নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাঙ শালিক

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৫৩


ছবিঃ বিবিসি।

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!


আটলান্টিক মহাসাগর।
এই সাগরে মাছ ধরেন কবি জীবনানন্দ দাশ। তার ছোট একটা বোট আছে। মাঝে মাঝে মাছ বা অন্যান্য খাদ্রসামগ্রী নিয়ে যান আশেপাশের এলাকায়। মাছ ধরা অনেক কষ্টের কাজ। খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়াতে কষ্ট কম। সে একা মানুষ। বেশ চলে যায় তার। একসময় জীবনানন্দ অন্যের বোটে কাজ করতেন। এখন তার নিজের একটা বোট হয়েছে। সে তার বোটের নাম দিয়েছে- 'গাঙ শালিক'। এই বিশাল মহাসাগর দেখে দেখে জীবনানন্দ অনেক কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তার সমস্যা হলো দীর্ঘদিন সাগরে থাকলে হ্যালুসিনেশন হয়। যারা সমুদ্রে মাসের পর মাস থাকেন তাদের প্রত্যকের একসময় হ্যালুসিনেশন হয়। জীবনানন্দ গভীর রাতে জাহাজের ছাদে বসে কবিতা লিখেন-জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার-/ তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার! জীবনানন্দের ধারনা তার হ্যালুসিনেশন না হলে সে কবিতা লিখতে পারতো না। নইলে তার মদ খেতে হতো।

সুরঞ্জনার বাবা মা মারা যায় ছোটবেলাতে।
তারপর থেকে সে জাহাজে কাজ করে জীবনযাপন করছে। এমনকি সে ছোট ছোট বোট গুলো চালাতেও জানে। তবে সে এখনও পুরোপুরি সারেং হয়ে উঠতে পারেনি। একবার সে আটলান্টিক পারি দিয়ে ভারত মহাসাগরেও গিয়েছিলো। মূলত সুরঞ্জনা জাহাজে রান্নার কাজ করে। এভাবেই একদিন আটলান্টিকের পাড়ে দেখা হয়ে যায়- জীবনানন্দের সাথে। খুব অল্প সময়ে দুজনের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এক সন্ধ্যায় জীবনানন্দ তাকে দাওয়াত করে তার বোটে। সুরঞ্জনা খুব সেজে দাওয়াতে অংশ গ্রহন করে। সুরঞ্জনাকে দেখে জীবনানন্দ বলে উঠেন- ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে;/ সময়ের এই স্থির এক দিক,/ তবু স্থিরতর নয়; কবিতা শুনে সুরঞ্জনা মুগ্ধ। কারন সে কবিতা অনেক ভালোবাসে। এমনকি তার গোপন একটা ইচ্ছা সে একজন কবিকে বিয়ে করবে।

জীবনানন্দ বলল, তুমি আমার সাথেই থাকো।
আমার ইনকাম ভালো। আমার জীবন সহজ সরল। জটিলতা কুটিলতা মুক্ত। তুমি পাশে থাকলে আমি মহৎ সব কবিতা লিখতে পারবো। সুরঞ্জনা রাজী হলো। বলল, কিন্তু আমাকে কখনও মাছ মাংস খেতে বলবে না। আমি নিরামিষভোজী। একদিন ফিয়াট অঞ্চলে জীবনানন্দ আর সুরঞ্জনা বেড়াতে যায়। সেদিন তাদের সাথে দেখা হয় ধনী বনিক এন্ড্রুর সাথে। এন্ড্রু বলে আমার কিছু মাল আছে। এগুলো জাপান পৌঁছে দিতে হবে। জীবনানন্দ রাজী হয়। এন্ড্রু মানুষ ভালো। লেনদেনে ঘাপলা করে না। সুরঞ্জনা বলে আমার জাপান দেশটা দেখার খুব শখ। এই সুযোগে জাপান দেশটা দেখে নিবো। জীবনানন্দ বলে উঠে- আমি ঝ'রে যাবো - তবু জীবন অগাধ/ তোমারে রাখিবে ধ'রে সেদিন পৃথিবীর 'পরে,/- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে। কবিতার দুটো লাইন সুরঞ্জনাকে মুগ্ধ করে।


