নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষ্ণকলি

৩০ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১০



ভালো মানুষ হইবার সব সম্ভবনা আমার মধ্যে বিরাজমান ছিল, কিন্তু প্রেমের ব্যর্থতার জন্য হইয়া গেলাম অন্ধকারের মানুষ। তাহার পর সমস্ত জীবন ধরিয়া অভিনয় করিয়া চলিতেছি। অনেক পুরুষলোক কষ্ট ভুলিয়া থাকিবার জন্য- মদের প্রতি আসক্ত হইয়া পড়ে। অথবা অর্থের বিনিময়ে কোনো স্ত্রীলোকের বুকে মাথা গুঁজিয়া দেয় একটু শান্তির জন্যে। ।তাহার পর নিরবে স্ত্রীলোকের দুই ফোটা জল গড়িয়া পড়ে। স্ত্রীলোকটি জলের স্পর্শ টের পাইয়া তাহার বুকে পুরুষের মাথাখানি আরও জোরে চাপিয়া ধরে মায়াময় হস্তে। যুগের পর যুগ ধরিয়া স্ত্রীলোক পুরুষের দুঃখ-কষ্ট, শোক নিজের বুকের মধ্যে সযন্তে রাখিবার চায়। বোকা পুরুষ তাহা বুঝিতে ব্যর্থ হয়।

একদিন শ্রাবনের সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টিতে- অশ্বথ গাছের তলায় চায়ের দোকানে বসিয়া চা পান করিতে ছিলাম, তখন সেই পরমা রমনীটিকে দেখিতে পাই। আহা কি রুপ তাহার! বুকের মধ্যে পূজার বাদ্য বাজিতে লাগিল। সিদ্ধান্ত লইয়া ফেললাম এই রমনীর সহিত- বাকিটা জীবন কাটাইয়া দিব। আপনাদের অবগতির জন্যে জানাইতেছি- আবেগের বসে এই সিদ্ধান্ত নিই নাই। নানান কাহিনী দেখিয়া শুনিয়া- আমি চিন্তাশীল উপাধিতে ভূষিতে হইয়াছি সূধী সমাজে।যাহাই হোক, যথা সময়ে এই রমনীর কথায় আবার আসিব।

প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বন্ধু নারায়ণ আমার সহিত দেখা করিতে আসিয়া আমার তামাক ঘুট-ঘুট করিয়া টানিয়া শেষ করিয়া দিত। উত্তর পাড়াতে বাড়ি নারায়ানের। খবর পাইয়াছি- আমার বুকে ব্যাথা দানকারী রমনীটি উত্তর পাড়াতেই থাকে। আমি জমিদার বাড়ির সন্তান। বাপ-দাদায় পঞ্চাশ বিঘা জমি রাখিয়া গেছেন। বেশ স্বচ্ছন্দে আছি,বেশ দিন কাটে। দিনের পর দিন যায়- আমার আনন্দের সীমা নাই, সমস্ত দিন সারা গ্রাম ঘুরিয়া বেড়াই। কিন্তুক এখন আর সময় কাটে না। সময়-অসময় ওই রমনীর অভাব বোধ হয়। বিবাহ বন্ধন ছাড়া এই রমনীকে কোনোমতেই চিরস্থায়ী করিয়া রাখা যাবে না।

রমনীর কথা ভাবিয়া ভাবিয়া রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে। জোছনা চারিপাশে মিশিয়া গিয়াছে। মানুষের এমনি দুঃসময়ের মাঝে আশা-নিরাশার কূল-কিনারা যখন দেখিতে পায় না, তখন ব্যাথিত মন ভয়ে ভয়ে আশার দিকটাই আকড়াইয়া ধরিতে চায়। কিছু অর্থ ব্যয় করিয়া রমনীর নামটি জানিতে পারিলাম। এই মহান রমনীর নাম নিয়া রবী ঠাকুর একখানা কবিতা লিখিয়াছিলেন- কৃষ্ণকলি । কৃষ্ণকলি'র বাপকে একখানা চিঠি লিখিলাম। আমি মনে করি, ইহাই বুদ্ধিমানের কাজ হইয়াছে। চিঠিখানা তিনবার পড়িলাম। যদি কোনো বানান ভুল চক্ষে পড়ে। হবু শ্বশুর মহাশয় ব্যারিস্টার।

সচেতন এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোনো ঘটনার দোষ-গুন সম্বন্ধে নিজের মতামত প্রকাশ করতে চাহেন না। কিন্তু আর একরকমের লোক আছে, যাহার ঠিক ইহার উল্টা। তাদের ধৈর্য একে বারেই কম। কোনো বিষয় ভালো করিয়া জানিবার পরিশ্রমটুকু করে না। আপন মনের ভুল বিশ্বাস দিয়া সব কিছু চালাইয়া লইতে চাহে। সে যাগগে, কৃষ্ণকলি'র কথায় আসি- বিধাতা যেন সব রুপ কৃষ্ণকলিকে দিয়াছেন। কিন্তুক কৃষ্ণকলির রুপের কোনোরুপ অহংকার প্রকাশ পায় না। ইচ্ছা করে এই রুপে কালি লেপন করিয়া দেই- ইহা অবশ্যই ক্রোধের কথা, মনের কথা নহে। কৃষ্ণকলি আসিয়া দেখিবে কত বড় বাড়ি আমার!

