নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৬



প্রথম পর্ব

'আলালের ঘরের দুলাল' এর লেখক প্যারীচাদ মিত্র।
তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মাইকেল বাংলায় লিখবে। এবং সবাইকে দেখিয়ে দিবে। কেউ মাইকেলের কথা বিশ্বাস করেনি। কারন সে হিন্দু থেকে খিস্টান হয়েছে, কারন সে কিশোরবেলা থেকেই মদ খেতে শিখেছে, কারন সে বাংলায় কথা বলে না, বাংলায় লিখে না। নিজের বাংলা ভাষার প্রতি তার কোনো সম্মান নেই। খিস্টান হয়ে মাইকেল মাদ্রাজ চলে গেলো। মাদ্রাজ থেকে ব্যর্থ হয়ে খালি পকেটে কলকাতায় ফিরলো। প্যারীচাদ মিত্র জানেন মদখোররা মুখে অনেক কথাই বলে, কাজ করে দেখাতে পারে না। এই মাইকেলও পারবে না। মাইকেল একজন ব্যর্থ মানুষ। কিন্তু মাইকেল বাংলায় লিখেছেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। যদিও অভাব তার পিছু ছাড়েনি।

দশ বছর পর মাদ্রাজ থেকে মাইকেল কলকাতায় ফিরলো।
ভেবেছিলো বাপের সম্পত্তি সব বিক্রি করে আবার মাদ্রাজ চলে যাবে। কিন্তু সব সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে। ফিরে পাবার সম্ভবনা নেই। এদিকে পকেট ফাঁকা। বন্ধু গৌরদাস মাইকেল কে একটা কেরানির চাকরীর ব্যবস্থা করে দিলো। থাকার জায়গা দিলো। ধনীর সন্তান এখন কেরানির চাকরী করছে। আরিয়েত্তা হলো মাইকেলের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রেবেকার সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। একদিন আরিয়েত্তা কলকাতায় চলে এলো। সে খুব কান্নাকাটি করলো। মাইকেলের দীর্ঘদিন ধরে কোনো খোজ খবর নেই। মাইকেল স্ত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করলো। এতদিন পর স্ত্রীকে দেখে মাইকেল ভীষন খুশি হলো। মাইকেল তার প্রিয় বন্ধু গৌরদাস কে প্রায়ই বলত আমি বিখ্যাত হবো গৌর। এবং বন্ধু তুমি আমার জীবনী লিখবে। অবশ্যই লিখবে। মাইকেল মাদ্রাজ, লন্ডন বা ফ্রান্সে থাকাকালীন সে তার বন্ধু গৌরদাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। দুই বন্ধুর অনেক চিঠি সাগরদারি গ্রামের মাইকেলের বাড়িতে সংরক্ষিত আছে।

মাইকেল দীর্ঘদিন মাদ্রাজে থেকে বাংলা কথা প্রায় ভুলেই গেছে।
অথচ কলকাতায় তার চাকরিটি হচ্ছে- আসামীদের সাথে কথা বলে সেগুলো ইংরেজিতে লেখা। স্ত্রী আরিয়েতা আসার পর মাইকেল লাল বাজারের কাছে ছোট ঘর ভাড়া নিলেন। সংসারে স্বচ্ছলতা নেই। অভাব। এদিকে মদ খেয়ে বেতনের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। ঘর ভাড়া এবং বাজার করার টাকা পর্যন্ত থাকে না। অন্যদিকে মাইকেলের বন্ধুরা সবাই কলকাতায় থেকে লেখাপড়া শেষ করে বড় বড় পদে চাকরী করছে। ধনীর ছেলে হয়েও আজ মাইকেলের করুণ পরিনতি। একদিন মাইকেলের কাছের বন্ধু গৌরদাস বলল, চল আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। বেচারা বিধবা বিয়ে নিয়ে একাই লড়াই করেছেন। মাইকেল বলল, বিদ্যাসাগর বোকা মানুষ। বোকার সাথে আমি থাকবো না। যদিও মাইকেল এবং বিদ্যাসাগর দুজন দুজনকে খুব পছন্দ করতো। তাদের সাথে নিয়মিত চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যহত ছিলো।

মাইকেলের মৃত্যু হয় ৪৯ বছর বয়সে।
যশোরের সাগরদারি গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন এক ধনীর ঘরে। সাগরদারি গ্রামেই তার হাতেখড়ি হয়। ১২ বছর বয়স থেকেই মাইকেল কলকাতা থাকতে শুরু করেন। ছোটবেলা মাইকেল তার মায়ের কাছ থেকে জেনেছে রামায়ন, মহাভারত আর পুরান। কলকাতা থেকে খিস্টান হয়ে চলে যান বর্তমান চেন্নাই শহরে। এই চেন্নাই শহরেই তিনি লিখেন 'দ্য ক্যাপটিভ লেডি'। বিয়ে করেন রেবেকা নামের এক মেয়েকে। এই বিয়ের স্থায়ীত্ব ছিলো ৮ বছর। তাদের আট বছরের সংসার জীবনে দুই ছেলে দুই মেয়ের জন্ম জয়। এরপর মাইকেল বিয়ে করেন আঁরিয়েতা কে। আরিয়েতা ফরাসী কন্যা। তার বাবা হিন্দু কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সী কলেজ) এর অধ্যাপক ছিলেন। আরিয়েতা মাইকেল কে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। তাদের ঘরে একছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। ছেলের নাম নেপোলিয়ান ও মেয়ের নাম রাখেন শর্মিষ্ঠা। মাইকেল লন্ডনে যান, লন্ডন থেকে ফ্রান্সে যান। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিদ্যাসাগর তাকে মাঝে মাঝে অর্থ পাঠাতেন। মাইকেল ১৮৫৬ সালে কলকাতা আসেন বাপের সম্পত্তি বিক্রি করতে। কিন্তু কোনো সম্পত্তি সে বিক্রি করতে পারেন নি। সব দখল হয়ে গিয়েছিলো। ইচ্ছা করলে সে মামলা করতে পারতো। কিন্তু সে ঝামেলায় মাইকেল যাননি।

