নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
বাসে করে মিরপুর যাচ্ছি। মেঘলা আকাশ।
দুই দিন পর ঈদ। রাস্তা বেশ ফাঁকা। খামারবাড়ি থেকে একলোক বাসে উঠলেন। কাজীপাড়া নেমে যাবেন। বয়স্ক লোক। শক্ত সমর্থ চেহারা। পাঞ্জাবী পায়জামা পরা। পাঞ্জাবীতে বেচ লাগানো। বেচে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখা যাচ্ছে। মুখে খোঁচা খোচা দাঁড়ি। আমার ধারনা তার বয়স হবে ৬০ বছর। কন্টাকটর তার কাছে ভাড়া চাইলো। তিনি বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি ভাড়া দেই না। কন্টাকর বলল- আমি জানি, মুক্তিযোদ্ধাদের বাসের কোনো পাস নেই। ট্রেনের আছে। আপনাকে ভাড়া দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা বললেন, পাস আছে। সে অনেক গুলো আইডি কার্ড বের করলেন। বাসের পাস খুঁজছেন হয়তো। শেষমেষ খুঁজে পেলেন না। তিনি কাজীপাড়া নেমে গেলেন। তখন কন্টাকটর বলল, এসব ভন্ডামি এবার বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যান। আমার কথা হচ্ছে- একজন মুক্তিযোদ্ধা দশটা টাকা ভাড়া বাঁচানোর জন্য কেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিবেন? মুক্তিযোদ্ধা কি এতই সস্তা? এজন্য কি তিনি যুদ্ধ করেছেন?
গুলিস্তান এলাকায় একটা টিসিবির গোডাউন আছে।
সেখানে কমমূল্যে তেল, ডাল চিনি ইত্যাদি দেওয়া হতো। সকাল থেকে লম্বা লাইন দেখা যেতো। মুক্তিযোদ্ধারা এসে লাইন ধরতো না। বলতো দেশ স্বাধীন করেছি কি লাইনে দাঁড়ানোর জন্য? তাঁরা লাইনে না দাঁড়িয়েও পরে এসে, আগে জিনিসপত্র নিয়ে যেতো। সত্যি কথা বলতে কি- অনেক মুক্তিযোদ্ধাই অনেক জাগাতে এরকম করে থাকেন। যারা মুক্তিযোদ্ধ করেছেন তাদের বয়স এখন ৬৫ এর উপরে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা বাসে ভাড়া দেয় না, বা কোথাও কাজে গেলে তাদের পাঞ্জাবীতে একটা ছোট বেচ লাগানো থাকে। ব্যাচে বাংলাদেশের মানচিত্র অথবা শেখ মুজিবের ছবি থাকে। হাতে থাকে একটা অফিস ফাইল। এটা দেখিয়ে তাঁরা বুঝাতে চান- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের সাথে ধানাই পানাই করো না। সম্মান করো। সমীহ করো। আমার ধারনা যারা বেচ লাগিয়ে ঘুরে এবং কথায় কথায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেন এবং মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখান তাদের মধ্যে ঘাপলা আছে। একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার এররকম হওয়ার কথা না। কারন সূর্য সন্তানেরা এরকম স্বভাবের হয় না। তাদের তেজ থাকে অন্য রকম।
বাসে এরকম প্রায়'ই দেখা যায়-
মুক্তিযোদ্ধা বলে ভাড়া দিবেন না। কন্টাকটরের সাথে ঝগড়াঝাটি চিল্লাচিল্লি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর হয়ে গেলো। যুদ্ধ করেছেন কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ। এই দেড় লাখের মধ্যে কৃষক আছেন, শ্রমিক আছেন, ছাত্র-শিক্ষক আছেন, দিনমজুর আছেন, চাকরিজীবি আছেন। শেখ মুজিব যুদ্ধ করেননি। তিনি যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে বন্ধী। তাজউদ্দিন আহমেদ যুদ্ধ করেন নি। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করায় ব্যস্ত। অনেক নেতা, কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক যুদ্ধ করেননি। তাঁরা কোনো মতে জান নিয়ে বর্ডার পার হয়েছেন। এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক কবি সাহিত্যিক যুদ্ধ করেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস আর কবিতা লিখেছেন। পাক বাহিনী দেশে গজব অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো। খুন, ধর্ষন, লুটপাট, আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া। কিছুই বাদ রাখেনি। তাদের সহযোগিতা করেছিলো এদেশেরই কিছু কু-সন্তান। তাদের আমরা রাজাকার বলি। দেশে বিদেশে এখনও কিছু রাজাকার আছে। বিচিত্র কারনে তাঁরা বহালতবিয়তে আছে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
পুরো জাতির তাদের সম্মান করতে হবে। শ্রদ্ধা করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। এখন কতজন মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন আমি জানি না। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আছে। আরো কি কি যেন তাঁরা সরকার থেকে পাচ্ছেন। আগামী দশ পনের বছর পর দেশে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন না। পত্রিকায় অনেক সময় নিউজ হয়- অমুক মুক্তিযোদ্ধা রিকশা চালাচ্ছেন। ওমুক মুক্তিযোদ্ধা না খেয়ে আছেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এরকম নিউজ সত্যিই দঃখজনক। এখন পর্যন্ত কোনো সরকার সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করতে পারে নাই। মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন কেন করেছিলেন? তাদের স্বপ্ন কি পূরন হয়েছে? যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বন্দুক জমা দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে গেছেন। এরপর তাদের আর কেউ খোজ খবর নেয় নাই। এই সুযোগে অনেকে যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নিয়েছে।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনতাম।
তার চরিত্র ভালো ছিলো না। তবু আমি তাকে শ্রদ্ধা করতাম, মুক্তিযোদ্ধা বলে। তার কাছে আমি প্রায়ই যেতাম। যুদ্ধের গল্প শোনার জন্য। অথচ উনি যুদ্ধের কথা সঠিক ভাবে বলতে পারতেন না। থতমত খেয়ে যেতেন। শেষে আমি বুঝলাম উনি আসলে মুক্তিযোদ্ধা নন। কিভাবে যেন মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। সরকার থেকে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। দুই বছর আগে তিনি মারা গেলেন। আমার ধারনা যারা নকল মুক্তিযোদ্ধা তারাই দশ টাকা ভাড়া বাঁচানোর জন্য বাসে ঝগড়া করে। পাঞ্জাবীতে বেচ লাগিয়ে রাখেন। গায়ক ফকির আলমগীর মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। উনি সেই খাতিরে অনেকের কাছ থেকে নানান তাল বাহানা করে টাকা নিতেন। একজন আসল মুক্তিযোদ্ধা যতই গরীব হোক, উনি বাসে উঠে দশ টাকা ভাড়া দিয়ে দিবেন। দশ টাকা বাঁচানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা বলে নিজের পরিচয় দিবেন না। বাসের ভাড়া না দেওয়ার জন্যই কি তাঁরা যুদ্ধ করেছেন? এটা কেমন কথা?
