নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতা পুত্র

২১ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:১৭



পিতা ও পুত্র হাঁটছে। দৃশ্যটা সুন্দর।
পুত্র পিতার হাত ধরে হাঁটছে। ডিসেম্বর মাস। প্রচুর শীত। নদীর পাড়ের গ্রাম গুলোতে শীত বেশি হয়। পিতা ও পুত্র ভালো মতো শীতের জামা পড়ে নিয়েছে। সময় তখন সকাল এগারোটা। রোদ আছে, কিন্তু রোদের তেজ নেই। দূরে এখনও কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। নদী পাড়ের ঠান্ডা বাতাস তীরের মতো এসে গায়ে বিঁধছে। পুত্র আবদার করেছে সে বাইক্কা বিল দেখতে যাবে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে পুত্র পিতার সাথে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছে। সামনেই পদ্মানদী দেখা যাচ্ছে। নৌকা করে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ বাইক্কা বিল। পুত্র আজ অনেক খুশি, তার পিতা তাকে নিয়ে বাইক্কা বিল দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। পিতার সাথে কোথাও যাওয়া অনেক আনন্দের। সময়টা তখন ১৯৯২ সাল। তখন আজকের মতো হাতে হাতে সবার মোবাইল ফোন ছিলো না।

মূলত বাইক্কা কোনো বিল নয়। একটা চর এলাকা।
এই চরকে লোকজন কেন বাইক্কা বিল বলে সেটা কেউ জানে না। পদ্মা নদী অনেক বড় নদী। অনেকেই সর্বনাশা নদী বলে। পদ্মা বহু গ্রাম খেয়ে ফেলেছে। আজও খাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও চর জেগে ওঠে। সেই চর এলাকা দখল হয়ে যায়। চর দখল নিয়ে মারামারি হয়। খুনোখুনি হয়। এগুলো আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। চরের একটা সৌন্দর্য আছে। চারিদিকে শুধু বালু আর বালু। সূর্যের আলো যখন বালুতে পড়ে, বালু গুলো তখন চিকচিক করে। সারাদিন বালু থাকে আগুন গরম হয়ে। এই বালুতে যেন কিভাবে লতাপাতা গজিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে চর গুলো মানুষের আয়ত্তে চলে আসে। স্কুলঘর হয়, দোকান হয়, বাজার বসে। ঘরবাড়ি হয়। মসজিদ হয়। ফসল ফলে। নির্জন চর মানুষের কোলাহলে ভরে ওঠে। এনজিও'র লোকেরা চর এলাকায় যায় স্বাস্থ্য সেবা দিতে।

পিতা পুত্র নৌকা উঠলো। উদ্দেশ্য বাইক্কা বিল।
মাঝি লম্বা সালাম দিলো। নৌকা চলছে সর্বনাশা পদ্মা নদীর বুকে। পুত্র বলল, বাবা তুমি নৌকা চালাতে পারো। পিতা বললেন, হ্যাঁ পারি। আমার জন্ম তো এই গ্রামেই। কর্মের খাতিরে আমি শহরে গিয়েছি। গ্রাম ও গ্রামীন জীবন ভুলিনি। পিতা মাঝির কাছ থেকে চেয়ে বৈঠা হাতে নিলেন। পুত্র বাবার নৌকা বাওয়া দেখে মুগ্ধ! পুত্র তালি বাজালো। পুত্রের হাসি মুখ দেখে পিতা খুশি। নদীর চারপাশের পরিবেশ অতি মনোরন! নদীর ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, অনেক গুলো সাদা রঙের পাখি নদীর খুব কাছ দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। পাখি গুলোর মতলব মাছ ধরা, ছোট বড় অনেক গুলো নৌকা ব্যস্ত ভাবে যাচ্ছে, আসছে। জেলেরা মাছ ধরছে। এক অল্প বয়সী ছেলে নৌকায় বসে আছে। নৌকা খুব দুলছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই, সে নদীতে বরশি ফেলেছে। এরকম দৃশ্য শহরে কল্পনা করা যায় না।

সময় তখন মধ্যদুপুর।
পিতা পুত্র বাইক্কা বিলে নামলো। বিশাল চর জেগেছে। চরে বাঙ্গি, তরমুজের ফলন খুব ভালো হয়। কে বা কারা চাষবাস শুরু করে দিয়েছে। দূরে একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে। পিতা পুত্র চা খেলো। রঙ চা। চর এলাকার মানুষেরা দুধ চা পছন্দ করে না। চায়ের দোকানের মালিকের নাম সামসু। পিতা সামসুকে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, আজ দুপুরে আপনাদের সাথে খাবো। ব্যবস্থা করুন। সামসু টাকা নিলো না। বলল, আফনেরা মেহমান। আজ খিচুড়ি রান্না হয়েছে। যা আছে সবাই মিলে খেয়ে ফেলব। পুত্র মনের সুখে চরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তার বড় আনন্দ হচ্ছে। তার সাথে সামসুর ছেলে আছে। খিচুড়ি অনেক স্বাদ হয়েছে। সবজি খিচুড়ি। পুত্র বলল, অনেক মজা হয়েছে। এবং এতে ভালো খিচুড়ি আগে কখনও খাইনি। পিতাও পুত্রের কথায় সায় দিলো। সামসুর স্ত্রী এরকম কথায় লজ্জা পেলো।

