নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপলক্ষ্যে ছোট ভাই একটা টিভি কিনেছে।
অথচ সব ঘরেই একটা করে টিভি দেয়ালে লাগানো আছে। আমাদের বাসায় টিভি কেউ দেখে না শুধু মা ছাড়া। সবাই ল্যাপটপ আর মোবাইলে কাজ চালিয়ে যায়। যাইহোক, আমাদের বাসার সবাই আর্জেন্টিনার কঠিন সাপোর্টার। যেদিন আর্জেন্টোনার খেলা থাকে আমরা সকলে মিলে খেলা দেখি। চিৎকার চেচামেচি করে বাসার সবার গলা ভেঙ্গে যায়। বড় ভাই আমাদের সাথে খেলা দেখেন না। কারন আমরা খুব চিল্লাচিল্লি করি। বড় ভাইয়ের মাথা ব্যথা করে। সে একা খেলা দেখে। খেলা উপলক্ষ্যে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল ছিলো ফাইনাল খেলা। এই উপলক্ষ্যে অনেক রকম খাবার রান্না হয়েছে। পিঠা তৈরি করা হয়েছে। যখন আর্জেন্টিনা দুই গোল দিয়ে দিলো, আমাদের এলাকায় বিজয় মিছিল শুরু হয়ে গেলো। অথচ তখনও খেলা পুরো শেষ হয়নি।
ফাইনাল খেলা নিয়ে আমি টেনশনে ছিলাম।
আমি আমার সমস্যা, টেনশন বা হতাশা কাউকে জানতে দেই না। বুঝতে দেই না। টেনশন দূর করার জন্য আমি পরিবার নিয়ে পূবাইল চলে গেলাম ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে। সারাদিন সেখানেই কাটালাম। ফারাজা খুব খুশি। বড় মেয়ে পরীও বেশ খুশি। তাঁরা ইচ্ছা মতো খেলাধূলা করলো। টেনশন করলে আমার খুব ক্ষুধা পায়। দুপুরে ইচ্ছা মতো থাই স্যুপ, চিকেন ফ্রাই আর ফ্রাইড রাইস খেয়ে নিলুম। ওদের সব খাবার ভালো ছিলো শুধু চা-কফি ছাড়া। সুরভির কিছুটা মন খারাপ ছিলো। সে চেয়েছিলো তার বাবার বাড়ি যাই। অনেকদিন সে যায় না। বিশেষ কারন ছাড়া শ্বশুরবাড়ি যেতে আমার ইচ্ছা করে না। তাছাড়া জামাই মানুষ ঘনঘন শ্বশুর বাড়ি যাওয়া ভালো দেখায় না। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। রাত ৯ টায় খেলা। মন বলছে আর্জেন্টিনা জিতবে। মাকে বললাম, টেনশন করো না, আর্জেন্টিনা অবশ্যই জিতবে। বিসমিল্লাহ্ বলে খেলা দেখতে বসলাম।
আর্জেন্টিনা বিরতির আগেই দুই গোল দিয়ে দিয়েছে।
আমরা সমানে চিৎকার দিয়েই যাচ্ছি। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য শাবির। বয়স ৭ মাস। সে আমাদের চিৎকারে ভয়ে পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। অন্যদিকে আমার ছোট ভাই, খুশিতে এবং আবেগে টিভিতে একটা গুসি মেরে বসলো। এলইডি স্ক্রীন নষ্ট হয়ে গেলো। নতুন টিভি! ৯২ হাজার টাকা দাম! শেষে আমরা সকলে মার ঘরে টিভি দেখতে যাই। হাফ টাইমের পর আর্জেন্টিনা দুই গোল খেয়ে গেলো। আমরা সবাই থ মেরে গেলাম। এমন সময় 'আইরিন' (আমাদের বাসায় থাকে) সবার জন্য পোলাউ মাংস, কোক নিয়ে এলো। খেলা শেষের দিকে, দুই-দুই গোল। আমরা সবাই রেগে উঠলাম আইরিনের উপর। যেন খেলার এই অবস্থার জন্য আইরিন দায়ী। আইরিন বলল, আমি চলে গেলাম, খাবার আর গরম করতে পারবো না। আমি বললাম, জাহান্নামে যাও। নব্বই মিনিটের খেলা শেষ। এখন ত্রিশ মিনিট খেলা হবে। ভরপুর টেনশনে আছি আমরা।
এবং একসময় আর্জেন্টিনা জিতে গেলো বিশ্বকাপ।
আমাদের মনে হলো- বাংলাদেশ আজ বিশ্বকাপ জিতলে যে আনন্দ পেতাম, আর্জেন্টিনা জেতাতে আমরা সেরকম'ই আনন্দ পেয়েছি। রাস্তায় চলছে মিছিল। আনন্দ উল্লাস। আতশবাজি। পুরো শহর জেগে আছে। মনে হয় কারো কোনো দুঃখ কষ্ট নেই। অভাব নেই। হতাশা নেই। ঢাকা শহরের মানুষ গুলো বড় অদ্ভুত। এই শীতের রাতে মিছিল করছে। ভেঁপু বাজাচ্ছে। কি সীমাহীন আনন্দ ওদের! সুরভি ফাইনাল খেলা দেখেনি। সে গাল ফুলিয়ে আছে। কারন, যে লোক ফারাজার জন্য প্রতিদিন বাসায় দুধ দিয়ে যায়, সে আজ দুধ দিয়ে যায়নি। তাকে ফোন দেওয়া হয়েছে সে ফোন ধরেনি। সুরভি বলেছে দোকান থেকে দুধ নিয়ে আসতে। আমি বলেছি খেলা রেখে এখন আমার পক্ষে দুধ আনতে যাওয়া সম্ভব নয়। সুরভি বলেছে, মেয়ে দুধ খাবে। আর খেলা তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ন! আমি বলেছি, একদিন দুধ না খেলে সমস্যা নাই। ঘরে আপেল আছে, আপেল দাও।