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙ্গিয়ে এরকম কথা ঠিক না।
নতুন প্রজন্ম বিষয়টা ভাবে ভাবে নিচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরি হচ্ছে।
২| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১০:৫৪
অধীতি বলেছেন: অধিকাংশই ভুয়া। আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই সার্টিফিকেট পর্যন্ত নেননি তাদের ইগোর কারণে, দশটাকা ভাড়া মাফ তো দূরের কথা।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০০
রাজীব নুর বলেছেন: এজন্য দায়ী সরকার্।
৩| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩০
শেরজা তপন বলেছেন: গায়ক ফকির আলমগীর মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। উনি সেই খাতিরে অনেকের কাছ থেকে নানান তাল বাহানা করে টাকা নিতেন।
~ দেশ নিয়ে আবেগ বিক্রি করে আমন ধান্দাবাজী করেছেন অনেকেই।
ভাল লিখেছেন।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: ধান্দাবাজি আমার ভীষন রকমের অপছন্দ।
৪| ২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ১২:০৭
কামাল১৮ বলেছেন: মন্তব্য করার কিছু নাই।আপনার মতামত শুনলাম।
আমাদের গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা এতটাই গরিব যে,জিয়ার আমলে প্রায় সকলেই দলবেধে পাহাড়ে চলে গেছে।ঐ সময় যারা কলেজে পড়তো তারা ছিলো মুজিব বাহিনী।সে এক বিরাট বড় কাহিনী।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের খোজ খবর নেওয়া দরকার। অথচ এই জাতি অযথাই লাফায়।
৫| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সকাল ৭:১২
রিফাত হোসেন বলেছেন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যেমন আছে তেমনি অসৎ মুক্তিযোদ্ধাও আছে। মুক্তিযুদ্ধ করলেই সৎ থাকবে এটা ভেবে থাকলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। দিনশেষে এরা মানুষ। সবাই অস্ত্র জমাও দেয় নি। অনেকে স্বাধীন পরবর্তী অপরাধেও জড়িয়ে পরে।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: একদম সঠিক বলেছেন।
৬| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১০:১৯
কবীর হুমায়ূন বলেছেন: পড়লাম আপনার অভিজ্ঞতার কথা। বর্তমান সরকারের ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার জন্য অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভার হয়েছে। ভালো লিখেছেন।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। জয় বাংলা।
৭| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৩৭
রানার ব্লগ বলেছেন: ধান্দাবাজ সব ক্ষেত্রেই আছে ।
২৮ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধান্দাবাজ শব্দটাই আমার খুব পছন্দ।
আর ধান্দাবাজদের আমি ঘৃণা করি।
৮| ২৮ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এইযেদুনিয়া বলেছেন: মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার চেয়ে সহজ ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা করা। তাহলেই হইতো।
২৮ শে জুন, ২০২৩ রাত ১০:০২
রাজীব নুর বলেছেন: সরকার সঠিক কাজ গুলো করতে চায় না।
৯| ০২ রা জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
শেখ মুজিব যুদ্ধ করেননি। তিনি যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে বন্ধী। তাজউদ্দিন আহমেদ যুদ্ধ করেন নি। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করায় ব্যস্ত। অনেক নেতা, কবি সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক যুদ্ধ করেননি। তাঁরা কোনো মতে জান নিয়ে বর্ডার পার হয়েছেন। এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক কবি সাহিত্যিক যুদ্ধ করেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস আর কবিতা লিখেছেন।
এই কথাটুকু অনেকেই মনে রাখতে চায় না।
আমার মামা মুক্তিযোদ্ধা, আজপর্যন্ত এই পরিচয়ে কোনো সুবিধা উনি আদায়ের চেষ্টা করেন নি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১০:২৩
শাহ আজিজ বলেছেন: এটাই এখন মুখ্য ব্যাবসা ।