বড়ই জ্বলা হইল শুধুই কৃষ্ণকলি'র কথা লিখিতে ইচ্ছা করে। কৃষ্ণকলি'র কথা ভাবিয়া ভাবিয়া শ্রাবন মাস পার করিলাম। বাড়ির উঠানে বসিয়া কত রাত্রি কাটাইয়া দিলাম। কৃষ্ণকলির দেখা পাওয়ার আগে- যশোদা নামে এক নারীর সহিত সময় কাটাইতাম। যশোদা অলংকার পছন্দ করিত খুব। তাহার নাচে খুশি হইয়া টাকা উড়াইয়া দিতাম। আহা! দেবীর প্রতিমূর্তি যেন যশোদা। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, অবহেলা অত্যাচার- কত কিছু যে সহ্য করিয়াছে। আমার কোলে মাথা রাখিয়া কতদিন কাঁদিয়াছে।

কৃষ্ণকলি'র বাপ ব্যারিষ্টার নীলমনি আমার প্রস্তাব এক আকাশ ঘৃণা দিয়া প্রত্যাক্ষান করিল। তারপর সময়ের সাথে সাথে আমার বুকে অপমানের জ্বলা বাড়িতে লাগিল। নিমিষেই জীবনের সব সুখ, শান্তি বাতাসে মিশিয়া গেল। ইচ্ছা করিল কৃষ্ণকলি'র বাড়ি গিয়া তাহাকে ধর্ষণ করিয়া আসে। ইহা রাগের কথা- আমার পক্ষে সম্ভব নহে।

কৃষ্ণকলি কে কিভাবে পাইব ইহা ভাবিতে ভাবিতে আমার দাড়ি লম্বা হইতে লাগিল এবং জট পাকিয়া গেল এক বছরে। হঠাত অপ্রত্যাশিত আঘাত পাইলাম- কৃষ্ণকলি'র বিবাহ হইয়া গেছে। ব্যারিষ্টার নীলমনি জোরপূবক কন্যা কৃষ্ণকলি কে শহরে নিয়া বিবাহ দিয়াছে। এই খবর পাইয়া খানিকক্ষন মাটিতে গড়াগড়ি করিয়া কাঁদিলাম। ইচ্ছা করিল ছুটিয়া যশোদার কাছে যাই- কিন্তু যশোদা নিরুদ্দেশ। এখনও আমার আশা আছে- কৃষ্ণকলি আমার কাছে চলিয়া আসিবে। রমনীকূল সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝিতে দেরী করে না। কৃষ্ণকলি আমায় ভালোবাসে, তাহা আমি তার চাহনিতে বুঝিতে পারিয়াছে। ব্যারিষ্টারের ভয়ে সে মুখ খুলিতে পারে নাই। আমি কিতাবে পড়িয়াছি- যে যথার্থ ভালোবাসে, সে সহ্য করে থাকে। যশোদাকে ভালোবাসিতাম না- তাই তাহার মুখে ভালোবাসার কথা সহ্য করিতে পারিতাম না।

যাহার আশা আছে, সে একরকম করিয়া ভাবে, আর যাহার আশা নাই, সে অন্যরকম ভাবে।আশা থাকলে ভেবে সুখ আছে, আনন্দ আছে, তৃপ্তি আছে, দুঃখও আছে। কিন্তু আশাহীনের সুখ নাই, দুঃখ নাই অথচ শান্তির ঘুম আছে। যাহা হোক, কাঁদিয়া কাঁদিয়া দুই বছর অতিক্রম করিলাম।

একদিন শ্রী শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় আমার সহিত দেখা করিতে আসিলেন। আমাকে দেখিয়া ব্যাকুল কন্ঠে বলেলেন- তোমাকে দেখিয়া দেবদাসের কথা মনে পড়িল। আমি কহিলাম- দেবদাস কে ? শরৎ চন্দ্র তাহার ঝোলা ব্যাগ হইতে একখানা কিতাব বাহির করিয়া আমার হাতে দিলেন। বলিলেন, এটা পড়ো, তাহাতে তোমার মনের উপশম হইবে। কিতাব আমি কোনো কালেও পড়ি না। কিন্তুক কি মনে করিয়া শেষ পাতা হইতে পড়া শুরু করিলাম।..." যদি কখনও দেবদাসের মত এমন হতভাগ্য,অসংযমী পাপিষ্ঠের সহিত পরিচয় ঘটে, তাহার জন্য একটু প্রার্থনা করিও। প্রার্থনা করিও আর যাহাই হোক, যেন তাহার মত এমন করিয়া কাহারও মৃত্যু না ঘটে। মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে- যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।"

দেবদাস শেষ করিয়া কখন কাঁদিতে কাঁদিতে ঘুমাইয়া পড়িয়া ছিলাম জানি না। ভোরের আলো চোখে পড়তে দেখি, আমি কৃষ্ণকলি'র কোলে মাথা রাখিয়া আছি। কৃষ্ণকলি'র চক্ষু হইতে টপ টপ করিয়া জল গড়াইয়া আমার গালে পড়িতেছে। কৃষ্ণকলি'র মুখ খুলিতেই আমি তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিলাম আমার ঠোঁট দিয়া। এইভাবে অনেকক্ষন সময় ব্যয় করিয়া আমি বলিলাম- আমি কিচ্ছু শুনিতে চাই না- কৃষ্ণকলি, তুমি আমার কাছে আসিয়াছো এটাই অলৌকিক সত্য। এই সত্যই আমি চিরটাকাল আঁকড়ে ধরে থাকিব। কোনোদিন আমি তোমার অবহেলা করিব না। কৃষ্ণকলি'র চোখের জল মুছিয়া দিলাম। শক্ত করিয়া বুকের মধ্যে জড়িয়া ধরিলাম। এরপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলাম। আমাদের ঘর আলো করিয়া- জন্ম নিল মহা মানবের এক শিশু তিলেতিলে।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস, লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.