নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
গ্রামের মাটির পথ ধরে ছোট ছেলেটা স্কুলে যাচ্ছে। ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। প্যাক কাদায় মাখামাখি অবস্থা। মাথায় কচুপাতা একহাতে ধরা, জামার নিচে বইখাতা অন্য হাতে ধরা। খালি পা। চলছে চলছে। পথ আর শেষ হয় না। পিছল পথ। উঁচু নিচু পথ। কত দূরে স্কুল! আমার ঘরের দেয়ালের পেইন্টিং টা এই রকম। ছবিটার দিকে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। সহজ সরল একটা ছবি।
রবীন্দ্রনাথ যদি ভাষা দিয়ে থাকেন, মাইকেল মধুসূদন দিয়েছেন ঢং বা কাঠামো। তারাশঙ্কর ও মানিক দিয়েছেন বিষয় বস্তু। বিভূতিভূষণ আমাদের বোধকে আরও গভীর করেছেন। ব্যক্তিকে চিনিয়েছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শহীদুল জহির, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শওকত আলী আমাদেরকে ইতিহাসে ফিরিয়েছেন। হাসান আজিজুল হক গভীর থেকে আমাদের জীবনের প্রতিটা বাঁককে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সেলিনা হোসেন আপন অনুভূতি দিয়ে আমাদের নারী সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে এনেছেন এবং হুমায়ূন আহমেদ আমাদের দিয়েছেন- এক আকাশ স্বচ্ছ আনন্দ।
আমার কোনো হাইস্কুল নেই। নেই কলেজ, নেই ইউনিভার্সিটি। আমি কখনও স্কুল কলেজে লেখাপড়া করিনি। বেঁচে যে আছি এটাই বেশি। ছোটবেলাটা কেটেছে আমার অসুস্থতায়। নানান রকম রোগ লেগেই থাকতো। আব্বা বলতো শুধু বেঁচে থাক বাবা। আর কিছু চাই না। সত্যিই আমি বেঁচে গেলাম। কিন্তু লেখাপড়াটা আর হলো না। এদিকে আমার ১৪ বছর হয়ে গেলো। একদিন আব্বা বললেন, লেখাপড়াটা করা দরকার। বিসমিল্লাহ্ বলে স্কুলে ভরতি হয়ে যা। আমি বললাম, ইয়েস। কিন্তু স্কুলে আর ভরতি হতে পারলাম না। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বাঁচি কিনা সন্দেহ। আমার ভাগ্যটাই খারাপ।
এরপর এক শিক্ষক আমাকে বাসায় পড়াতে শুরু করলেন। যত পড়ি তত ভালো লাগে। সারাক্ষণ আমার হাতে বই থাকতো। এদিকে একদিন এক দরবেশ বাবা আমাদের এলাকায় এলেন আজমী শরীফ থেকে। আমার আব্বা তাকে অনুরোধ করে বাসায় নিয়ে এলেন। আব্বা দরবেশ বাবাকে আমার অসুস্থতার কথা বললেব। দরবেশ আমাকে বললেন, হাত মুঠ করো। আমি হাত মুঠ করলাম। দরবেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বিড় বিড় করলেন এবং আমাকে ফুঁ দিলেন। তারপর হাতের মুঠ খুলে দেখলাম- আমাত হাতে একটা ফুল। এই ঘটনার পর থেকে আমার আর কোনোদিন কোনো অসুখ বিসুখ হয়নি। সামান্য জ্বরও আসে নাই। গত বিশ বছরে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি।
এরপর আর স্কুল কলেজে ভরতি হই নাই। এত বড় ছেলেকে কে ভরতি করবে? নিজে নিজেই বাসায় সব রকম বই পড়তে শুরু করলাম। ফিজিক্স, রসায়ন, ইতিহাস, ধর্ম, অর্থনীতি, ভূগোল। কোনো বই বাদ দেই নাই। আমার এক বন্ধু জগন্নাথে পড়তো। মাঝে মাঝে জগন্নাথ কলেজে যেতাম বন্ধুর কাছে। ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন স্যার বললেন, আমার ক্লাসের সামনে একটা ছেলে কেন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে। এসো, ভিতরে এসে বসো। আমিও ওদের সাথে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ক্লাশ কতাম। আমার বোন এক স্যারের বাসায় হিসাব বিজ্ঞান পড়তে যেতো। বোনের সাথে আমিও যেতাম। স্যার আমাকেও পড়াতেন। পড়ালেখার চেয়ে সুন্দর দুনিয়াতে আর কিছু নেই।
আরামবাগের কাছে এক ম্যাডামের বাসায় আমার বন্ধুরা ইংরেজি সাহিত্য পড়তে যেতো। বন্ধুদের সাথে আমিও যেতাম। পড়তাম। খুব ভালো লাগলো। মীরা ম্যাডাম আমাদের উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের- ম্যাকবেথ, হ্যামলেট, ওথেলো, জুলিয়েট সিজার, কিং লিয়ার ইত্যাদি বই পড়িয়েছেন। মীরা ম্যাডাম আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন রবার্ট ফ্রস্ট এর সাথে। কি সুন্দর কবিতা! মীরা ম্যাডাম আমাদের কবিতা শুনাতেন। কবিতা শুনে আমি তো ম্যাডামের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। শুনেছি, ম্যাডাম বর্তমানে আমেরিকা থাকেন। তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই। ম্যাডামের সাথে আমার অনেক খাতির হয়ে গিয়েছিলো। ম্যাডাম আমাকে নুডুলস রান্না করে খাওয়াতো।
২| ২৭ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৪
নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৭
শুভ্রকথা শুভ্রর দিনলিপি বলেছেন: প্রমথ চৌধুরীর 'বই পড়া' প্রবন্ধের একটি বিখ্যাত উক্তি - 'সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত'।