নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
গ্রামের নাম মহেশপুর।
একদম আসল গ্রাম। বড় খাটি গ্রাম। এই গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা নেই। পুরো গ্রামটা সবুজ। বৃষ্টির পরে পুরো গ্রাম হয়ে যায় গাঢ় সবুজ। যেন গাছপালা গুলো হাসছে। গ্রামের মানুষ গুলো সহজ সরল। এই গ্রামের মানুষদের মধ্যে জটিলতা কুটিলতা নেই। এই গ্রামে হতদরিদ্র কেউ নেই। সবারই জমি আছে, গাইগরু আছে। গোয়াল ঘর আছে। হাঁস মূরগী আছে। শহর থেকে লোকজন এসে গরুর দুধ, হাসমূরগীর ডিম ইত্যাদি কিনে নিয়ে যায়। দাম ভালো পাওয়া যায়া। এই গ্রামে রান্না হয় মাটির চুলায়। মাটির চুলার রান্নার স্বাদ বেশি হয়। অবাক হলেও সত্য এ গ্রামে বিদ্যুত নেই। তবে বিনেরপোতা বাজারে বিদ্যুৎ আছে। সেখান থেকেই গ্রামের লোকজন মোবাইল চার্জ করে। প্রাইমারী স্কুলে আছে। আছে একটা কলেজ। সব মিলিয়ে এই মহেশপুর গ্রামখানি শাহেদ জামালের খুব ভালো লেগেছে।
নদীর নাম বেতনা।
সুন্দর একটা নদী। বেতনা নদীর পানি একদম স্বচ্ছ। এতই স্বচ্ছ যে কুমারী মেয়েরা এই নদীর পানি দেখলে দুই হাত দিয়ে আজলা ভরে মুখ ধুয়ে নেয়। নদীতে কত রকমের নৌকা আর লঞ্চ দেখা যায়। তবে স্টিমার দেখা যায় রাতে। দিনের বেলায় কি বেতনা নদীতে স্টিমার চলে না? জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। দিনের চেয়ে রাতেবেলা মাছ বেশি ধরা হয়। শান্ত নদী। তবে ভাঙ্গন এলাকা। গেল বছর সরকার বাঁধ দিয়ে দিয়েছে, এখন নদী ভাঙ্গন বন্ধ হয়েছে। নইলে মহেশপুর গ্রাম আজ পানির নিচে তলিয়ে যেত। রশিদ নামের একলোক বাজার থেকে মাছ কিনে না। সে বরশি দিয়ে বেতনা নদী থেকে মাছ ধরে। রশিদের ভাগ্য ভালো। সে বরশি ফেললেই রুই কাতলা পেয়ে যায়। রশিদ বলে আমার বাড়ির কাছে এত বড় নদী। আমি কেন বাজার থেকে মাছ কিনতে যাবো?
সম্প্রতি শাহেদ জামাল এই বেতনা নদীর কাছে একটা বাড়ি কিনেছে।
ছোট বাড়ি। তবে উঠান আছে। উঠানে বসে বেতনা নদী দেখা যায়। শাহেদ জামালকে মহেশপুর গ্রামের সন্ধান দিয়েছে ড্রাইভার রশিদ। রশিদ দীর্ঘদিন তাদের গাড়ি চালিয়েছে। রশিদের বাড়ি এই মহেশপুর গ্রামে। বাবা মারা যাওয়ার পর শাহেদ জামাল কিছু টাকা পেয়েছে। সেই টাকা দিয়েই সে এখানে নদীর ধারে বাড়ী কিনেছে। বাড়িটা কেনার পর নিজেকে বেশ স্বাধীন মনে হচ্ছে। শহরের কোলাহল থেকে সে এখন মুক্ত। শহরে থেকে থেকে তার জীবন দুষিত হয়ে গিয়েছিলো। নির্মল বাতাস, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বেতনা নদী। আহ! শাহেদ জামালের ইচ্ছা সে বাকি জীবনটা এই বেতনা নদীর পাড়ে কাটিয়ে দেবে। তার জীবন থেকে নীলা চলে গেছে। এই কষ্ট তাকে আমৃত্যু পোহাতে হবে। নীলার কথা মনে হলেই বড় কষ্ট হয়।
মহেশপুর গ্রামের সবাই শাহেদ জামালকে আপন করে নিয়েছে।
মহেশপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টার তাকে বলেছে স্কুলে ছাত্রদের পড়াতে। গ্রামের লোকজন প্রায় সবাই প্রতিদিন শাহেদ জামালের কাছে আসে। গল্প করে। আপাতত রশিদ মিয়ার বাড়ি থেকেই খাবার আসছে। শাহেদ জামাল মানা করেছে, রশিদ বলেছে আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে মানা করবেন না। আপনার বাবার জন্য আজ আমাই বেঁচে আছি। শাহেদ জামাল বলেছে, তাহলে তোমাকে টাকা নিতে হবে। রশিদ বলেছে, টাকার কথা না বলে আমাকে জুতো দিয়ে দুই গালে মারেন। একথার পর আর কিছু বলার থাকে না। মহেশপুর গ্রামে একটা মসজিদ আছে। মসজিদের ইমাম বয়সে তরুন। সে শাহেদের কাছে এসে বলে বিজ্ঞানের গল্প বলুন। ইমাম বলেন, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াসি হাজার মাইল। যদি এর বেশি বা কম হতো তাহলে কি হতো?