সন্ধ্যা যখন ঘনায়মান, তখন পিতাপুত্র নিজ গ্রামে ফিরে আসে।
এই পুত্রের নাম রাজীব নূর। অর্থ্যাত আমি। গতকাল রাতে হুট করে ঘটনাটা আমার মনে পড়লো। ছোটকালে আব্বা আমাকে বাইক্কা বিল দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো। আব্বা নিজে নৌকা চালিয়েছিলো। আব্বা আজ বেঁচে নেই। আব্বা আজ বেঁচে থাকলে ছোটবেলার মতো নৌকায় করে অনেক দূর চলে যেতাম। রঙ চা খেতাম। গরম গরম সবজি খিচুড়ি খেতাম। চরে ইচ্ছা মতো ঘুরে বেড়াতাম। আব্বা নানান রকম গল্প জানে। সেসব গল্প শুনতাম। পিতা ছাড়া পুত্র বড় অসহায়। পুত্র যতই বড় হোক, পিতা না থাকলে সে অসহায়। মাথার উপর পিতার ছায়া থাকা খুব জরুরী। পিতা ধনী না দরিদ্র সেটা বড় কথা নয়। পিতা বেঁচে থাকাটা বড় কথা। হারিয়ে যাওয়া মানুষরা আসলে হারিয়ে যায় না। আমার মাঝেই তো আমার পিতার ছায়া আছে। অবশ্যই আছে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:৫৬

কামাল১৮ বলেছেন: পদ্মার পারেই আমাদের বাড়ী ছিলো।চরে যাবার অভিজ্ঞতা আছে অনেক।
হানিফ সংঙ্কেত ও চম্পা অভিনীত একটি নাটক দেখেছিলাম অনেক আগে।কি ভাবে চরে বসতি গড়ে উঠে সেই নাটকে এটা দেখানো হয়।বাস্তবেও চরে গ্রাম গড়ে উঠতে দেখেছি।

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই তো কিছুদিন আগে আমার নানী বাড়িতে চর জেগেছে।
এক সময় আমার নানী বাড়ি পদ্মা কেড়ে নিয়েছিলো। চর জেগেছে। সবাই দলিল দেখিয়ে যার যার জায়গা পেয়েছে। আমরা সবাই গিয়ে সেই চরে পিকনিক করছি।

২| ২২ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ২:১৪

কামাল১৮ বলেছেন: পিতা পুত্রের স্মৃতিচারণ ভুব ভালো লেগেছে।চরের মাঝখানে কি কোন বিল ছিলো।এটা প্রায় দেখা যায়।

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ বিল ছিলো।
সে বিলের নাম মনে হয় বাইক্কা বিল।

৩| ২২ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ৭:৪২

ঢাকার লোক বলেছেন: স্মৃতিচারণ খুব সুন্দর হয়েছে। 'বাবা থাকা জরুরি' , তবে চিরদিন কারো বাবা থাকেনা! এইতো দুনিয়ার নিয়ম!!

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: একদিন আমিও থাকবো না।
আমার কন্যা অসহায় হয়ে যাবে।

৪| ২২ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মোগল সম্রাট বলেছেন:


রানু ভাই, বাইক্কার বিলে একবার শীতের পরিযায়ী পাখি দেখতে দেছিলাম। এটাতো সিলেটের দিকে মৌলভীবাজার থানায় সম্ভবত।


২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: এক নামে বহু জায়গা আছে।
যেমন ধরুন, রসুলপুর। এই নামে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০ টা গ্রাম আছে।

৫| ২৩ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:২৩

জাহিদ অনিক বলেছেন: পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, এটা আপনার কথা হবে --
হয়েছেও তাই .।

বাইক্কা বিলের পানি কেমন ছিল?

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: একদল টলটলা। স্বচ্ছ।

৬| ২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩১

কাছের-মানুষ বলেছেন: আমি অফ লাইনে পড়েছিলাম। এটা জীবনের বাস্তবতা, বেচে থাকাই মিরাকল, আনন্দের। ছোট বেলায় আব্বার সাথে বিলে মাছ ধরতে যাবার কিছু স্মৃতি এখনো তাজা আছে, এখন আর সেই বিল আর পানি নেই, সময় খুব দূত চলে যায়!

২৩ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: লিখে ফেলুন। লিখে ফেলুন। সব অতীত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.