নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাকিম অথবা রহমানের গল্প

০২ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:৫৩

ছবিঃ জি নিউজ।

চারু মজুমদার একটি নাম।
একজন গ্রেট বিল্পবী। একজন গ্রেট মানুষ। তাঁরা তুলনা হয় না। মানুষটার কোনো লোভ ছিলো না। তিনি মনে করতেন আমাদের আশেপাশের সকলকে নিয়ে আমাদের ভালো থাকতে হবে। কমরেড চারু নিজেকে নিয়ে ভাবতেন না। তার ভাবনা ছিলো সমাজের সব শ্রেনীর জন্য। এই সমাজে গরীব মানুষদের কথা কেউ ভাবে না। দরিদ্রদের সুযোগ সুবিধার কথাও কেউ ভাবে না। রাজনীতিবিদদের আছে শুধু বড় বড় কথা। যা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।

চীনের ছিলো- মাও সে তুং, রাশিয়ার ছিলো- লেনিন আর আমাদের ছিলেন- চারু মজুমদার।
তাঁরা একটা সুস্থ ও সুন্দর ও বৈষম্যহীন, শোষন মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছলেন। কিন্তু তাদের অন্যায় ভাবে থামিয়ে দেওয়ান হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে। যাইহোক, আজ আমি গ্রেট চারু মজুমদার কে নিয়ে লিখব না। আজ লিখব আমাদের গ্রামের একটি সহজ সরল গল্প। হয়তো ভাবছেন তাহলে লেখাটি বিল্পবী চারু মজুমদার কে দিয়ে শুরু করলাম কেন?

১৯৭৩ সালের ঘটনা।
দুই বছর আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের গ্রামের নাম কামারগাও। এটা বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানায়। তখন আমার জন্ম হয়নি। এই গল্প আমি শুনেছি আমার দাদা দাদীর কাছ থেকে। তো গল্প শুরু করা যাক। তার আগে বলে নিই দুনিয়াতে অনেক অবাস্তব ঘটনা ঘটে। যার ব্যখ্যা পাওয়া যায় না। এটা সেরকমই একটা গল্প। তার আগে বলে নিই ১৯৭৩ সালে আমাদের গ্রামটা কেমন ছিলো। আমাদের গ্রামটা ছিলো পুরো সবুজ। চারিদকে শুধু গাছ আর গাছ। পাকা রাস্তা নেই বললেই চলে। প্রতিটা বাড়িতে পুকুর ছিলো। পুকুরে মাছ ছিলো। বাড়িতে মেহমান আসলেই পুকুরে জাল ফেলা হতো। জালে উঠে আসতো নানান রকম মাছ।

কামারগাও গ্রামের পাস দিয়ে বসে গিয়েছে নদী।
গ্রেট পদ্মা নদী। বিশাল নদী। ঢাকা যেতে হলে পদ্মা দিয়েই যেতে হয় ইঞ্জিনওলা নৌকায় করে। আলামিন বাজার বেশ জমজমাট। লোকজন আলামিন বাজার থেকে বাজার করে। সপ্তাহে একদিন এ বাজারে হাঁট বসে। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। সন্ধ্যার পর লোকজন ঘর থেকে খুব একটা বের হয় না। সেই সময় নানান রকম জটিলতা কুটিলতা গ্রামে প্রবেশ করেনি।

আমার দাদা ছিলেন গ্রামের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে একজন।
আমার দাদার নাম মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন দাদাকে ডাকতেন নওসা মিয়াঁ বলে। কারন দাদা খুব বেশ বিলাসিতা করতেন। দুই একটা উদাহরণ দেই। দাদা কলকাতা থেকে তার জামা কাপড় আয়রন করে আনতেন। পান, জর্দা, তাল মিসরি ইত্যাদি জিনিসপত্র কলকাতা থেকে আনাতেন। গ্রামের কোনো সমস্যা হলে লোকজন দাদার কাছে আসতেন। দাদা সমাধান দিতেন। আমার দাদার পাসপোর্টে লেখা ছিলো ল্যান্ড লর্ড।

আমাদের গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন হাকিম নামে এক লোক।
তাঁরা এক ছেলে। ছোট এক টুকরো জমিও আছে তার। আছে একটা পুকুর। এবং দুটা গাই গরু। নিজের জমি নিজে চাষ করে হাকিম। সুন্দর চলছিলো হাকিমের পরিবার। ছেলেকে স্কুলে ভরতি করিয়ে দিয়েছে। হাকিমের স্ত্রী দিলারা বেশ কর্মঠ মহিলা। বাড়ির উঠানে নানান রকম সবজি চাষ করে। গরুর দুধ বিক্রি করে। দুধে পানি মেশায় না। লোকজন বাড়ি এসে দুধ নিয়ে যায়। তাদের সুখের সংসার।

একদিন হাকিম শহরে যায়। এবং ফিরে আসে না।
এক দূর্ঘটনায় সে মারা যায়। হাকিমের সংসারে নেমে আসে শোকের ছায়া। দিলারা উঠানে গড়াগড়ি করে কেঁদেছে। তীব্র শোকও একসময় হালকা হয়ে আসে। গ্রামের লোকজন হাকিমকে প্রায় ভুলেই গেছে। তাছাড়া হাকিম মারা গেছে দুই বছর পার হয়ে গেছে। হাকিমের স্ত্রী অনেক পরিশ্রম করে সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। ছেলেকে স্কুলে পড়াচ্ছেন। সে পড়াশোনায় ভালো।

একদিন গ্রামের মানুষ দেখলো-
একলোক ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে। লোকটা গ্রামের মানুষের খুব চেনা চেনা লাগছে। সমস্ত গ্রামের মানুষ লোকটাকে দেখে ভীষন চমকে গেলো। লোকটা আর কেউ নয়, হাকিম। কিন্তু হাকিম তো মারা গেছে দুই বছর আগে। হাকিম তার বাড়িতে গেলো। স্ত্রীকে বলল তাড়াতাড়ি খাবার দাও। অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাকিমের স্ত্রী অবাক। একদম তার স্বামীর মতো দেখতে। হাটাচলা, এমনকি গলার স্বর পর্যন্ত। মৃত মানুষ কি ফিরে আসে? এটা কিভাবে সম্ভব?