বাংলা ভাষার প্রথম মৌলিক নাটক 'শর্মিষ্ঠা'।
শর্মিষ্ঠা মূলত প্রেম নিয়ে নাটক। মাইকেলের নাটক বেশ জনপ্রিয়তা পেলো। এরপর সে একের পর এক নাটক লিখে গেছেন। তবে মাইকেলের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি 'মেঘনাবদ কাব্য'। মাইকেল নিজেকে তুলনা করতেন মিল্টন, বায়রন আর শ্রেক্সপিয়ারের সাথে। মাইকেল তার জীবনে ১২ টি ভাষা শিখেছিলেন। ধনীর ঘরে জন্ম নিয়েও মাইকেল সারা জীবন অভাবে অভাবে কেটেছে। আইন পেশাতে অর্থের মুখ দেখেন নি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন নি। রোগে শোকে ভূগে মরেছেন। ফ্রান্সে তার আইন নিয়ে পড়াই হতো না, যদি না ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অর্থ না পাঠাতো। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে- দারিদ্রতার মধ্যে থেকেও মাইকেল তার লেখালেখি বন্ধ করেন নি। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হয় তাঁর ১২টি গ্রন্থ এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় ৫টি গ্রন্থ। বাংলাদেশের কপোতাক্ষ নদের কাছেই ছোট 'সাগরদারি' গ্রাম। সেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে মাইকেলের বাড়ি, বাড়ির পাশে বিশাল এক পুকুর। এই গ্রামে প্রতি বছর মেলা বসে মাইকেলের জন্মদিনে। প্রতিদিন বহু মানুষ মাইকেলের বাড়িতে আসেন। ঘুরে ঘুরে দেখেন মাইকেলের চিঠি, জামা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়েও মাইকেল কোনো দিন ধুতি পড়েন নি। আর খ্রিস্টান হওয়ার পর সারাজীব কোট প্যান্ট টাই পড়েছেন।

(দ্বিতীয় পর্ব এখানেই সমাপ্ত। আর এক পর্ব লেখার বাকি আছে।)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৪

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: ‍সুন্দর লেখেছেন রাজীব দা

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ কবি সাহেব।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৫

জুল ভার্ন বলেছেন: কাক ময়ুর পুচ্চ ধারণ করলেই কাক যেমন ময়ুর হয়ে ওঠে না, তেমনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ধর্ম বদলিয়ে, ফটাফট ইংরেজি বলে, লিখে এবং স্যুট টাই পড়েও ইংরেজ হতে পারেননি। তাইতো তিনি শেষ পর্যন্ত মাতৃভাষাতেই সফল।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: মাইকেল একজন দুঃখী মানুষ। তার ভারতবর্ষে জন্ম নেওয়াটাই ভুল হয়েছে।

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
“আমি এক সকালে উঠে নিজেকে সফল হিসেবে পাইনি, এই কাব্যের সফলতা বহু বছরের কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।”

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: পরিশ্রম ছাড়া কিছু আয়ত্ত করা যায় না।

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: অবশেষে তিনি মাতৃভাষায় কবিতা লিখেই সফল হলেন- ঠিক কথা জুলভার্ন ভাই।
সংক্ষিপ্তাকার মাইকেলের জীবনী- ভালই লিখেছেন। মাদ্রাজের কবির আরো অনেক কথা ছিল যা আপনার লেখায় জানা হোল না।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আরো একটি পর্ব লিখব।

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২২

Imran Khan 017 বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছুই জানলাম। যদিও আমি তার প্রতিবেশী। 10 কিলো দূরে আমার বাড়ি থেকে। হয়ত এতো কাছেই বলে জানার আগ্রহ হয়নি কখনো। কিন্তু (!) খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি এমন একজন বড় মানুষকে নিয়ে কিভাবে ব্যাবসা হয় তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে! মানুষের ভীড় হয় অনেক কিন্তু একটা মাত্র উন্মুক্ত মঞ্চ ছাড়া তাকে নিয়ে কোথাও কিছু নেই। উপলক্ষ্য মাত্র। সংগ্রহশালায় ও লিমিটেশন অনেক।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সঠিক মন্তব্য করেছেন।

৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪০

সোনাগাজী বলেছেন:



মাইকেল বাংলায় মহাকাব্য রচনা করে গেছেন, উনার পর বাংলায় এই ধরণের কিছু আর ঘটেনি।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: মাইকেল লোকটা কবি হওয়ার জন্যই জন্মেছিলেন।
তিনি লেখালেখি শুরু করার আগেই বলতেন আমাই মহাকবি হবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.