নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
উপরের ছবিটা ভালো করে দেখুন।
এটা একটা ভারতীয় নায়িকার ছবি। নায়িকার নাম- মধুবালা। এখন তিনি বেঁচে নেই। মধুবালা কি সুন্দর দেখেছেন? একদম সহজ সরল সুন্দর। কেমন স্বচ্ছ ও পবিত্র মুখখানি! মধুবালা অসংখ্য মানুষের প্রিয় নায়িকা ছিলেন। এযুগের ক্যাটরিনা বা দীপিকা মধুবালার কাছে কিছুই না। কথাটা ভুল বললাম, আসলে প্রতিটা মেয়েই সুন্দর। একেকজন একেক রকম সুন্দর। যেমন কারো আকছে পাহাড় ভালো লাগে, কারো কাছে সমুদ্র। পাহাড়-সমুদ্র দুটাই সুন্দর। ঠিক তেমনি কারো কাছে মধুবালাকে ভালো লাগে, কারো কাছে ক্যাটরিনা। যাইহোক, আমি এসব আলোচনা এখন বাদ দেই। মূল লেখায় প্রবেশ করি। আমার আজকের লেখাটা আমার নানা নানীকে নিয়ে। নানা নানীরা একসময় তরুন-তরুনী ছিলেন।
আমার নানী দেখতে মধুবালার মতোন ছিলেন।
তখন তার বয়স ১৭ বছর। নানা নানী দুজনের বাড়ি বিক্রমপুর। তবে একই গ্রাম না। একজনের থানার নাম- লৌহজং, গ্রামের নাম রানী গাও, আরেকজনের থানার নাম- সিরাজদিখান। গ্রামের নাম নিমতলা। তবে একই অঞ্চলের হয়েও তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেন না। নানা গেলেন কলকাতায় লেখাপড়া করতে। একদিন ছুটিতে নানা বিক্রমপুর ফিরে এলেন। পদ্মানদীতে চড় জেগেছে। সেই চড়ে বিরাট মেলা বসেছে। তখনকার দিনে মেলা মানেই নাগরদোলা। নানান রকম মজাদার খাবার। পুতুল নাচ। বাইস্কোপ। সার্কাস। মাটির তৈরি নানান রকম জিনিসপত্র। কাঁচের চুড়ি, আলতা ইত্যাদি। মেলা চলতো টানা সাত দিন। পুরো বিক্রমপুরের মানুষ এই মেলাতে আসতো।
মেলাতে গিয়ে নানা নানী দুজনের দেখা।
প্রথম দেখা। নানা নানীকে দেখে মুগ্ধ! আমার নানা কোনো রকম ভনিতা না করে নানীকে বললেন, আমার নাম ওমর আলি। আমি কলকাতায় লেখাপড়া করছি। আমার গ্রামের নাম নিমতলা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। নানী দেখলেন- ওমর আলী লোকটা উঁচা লম্বা। দেখতে সুন্দর। ভালো স্বাস্থ্য। হাসিটা সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। মেলা শেষ হওয়ার আগেই নানা নানীর বিয়ে হয়ে গেলো। আমার নানা কোনো যৌতুক নেননি। উলটা নানীর যতটুকু ওজন তাকে ততটুকু স্বর্ন দিয়ে বিয়ে করেন। সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে নৌকা ছাড়া উপায় ছিলো না। আমার নানা গ্রামের মানুষ। তিনি সাঁতার পারতেন। গাছে উঠতে পারতেন। নৌকা বাইতে পারতেন। চাষবাস পারতেন। নদী থেকে মাছ ধরতে পারতেন।
আড়িয়াল বিলের পাশ দিয়ে নৌকা যাচ্ছে।
নৌকায় আছেন আমার নানা নানী। তাদের বিয়ে হয়েছে একমাস হয়ে গেছে। নানা কলকাতায় যাবেন। তাই স্ত্রীকে তার মায়ের কাছে রেখে আসতে যাচ্ছেন। তখনও সন্ধ্যা হয়নি। নৌকা বাইছে আমার নানা ওমর আলি। চুন্ডি শাড়ি পড়ে বসে আছে আমার নানী সরলা বিবি। হঠাত ডাকাত আক্রমণ করলো। ডাকাতরা সব কেড়ে নিলো। সরলা বিবির গলার চেন, আংটি, নাকফুল, বাজু, বিছা, বালা ইত্যাদি সব নিয়ে গেলো। নানা শুধু দেখলেন। তার কিছু করার নেই। দুইজন ডাকাত তাকে ধরে রেখেছেন। এবং একজনের হাতে ধারালো ছুড়ি। নানা নানীকে বললেন, সব দিয়ে দাও। কোনো সমস্যা নেই। আমার অনেক আছে। নানী সমানে কেঁদে চলেছেন।
হঠাত ডাকাতদের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো।
তাঁরা সরলা বিবিকে সাথে করে নিয়ে যাবে। এবার নানা রেগে গেলেন। তার শরীরে দশ জনের শক্তি চলে এলো। নানা রেগেমেগে চার ডাকাত কে মেরে আধামরা করে ফেললেন। তিনজন ডাকাত কোনো রকমে পানিতে লাফ দিয়ে বাঁচল। এবং পালিয়ে গেলো। কিন্তু ডাকাত দলের সর্দার পালাতে পারলো না। নানা তাকে মেরে, আধমরা করে- পুলিশের কাছে দিয়ে দিলেন। যাইহোক, সেই ঘটনা থেকে সরলা বিবি বুঝতে পারলেন ওমর আলি তাকে কতটা ভালোবাসেন। নানা কলকাতায় গেলেন। কলকাতার নানার ভালো লাগে না। এদিকে আমার নানা নানীর বাবা মা অসুস্থ। আসামে তাদের বিরাট ব্যবসা। নানী চিঠি দিলেন নানাকে। নানা লেখাপড়া ছেড়ে ননীর কাছে চলে এলেন। নানী তার বাবা মায়ের ব্যবসায় মন দিলেন।
এবার শুধু হলো সরলা বিবি ও ওমর আলীর আসল জীবন।
নানী ব্যবসায় মন দিলেন। পিতলের থালা বাটি কলস ইত্যাদি তৈরি করা হতো। নানী আসামে গিয়ে ব্যবসা সামাল দিতে লাগলেন। ব্যবসা বাড়তে শুরু করলো। কাপডের ব্যবসা শুরু করলেন। হু হু করে টাকা আসতে শুরু করলো। নানা সারাদিন নানির সাথেই থাকতেন। তবে ব্যবসা একা নানীই দেখাশোনা করতেন। নানা যেখানেই যেতেন তার সাথে থাকতো রেডিও। ফুটবল খেলা নানান খুব পছন্দ। স্টেডিয়ামে টিকিট করে নানা খেলা দেখতেন। সময়টা তখন ১৯৬৫ সাল। ভারত সরকার আসাম থেকে মুসলিমদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন। চলমান ব্যবসা রেখে নানা নানী জীবন বাঁচিয়ে বিক্রমপুর ফিরে এলেন। তখন আমার মায়ের বয়স দশ মাস। আমার নানী বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন। তিনি ঢাকায় কিছু জমি কিনলেন।
১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: আগের যুগের মানুষ গুলো সহজ সরল ছিলো।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৩২
শুভ্রকথা শুভ্রর দিনলিপি বলেছেন: আপনার নানা ভালো মানুষ ছিলেন। কোনো রাখঢাক ছিলোনা। সাচ্চা প্রেমিক।