রাত দেড়টায় আমরা খেতে বসলাম।
খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। আইরিন বেশ রাগ করেছে। তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খেতে বসালাম। ভাবী ওভেনে খাবার গরম করে দিলেন। রাতে খাইনি। অথচ ক্ষুধা পায়নি। জয়ের আনন্দে ক্ষুধাবোধ চলে গেছে। সামান্য খেয়ে নিলাম। আসলে খেলা দেখার সময় নিজের অজান্তেই নুডুলস, পিঠা, চিড়া ভাঁজা, বিস্কুট, মুড়ি মাখা খেয়ে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে। যাইহোক, বাংলাদেশের ৭০% মানুষ আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। তাঁরা মন থেকে আর্জেন্টিনার জয়ে আনন্দ পেয়েছে। আনন্দ প্রকাশ করেছে। যে পরিমান জার্সি, পতাকা বিক্রি হয়েছে, সেই পরিমান বই বিক্রি হয় না বইমেলাতে। ফুটবল খেলা বাঙ্গালীর প্রানের খেলা। একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলবে। তখন আমরা বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে খেলা দেখব। হাতে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা। সেদিনটা কত না আনন্দের একটা দিন হবে!! আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: আমি শুধু আমাদের দেশের কথা ভাবছি। আসলে সারা বিশ্বের লোকজনই খুশি হয়েছে আর্জেন্টিনা জিতাতে।
২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৫
জুল ভার্ন বলেছেন: আমরা মানে স্ত্রী, দুই ছেলে, বড়ো ছেলের বৌ এবং আমাদের নাতনি মিলে খেলা দেখেছি। ছোট ছেলে ইনিংস ফুটবলের ভক্ত, অন্যরা সবাই আর্জেন্টাইন। খেলাকে আমি খেলার মধ্যেই রেখে কোনো প্রকার প্রেশার না নিয়েই খেলা দেখেছি।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১২
রাজীব নুর বলেছেন: প্রেসার ছিলো আমাদের। মারাত্মক প্রসার। যাকে ভালোবাসি গভীর ভাবেই ভালোবাসি।
৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:১৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে ফুটবল খেলা দেখতে চাই না। আমি চাই না বাংলাদেশ ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ খেলুক।
আর্জেন্টিনা ব্রাজিল উন্মাদনা , ল্যাটিন শৈল্পিকতা কোনটাই নষ্ট হোক চাইনা।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মতো এমনটা ভাবতে পারি না।
৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৯
সোনাগাজী বলেছেন:
আমাদের দেশের লোকজন খুশী হয়েছেন, ইহার দরকার ছিলো।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশের লোকজন অনেক বেশি খুশি হয়েছে। আর্জেন্টিনাদের জানা দরকার। তাদের কত বড় সাপোর্টার আমরা।
৫| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯
বাকপ্রবাস বলেছেন:
গতরাতে অনেক মজা করেছি, কন্যা আর্জেন্টিনা সাপোর্টার, ড্র হবার পর ওর কান্না শুরু, জিতার পর গেলাম মিষ্টি আনতে, পেলামনা, পরে সেভেন আপের ছবি তলে পেপসি নিয়ে বাসার ফিরলাম
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: মিষ্টি আগেই কিনে রাখা দরকার ছিলো। এই ভুল আমরা করি নি।
৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৭
আরজু পনি বলেছেন: আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার না। কিন্তু চেয়েছি মেসি কাপ হাতে খেলা শেষ করুক।
আবার ফ্রান্স গো হারা হারুক তেমনও চাইনি। সত্যি বলতে টাইব্রেকারই আশা করেছি যখন দেখেছি হাফ টাইমেই আর্জেন্টিনা দুই হোল করেছে।
আমাদের বাসায় আর্জেন্টিনার একাধিক কড়া সমর্থক আছে, ওরা আমার কথায় খুব খেপেছিলো।
