নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৭১

১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৩

ছবিঃ আমার তোলা।

১। আমাদের মহল্লায় দুটা টেইলার্সের দোকান আছে।
একটা রাস্তার শুরুতে, একটা একটা রাস্তার শেষে। টেইলার্স দুটো নতুন জামা কাপড় সেলায় না। টুকটাক কাজ করে। এই দুই দোকানে আমি মাঝে মাঝে যাই। আড্ডা দেই। চা খাই। গল্প করি। প্রথম দোকানটার নাম কামাল টেইলার্স। কামাল টেইলার্সের কামাল ভাই আমাকে খুব মহব্বত করেন। কয়েকদিন তার দোকানে না গেলেই রাগ করেন। একদিন তার দোকানে গেলাম। গল্প করছি। কামাল ভাই বললেন, রাজীব ভাই দোয়া করবেন। চল্লিশ দিনের চিল্লায় যাচ্ছি। আমি তো অবাক! এই লোক বলে কি! আমি বললাম, দোকান ভাড়া মাসে দশ হাজার। বিদ্যু বিল আছে। আপনার সংসারের খরচ আছে। স্ত্রী আছে, এক ছেলে আছে। তাদের রেখে আপনি যাবেন? এটা ঠিক হবে। কামাল ভাই বললেন, আমি যাচ্ছি আল্লাহর রাস্তায়। আল্লাহই আমার পরিবারকে দেখবেন। আমি বললাম, দোকান ভাড়া কিভাবে দিবেন? কামাল ভাই বললেন, সব আল্লাহ ব্যবস্থা করে দিবেন। চিল্লা থেকে আশার পর দেখবেন, আল্লাহর অনেক রহমত পাবো।

কামাল ভাই চলে গেলন চিল্লায়।
এখন আমি জামাল টেইলার্সে যাই। জামাল ভাই খুব ব্যস্ত। অন্য একটা দোকান বন্ধ। তাই প্রচুর কাজ তার দোকানে। রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ করেন জামাল ভাই। কাজ বেশি তাই উনি একজন লোক রেখেছেন, নতুন একটা মেশিন কনেছেন। বেশ রমরমা অবস্থা। দেখে ভালো লাগে। এদিকে কামাল ভাইয়ের স্ত্রী কোনো রকমে দোকান থেকে বাকিতে চাল ডাল কিনে জীবন কাটাচ্ছেন। কামাল ভাই চল্লিশ দিনের জন্য গেলেও ফিরলেন ৫৩ দিন পর। একদম শুকিয়ে গেছেন। নানান অসুখ বাধিয়েছেন। চিকিৎসা করাবেন টাকা নেই। এদিকে দোকান ভাড়া বাকি পরে গেছে, বাসা ভাড়া বাকি পরে গেছে। মুদি দোকানেও অনেক বাকি জমেছে। আল্লাহর রাস্তায় অর্থ্যাত চিল্লায় না গেলে আজ তার এই অবস্থা হতো না। অন্যদিকে জামাল ভাই চিল্লায় না গিয়ে সুন্দর ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। আমি কয়েকজনকে বলে কামাল ভাইকে কিছু টাকা উঠিয়ে দিলাম। চিকিৎসা চলছে। সম্ভবত কামাল ভাইকে গ্রামে চলে যেতে হবে।

২। আমাদের মহল্লায় এক বাড়িতে অনুষ্ঠান।
বিরাট আয়োজন। লাইটিং করা হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান হয়েছে দুপুরবেলা। বাড়ির ছাদে পেন্ডেল টানানো হয়েছে। চারিদিকে অনেক গুলো ফ্যান চলছে। বড় এক গরু আনা হয়েছে। কয়েকটা ছাগল। অনেক গুলো মূরগী। বেশ ধুমধাম অবস্থা। অনুষ্ঠানে আমাদের দাওয়াত করা হয়েছে। বাসা থেকে আমি একাই গেলাম। খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না। আমি দশ কেজি নানান রকম ফল নিয়ে গেলাম। কারন, এটা বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়। এক পিচ্চি মেয়ে কোরআন খতম দিয়েছে। যাইহোক, রোষ্ট, টিকিয়া, বোরহানি, রেজেলা, জর্দা, খেজুর, দই, মিষ্টি কিছুই বাদ যায়নি। রান্নাও হয়েছে বেশ। একদম কবজি ঢুবিয়ে খেলাম। বাবুর্চিকে বললাম, ভাই সাহেব আপনার হাতে যাদু আছে। পুরো মহল্লার মানুষ ছাড়াও অসংখ্য মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। এলাকার কাউন্সিলর পর্যন্ত এসেছেন। লোকজন পাগলের মতো খাচ্ছে। কামরুল ভাই দেখিয়ে দিলেন অনুষ্ঠান কাকে বলে। খাওয়া কাকে বলে।

