে ঘৃণা করি। সুমন ভাই বললেন, আমাকে খারাপ বলো সমস্যা নাই। আমার মাকে কিচ্ছু বলবে না। আমার মা ভালো মানুষ। তাদের ঝগড়া চলছেই। আমি সুমন ভাইকে চিনি। তিনি ভালো মানুষ। তিনি তার পরিবার ছাড়া দুনিয়াতে আর কিছু বুঝেন না। তার স্ত্রী এবং ছেলেকে খুশি রাখাই যেন তার প্রধান কাজ। সেই চেষ্টা তিনি চালিয়েই যাচ্ছেন। প্রচুর বাজার করেন। মাঝে মাঝে বউ বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে যান। হাসিখুশি একটা পরিবার। অথচ ঈদের দিন ঝগড়া করছে। রুনা ভাবী হয়তো আজ কিছু রান্না করেন নাই। আমি তাদের বাসায় গিয়ে খাবার দিয়ে এলাম। এবং রাতে আমাদের বাসায় এসে খেয়ে যেতে বললাম। রুনা ভাবী বললেন, আমি কি বেশি কিছু চেয়েছিলাম। শুধু বলেছি, আজ ঈদের দিন- বাবার বাসায় যাবো। হয়তো আগামী ঈদে বাবাকে পাবো না। বাবা অসুস্থ। আমি বললাম, সুমন ভাই অবিবেচক নন। অবশ্যই নিয়ে যাবেন।
সুমন ভাই, আর রুনা ভাবীকে প্রায়ই দেখি-
রাতের বেলা ব্যলকনিতে বসে থাকেন। হাতে থাকে চায়ের কাপ। মাঝে মাঝে আমার জন্যও এক কাপ আনেন। আমরা তিনজন মিলে গল্প করি। রুনা ভাবী ভালো গান গান। তার মুড ভালো থাকলে আমাদের গান শুনান। তার গান শুনে সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ হয়- তার স্বামী। সুমন ভাই আর রুনা ভাবীর ঝগড়া সুত্রপাত হচ্ছে- রুনা ভাবী তার বাবার বাড়ি যেতে চেয়েছেন। সুমন ভাই বলেছেন, আজ যাবো না। দুই একদিন পর যাবো। অথচ রুনা ভাবী আজই যেতে চাইছেন। এই সামান্য বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়া। সুমন ভাইয়ের জাগায় অন্য কোনো ছেলে হলে এতক্ষনে মারামারি হয়ে যেত। ভাগ্যিস সুমন ভাই শান্ত মানুষ। তার অনেক ধৈর্য্য। রুনা ভাবী আসলেই বেশী বেশী করেন। বাপের বাড়ি একদিন পর গেলে ক্ষতি কি? তাছাড়া সুমন ভাই কোনো এক কারনে তার শ্বশুর বাড়ি যেতে পছন্দ করেন না। বেশির ভাগ স্বামীই বোধহয়- শ্বশুর বাড়ি যেতে পছন্দ করে না।
মানুষ ঝগড়া কেন করে?
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই কি ঝগড়া হয়? ঝগড়ার শেষে তো কিছুই অর্জন হয় না। রান্না বন্ধ। না খেয়ে থাকা। একই বাসায় থেকে দুজন মানুষ মন খারাপ করে থাকবে। বাবা মায়ের ঝগড়ার কারনে ছোট বাচ্চাটার কষ্ট। আমি খুব খেয়াল করে দেখেছি- ছোট বাচ্চাদের কষ্টের কারন তার বাবা মা। ঈদের দিন বাবা মায়ের ঝগড়ার কারনে ছোট বাচ্চাটার সময় মতো খাওয়া হয়নি। গোছল হয়নি। ঘুম হয়নি। বরং রুনা ভাবী তার ছেলেকে বকেছেন। অথচ ছোট বাচ্চাটার কোনো দোষ নেই। রুনা ভাবী অনেক দোষ করার পরও সুমন ভাই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। রুনা ভাবীকে নিয়ে গেছেন তার বাবার বাড়ি। সারাদিন থেকে রাতে বাসায় ফিরেছেন। সুমন ভাই আমাকে চুপি চুপি বললেন, আমি আমার শ্বশুর বাড়ি ভালোবেসে যাই নি। ঐ বাসায় আমার কখনই যেতে ইচ্ছা করে না।
০৫ ই মে, ২০২২ রাত ১১:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: হুম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৪৯
রেজাউল৯৬ বলেছেন: কি চমৎকার। কেয়া বাত কেয়া বাত।
মাথায় বুদ্ধি থাকিলে এক বেলকনিতে বসিয়া আরেক বেলকনির চা খাওয়া যায় অনায়াসে, পাইপ লাগে ন।
আমার মত যারা কম বুদ্ধিমান তারা অবশ্য পাড়ি না। তবে আপনার পোষ্ট পরতে থাকি, নিশ্চয় আমরো বুদ্ধি বারিবে।