নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সিদ্ধান্তটা আজ নিয়েই ফেললাম।
আমি আমার স্ত্রীকে খুন করবো। না আমার স্ত্রী খারাপ মেয়ে নয়। সে অতি লক্ষ্মী, অতি ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু কেন জানি আমি তাকে আর সহ্য করতে পারছি না। গত তিন বছর ধরে আমি শুধু ভেবেছি কিভাবে খুন করা যায়। ছোটবেলা থেকেই আমি যে কোনো কাজ নিখুঁত ভাবে করি। এই যে আমি আমার স্ত্রীকে খুন করবো- কেউ টের পাবে না, কেউ কিছু বুঝবে না। অবশ্য এই নিখুঁত একটা পরিকল্পনা করতে আমার সময় লেগেছে তিন বছর। আমি ইচ্ছা করলে লোক দিয়ে খুন করাতে পারি। কিন্তু এই কাজটা আমি নিজের হাতে করতে চাই। যদিও আমি আগে কখনও খুন-টুন করিনি। নিজের উপর আমার প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসই জীবনে আমাকে অনেক সাফল্যের মূখ দেখিয়েছে।
আমি আমার হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম- রাত তিনটা তিন মিনিট।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। পাতলা একটা জামা পড়ে আছি। হু হু করে শীতের ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে। বেলকনি থেকে ফিরে আমি বিছানায় বালিশে মাথা রাখলাম। আমার চোখে ঘুম নেই। কাজটা শেষ করেই কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিলেই হবে। আমার স্ত্রী বকুল ডান পাশ ফিরে, ডান হাত গালের উপর রেখে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। জানালা দিয়ে একটুকরো আলো এসে পরেছে তার মুখে। কি মায়াময় শান্ত একটি মুখ। ঠোটের কোনায় যেন একটুকরো হাসি লেগে আছে। চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। একদিন বলেছিলাম, তোমাকে চোখে কাজল দিলে দারুন দেখায়। এরপর থেকে প্রতিদিন চোখে কাজল দেয়। শেষ বারের মতো আমি খুব নিরবে, যেন ঘুম না ভাঙ্গে আলতো করে একটা চুমু দিলাম ঠোটে। তবু একটু কেঁপে উঠলো কি বকুল?
দীর্ঘ চার বছর বকুলের সাথে প্রেম করেছি। তারপর বিয়ে।
প্রেমের সময় গুলো বড় আনন্দময় ছিল। আমি রোজ ইডেন কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। বকুল ক্লাশ শেষ করে আসতো। আমরা সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতাম। কত গল্প, কত ঘুরে বেড়ানো, হাতে হাত। সারারাত জেগে মোবাইলে কথা। কত রাগ-অভিমান। বকুলের সাথে প্রেম করেই আমি বুঝতে পেরেছি- মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়'ই হলো প্রেমের সময়। কত পাগলামি'ই না করেছি! একদিন রাত দু'টা বকুলের বাসার সামনে গিয়ে ফোন করে বললাম, বকুল একটু বেলকনিতে আসবে? বকুল বেলকনিতে এসে আমাকে দেখে- এক আকাশ আনন্দে কেঁদে'ই ফেলল। বকুলদের বাড়ির পাশেই ছিল তূরাগ নদী। নৌকায় করে তূরাগ নদীর এপার ওপার করেছি হাজার বার। সোনিয়া নামে একটি মেয়ে আমাকে খুব ভালোবাসতো। বিয়েও করতে চেয়েছিল। কিন্তু বকুলকেই বেছে নিলাম। বকুলকে বিয়ে করার পরও সোনিয়া আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করতো। সোনিয়ার এক কথা- আমি তোমাকে পাই বা না পাই, তবুও সারা জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
আমি একজন মারাত্মক অভিনেতা।
হলিউডের ডিক্যাপ্রিও বা জিম ক্যারি'র চেয়ে আমি অভিনয় খারাপ করি না। বকুলকে হত্যা করার পর বকুলের মা বাবাকে কাঁদতে কাঁদতে কি বলব সবই ঠিক করে রেখেছি। বেশ কয়েকবার আয়না'র সামনে দাঁড়িয়ে রিহার্সেল দিয়েছি। নিজের অভিনয় দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ! আমাকে কেউ'ই সন্দেহ করবে না। বকুলের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে চার বছর। এই চার বছরে আমি একবারও বকুলের সাথে ঝগড়া করিনি। চিৎকার চেচামেচি করিনি। বরং যারা আমাদের দেখেছেন- সবাই বেশ প্রশংসা করেছেন। আমাদের জুটির তারিফ করেছেন। পরিচিতদের যে কোনো অনুষ্ঠানে আমরা একসাথে যেতাম। খুব আড্ডা দিতাম, হইচই করতাম- আনন্দ করতাম। কত হাসি গান গল্প। আমার এবং বকুলের আত্মীয় স্বজনরা সব সময় বলে- তোমাদের হাসি খুশি ভরা সংসার দেখে মনটা খুশিতে ভরে যায়। বকুলের প্রতি কেন আমার এক আকাশ উদাসীনতা তা আমি নিজেও ভেবে পাই না। শুধু মনে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই। শেষে ভাবলাম আমি কেন দূরে যাব? তার চেয়ে বরং বকুলকেই অন্যভূবনে পাঠিয়ে দেই।
যতদিন যাচ্ছে বকুলকে আমার অপছন্দের মাত্রা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এখুনিই গলা টিপে বা বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি। এক বোতল বিষও এনে রেখেছি। একবার ইচ্ছা হলো ভাতের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে মেরেই ফেলি। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে থেকেছি। যথাযথ সময়ের অপেক্ষা করেছি। বারবার নিজেকে বুঝিয়েছি- 'দেরী হোক, যায়নি সময়।' আজ'ই ভোর হবার আগে আমি ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলব। ভোর হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। আমি ফ্ল্যাক্স থেকে এক কাপ চা নিলাম। রাত-বিরাতে চা খাই বলে বকুল আমার জন্য ফ্ল্যাক্স ভরতি করে চা বানিয়ে রাখে। মেয়েটা চা বেশ ভালো বানায়। আসলে শুধু চা না, বকুলের হাতের সব রান্না বেশ ভালো। সকালে নাস্তা না খেয়ে বকুল আমাকে কিছুতেই অফিসে যেতে দেয় না। বাহারি নাস্তা। কখনও আফগান পরোটা, কখনও খাস্তি পরোটা, ডিম পরোটা। আমাদের পরিচিতমহলে বকুলের রান্নার বেশ নামডাক আছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ ফর্সা হতে শুরু করবে।