পরের দিন আটলান্টিক থেকে রওনা দেয়-
বিশাল সাগর আটলান্টিক। জীবনানন্দ এই মহাসাগরেকে খুব ভালো করেই বুঝে। ছোটবেলা থেকেই সে এই সাগরে বোট চালাচ্ছে। সে জানে ১৯১২ সালে টাইটানিক নামে এক বিশাল জাহাজ ঢুবে গিয়েছিলো। অনেক লোক সেদিন মারা গিয়েছিলো। জীবনানন্দের বোট চলছে। বিশাল সমুদ্র। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। আর কি বাতাস। মাথার উপরে স্বচ্ছ নীল আকাশ। পাশে বসে আছে সূরঞ্জনা। বাতাসে তার চুল উড়ছে। তাদের বোটে পর্যাপ্ত খাবার আছে। এভাবে ১৭ দিন পার হয়ে যায়। বোট চলছে তো চলছেই। একদিন জীবনানন্দ বলে, সুরঞ্জনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কি আমায় বিয়ে করবে? সুরঞ্জনা কথার জবাব না দিয়ে জীবনানন্দ কে জড়িয়ে ধরে। মাছরাঙা চ'লে গেছে -- আজ নয় কবেকার কথা;/ তারপর বারবার ফিরে এসে ডানাপালকের উজ্জলতা/ ক্ষয় ক'রে তারপর হয়ে গেছে ক্ষয়। জীবনানন্দ পকেট থেকে একটা আংটি বের করে সুরঞ্জনাকে পড়িয়ে দেয়।

ভাগ্য খারাপ। হঠাত শুরু হলো ঝড়।
জীবনানন্দ সমুদ্র থাকাকালীন বহুবার ঝড় দেখেছে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে আজকের ঝড়টা অন্য রকম হবে। সুরঞ্জনার চোখেমুখে ভয়। জীবনানন্দ বলল- তুমি ভয় পেও না। আমি আছি। তখন গভীর রাত। শুরু হলো ঝড়। মারাত্মক ঝড়। সমুদ্রের পানি একশ' ফিট উপরে উঠতে লাগতো। সেই সাথে বইছে তুফান আর বৃষ্টি। জীবনানন্দের বোট ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পারছে না। জীবনানন্দ বলল, সুরঞ্জনা তুমি কেবিনে যাও। সুরঞ্জনা যেতে চায়নি। জীবনানন্দ তাকে ধমক দিয়ে কেনিনে পাঠায়। ঠিক এমন সময় বিশাল এক ঢেউ এসে জীবনানন্দের বোটে ধাক্কা দেয়। বোটের পাল ছিড়ে যায়। এবং জীবনানন্দ ছিটকে বোটের বাইরে গিয়ে পড়ে। জীবনানন্দ মাথায় আঘাত পায়। এবং সাথে সাথে মৃত্যু। কেবিনের ভিতরে থাকার কারণে সুরঞ্জনা বেঁচে যায়। কিন্তু বেশ আহত হয়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সে অনেক ক্লান্তি ক্ষয় অবিনশ্বর পথে ফিরে/ যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর/ পুরোনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে।

পরের দিন সুরঞ্জনার জ্ঞান ফিরে।
ঝড় কখন থেমেছে সে জানে না। সে কেবিন থেকে বের হয়ে দেখে- জীবনানন্দ কোথাও নেই। পুরো বোট লন্ডভন্ড অবস্থা। জীবনানন্দের বোট সাগরে ভাসছে। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে আছে। সুরঞ্জনা কাঁদে। খুব কাঁদে। এভাবে আরো ১১ দিন পার হলো। বোট ভেসেই চলেছে। কোনো পার দেখা যায় না। সামান্য কিছু খাবার ছিলো সে খাবার খেয়ে বেঁচে আছে সুরঞ্জনা। টানা ২৮ দিন সমুদ্রে থাকার কারনে সুরঞ্জনার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সে দেখে জীবনানন্দ মারা যায় নি। বোটেই আছে। জীবননান্দ বোট চালাচ্ছে। আর বলছে, আর তিন দিন পর আমরা জাপান পৌঁছে যাবো। সেখানে গিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। জীবনানন্দ নরম কোমল গলায় উচ্চারন করে- তবু এই পৃথিবীর সব আলো একদিন নিভে গেলে পরে,/ পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে।

(প্রথম পর্ব সমাপ্ত।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.