দিনের বেলা ভাবনা চিন্তা করার খুব একটা সময় পায় না শাহেদ।
সারাদিন গ্রামের মানুষজন আসতেই থাকে। আর দেখিতে পায় একটা মেয়ে দূর থেকে তাকে দেখছে। যেন কিছু বলতে চায়। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। ডুরে শাড়ি পরা। মাথায় দুটা লম্বা বেনী। রাতের খাওয়া শেষ করে শাহেদ জানালার কাছে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। বড় ভালো লাগে। অন্ধকারে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। প্রতিটা নৌকায় একটা করে হারিকেন জ্বলে। সেই আলোটকু দেখা যায়। নদীর তীরের বাতাস অতি মনোরম। কোথায় যেন পড়েছিলো শাহেদ, নদীর পারের গ্রামগুলোর মানুষ ভালো হয়। কথাটা একদম সত্যি। মহেশপুরের মানুষজন ভালো। এই গ্রাম দুষিত হয়নি। এই গ্রামে কোনো রাজনীতি নেই। হিংসা নেই। এই গ্রামের সবাই সবাইকে চেনে। এই গ্রামে না এলে সে অনেক কিছু জানতে পারতো না। আজ যদি নীলা তার পাশে থাকতো!
নীলা বলেছিলো, তুমি কি কখনও ভোর হওয়া দেখেছ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভোর হওয়া দেখার জন্য অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। তার একটা বোট ছিলো। নৌকায় বসে রবীন্দ্রনাথ ভোর হওয়া দেখতেন। ভোর হওয়া দেখা দারুন ব্যাপার। এটা ছিলো তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। শাহেদ জামাল এখন মন ভরে ভোর হওয়া দেখবে। সে রবীন্দ্রনাথের মতোন করেই ভোর হওয়া দেখবে। নৌকায় করে। ভোরের আকাশ বাতাস মানুষকে পবিত্র করে। মহৎ করে। অজনা বিশ্বের দিকে ধাবিত করে। এখন শাহেদ জামালের হাতে অফুরন্ত সময়। এখন সে মন ভরে দেখবে, মন ভরে ভাববে। কত কিছু আছে দেখার, কত কিছু আছে ভাববার। একটা গ্রাম, একটা নদী। একটা নদীর ধারে বাড়ি শাহেদ জামালকে নতুক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে চনমন হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারছে তার দীর্ঘদিনের এক ঘুয়েম এবার কেটে গেছে।
০১ লা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: খুব অসম্ভব কিছু না।
আমাদের চাঁদগাজী/সোনাগাজী আজও মনে করেন আমেরিকা গিয়ে ভুল করেছেন। গ্রামে থাকা উচিৎ ছিলো। চাষবাস করা উচিৎ ছিলো।
২| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:৪০
বিজন রয় বলেছেন: শাহেদ জামালের এক ঘেয়েমী কেটে গেল।
আমারও।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা---
কোনো একটা বিষয় দীর্ঘদিন চলতে পারে না।
৩| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সোনাগাজীকে আমাদের সোনাগাজী চলে আসতে বলুন।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: একজন মানুষ কত জাগায় যাবেন?
৪| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:১৫
কামাল১৮ বলেছেন: যে গ্রামে শহরের লোক নিয়মিত আসা যাওয়া করে সেই গ্রাম আর ভালো থাকতে পারে না।অশনী সংকেত চলচিত্রে এমন একটা দৃশ্য আছে।শহর থেকে এক লোক আসে গ্রামে।অভাবের সুযোগ নিয়ে সে প্রথম খারাপ করে সন্ধ্যা রায়কে পরে ববিতাকে।অসাধারণ সত্যজিৎ রায়।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের ভালো দিক গুলো খুঁজে বের করতে হবে।
৫| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:০৫
ইসিয়াক বলেছেন: আপনি কি সত্যি সত্যি বেতনা নদী দেখেছেন? চমৎকার শান্ত নদী। মানুষ নদীর দুই পাড় দখল করে নদীটার সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। ২০০০ সালে যশোর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার অন্যতম কারণ ছিল এই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করা।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমি বর্তমানের কথা বলেছি। অতীত নয়।
৬| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:০৭
ইসিয়াক বলেছেন: গ্রামের মানুষগুলো আগের মত আর সহজ সরল নেই। মানুষের মধ্যে আগের মত আন্তরিকতাও আর নেই।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: আছে আছে। দেখার মতো চোখ থাকতে হয় ভাইসাহেব।
৭| ০২ রা জুলাই, ২০২৩ সকাল ১১:৫৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: লেখা ভালো হয়েছে
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসেন ভাই আসেন, বুকে আসেন।
৮| ০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধীরে ধীরে আজ শাহেদ জামালের মোটামুটি সবই হচছে শুধু একটা জিনিষই হলোনা ----------------
নীলা শাহেদ জামালের
এ বড়ই বেদনার।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: নীলা চলে যাওয়াতে ভালো হয়েছে।
মানুষ সব কিছু পেয়ে গেলে বেঁচে থাকার আনন্দ হারিয়ে ফেলে।
৯| ০২ রা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
গ্রামে সবাই সহজ সরল হয় না। বাংলাদেশের কোনো গ্রামেই এমন নেই যেইখানে সবাই সহজ সরল মানুষ। কল্পনার গ্রামে অনেক কিছু সম্ভব। বাস্তব গ্রামের ঘটনা আরেক রকম - এইখানে রহিমুদ্দি, মনির হোসেন মনি রাজাকার, ধুরন্দর বাবু মেম্বারের মতো লোকজন থাকে।
০২ রা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আমি এই লেখাতে একটা গ্রামকে নিজের মনের মতো করে সাজাতে চেয়েছি।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: লোভ হচ্ছে ভাই বড্ড লোভ হচ্ছে এই গ্রামে বাস করার। এ শুধু কল্পনাতেই সম্ভব।