বাংলাদেশ ফুটবলে আরো উন্নতি করুক এ কামনা করি।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমি এবার জিতারা মানসিকতা নিয়ে খেলা দেখতে বসেছি। জিতেছি।
বাংলাদেশে ফুটবল উন্নতি করা অসম্ভব কিছু না। আসলে যোগ্য ও দক্ষ লোক দরকার।
৭| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৯
আরজু পনি বলেছেন: আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার না। কিন্তু চেয়েছি মেসি কাপ হাতে খেলা শেষ করুক।
আবার ফ্রান্স গো হারা হারুক তেমনও চাইনি। সত্যি বলতে টাইব্রেকারই আশা করেছি যখন দেখেছি হাফ টাইমেই আর্জেন্টিনা দুই গোল করেছে।
আমাদের বাসায় আর্জেন্টিনার একাধিক কড়া সমর্থক আছে, ওরা আমার কথায় খুব খেপেছিলো।
বাংলাদেশ ফুটবলে আরো উন্নতি করুক এ কামনা করি
আগের মন্তব্যটা ডিলিট করে দিবেন প্লিজ,বানান ভুল হয়েছে।
৮| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৫
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
আর্জেন্টিনা বাংলাদেশকে ভালোই খুশি করতে পেরেছে।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা তা পেরেছে।
আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করতে গিয়ে বিশ্ব আমাদের চিনেছে।
৯| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০
কামাল১৮ বলেছেন: এখানে সবগুলো খেলা হয়েছে সকাল ১০টায় ও দুপুর দুই টায়।ফাইনাল খেলা হয়েছে সকাল ১০টায়।বাসায় লোক চার জন।আমি আমার স্ত্রী,তার ছোট ভাই ও আমাদের ছোট মেয়ে।খেলা দেখেছে দুই জন।আমার স্ত্রী ও তার ছোট ভাই।তারা ভাই-বোন হৈ চৈ করলে উকি দিয়ে দেখতাম।
কেন যেনো খেলার প্রতি খুব একটা আকর্ষণ নাই।আগে ছিলো।বসে বসে আন্তর্জাতিক নিউজ দেখছিলাম।রাশিয়া বড় রকমের আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।যুদ্ধ চললে সারা বিশ্বের জনগনের দুর্দশা আরো বাড়বে।
আপনারা খেলা উপভোগ করেছেন।সারা বাংলাদেশ উত্তেজনায় টগবগ করছিল।তবুও ভালো যে ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলে নাই।ছোট মেয়ে কোন দলের সমর্থক।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: খেলার উন্মাদনায় রাশিয়া ইউক্রেন এর যুদ্ধের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
ছোট মেয়ে না, আমাদের বাড়ির প্রত্যেকে আর্জেন্টনার সমর্থক।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
৯০ সালে আমার বয়স ছিল আট। আমাদের টিভি ছিল না। আব্বা বিশ্বকাপ শুরুর আগে ম্যারাডোনার পোস্টার কিনে দিয়েছিলেন। আব্বা ব্রাজিলের সমর্থক। আমিও ব্রাজিল। ম্যারাডোনার পোস্টার পেয়ে অবাকই হয়েছিলাম।
ফাইনাল খেলা দেখতে গিয়েছিলাম অন্য বাড়িতে। জার্মানির কাছে হেরে গেলো আর্জেন্টিনা। খুশি মনে বাড়ি ফিরলাম। দেখলাম আব্বার মন খারাপ।
আব্বা বললেন , ম্যারাডোনা হেরে গেলো ?
সেদিনের অনুভূতি বুঝিনি। এন্টি টিম হেরে গিয়েছে তাতেই খুশি।
এবার ফাইনাল ঠিক তেমনই অনুভূত হলো। ২০১৪ তে যেটা হয়নি। এমবাপ্পে গোল পরিশোধ করলো। ক্যামেরা চলে গেলো মেসির দিকে। আচমকা চোখ ভিজে উঠলো।
ছেলেটাকে আর্জেন্টিনার জার্সি কিনে দিয়েছিলাম ফাইনালে। জার্সি পেয়ে খুব খুশি। মেসি মেসি মেসি করে চিৎকার করলো। আমি বললাম , মেসি কি করে ?
ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে , 'ফুটবন' খেলে।
কে ভালো খেলে ?
ও আর আমি !
রাতে ঘুমানোর আগে ভাবলাম। নিজেকে প্রশ্ন করলাম , ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আজ মেসি হারলে কি তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেতাম ?
হৃদয়ের গভীর থেকে উত্তর এলো , হ্যাঁ ।
(কপিপেস্ট মন্তব্য )