নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার কামাল মামা

১৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৪০


ছবিঃ সমকাল।

আমার মামার একটা গল্প বলি।
আমার মামার নাম কামাল। ছোটখাটো একজন মানুষ। হাসিখুশি মানুষ। কামাল মামা তেরো বছর বয়সে আমার নানীর সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। অনেক খোজ করেও কামাল মামার আর হদিস পাওয়া যায়নি। একসময় নানা, নানী আর আমার মা কামাল মামার ফিরে আশা নিয়ে সন্দিহান। কিন্তু মামা দশ বছর পর ফিরে এলেন। নানী তখন মৃত্যু শয্য্যায়। নানা আগেই মারা গেছেন। মামাকে দেখে নানী আর আমার মা ভীষন অবাক। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ছেলে দশ বছর পর ফিরে এসেছে। পুরো এলাকার মানুষ মামাকে দেখতে এসেছিলো।

মামা বাসায় এসে খুব কান্না করলেন।
তার কাছ থেকে জানা গেলো মামা একটা লঞ্চে কাজ নিয়েছিলেন। লঞ্চে মামা সব রকমের কাজই করতেন। টিকিট কাটতেন, রান্না করতেন, লঞ্চের মেশিন নষ্ট হলে ঠিক করতেন, মাঝে মাঝে লঞ্চ চালাতেন। মামার বয়স এখন ২৩ বছর। মামার গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারাটা দেখতে ভীষন মিষ্টি। বেশ বলশালী শরীর। নানী বললেন, আমি এবার তোকে বিয়ে দিবো। যেন তুই আর পালিয়ে যেতে না পারিস। মামা বললন, নো নেভার। আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি আর এক সপ্তাহ বাংলাদেশে আছি। আমি ডেনমার্ক চলে যাচ্ছি। ঘটনা হলো- কামাল মামার লঞ্চে এক লোকের সাথে খাতির হয়েছে, উনিই মামাকে ডেনমার্ক নিয়ে যাচ্ছেন। লঞ্চে কাজ করে মামা অনেক টাকা জমিয়েছেন।

সত্যি সত্যি মামা ডেনমার্ক চলে গেলেন।
যাওয়ার আগে নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খাওয়ালেন। বাসার সবার জন্য অনেক কেনাকাটা করলেন। এবং বলে গেলেন মামা পাঁচ বছর পর ফিরবেন। এবং বিয়ে করবেন। কিন্তু পাঁচ বছর পরেও মামা ফিরলেন না। এদিকে আমার জন্ম হলো এবং দশ বছর পর মামা ফিরলেন। ততদিনে নানী মারা গেছেন। শুধু বেঁচে আছেন আমার মা। মামা ডেনমার্ক থেকে ফিলেন। জানা গেলো তিনি ডেনমার্কে ভালোবেসে এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সুন্দর সুখের সংসার ছিলো তার। তাঁরা স্ত্রীর নাম ছিলো রোজি। রোজি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। রোজির গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং দুই বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে মারা যায়। রোজির মৃত্যুতে মামার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়।

মামা তিন মাস আমাদের সাথে থাকলেন।
এবং আবার ডেনমার্ক চলে গেলেন। এবার মামা ফিরলেন বিশ বছর পর। মামা একদম বুড়ো হয়ে গেছেন। মাথার সব চুল সাদা। বয়সের চেয়ে মামাকে বেশি বুড়ো মনে হচ্ছে। মামা অনেক মোটা হয়ে গেছেন। চোখে মোটা চশমা। মামা মাকে বললেন, বুজি আমি আর বেশি দিন বাচবো না। আমার সময় শেষের দিকে। মৃত্যুর আগে শেষ বারের মতো তোমাদের দেখতে এলাম। মা মামার কথা শুনে কাঁদে। মামাও কাঁদে। আমি এসব কান্নাকাটির মধ্যে নেই। আমার জীবনে আছে শুধু হাসি আর আনন্দ। আমি মনে করি, মানুষের অল্প কিছু দিনের আয়ু, তাই কান্নাকাটি, ঝগড়া করার দরকার? আমি আমার জীবনটা হেসে খেলে পার করে দিতে চাই।

মামা ডেনমার্ক চলে যাবার আগে আমাকে বললেন,
রাজীব আমার অনেক টাকা। টাকা গুলো দিয়ে আমি ভালো কিছু করতে চাই। কিন্তু যার জন্য করবো তাঁরা যেন কিছু না জানে। এবং মামা শর্ত দিলেন- মসজিদ বানাবেনে না, এতিমখানা বা মাদ্রাসায় টাকা দিবেন না। আমি বললাম, মামা চিন্তা করো না, আমি ব্যবস্থা করছি। বড় একটা পিকআপ ভাড়া করলাম। তাতে পাঁচ হাজার পিছ উন্নত মানের কম্বল নিলাম। গভীর রাতে আমি আর মামা মিলে সারা শহর ঘুরে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মানুষদের উপর দু'টা করে কম্বল দিয়ে দিলাম। সকালে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে নতুন কম্বল দেখে ভীষন অবাক হবে। তাঁরা জানবে না কে তাদের কম্বল দিয়েছে। ধন্যবাদ পর্যন্ত তাঁরা জানাতে পারবে না। তিন দিনে পাঁচ হাজার কম্বল শেষ। অবস্থা দেখে মনে হলো- চারিদিকে এত এত গরীব মানুষ দুই লাখ কম্বল নিলেও কম পরে যাবে।

মামা বললেন, এবার তোর একটা ইচ্ছার কথা বল।
সেটা পূরন করা হবে। আমি বললাম, মামা আমার ইচ্ছা চর এলাকায় যাবো। সেখানে যারা অসুস্থ তাদের আমরা ফ্রি চিকিৎসা করাবো। মামা বললেন, মানে? মামাকে বুঝিয়ে বললাম- যমুনা নদীর কাছে অজুর্না বলে একটা চর আছে। সেই চরে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে বহু লোক অসুস্থ। সবারই কোনো না শারীরিক সমস্যা আছে। আমরা ঢাকা থেকে স্পেশালিস্ট ডাক্তার নিয়ে যাবো। ওষুধ নিয়ে যাবো। এবং বাচ্চাদের জন্য নিবো খাবার। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকা থেকে বিশাল একটা দল গেলো অজুর্না চরে। আমাদের সাথে ঢাকার ২৫ নং ওয়ার্ডের কমিশনারও গেলেন। ডাক্তারদের টিমে চোখের ডাক্তারও আছেন, আবার চর্ম রোগের ডাক্তারও আছেন। সারাদিন চরের অসহায় ও দরিদ্র লোকেরা উন্নত চিকিৎসা পেলো। মামা ঢাকা বাবুর্চি নিয়ে গিয়েছিলেন। দারুন খানাদানাও হয়েছিলো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: মামা গল্প ভালো লাগলো।

১৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭

কামাল১৮ বলেছেন: অনেকটা সত্যজিতের আগন্তুক সিনেমার মতো।তবে সে টাকাটা তার ভাগ্নিকে দিয়ে যায়।

১৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই তো।

৩| ১৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩০

বিষাদ সময় বলেছেন: আমার একমাত্র মামার নামও ছিল কামাল।......

১৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.