নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৭৭

১০ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৩৩

ছবিঃ আমার তোলা।

একজন দরিদ্র মা আজ আমাকে ভাত খাইয়েছেন।
ঘটনাটা খুলেই বলি- আমি কাটাবন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। সময় দুপুর দুইটা। চারিদিকে কড়া রোদ। চামড়া যেন পুড়ে যায়। এই রোদের মধ্যে- এক মহিলা তার ৩/৪ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো। মহিলা আমাকে বলল, ভাই আমার ছেলেটার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। ছেলেটাকে একটা রুটি-কলা কিনে দেন। আমি মহিলার কথা শুনে খুব লজ্জা পেলাম। আমার কাছে কোনো টাকা নেই। পকেট একেবারে ফাঁকা। গত তিন দিন ধরে আমার কাছে কোনো টাকা নেই। এক কাপ চা আর একটা সিগারেট খাবো, সেই টাকাও আমার কাছে নেই। আমি বাচ্চাটাকে কোলে নিলাম। বেশ মায়াকাড়া চেহারা। বেচারা ক্ষুধায় কাতর।

আমি মহিলাকে বললাম, আপা আমার কাছে কোনো টাকা নেই।
আমি নিজে সকাল থেকে কিছুই খাইনি। আমার কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে আমি অবশ্যই আপনার ছেলেকে এবং আপনাকে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়াতাম। মহিলাটা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মহিলার কষ্টটি বুঝতে পারছি, অনুভব করতে পারছি। নিজের নাড়িছেঁড়া ধন চোখের সামনে না খেয়ে থাকলে কেমন লাগে সেটা আমি জানি। ক্ষুধার্থ মানুষের যন্ত্রনা আমি বুঝি। কারন মাসের বেশির ভাগ দিন আমাকে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। এজন্য ক্ষুধার্থ মানুষ দেখলে আমার ভীষন কষ্ট হয়। ক্ষুধার চেয়ে বড় কষ্ট দুনিয়াতে আর কিছু নাই।

আমি রাস্তার পাশে ফুটপাতে এক দোকানে গিয়ে খুব অনুনয় বিনয় দেখিয়ে বললাম, আমাকে একটা রুটি ও কলা দেন।
আমি আগামীকাল এসে টাকা দিয়ে যাবো। দোকানদার দিলো না। বলল, আপনার মতো এরকম পাবলিক প্রতিদিন আমার দোকানে দুই তিনজন করে আসে। রুটি কলা খায়। এরপর এদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আমি ব্যবসা করি, দানছত্র খুলে বসি নাই। যান রাস্তা মাপেন। আমি দোকানদারকে বললাম, রুটি কলা আমার জন্য না। ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে মা ও বাচ্চা ছেলেটি ওদের জন্য। দোকানদার বিরক্ত হয়ে বলল, যানতো, বিরক্ত করবেন না। অপ্রত্যাশিত অপমান পেলাম। লজ্জায় চোখে আমার পানি চলে এলো। হঠাত আমার মনে হলো- আমি আজীবন দরিদ্র থাকবো না। সময় অবশ্যই বদলে যাবে।

বাচ্চা ও তার মায়ের কাছে ফিরে এলাম।
মায়ের মুখ হাসি হসি। মা বললেন, এই দেখেন ভাই পাঁচশ' টাকা। এই মাত্র এক সাহেব গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতে দিলো। মহিলা আমাকে নিয়ে জোর করে এক রেস্টুরেন্টে গেলো। আমরা তিনজন পেট ভরে ভাত খেলাম। মহিলা বলল, আপনি আমার বাচ্চার জন্য ঐ দোকানে রুটি কলা চাইতে গিয়ে অপমান হয়েছেন, সেটা আমি দেখেছি। আমি হাসলাম। মহিলা বললেন, আপনাকে দেখলে কিন্তু মনে হয় না আপনি গরীব। আপনার বেশভূষা বড়লোকদের মতোন। আমি বললাম, আপা এজন্যই মানুষের ভেতরটা দেখতে হয়। উপরের পোশাক নয়। মহিলা বললেন, আপনে মানুষটা ভালো। আমি দারুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, হ্যাঁ জানি। এও জানি ভালো মানুষদের কপালে দুঃখ থাকে।

মহিলার নাম রাজিয়া। তার ছেলের নাম রিপন।
রিপনের বাবা দেড় বছর আগে ক্যান্সারে ভূগে মারা গেছে। তাঁরা থাকে বসিলার এক বস্তিতে। রাজিয়া আপা আমাকে চা খাওয়ালো। এমনকি একটা বেনসন সিগারেট। বলল, ব্যাটা মানুষ ভাত খাওয়ার পর সিগারেট খায়। রিপনের বাপেও খাইতো। রাজিয়া আপা বলল, ভাই এরকম রোদের মধ্যে ঘুরবেন না। গায়ের রঙ ময়লা করে ফেলেছেন। আমি রাজিয়া আপার আন্তরিকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। আমার চোখে প্রায় পানি চলে এসেছে। বোনের ভালোবাসা কেমন হয়- আমি জানি না। আমার কোনো বোন নেই। বিদায় নিয়ে আমি নিউ মার্কেটের দিকে হাঁটা দিলাম। হয়তো কোনো একদিন আবার রাজিয়া আপা ও তার ছেলে রিপনের সাথে দেখা হয়ে যাবে। সেদিন হয়তো আমি ওদের পেট ভরে খাওয়াতে পারবো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২৩ রাত ১২:১৭

কামাল১৮ বলেছেন: মানবিক গল্প।মানবতার জয় হোক।

১১ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি নিজেও একজন মানবিক মানুষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.