হাতে খুব বেশি সময় নেই। ছোটবেলা থেকেই তাড়াহুড়া আমার পছন্দ না। আমি আর এক কাপ চা নিলাম। গুনগুন করে দুই লাইন রবীন্দ্র সংগীত গাইলাম। ''কি জানি কিসের লাগি প্রান করে হায় হায়’'। বুকটার মধ্যে কেমন হু হু করছে। কেমন যেন এক আকাশ হাহাকার ভর করেছে। তবে যত'ই বুকের মধ্যে আকুলি-বিকুলি করুক, ঘটনা আজই ঘটাবো। সব পরিকল্পনা মাথার ভেতর সুন্দর করে সাজানো আছে। হঠাৎ আমার মনে পড়লো- গত বছর একসিডেন্ট করে তিন মাস বিছানায় পড়েছিলাম। বকুল আমার খুব দেখভাল করেছে। খুব যত্ন নিয়েছে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আমার সুস্থতা কামনা করেছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছে আর বলেছে- আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত আমি কিছু ভাবতে পারি না।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:১১
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: আমি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম হয়তো হুমায়ূন স্যারের "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ" উপন্যাসটার মতন হবে...
যাক শেষটা পড়ে শান্তি লাগলো...
সুন্দর, সহজ শব্দ ব্যবহারে গল্পটার আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিলো...
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ" বইয়ের অনুকরনেই এই লেখা।
৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২২
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: এক্সিলেন্ট রাইট আপ।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ গোফরান ভাই।
ভালোবাসা নিরন্তর।
৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২৩
সোনাগাজী বলেছেন:
ঢাকায় বসন্ত এসেছে?
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: এক হিসেবে ঢাকায় সারা বছরই বসন্ত।
৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৪৫
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: বাহ, দারুণ লিখেছেন। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় পিছুটান মায়া, মানুষ মায়া সহজে কাটাতে পারে না। কিছু মায়া অস্বাস্থ্যকর, কিছু মায়া জীবনে বেঁচে থাকার জ্বালানি, কিছু মায়া অকারণ।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:০১
আলামিন১০৪ বলেছেন: আপনি তো বেশ সুন্দর গল্প লিখেন।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।
৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৩৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খুন খারাবি করা ভালো না।
তারওপর যাকে ভালোবাসেন তাকে খুন করার তো প্রশ্নই আসে না।
পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ বড় ভাই।
৮| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯
সামরিন হক বলেছেন: প্রথম লাইনটা দেখে ভয় পেয়েছিলাম।
শুভ সকাল।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: হে হে হে---
৯| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩১
ধুলো মেঘ বলেছেন: আবার ঘুরে গেলেন কেন? খুন করতে চাইছিলেন, করেই ফেলতেন! খুন করে না হয় অসুস্থ অবস্থায় সেবা ক্রেছিল - এই নিয়ে আফসোস করতেন! একটা থ্রিলার পড়ার মজাটাই নষ্ট করে দিলেন।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: স্যরি।
১০| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১৪
নিবারণ বলেছেন: থাক মাইরেন না, আপনার বউ ভালা।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: এটা আমার স্ত্রীর গল্প নয়।
১১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২২
নিবারণ বলেছেন: সেইডা তো জানি, আমি কথাডা কইলাম গল্প কথকরে। গল্প কথকের বউ ভালা। মারা উচিত হইব না।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
১২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:২৮
কালমানব বলেছেন: পুরোটাই ভালবাসার গল্প, অপছন্দের কিছু পাওয়া গেল না- খুন করার প্রশ্নই আসে না । গল্পের টুইস্ট ভাল হয়েছে, দৃশ্যগুলো স্নিগ্ধ, সুন্দর গার্হস্থ্য ভালবাসার । ভাল লাগল ।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
১৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০
রবিন.হুড বলেছেন: গল্পের শেষটা কবে পাব?
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: খুব শ্রীঘই।
১৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ফেসবুকে দেখলাম আপনার কর্মস্থলের ডেস্ক ।
আপনি কি অফিসে চাকরি করেন?
১৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৮
নিবারণ বলেছেন: গতকাল সামুতে আসা পোস্টের মধ্যে আপনার এই লেখা আমার সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় ছিলো।
এ নিয়ে আমার পোস্ট
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
১৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৩০
নিবারণ বলেছেন: গতকাল সামুতে আসা পোস্টের মধ্যে আপনার এই লেখা সর্বাধিক কমেন্ট প্রাপ্ত ও আমার সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় ছিলো।
এ নিয়ে আমার পোস্ট
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:১১
কাছের-মানুষ বলেছেন: শেষে আপনার উপলব্ধিটা চমৎকার! খুনাখুনি করা ভাল নয়, আনন্দে কাটান জীবন!