নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কন্যা আমার- ৫৩

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩



প্রিয় কন্যা আমার-
দেখতে দেখতে পনের রমজান চলে গেলো। গতকাল তোমাকে নিয়ে মাছের বাজারে গিয়েছিলাম। এত এত মাছ দেখে তুমি ভীষন অবাক। কোনো মাছ তুমি ছুঁয়ে দেখলে। মাছের বাজার মানেই নোংরা। স্যাত স্যাতে। বাজে গন্ধ। তবু তোমাকে নিয়ে গেলাম। তুমি নিজ চোখে সব দেখলে। কেউ কেউ মাছ কিনে বাজার থেকে কাটিয়ে নিচ্ছে, তোমাকে সেটাও দেখালাম। আমি জানি না এত ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কোনো বাবা মাছের বাজারে যায় কিনা। তোমার ছবি তুলে রেখেছি। তুমি বড় হয়ে দেখবে। আমি বেঁচে থাকতেই তোমাকে যতটুকু পারি ঘুরিয়ে দেখাব। হোক সেটা মাছের বাজার, অথবা পাহাড় বা সমুদ্র। ফারাজা তোমার বাপ মানুষটা ভালো। সহজ সরল। মানবিক ও হৃদয়বান। তুমি তোমার বাবার কথা শুনো। মানো। তাতে তোমার মঙ্গল হবে।

আজ তোমাকে এবং পরীকে নিয়ে গিয়েছিলাম মেলাতে।
বাসার কাছেই ঈদ উপলক্ষ্যে মেলা বসেছে। একদম গ্রামের দেশের মেলার মতো। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য অনেক রকম ব্যবস্থা আছে। পরী তোমাকে কোলে নিয়ে দোলনায় বসেছে। আমি কিছুটা ভয়ে ছিলাম, পরী যদি তোমাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে তুমি চলন্ত দোলনা থেকে ছিটকে পড়ে যাবে। এবং প্রচন্ড ব্যথা পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমার বোন তোমাকে ছেড়ে দেয়নি। পরীর বয়সও তো বেশি। এরপর তোমাদের উঠিয়েছি আরেকটা রাইডে। সেটার নাম আমি জানি না। পানির উপর একটা বিশাল বেলুনের মতো। বেলুনের ভেতর তুমি আর তোমার বোন। মেলা চলবে ঈদ পর্যন্ত। কাজেই আরো ২/৩ বার আমরা নিশ্চয়ই যাবো। পরী বাইরে যেতে চায় না। অন্যদিকে তুমি ঘরে থাকতে চাও না। বাইরে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ দকরো।

প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম-
দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে তুমি কোনো ঝামেলা করো না। খুব আগ্রহ নিয়ে নিজে নিজে দাঁত ব্রাশ করো। একদম বড়দের মতো আয়নায় তাকিয়ে দাঁত ব্রাশ করো। এই দৃশ্যটা দেখে আমি খুব আনন্দ পাই। নখ কাটতেও তোমার অনেক আগ্রহ। তোমার নখ বড় হলে আমি কেটে দেই। তখন তুমি কোনো ঝামেলা করো না। তোমার নানা তোমার জন্য ঈদ উপলক্ষ্যে বিকাশ করে টাকা পাঠিয়েছেন। অনেক টাকা। এদিকে আমার ভাই এবং তোমার দাদী তোমার জন্য জামা কিনেছে, জুতো কিনে দিয়েছেন। এবার তোমার ঈদের অনেক গুলো জামা হয়েছে। আমি যখন ছোট ছিলাম এতে এত জামা জুতো পেতাম না। তুমি ভাগ্যবতী কন্যা। আমাকে শুধু দিতো আমার বাবা। আর তোমাকে সবাই দিচ্ছে। নানা বাড়ি, দাদা বাড়ির সবার কাছ থেকেই তুমি পাচ্ছো। তোমার চাচা রাকীব তোমাকে ইন্ডিয়া থেকে ইদের জামা এনে দিয়েছে।

প্রিয় কন্যা- জাপান দেশটা আমার ভালো লাগে।
জাপানের বেশির ভাগ লোক সৎ। দূর্নীতিবাজ নেই বললেই চলে। ঘনঘন বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে না। ছাত্র ছাত্রীরা সহজেই পার্ট টাইম কাজ পেয়ে যায়। ওদের দেশে নদী দুষন হয় না। রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। সবাই নিয়মকানুন মেনে চলে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জাপানে সবাই সবাইকে সম্মান করে। কে নাপিত, কে মাছ বিক্রেতা আর কেউ সবজি বিক্রেতা সেটা নিয়ে ওরা মাথায় ঘামায় না। জাপানে কোনো পুলিশ ঘুষ নেয় না। যারা গাড়ি চালায় তাঁরা হর্ন বাজায় না। প্রয়োজন পড়ে না। অত্যন্ত বিনয়ী একটা জাতি। জাপানে নারী নির্যাতন হয় না। ধর্ষনের কোনো ঘটনা ঘটে না। গড়ে জাপানীরা টানা ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা কাজ করে। ইচ্ছা আছে তোমাকে নিয়ে জাপান বেড়াতে যাবো। নিজের চোখে সব দেখে আসবো। সবচেয়ে ভালো হতো এই দেশে তোমার জন্ম হলে।

ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা)-
তোমার মা আমার কাঁধে দোষ চাপিয়ে দিতে খুব পছন্দ করে। সেদিন রাতে তোমার হঠাত জ্বর এলো। অনেক জ্বর। এখন তোমার মা বলছে, জ্বর নাকি আমার কারনে এসেছে। আমি তোমাকে নিয়ে মেলায় গিয়েছি। তুমি চরকিতে উঠে 'ভয়' পেয়েছো। সেই 'ভয়' থেকে তোমার জ্বর এসেছে। অথচ চরকিতে উঠে তুমি ভয় পাওনি। তুমি আনন্দ পেয়েছো। খুব হেসেছো। আমি তোমার মার কথা শুনে অবাক! রাত তখন সাড়ে তিনটা। তোমার মার কথা শুনে আমার ক্ষুব রাগ হলো। কিন্তু আমি কিছু বললাম না। চুপ করে থাকলাম। তাতে তোমার মার ধারনা হলো- যেহেতু চুপ করে আছে, তাই তার ধারনাই সঠিক। অথচ আমি ভদ্র মানুষ। বিনয়ী মানুষ। রাত সাড়ে তিনটায় হাউকাউ করা বুদ্ধিমান মানুষের কাজ না। আমার বিনয়ের কারনে আমি দোষী হয়ে গেলাম।

প্রিয় কন্যা আমার-
তোমাকে আমি স্পষ্ট বলতে চাই- তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। ভালো রেজাল্ট করবে। ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করবে। এই পড়াশোনাই তোমার ভবিষ্যৎ গড়ে দিবে। নিজেকে 'যোগ্য' ও 'দক্ষ' করে গড়ে তুলবে। নিজের অবস্থান মজবুত করবে। নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করবে। দুনিয়াতে তুমি কারো উপর ভরসা করবে না। ভরসা করবে শুধু নিজের উপর। যা করার তোমাকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে করে দিবে না। লেখাপড়া শেষ করে তোমাকে যেন বসে থাকতে না হয়। ভালো চাকরী বা বিজনেস করবে। প্রচুর টাকা ইনকাম করবে। আরাম আয়েশ করবে, বিলাসিতা করবে। নিজের স্বপ্ন গুলো সত্যি করবে। এরপর সমাজের জন্য কিছু করবে।
অসংখ্য অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে তুমি দাঁড়াবে।

দরিদ্র পিতা মাতার সন্তানকে স্কুলে ভরতি করিয়ে দেবে। তাদের লেখাপড়ার খরচ দেবে। অসুস্থদের চিকিৎসা করাবে। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। একটা লাইব্রেরী করবে। যেন সেখানে অনেক মানুষ আরাম করে বসে বই পড়তে পারে। তুমি যখন নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলবে, তখন কেউ তোমাকে নিয়ে উপহাস করতে পারবে না। এমনকি তখন তোমাকে অগা বগা জগরা কিছু বলতে তো দূরী কথা, তোমার ব্যাক্তিত্বের সামনে দাঁড়াতে সাহস পাবে না। এজন্য সবার আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো। নিজের পথ নিজে তৈরি করে নাও। সামনে এগিয়ে যাও। লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করো, তারপর শুধু ঘর সংসার করো, সেটা আমি চাই না। তোমাকে অনেক বড় বড় কাজ করতে হবে। মাথায় রেখেও তুমি আমার কন্যা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৫৬

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:০৯

কামাল১৮ বলেছেন: কন্যাকে নিয়ে ভিড়িওগুলি দেখলাম।আমি যে দেখেছি এটা কি বোঝার কোন উপায় আছে।আপনার কামনা গুলো ভালো।

১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভিডিও কে কে দেখলো সেটার বুঝার উপায় নাই।
তবে আপনি যদি কমেন্ট করেন তাহলে বুঝতে পারবো।

৩| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ২:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: কন্যাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সেগুলোর কথা পত্রাকারে লিখে রাখছেন- আপনার কন্যা নিশ্চয়ই বড় হয়ে একদিন এগুলো পড়বে আর আনন্দিত হবে। সেই সাথে দিয়ে যাচ্ছেন অনেক উপদেশ, যেগুলো ঠিকমত পালন করলে সাফল্য অর্জনে সহায়ক হবে। কন্যার প্রতি পিতার এ অকৃত্রিম ভালবাসা চির অম্লান থাকুক!

২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধ্যেয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.