গ্রামের লোকজন হাকিমকে ধরলো-
বলল, সত্যি করে বলো তুমি কে? হাকিম বেশ অবাক! হাকিম বলল, আমি হাকিম। এটা আমার গ্রাম। আমার স্ত্রী দিলারা। এই গ্রামের সবাইকে আমি চিনি জানি। জন্মের পর থেকেই তো সবাইকে দেখছি। একে একে হাকিম গ্রামের সকলের নাম বলল। গ্রামে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলল। গ্রামের লোকজন বলল, কিন্তু হাকিম তো মারা গেছে। এই কথা শুনে হাকিম ভীষন অবাক হয়। হাকিম তখন তার পোষা কুকুর লালিকে ডাকে। লালি হাকিমের কাছে এসে পায়ের কাছে বসে।

হাকিম বলল, যেহেতু আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করছেন না।
এমনকি আমার স্ত্রীও আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আমার ছেলে পর্যন্ত আমার কাছে আসে না। এবং গ্রামের কেউ আমাকে চিনতে পারছে না। মেনে নিতে পারছে না। তাই এখন আপনারা যা বলবেন, আমি সেটাই মেনে নিবো। যদি বলেন এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে আমি যাবো। বলেই হাকিম কাঁদতে থাকে। বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা গভীর কষ্টের কান্না।

হাকিম থাকবে নাকি চলে যাবে- এই আলোচনা চলছিলো-
এমন সময় এক মহিলা এসে হাজির। তার সাথে এক ছেলে। মহিলা এসে হাকিমকে দেখিয়ে বলল- এই লোক তার স্বামী। স্বামীর নাম রহমান। দুদিন ধরে তার স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। স্বামীকে খুঁজতে খুজতে সে এই গ্রামে এসেছে। হাকিম মহিলার দিকে তাকালো এবং ছেলেটার দিকে তাকালো। হাকিম বলল, আমি এই গ্রামে কেমন করে এলাম? সে তার স্ত্রী ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষন পর রহমান তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে চলে গেলো।
তাদের চলে যাওয়া দেখলো- দিলারা ও তার ছেলে। দিলারা ও ছেলেটা হাকিমের চলে যাওয়া দেখলো। ছেলেটা মনে মনে বলল- এটা অবশ্যই তার বাবা হাকিম। এই লোক রহমান হতে পারে না। কিন্তু রহস্যটা কোথায়? এই রহস্য কে তৈরি করলো? কি তার ইচ্ছা? হাকিম তো অতীতের কথা সব বলে দিলো। এরকম কথাও বলেছে, যা হাকিম ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বলা সম্ভবও নয়।

(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল।)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২৩ সকাল ৮:৩৫

কামাল১৮ বলেছেন: এটা যদি গল্প হয় তা হলে বলতে হয় আপনি হুমায়ূনের যোগ্য শিষ্য।আর যদি সত্যি হয় তা হলে ঝটিল সমস্যা।আরযদি বাস্তব হয় তবে অবস্যই সমাধান আছে।সিজোফ্রেনিয়ার অনেক গুলি শাখা আছে তার একটার মাঝে পড়বে।

০৩ রা মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ এটা অবশ্যই গল্প।
তবে গল্প হলেও বাস্তবের কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করেছি।

আপনি কি বিশ্বাস করেন না, দুন্যাতে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না।

২| ০৩ রা মে, ২০২৩ সকাল ৮:৫৪

কামাল১৮ বলেছেন: চারু বাবুর বেশ কিছু লেখা আমি পড়েছি ৬৯/৭০ এর দিকে।আমার দৃষ্টিতে তাদের কিছু ভুল মনে হয়েছে তাদের ব্যর্থতার জন্য।প্রথম মাও সে তুং কে হাইলাইট করা।৬২ সালের যুদ্ধের পর ভারতিয়রা চীনকে তাদের শত্রু মনে করতো।তাছাড়া অন্যদেশের নেতা তাদের নেতা হতে পারে না।আদর্শের নেতা হতে পারে।এই জন্য তাকে জাতীয় ভাবে তুলে ধরা ঠিক না।
এতো বড় একটা দেশে চোট্ট একটা প্রদেশে বিপ্লব হওয়া সম্ভব না।

০৩ রা মে, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: চারু বাবুদের চিন্তা ভাবনা ভালো ছিলো। কিন্তু তাঁরা যে পথ বেছে নিয়েছেন, সেটা সঠিক পথ ছিলো না।

৩| ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ৮:০৮

কামাল১৮ বলেছেন: এই পথটা ছিলো রাশিয়া এবং চীনের দেখানো পথ।এ ছাড়া অন্য কোন পথ জানা ছিলো না বা এখনো নাই।নতুন পথ বলছে ইউরোপ।যেটা ইউরোপের বাইরে কোথাও বাস্তবায়ন হয় নাই।
বাংলাদেশ হাজার বছর চেষ্টা করলেও দারিদ্রমুক্ত হতে পারবে না।একমাত্র সম্ভব সম্পদের সুষম বন্টন।যেটা করতে পারে এক মাত্র কোন বিপ্লবী সরকার।সেটা আবার ইরানের মতো ধর্মীয় বিপ্লব না।

০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১০:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: এখনও কিন্তু বহু নকশাল আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.