কামরুল ভাই আমাকে বললেন,
আমার মেয়েটার জন্য খাস দিলে দোয়া করবেন রাজীব। মেয়ে কোরআন খতম দিয়েছে। এটা যে কত বড় নেয়ামত বলে বুঝাতে পারবো না। আল্লাহ না চাইলে কেউ কোরআন খতম দিতে পারে না। আমি বললাম, মাশাল্লাহ। অবশ্যই দোয়া করি। কামরুল ভাই বললেন, আর কিছুক্ষন থাকুন। খাওয়া শেষে দোয়া হবে। আমি বললাম, বেশ, আছি আমি। কামরুল ভাই বললেন, যে হুজুর আমার মেয়েকে আল্লাহর পাক কালাম শিখিয়েছে সে একটা মোবাইল চেয়েছে। তার নাকি একটা দামী মোবাইলের খুব শখ। বাইশ হাজার টাকা দিয়ে তাকে একটা মোবাইল কিনে দিয়েছি। নতুন একটা পাঞ্জাবী দিয়েছি। সাথে দুই কেজি মিষ্টি ও এক কেজি খেজুর।

যাইহোক, একসময় দোয়া শুরু হলো- হুজুর প্রথমে কিভাবে তার ছাত্রীকে অতি অল্প সময়ে কোরআন শিখিয়েছেন সেটা বললেন। সাথে আরো বললেন, অনেক হুজুর দু বছর হয়ে যায় ছাত্রছাত্রীকে আমপাড়া শেষ করতে পারে না। এই চ্যাংড়া হুজুর কামাল ভাইকে চিল্লায় যাওয়ার বুদ্ধি দিয়েছিলেন। হুজুর এখনই দোয়া শুরু করবেন। তার আগে হুজুর দুটা হাদীস বললেন। কিন্তু গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে পারেন নি। আউলায়ে ফেলেছেন। আসলে অল্প বয়সী হুজুর। অভিজ্ঞতা কম।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৭

মামুinসামু বলেছেন: অবস্থা খারাপ হলে ঢাকায় থাকতে পারে না, আবার অবস্থা ভাল করতে ঢাকায় আসে। এইটা কি একটা paradox?

১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ অনেকটা তাই।
চল্লিশ দিনের চিল্লায় যাওয়ার কারনে কামাল ভাইয়ায়ের ব্যবসা শেষ। এখন করুণ পরিনতি। গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। অন্যদিকে জামাল ভাই চিল্লায় না গিয়ে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। ভালো করেছেন। শুনছি আরেকটা দোকান দিবেন।

চাঁদগাজীর ভাষায় বলতে চাই- হুজুরেরা দেশকে পেছনে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:



ধর্ম দরিদ্রের আজীবনের জন্য দরিদ্র করে রাখে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: ইদানিং কিছু হুজুররা বেশ ভালো আছে। তাদের ইনকাম অনেকে।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫৩

রানার ব্লগ বলেছেন: এই সব চিল্লায় যাওয়ার ব্যাপার স্থানীয় কিছু তবলীগ জামাতের লোকের পাল্লায় পরে হয় এরা নিজেরা বেশ পয়সাওয়ালা তাদের ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা নাই কিন্তু এরা গরীব মানুষ কে পথে বসিয়ে ফেলে। দেখবেন তবলীগ জামাতের লোকের লাইনে প্রথম দিকে থাকে বেশ নথর গোলগাল লোক লেজের দিকে না খাওয়া রোগা অসুস্থ গরীব কিছু মানুষ থাকে না এরা তবলীগ থেকে কোন উপকার পায় না এরা নিজের জন্য কিছু করতে পারে। ওরা কেবল দল ভাড়ি করে। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না। কারন এদের চিন্তায় থাকে পরিবার।

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: চিল্লা ফিল্লা অফ করে দেওয়া উচিৎ।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


চিল্লার নেটওয়ার্কিং ভবিষ্যৎ 'এ কাজে আসে না?

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: এগুলো অদরকারী।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩২

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: বিশ্বাসের ভাইরাস!

১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মে ভাইরাস।

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩৯

Naznin71 বলেছেন: সুন্দর ছবি তুলেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.