নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কখনো কি খাবারের সামনে বসে কেঁদে ফেলেছেন?

২৭ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩


ছবিঃ আমার তোলা।

তখন আমার বয়স ১০ বছর হবে।
ছোটবেলা থেকেই আমার প্রতিবেলায় ভালো ভালো খাবার লাগে। কোনো কারনে বাসায় আমার পছন্দ মতো খাবার রান্না করা না হলে আমি সেই খাবার খাই না। তখন মা আমাকে টাকা দেয়, আমি রেস্টুরেন্টে বসে পছন্দের খাবার খাই। এই অভ্যাস টা আমার আজও রয়ে গেছে। আমার পছন্দ গরুর মাংস। তবে রান্না ভালো হতে হবে। নইলে আমি সে খাবার খাবো না। খাবার নিয়ে আমার অনেক বায়নাক্কা আছে। কোনো খাবার সামনে পেলেই হামহাম করে খেয়ে ফেলব তা না। খাবার আমার পছন্দ হতে হবে। নইলে সে খাবার আমি ছুঁয়েও দেখবো না।

আমার দাদাকে দেখতাম প্রতি বেলায় সাত পদ সামনে নিয়ে খেতে বসতেন।
সাত পদের কম হলে দাদাজান চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাথায় তুলতেন। হাতের কাছে যা পেতেন ভেঙ্গে ফেলতেন। দাদার অনেক রাগ ছিলো। তিনি সব সময় জমিদারি স্টাইলে চলতেন। আমৃত্যু জমিদারগিরিই করে গেছেন। অথচ আমার দাদা ৩৫ বছর বয়সে হঠাত অন্ধ হয়ে যান। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার রাগ জিদ আরো বেড়ে যায়। এজন্য আমার দাদীকে অনেক যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে। অন্ধ হয়ে যাবার পর দাদা ৩৫ বছর বেঁচে চিলেন। দাদা খেতে বসতেন খুব সুন্দর করে। বিশাল এক থালায় অল্প কিছু পরিমান ভাত দেওয়া হতো। আর সেই ভাতের চারপাশে গোল করে সাত বাটিতে সাত পদের তরকারী। দাদা খেতে বসার আগে গুনে দেখতেন সাত পদ দেওয়া হয়েছি কিনা।

ছোটবেলায় আমি সারদিন খেলা করতাম।
ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতাম। আমাদের বাসায় এক ভাড়াটিয়া ছিলেন। তার নাম বিমল। তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। ঈদের পরের দিনের ঘটনা। তিনি তার গ্রামের বাড়ি যাবেন। আমি বললাম, আমিও যাবো। আমাকে সাথে নিন। কিন্তু বিমল কাকা আমাকে তার সাথে নিতে চাচ্ছেন না। অথচ তার ছেলেকে নিয়ে যাবেন। তার ছেলে বয়সে আমার চেয়ে ৪ বছরের ছোট। বিমল কাকার স্ত্রী বিমল কাকা কে ছেড়ে চলে গেছেন। কেন ছেড়ে গেছেন সেটা আমি জানি না। বা জানার চেষ্টা করিনি। তবে এখন আমি জানি কেন ছেড়ে গেছেন। বিমল কাকা মানুষটা ভালো ছিলেন।

আমি প্রায় জোর করেই বিমল কাকার সাথে তার গ্রামে রওনা দেই।
গ্রাম ঢাকার কাছেই। সোঁনার গা। সেই সোনার গা যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হলো। বাস থেকে নামার পর বিমল কাকা রিকশা নেয়নি। এদিকে হাঁটতে হাঁটতে আমি শেষ। এর মধ্যে কড়া রোদ। বিমল কাকার ছেলে ছোট। তাই কাকা তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। বিমল কাকারও হাঁটতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। পথ আর ফুরায় না। এদিকে আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ক্ষুধা আমি সহ্য করতে পারি না। আমাদের বংশের কেউ ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। বাপ চাচা আর ফুপুদের দেখেছি ক্ষুধা পেলেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। মনে মনে ভাবছি বাসায় থাকলে কত কিছু খেয়ে নিতাম।

যাহোক, বিমল কাকার গ্রামে বাড়ি এসে পৌছাই।
গ্রামের বাড়ি দেখে বুঝলাম- বিমল কাকা অনেক দরিদ্র। গ্রামে তার মা একা থাকেন। ছোট একটা ঘর। সেই ঘরের করুণ দশা। ছোট একটা উঠানে খেতে বসলাম। আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। খাবার দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো। খুদের চালের যাউ ভাত। সাথে ঢেঁড়স ভরতা। আর কিচ্ছু নেই। আমার জীবনে আমি যাউ ভাত খাই নাই। ঢেঁড়সও খাই নাই। অনেকখানি পথ হেটেছি। দারুন ক্ষুধা পেয়েছে। অথচ যাউ ভাত আর ঢেড়স আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। খাবার সামনে নিয়ে বসে আমি কাদছি। জীবনে একবারই খাবার সামনে নিয়ে বসে কেঁদে দিয়েছি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩৪

কামাল১৮ বলেছেন: ৩৫ বছর চক্ষু ছিলো ৩৫ বছর অন্ধ ছিলো।কাকতালিয় ঘটনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.